ঈদের খুশী- আনন্দের কান্না
লিখেছেন লিখেছেন এস এম ইমদাদুল ইসলাম ২৩ জুলাই, ২০১৩, ১২:২৭:০৬ দুপুর
প্রতি বছর ঈদ আসে। মানুষের মুখে হাসি আর আনন্দের বন্যা নেমে আসে। অন্যান্য সব পরিবারের বাচ্চারা যেমন আনন্দে উদ্বেলিত হয়, রাহাতের সন্তানরাও তাদের সাথে একাত্ম হয়ে উচ্ছসিত হয়ে উঠেছে। সময় যত ঘনিয়ে আসছে ততোই ছেলেদের মধ্যে আনন্দের উচ্ছাস ঘনীভূত হয়ে উঠছে। কিন্তু ওরা যখন ওদের বুক ভরা আনন্দ নিয়ে তাদের বাবার কাছে ছুটে এসে বলে আব্বু , আর তো বেশী দিন বাকী নেই, কবে যাবে মার্কেটে ? ওদের আব্দার শুনে বাতাস বেরিয়ে যাওয়া বেলুনের মত চুপসে যায় সে। বুক কেঁপে ওঠে। মুখটা আড়ালে লুকিয়ে বলে, এই তো বাবা । বোনাস পেলেই তবে --। কিন্তু ওদের কাছ থেকে মুখ লুকিয়ে পার পায়না সে।
গত ঈদে ছোট ছেলে তার মায়ের কাছে বায়না করেছিল, ক্যাটস আই এর এক সেট জামা-প্যান্ট আর এ্যাপেক্স এর একজোড়া ভাল জুতো। বড়টারও ডিমান্ড অনেকটা সেরকমই তবে একই সাথে তার আড়ং একটা ভাল পঞ্জাবী খুব দরকার।
মনে পড়ে, গত ঈদের জামা দেখে নেহাল বলেছিল,
কোন ব্রান্ডের জামা এটা ?
জবাবে বলেছিল,
-জানিনা, এটা আব্বা বলতে পারবেন।
কিন্তু কলারটা পেছন দিক দিয়ে উল্টিয়ে দেখে বলেছিল,
তোর আব্বা খুব চালাক রে ।
মুখটা শুকিয়ে গেল সাইমের । বাবার সম্বন্ধে এমন কথা শুনতে সে অভ্যস্থ নয়। মাথাটা নীচু করে একটু শান্ত কন্ঠে বলল,
-কেন, এখানে চালাকীর কি হল ?
থাক, এটা তুই বুঝবি না। তবে তোর শার্টটা ব্র্যান্ড শার্ট না। এটা হল গুলিস্তান হকার্স মার্কেট থেকে কেনা। যাকগে, মন খারাপ করিস না।
-কি, জানি, ভাই। এত বোঝার দরকার নেই। শার্টটা আমার খুব পছন্দ হয়েছে। ব্যাস। কোথাকার দোকান থেকে কেনা, এটা জানার আমার কোন দরকার নেই।
সেদিন বন্ধুদের সামনে নিজেকে গুটিয়ে নিয়ে এসে বার বার নেহালের কথাগুলো মনে পড়ে। ব্র্যান্ড পোষাক মানে কি ? এর উত্তর জানার পর তার বড়ই কৌতুহল হল । গ্লাস ফিটিংস এয়ার কন্ডিশন্ড শো রুমে বড় বড় নামী দামী প্রতিষ্ঠানের লেবেল লাগানো এসব পোষাক আর তার ব্যবহৃত পোষাকের মধ্যে ব্যবধান কতখানি ?
ছেলেটা একদিন রাহাতকে এরকম একটা শোরুমে নিয়ে যাবার জন্য অনুরোধ করল। বুকটা কেপে উঠল তার। কিন্তু ছেলে বাপের মুখের দিকে চেয়ে তার অবস্থা বুঝতে পেরে সাথে সাথে বলল, কোন কিছু কিনব না। আমি শুধু একটা জনিষি দেখব। রাহাত রাজি হল। তবে একটা শর্ত । তাকে তার বাবার সংগে অন্য একটা মার্কেটে যেতে হবে। ছেলেও রাজি হল। একটা নামকরা বড় শো রুমে ঢুকে কিছুক্ষণ পরে বেরিয়ে এসে রাহাতকে বলল, চল বাবা, এবার তোমার সাথে যাই।
ইসলামপুর রেডিমেড পোষাক তৈরীর কারখানা। একই কারখানায় তৈরী হচ্ছে নানা রকম শার্ট, প্যান্ট। তাতে বিভিন্ন কোম্পানীর লেভেল লাগিয়ে দেয়া হচ্ছে। একটা নাম করা কোম্পানীর লেভেল এটে অনেক বড় একটা অর্ডারের কাজ করছেন একটা প্রতিষ্ঠান। কাপড় এর মান একটু ভাল। কাজের মানও একটু ভাল। কিন্তু অন্য যেগুলো তৈরী হচ্ছে সেগুলোর মান যে তার চেয়ে একেবারে আকাশ -পাতাল ব্যবধান তা কিন্তু নয়। রাহাত অভিজ্ঞ একজনকে জিজ্ঞেস করল,
-এই কাপড়টা আর ঐ কাপড়টার মধ্যে মূল্যের পার্থক্য কত ?
তিনি বলেছিলেন,
গজ প্রতি দশ থেকে কুড়ি টাকার কিছু কম বেশী আছে।
ছেলেটাকে বলল,
-এই ডিফারেন্স আর শোরুমের ডিফারেন্স, কিছু বুঝলে ? এবার তুমি যে সাবজেক্ট নিয়ে লেখা পড়া করছ, তার আলোকেই চিন্তা করে দেখ । একটা শার্টের জন্য অতিরিক্ত আরো সাড়ে চার হাজার টাকা অতি মুনাফাখোরদের হাতে তুলে দেবার কোন যুক্তি আছে কি ?
অবুঝ কিশোর । নিরুত্তর । মাথা নীচু করে তার বাবার যুক্তিতে মৌন সম্মতি দিয়ে মাথাটা কাত করল । রাহাত খেয়াল করল, এতে ও খুব একটা তৃপ্তি লাভ করেনি। এটা মনোস্তাত্তিক। ঐ অতটুকু পার্থক্যকে পুঁজি করে অতি মোনাফাখোরের দল মনোস্তাত্তিকভাবে কত ধনবানদের টাকা-পয়সা লুটপাট করে খাচ্ছে , তাকি এসব কচি প্রাণ বুঝতে পারবে ? হয়তোবা সে বাপের ইনকামের সীমাবদ্ধতা কিছুটা অনুমান করে নিরব হয়ে গিয়েছিল। ওর সে নিরবতা রাহাতের বুকে যে কতখানি ক্ষত সৃষ্টি করেছিল - তা কাউকে বোঝানো যাবে না। কেবল নিজের সাথে নিজের ভেতরেই যুদ্ধ করে চলেছে। সে যুদ্ধে সে এক আহত সৈনিক। পাশে বসে শান্তনা দেবার একমাত্র সংগীনি। এমন ভাগ্য ক’জনার ভাগ্যে জোটে ? তার আহত মুখের দিকে অপলক চেয়ে কেবল একটা দীর্ঘশ্বাস প্রদান । শাড়িটার ছেড়া অংশটা আড়াল করে রাহাতের আহত মনকে আরো ক্ষত-বিক্ষত করেনি । তাই বুঝি কিছুটা নিরাপদ অবস্থানের নিশ্চয়তা পেয়ে আজও তার জীবন প্রদীপটা জ্বলছে।
বড় ছেলেটা এখন আরো একটু বড় হয়েছে । এখন সে আর আগের মত বায়না করে না । এতটুকু বয়সে ও কি তাহলে শোকে পাথর হয়ে গেছে ? রাহাতের ব্যর্থতার দায় ওরা কেন বহন করবে ? নিজেকে ধিক্কার দেয় । ছোট ছেলে মেয়ে দুটো নানা রকম বায়নার একটা পরিকল্পনা বড়টার সাথে শেয়ার করছে দেখে বড়টা চুপ করে শুনছে। অদূরে এক কোনে বসে আছে। মুখটা মলিন । রাহাতও এসব খেয়াল করছিল দেখে বড় ছেলেটা তার চোখে মুখে বরাবরের মত অসহায়ত্বের ছাপটা অনুভব করে মাথা নীচু করে সরে পড়ল। সে তার নিজের আব্দারের কথা ভাববে কী, অসহায় ছোট দু’ভাইবোনের বায়না মেটানোর জন্য পারলে সব ছেড়ে এখুনি তার কোন কর্মজীবনে চলে যেতে মন চায়। কিন্তু শিক্ষাগত যোগ্যতার ভিত্তি মজবুত না করে সেটা তো আর সম্ভব হচ্ছে না।
একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে । বহুদিন ধরে তার মনে একটা প্রশ্ন ঘুর পাক খাচ্ছিল । আশে পাশে বাবার সহকর্মীদের ছেলে মেয়েদের তাহলে এত জৌলুস আসে কোত্থেকে ? তার বাবার তাহলে এরকম দুরবস্থা কেন ? এটা কি তার অযোগ্যতা ? নাকি অন্য কোন কারণ আছে। এসব ভাবনা তাকে অনেকদিন যাবত ভারাক্রান্ত করে রেখেছিল। সরকারী কর্মচারীদের আয় রোজগার এবং বাজারে দ্রব্যমূল্যের কষাঘাতে তাদের জীবনের দুর্বিসহ ঘটনা নিয়ে একদিন টেলিভিষনের এক টক শো তার এসব প্রশ্নের সব মিমাংসা করে দিল। সে তার বাবার প্রতি আরো বেশী শ্রদ্ধাশীল হবার সুযোগ পেল।
স্কলারশীপ না পেলে তার লেখা পড়া হয়তো এই এগার ক্লাশেই শেষ হয়ে যেত। ইদানিং টিউশনির বাজার খুব মন্দা। সেটা স্কুলের প্রতিষ্ঠিত শিক্ষকদের দখলে পুরোপুরি চলে গেছে। এদের মত ছেলেদের উপর গার্জেনদের আস্থা নেই। আর তাছাড়া পাঠ্য বিষয়, লেখাপড়ার ধরন এমন হয়ে গিয়েছে যে, এখন অতি চটুল প্রফেসনাল শিক্ষকদেরই বাজার রমরমা । বাংলা মিডিয়ামের ছাত্র হয়েও তার ইংলিশে খুব ভাল দখল। কোয়ার্টারের এক গার্জেন এটা জানতে পেরে বড় ছেলেটাকে ইংরেজী পড়ানোর জন্য নিযুক্ত করেছেন। এক মাস হল সেখানে পড়াচ্ছে। দু’হাজার টাকা পেয়েছে। এটা দিয়ে নাকি এবারের ঈদে সে তার ছোট বোনটাকে সাজিয়ে দেবে।
কথাটা শুনে রাহাত অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে আকাশের দিকে । ঈদের এ মনোস্তাস্তিক বাজার কি পারবে তার বোনকে সাজাবার আনন্দকে পরিপূর্ণ করতে ? ভাবতে যেয়ে সে তার বুকটা চেপে ধরে। বাজারে কেনাকাটা করার অভিজ্ঞতা এখনো অর্জন করেনি সে। যখন এ যৎসামান্য অর্থ নিয়ে তার ছোট বোনকে সাজানোর আশায় মার্কেটে যাবে, না জানি কতটা হতাশা তাকে গ্রাস করবে, এটা ভাবতে তার বুকটা কেঁপে ওঠে। বড় ব্যাথা ! শরীরটা শীতল হয়ে আসে।
অনেকদিন হয়, রাহাতের সাথে তার বড় ছেলের তেমন একটা কথা হয় না। সে নিজেই নিজের অক্ষমতাকে বিচার করে তার কাছ থেকে দূরে সরিয়ে রাখে। ভাবে, সে হয়তো তাকে অযোগ্যই ভাবে, নয়তো তার বাবার জীবনের বাস্তবতা মূল্যায়ন করতে শিখেছে বলে সেও নিজেকে লুকিয়ে রাখে, যাতে তার বেদনার বহিঃপ্রকাশটা সে দেখে না ফেলে। ঠিকই তাই । একদিন রাহাতের বড় ছেলের পড়ার টেবিলে তার কলেজ ম্যাগজিনটা পেয়ে পড়ছিল সে। সূচিপত্রে চোখ বুলিয়ে দেখে ছেলে একটা গল্প লিখেছে। রাহাত গিন্নিকে বলল , তোমার ছেলে যে কলেজের ম্যাগাজিনে লিখেছে, তুমি জান ? বলল, হ্যা,একদিন বলেছিল বটে, কিন্তু আমার সে কথা মনেও নেই। আমি তা দেখারও সময় পাইনি। হায়! এ হল লেখকদের ট্রাজেডি। একটানে গল্পটা পড়ে ফেলল সে। দু’চোখের পাতা ঝাপ্সা হয়ে গেল তার। কী আশ্চার্য ! এ যে সেই একই গল্প !
ঈদের খুশীতে আনন্দিত হয়ে বেচারা রাহাত ওদের সাথে একাট্টা হয়ে হাসতে পারে না। ঈদ এলেই হার্টবিট বেড়ে যায়। শরীরের রক্ত হীম হয়ে আসে। বার বার কেন তার অযোগ্যতার দায় সন্তানদের ঘাড়ে চাপাবে সে- এরকম একটা অপরাধবোধ তাকে বিচলিত করে। প্রতিবারের মত এবারও মাসিক বেতনটা এগার থেকে বার তারিখের মধ্যেই শেষ হয়ে গেছে। ব্যক্তিত্ব বিষর্জন দিয়ে একটা রুম সাবলেট দিয়েছে। যে টাকা ভাড়া পাওয়া যায় তাতে আর এক সপ্তাহ চলে। বাকী দিনগুলো চালানোর জন্য একটা পার্টটাইম কাজ খুঁজছে। কিন্তু অনেক ঘুরে হতাশ! এটা বুঝতে আর বাকি রইল না যে, এ বয়সে এবং এত অল্প সময়ের জন্য পার্টটাইম মার্কেটে সে অযোগ্য। বাংলাদেশের সরকারী প্রজাতন্ত্রের একজন প্রথম শ্রেণীর গেজেটেড অফিসার জনাব রাহাত এর এই হল সংক্ষিপ্ত নির্লজ্জ পরিচয়। সরকারী চাকরী করে , অথচ তার সংসার চলে না ? পরিবারের আপনজনরা এ কথা মানতে নারাজ । তার জীবনের প্রথম দিকে নানা রকম তীর্যক প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়েছে। পরিবারের অনেকেরই ধারণা ছিল রাতাত খুব চালক। নিজের বিত্ত বৈভব সবার কাছে আড়াল করার এক কৌশল প্রদর্শণ করে সবার করুণা পাবার ভান করছে সে। কিন্তু এখন তার প্রতি সেই ধারণাটা আর নেই। তার স্বজনদের একটা গ্র“প মনে করে, বেটা পুরুষ মানুষের অযোগ্য । আর এক গ্র“প তার প্রতি করুণা বর্ষণ করে, বেচারা সৎ মানুষ ! তাকে নিয়ে কে কি বলল না বলল, কে কি ভাবল না ভাবল তা নিয়ে তার কোন মাথা ব্যাথা নেই। নদী পূর্ব পুরুষদের জীবন থেকে ভু-সম্পদ কেড়ে নিয়েছিল। সে আঘাত বুকে নিয়ে তার বাবা, চাচারা যেমন করে প্রকৃতির সাথে যুদ্ধ করে জীবন সংগ্রামে অবতীর্ণ হয়ে তাদেরকে মানুষ করে তুলেছেন। তেমনি সেও তার ভাগ্যে আল্লাহ যা লিখেছেন তার বাইরে আর কিছু ভাববার প্রয়োজন দেখছে না। বর্তমান যুগে ছকে বাধা চাকুরী জীবনের সমান্তরালে বাড়তি প্রয়োজনীয়তা হাতিয়ে নেবার যে যোগ্যতা থাকার দরকার তা রাহাতের কোনদিনও হবে না। আল্লাহ যেন এমনতর যোগ্য(?) তাকে না করেন, সে কামণাই করে আসছে সারা জীবন ।
ছোট বেলার স্মৃতী চোখের সামনে ভেসে উঠল রাহাতের। বাবা তাদের দু’ভাইকে সংগে নিয়ে ঈদের জামা, কাপড়, জুতো কিনে দিতেন। অনেক মানুষের ভীড়। অনেক শব্দ কোলাহল। দোকানদারের কানের কাছে মুখটা নিয়ে তিনি বলতেন, সবচেয়ে কমদামীটা দেখান। দোকানদার কোলাহলের কারণে বুঝতে না পরলে তিনি বাধ্য হয়ে একটু শব্দ করেই বলতেন। রাহাত আর তার বড় ভাই তা শুনে ফেলত। একে অন্যের দিকে মুখ ভার করে ভেজা চোখে তাকাত। ওদের বাবা ছিলেন খুব রাগী। ভয়ে মনের সে চাপা অভিমান প্রকাশ করতে সাহস করত না কেউই । বাজারে বাবার সাথে যতক্ষণ থাকত, অসহ্য রকম যন্ত্রনায় তার বুকটা দুমড়ে , মুচড়ে যেত। বাসায় ফিরে সব রাগ , অভিমান ঝেড়ে দিত মায়ের কাছে। “ এসব পরব না। আমাদের ঈদের কিছু দরকার নেই , কিচ্ছু লাগবেনা, বাবাকে বল, সব ফিরিয়ে দিতে।” ইত্যাদি, ইত্যাদি-- । মা বুকের কষ্ট চেপে রেখে বোঝাতেন। বাবার বেতন কম। সংসার ঠিক মত চলে না। তোমাদের যা দিয়েছেন, এতেই তোমরা খুশী থাক। দেখ, অনেক ফকির, মিসকিন বাড়ি বাড়ি ভিক্ষে করে। তাদের পরনে জামা কাপড় আছে কি নেই, দেখেছ, তাদের কি হাল ! তাদের চেয়ে আমরা কত ভাল আছি , বল ! এসব মূল্যবান কথা বোঝবার মত ক্ষমতা তাদের ছিল না।
রাহাতের চোখে তার বাবার তখনকার সে ছবি ভেসে ওঠে। বাবাকে কতইনা নিষ্ঠুর মনে হত। আজ বাবাকে দেখছে তার নিজের আয়নায়, সেই রূপে, যে রূপ রাহাত চোরের মত লুকিয়ে রাখে । আজ নিজ রূপে রাংগিয়ে সে তার বাবার রূপকে রঞ্জিত করতে পেরেছে, কতটা বেলা গড়িয়ে তবেই না! কত বছর, কত যুগ, এক বুক জ্বালা নিয়ে তার বাবা জ্বলেছেন ! যেমনটা আজ রাহাত জ্বলছে। এখন তার বাবা চোখে দেখতে পান না। ছেলের ব্যর্থতা তাকে দেখতে হবেনা বলেই হয়তো আল্লাহ এত দ্রুত তার চোখ থেকে আলো ছিনিয়ে নিয়েছেন।
কালের চক্রে ঘুরে এসে রাহাত তার ছেলের গল্প হাতে নিয়ে দেখে সেই একই গল্প। কাকতালীয় বটে ! তারই মত তার ছেলেও গল্পের শেষে লিখেছে, আই প্রাউড অব মাই ফাদার! আই প্রাউড অব মাই ফাদার! দু’চোখের পাতা আবেগকে আর সামলাতে পারলনা। উপচে বেরিয়ে এল বন্যার মত। গিন্নির সামনে তা গোপন রইল না। বলল, কি হল ? কাঁদছ কেন ?
চোখ মুছে বোকার মত তার দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে তার নিজের আর ছেলের লেখা গল্প দু’টো গিন্নির হাতে দিয়ে বলল, না, না, ও কিছু নয়। এ আমার বড় আনন্দের কান্না !
*************
বিষয়: বিবিধ
১৬৫১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন