আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের জালে বাংলাদেশের ক্রিকেট
লিখেছেন লিখেছেন মোঃ নাহিদ হাসান ০৩ জুন, ২০১৩, ০৪:১৫:১৯ বিকাল
এর আগেও বাংলাদেশের ক্রিকেট নিয়ে ষড়যন্ত্র হয়েছে, বাংলাদেশকে টেস্ট এরিনা থেকে বাদ দেয়ার চক্রান্ত কম হয়নি। তবে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল যখন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রতিদ্বন্দ্বী দলে আবির্ভুত, বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড যখন সাংগঠনিক দক্ষতার পরিচয় দিচ্ছে, ২০১৪ টি-২০ বিশ্বকাপে সেরা আয়োজনের স্বীকৃতি পেতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ, তখনই বাংলাদেশের ক্রিকেটের গায়ে কলঙ্ক লেপণে গভীর ষড়যন্ত্রের জাল বিস্তার করা হয়েছে। ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লীগের (আইপিএল) স্পট ফিক্সিং, ম্যাচ ফিক্সিং ইস্যু যখন সারাবিশ্বে নিন্দার ঝড় তুলেছে, বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী ক্রিকেট বোর্ড বিসিসিআই’র কর্মকর্তাদের জড়িত হওয়ার খবর মিডিয়ার কল্যাণে জানছে ক্রিকেটপ্রেমীরা, তখন ওই ঘটনা থেকে চোখ ফিরিয়ে নিতে বাংলাদেশের ক্রিকেটের গায়ে কলঙ্ক লেপণে আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের সাথে যোগ হয়েছে স্থানীয় একটি স্বার্থান্বেষী মহল।
null
বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগে (বিপিএল) ম্যাচ ফিক্সিংয়ের অভিযোগ যখন তদন্তানাধীন, আইসিসি’র দুর্নীতি দমন বিভাগ আকসু’র রিপোর্ট হাতে পাওয়ার আগেই রং মাখিয়ে বাংলাদেশের ক্রিকেটকে কলুষিত করার অপচেষ্টা করছে একশ্রেণীর স্বার্থান্বেষী মহল। ঘরোয়া টি-২০ ক্রিকেট বিপিএলএ জুয়াড়িদের সঙ্গে সন্দেহভাজন ক্রিকেটারদের সখ্য, অবৈধ অর্থের লেনদেন নিয়ে যখন সারা দেশ উদ্বিগ্ন, তখন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাংলাদেশের তিনটি ম্যাচের গায়ে স্পট ফিক্সিংয়ের কলঙ্ক দিয়ে বাংলাদেশের ক্রিকেটের ভাবমূর্তি ভুলন্ঠিত করা হয়েছে।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে জুয়াড়ীদের সঙ্গে সখ্যতার অভিযোগ-এর আগে যতোগুলো উঠেছে, তার কোনটিতেই বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের নাম ছিল না। ভদ্রলোকের খেলা ক্রিকেটের গায়ে কলঙ্কের দাগ দিয়েছে যারা, তারা ভারত, পাকিস্তান, দ.আফ্রিকা এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্রিকেটার। অথচ, সেখানেও নিষ্কলুষ থাকতে পারল না বাংলাদেশ। আইপিএল প্রবর্তনের পর থেকেই জুয়াড়ীদের অবৈধ অনুপ্রবেশ বেড়েছে, দুনীর্তিতে ছেঁয়ে গেছে বিশ্বের সবচেয়ে ধনাঢ্য ক্রিকেট বোর্ডের পরিচালিত আসরটি। ঢাকায় আমন্ত্রণে এসে এক লিজেন্ডারী ক্রিকেটার এই প্রতিবেদকে আইপিএলকে জুয়ার আসর বলে উল্লেখ করেছেন। আইপিএল’র কারণে ক্রিকেট কৌলিন্য হারাচ্ছে, ভদ্রলোকের খেলা ক্রিকেটের গায়ে কলঙ্কের দাগ দিচ্ছে জুয়াড়ীদের ফাঁদে পা দেয়া ক্রিকেটাররা, এমন ধারণাই পোষণ করেছেন তিনি। আইপিএল প্রবর্তনের আইডিয়া যার, সেই ললিত মোদী দুর্নীতির দায়ে হারিয়েছেন আইপিএল গভর্নিং কাউন্সিলের দায়িত্ব। নিষ্কলুষ থাকতে পারেননি বিসিসিআই’র সভাপতি শ্রীনিবাসনও। জুয়াড়ীদের কাছ থেকে অবৈধ অর্থ নেয়ায় রাজস্থান রয়েলসের শ্রীশান্ত, আংকিত চাভান এবং আজিত চান্দিডা হয়েছেন গ্রেফতার। চেন্নাই সুপার কিংসের মালিকপক্ষের লোক গুরুনাথ মিয়াপ্পন শ্রীনিবাসনের জামাতা, ফিক্সিংয়ের সঙ্গে জড়িত থাকার অপরাধে তিনি এখন কারাগারে! ফিক্সিং ঘটনায় আইপিএল চেয়ারম্যান এবং বিসিসিআই’র নির্বাচিত ২ কর্মকর্তা করেছেন পদত্যাগ। পদত্যাগে প্রস্তুত আরো ক’জন। তাদের এই গণপদত্যাগের পর ভারতীয় বোর্ডের সভাপতির চেয়ার ছেড়েছে শ্রীনিবাসন। অস্থায়ীভাবে দায়িত্বটা পেয়েছেন এক সময় তাদেরই ষড়যন্ত্রে গদি হারানো জগমোহন ডালমিয়া। বাংলাদেশে কিন্তু এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়নি।
বিপিএলও যে কলুষিত মুক্ত, তা কিন্তু নয়। পরপর দু’টি আসরে প্লেয়ার্স পেমেন্ট নিয়ে অনিয়মে বিপিএল ফ্রাঞ্চাইজদের করেছে প্রশ্নবিদ্ধ, সন্দেহ নেই। তবে এখানেও অপপ্রচারটা হয়েছে বেশি। আইপিএলএ জুয়াড়ীদের তৎপতরা বিপিএলএ ও ঢুকেছে। অভিষেক আসরে চিটাগাং কিংসের মালিক সামির কাদের চৌধুরী নিজেই বিপিএলকে জুয়ার আসর উল্লেখ করেছেন। তার দলের পাকিস্তানী ক্রিকেটার নাসির জামসেদের বিপক্ষে সন্দেহের তীর ছিল এই মালিকের। বাইলজের ভুল ব্যাখ্যায় বরিশাল বার্নার্সকে সেমিফাইনালিস্ট ঘোষণা করে সমালোচনা হয়েছে আসরটি। তবে দ্বিতীয় আসরে ২টি ম্যাচকে কেন্দ্র করে স্পট ফিক্সিংয়ের যে অভিযোগ উঠেছে, সেই ইস্যুটি কিন্তু আইপিএল’র মতো ভয়ংকর নয়। বিপিএল’র প্রথম আসরে খেলার মাঠে এক পাকিস্তানী জুয়াড়ীকে পুলিশের হাতে ধরিয়ে দিয়েছে বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিলের কর্মকর্তারা। দ্বিতীয় আসরে আইসিসি’র দুর্নীতি দমন ইউনিট আকসুকে নিযুক্ত করে নিষ্কলুষ থাকতে চেয়েছিল বিসিবি। তবে প্রকৃত ঘটনা উদঘাটিত হওয়ার আগে একটি মহল বিপিএলকে একটু বেশিই কলংকিত করেছে। আইসিসি’র দুনীতি দমন ইউনিট যে সব ম্যাচকে দুর্নীতি মুক্ত হিসেবে সার্টিফিকেট দিয়েছে, সেই সব ম্যাচের গায়ে কলঙ্ক দিয়ে মূলত: বাংলাদেশের ক্রিকেট বিরোধী প্রচারণার কাজটিই করা হয়েছে।
আইসিসি মূলত ভারতের ক্রিকেট বোর্ড বিসিসিআই দ্বারা প্রভাবিত। আইসিসি’র রাজস্ব আয়ের বড় অংকও আসে যে বিপণন থেকে, সেখানেও সিংহভাগ অর্থের যোগান আসে ভারত থেকে। বিশ্ব ক্রিকেটের শাসক সংস্থা হয়েও তাই ভারত তোষণে ব্যস্ত আইসিসি! ভারতের উপর কোন কর্তৃত্ব নেই তাদের। প্রতিবছর ক্রিকেট মওশুমে সবচেয়ে সুবিধাজনক শ্লট এপ্রিল মাসকে বেছে নিয়ে আইসিসিকে বাধ্য করেছে ৮ বছরের এফটিপিতে তা অন্তর্ভুক্ত করতে। কোন দেশের ঘরোয়া ক্রিকেট আইসিসি’র ফিউচার ট্যুর প্রজেক্টে অন্তর্ভুক্ত হয় কিভাবে, এটাই প্রশ্ন। টি-২০ ঘরোয়া লিগের সেরা দলসমূহকে নিয়ে আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স লীগ টি-২০ আয়োজনে আইসিসি’র কাছ থেকে সেপ্টেম্বরে যে শ্লট নিয়েছে, সেখানেও প্রতারণা করছে ভারত নিয়ন্ত্রিত চ্যাম্পিয়ন্স লীগ কমিটি! আইসিসি’র কোন কর্তৃত্বই নেই এই চ্যাম্পিয়ন্স লীগে-ভারত,অস্ট্রেলিয়া এবং দ.আফ্রিকা ক্রিকেট বোর্ডের যৌথ আয়োজনের এই আসরে বিপিএল সেরা দল ঢাকা গ্লাডিয়েটর্সকে অংশগ্রহণের সুযোগ পর্যন্ত দেয়া হয়নি! আইসিসি’র ইতোপূর্বের ২ এফটিপির একটিতেও বাংলাদেশ ক্রিকেট দলকে আতিথ্য দেয়নি ভারত, আগামী ২০২০ সাল পর্যন্ত আইসিসি ঘোষিত এফটিপিতেও বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের জন্য বরাদ্দ নেই ভারতে পূর্ণাঙ্গ সফর! রোটেশন (আবর্তন) নিয়মে আইসিসি’র সহ-সভাপতি পদটি বাংলাদেশের, এই আইনে সংশোধনী এনে বিসিবি’র সাবেক সভাপতি আ.হ.ম মোস্তফা কামাল (লোটাস কামাল) এমপিকে এই পদের জন্য বিবেচনা না করতে কম অপচেষ্টা করেনি বিসিসিআই! পরবর্তীতে বাংলাদেশ-পাকিস্তান, জিম্বাবুয়েও দ.আফ্রিকার বোর্ডের চাপে রোটেশন পদ্ধতি বহাল রেখে আইসিসি’র সহ-সভাপতি পদে লোটাস কামালকে নির্বাচিত করা হলেও ২০১৪ সালের জুলাইয়ে সভাপতি পদে যখন আসীন হবেন তিনি ২ বছরের পরিবর্তে মাত্র এক বছরের জন্য। শুধু মেয়াদই কমানো হয়নি, সংশোধনী এনে সভাপতি পদকে করা হয়েছে অলংকারিক!
ম্যাচ ফিক্সিংয়ের অভিযোগে আকসুর তদন্তে এবং বিসিবি’র ট্রাইব্যুনালে যারা অভিযুক্ত হবেন, তাদের দৃষ্টান্তমূলক সাজা চায় এদেশের সকল ক্রিকেট প্রেমী জনগণ। তবে সে তদন্ত যেনো প্রভাবিত না হয়। ম্যাচ ফিক্সিংয়ে আশরাফুল যদি সর্ম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করে থাকেন, তাহলে অবশ্যই তার বিচার হওয়া উচিৎ। তবে যদি টীম ম্যানেজমেন্টের নির্দেশনায় আশরাফুল যদি এই জঘন্য কাজ করে থাকেন, তাহলে টীম ম্যানেজমেন্টেরও দৃষ্টান্তমূলক সাজার আওতায় আনা উচিত। তবে কেঁচো খুঁড়তে সাপ বেরিয়ে আসার আভাস যারা দিয়েছেন, সেই সাপ ধরার দায়িত্ব এখন বিসিবি’র।
২০১১ বিশ্বকাপের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে, তা সম্ভব হয়েছে বিসিবি’র উচ্চাভিলাসী পরিকল্পনার কারণেই। ২০১৪টি-২০ বিশ্বকাপের একক স্বাগতিক বাংলাদেশ টি-২০ বিশ্বকাপের অতীতের সব আয়োজনকে ছাড়িয়ে নুতন মাত্রা যোগ করতে বদ্ধপরিকর। তার জন্য ব্যাপক পরিকল্পনা যখন হাতে নিয়েছে বিসিবি, তখন বাংলাদেশের ক্রিকেটের গায়ে কলঙ্ক লেপণের ষড়যন্ত্রের জাল বিস্তার করা হয়েছে।
বিষয়: Contest_mother
২৫৭৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন