কার স্বার্থে কিসের সংঘাত?
লিখেছেন লিখেছেন রিয়াজ কাহান ১১ মে, ২০১৩, ০৬:১৫:২২ সন্ধ্যা
পৃথিবীর ইতিহাস জুড়ে রয়েছে দ্বন্দ্ব সংঘাত। ইতিহাসের বড় একটি অংশ জাতিগত সংঘাত। প্রগতির প্রধান অনুজীব্য পরাজিত জাতিসত্বাকে ধ্বংশ ও ক্ষমতা দখল। ক্ষমতা দখলের আরেকটি অনুজীব্য বিষয় রয়েছে, সম্পদ দখল করা। ভারত বর্ষের সোমনাথ মন্দির আক্রমন এর বড় উদাহরণ। ইসলামী হুকুমত কায়েম করতে সুলতান মাহমুদ তুর্কি থেকে দাক্ষিনাত্য আক্রমন করেনি। তিনি বিশাল রত্নভাণ্ডার ডাকাতি করতে সোমনাথ মন্দির লুট করেছিলেন। যদিও ধর্মীয় ভাবে এটা ছিল হিন্দু মুসলিম যুদ্ধের পটভূমি। অন্যদিকে পাণিপথের ১ম যুদ্ধ কোন ভাবেই হিন্দু মুসলিম যুদ্ধ ছিল না। বাবর ক্ষমতা দখল করতেই ইব্রাহিম লোদির রাজ্যে হামলা করেন। পরবর্তী ইতিহাস সবার জানা। চেঙ্গিশ খান ও হালাকু খানের ইতিহাস খুবই পরিষ্কার। তারা কখনো ক্ষমতায় থাকেনি। শুধু ডাকাতি ও লুট করাই তাদের লক্ষ্য ছিল। আবার পলাশির যুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে বলা যায় বাণিজ্যের বাধা দূর করতেই এই যুদ্ধ। প্রথমদিকে ক্ষমতা দখল ইংরেজদের উদ্দেশ্য ছিল না। যদি থাকত প্রথমেই করত। কারণ সেই সুযোগ তাদের ছিল। মীরজাফর কে হটিয়ে ক্ষমতা দখল তাদের কাছে কোন বিষয় ছিল না। আলেকজাণ্ডারের নিছক খেয়ালের বসে পৃথিবী দখল করার ইচ্ছা জন্মায়। আলেকজাণ্ডার সম্পদ লুণ্ঠন উদ্দেশ্য নিয়ে পৃথিবী দখলে বের হননি। তিনি সারা ইউরোপের পর ভারত বর্ষ পরে ইরান দখলের সময় মৃত্যূবরণ করেন। এসময় তার বয়স ছিল ৩৩ বছর। ক্ষমতা দখল ও সম্পদ দখলের এই ইতিহাসের খুব অল্পই ঘৃণা টিকিয়ে রেখেছে। এখন আর পৃথিবীর কোন দেশই দখল করার কোন প্রয়োজন নেই। হালাকু খানদের মত ডাকাত হওয়ার প্রয়োজন নেই। রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তায় লুট করা যাবে।
পৃথিবীর এই যুদ্ধ সংঘাতে নৃশংস অধ্যায় শুরু হয় ধর্মীয় উন্মাদনায়। আধুনিক ধর্মগুলো যখন নিছক আনুষ্ঠানিকতার বেড় পরেছে তখনি মানুষের বিরুদ্ধে প্রচণ্ড আক্রোশে জ্বলে উঠেছে। জিয়ার্দানো ব্রুনো, জোয়ান অব আর্কে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়েছে। আর গ্যালিলি গ্যালিলিওকে শাস্তি দেওয়া কোন ভাবেই ধর্মের মহান আবেদন নয়। যিশু যদি বেচে থাকতেন তিনি কি কোন ভাবেই ব্রুনোকে হত্যার আদেশ দিতেন? যারা তার সম্পর্কে জানেন তারা সবাই একবাক্যে বলবেন না। তবে চার্চ কেন ব্রনোকে পোড়াতে হল। ইতালিতে রোমা জনগোষ্ঠিকে কয়েকবার ধ্বংশ করে দিতে নৃশংস দাঙ্গা বাধানো হয়েছে। জার্মানদের ইহুদি নিধন কোন ধর্ম থেকেই গ্রহণযোগ্য নয়। ১৯৬৬ সালে ইন্দোনেশিয়ায় পাঁচ লাখ লোক হত্যা করা হয়েছে নাস্তিক আখ্যা দিয়ে। রাষ্ট্রীয় পৃষ্টপোষকতায় মাদ্রাসা পড়ুয়া মৌলবাদিদের লেলিয়ে দিয়ে এসব লোককে হত্যা করা হয়েছে। কর্নেল সুহার্তো তার ক্ষমতাকে পাকাপোক্ত করতে সুকর্ণকে হটিয়ে লাখ লাখ লোক জেলে ভরেছে। আফ্রিকা জুড়ে প্রায় সবগুলো দেশে খ্রিষ্টান মুসলিম দাঙ্গায় প্রতিদিন মানুষ হত্যা করা হয়। পাকিস্তানের ইতিহাস সবচেয়ে করুণ। ১৯৫০ সালে মওদুদি দাঙ্গা বাধিয়ে ৫০ হাজার কাদিয়ানিকে হত্যা করে। এই মামলায় মওদুদির ফাসি হয়েছিল। এখন পাকিস্তানসহ মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে শিয়া সুন্নি সংঘাত ধর্মীয় আইন বাস্তবায়নের ও জিহাদের অন্যতম অনুসঙ্গ। ১৯৪৬ সালে উপমহাদেশে হিন্দু মুসলিম দাঙ্গায় লাখের কাছাকাছি মানুষ নিহত হন। ২০০০ সালের গোধরা কাণ্ডের পর মহারাষ্ট্রে কি হয়েছিল? প্রায় ১০ হাজার মুসলিমক হত্যা করার উত্সব চলে একমাস ধরে। কেন্দ্রীয় সরকারও নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হয়। সম্প্রতি রোহিঙ্গা ইস্যূতে মিয়ানমারে মুসলিম জাতিসত্বার ওপর হামলা কতখানি নৃশংস। এসব ঘটনা কি ধর্ম বাস্তবায়নের জন্য? তাহলে প্রশ্ন হল নৃশংতা ছাড়া কি ধর্ম কোন ভাবেই চলতে পারে না। নাকি ধর্মের নেতৃত্ব গিয়ে সব সময় নৃশংস লোকের হাতে পড়ে? যে লোকগুলো মানবতার ব্যাখ্যা দেয় ধর্মী চেতনা থেকে। অর্থ্যাত্ মানবিক আচরণ পাবে আমার স্বধর্মীয় ব্যাক্তিরা।
এতসব দ্বন্দ্ব সংঘাতে পৃথিবীর কি উপকার হয়েছে? প্রগতির ইতিহাসে কি এর কোন প্রয়োজন ছিল? নাস্তিকদের ফাসি দাও। আগুনে পুড়িয়ে অঙ্গার বানিয়ে ইতিহাসে কিভাবে চিহ্নিত হবে এই সংঘাতের। সরকারের কি কোন স্বার্থ আছে? বিরোধীদের কি স্বার্থ। এই নৃশংসতা ছাড়া কোন ভাবেই কি ধর্মকে প্রতিষ্ঠিত করা যায়না? যাই হোক না কেন এত যে মিথ্যা প্রচারণা ধর্মের নামে এটাও কি ধর্ম? এই সংঘাতে হেফাজত জয়ী হয় বাংলাদেশে যে রক্তাক্ত ইতিহাস শুরু হবে তাও কি ধর্ম হবে। বারবার ব্যাখ্যা দেওয়া হয়, নারীদের বিরুদ্ধে, শ্রমিকদের বিরুদ্ধে হেফাজত নয়। তালেবানি ইতিহাস কেউ কি ভুলে যাবেন? যাবেনা। কারণ এখনো তালেবান আছে। গত পরশু পাকিস্তান তালেবান প্রধান হাকিমুল্লা মেহসুদ বলেছেন, নাস্তিকদের গণতন্ত্র আমরা মানি না। এই বক্তব্য কি খালেদা জিয়ারও? এই বক্তব্য কি হেফাজতের সব কর্মীর। তালেবানরাও ১৯৯০ সালের আগে এই বক্তব্য দিত। তারা যদি ইসলাম হয় তাহলে হেফাজত কি মিথ্যা কথা বলছে? যদি তারা মিথ্যা হয় তাহলে তালেবানতন্ত্র কি হেফাজত মানে না? মানে তালেবান ইসলাম নয়। যদি তাই হয় আমিনীর আমরা হব তালেবান স্লোগান কোথায় আছে?
ধর্মকে নৃশংস করে তোলা কি ধর্ম নাকি এর ব্যবহার করে যারা তাদের অপ রাজনীতির শিকার? মিথ্যা কখনো ধর্ম হতে পারে না। নৃশংসতা কখনো ধর্ম হতে পারে না।
বিষয়: রাজনীতি
১৪২৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন