যেভাবে শুরু হলো পাক সেনাবাহিনীর সাথে মুজাহিদদের সংঘর্ষ (যা কোনদিন জানতে পারবেন না)
লিখেছেন লিখেছেন জাতির চাচা ১৮ ডিসেম্বর, ২০১৪, ০৯:৫২:০৭ রাত
Tribal zone
প্রথম ব্যাপারটা হলো,
আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের মধ্যকার বর্ডারটি ১০০০ কি.মি. এর কিছু পরিমাণ দীর্ঘ, তাই সীমান্ত নিরাপত্তাকর্মী ও কোন উদ্যেগের মাধ্যমে এই বর্ডারের মধ্য দিয়ে মানুষের অপর ভূখণ্ডে চলে যাওয়া রোধ করা প্রায় অসম্ভব। এছাড়া পাক-আফগানে বসবাসকারী লোকেরা এই বর্ডারকে স্বীকৃত দেয় না যেহেতু তারা কয়েক শতাব্দী ধরে সেখানে বাস করে আসছে, সম্ভবত সেটা হাজার বছরও হতে পারে। তাই প্রায় একশ বছর আগে সাম্রাজ্যবাদীদের সৃষ্টি করা বর্ডার তারা আমলে নেয় না।
এমনকি বর্ডারে বসবাসকারী লোকেরা তাদের ওই স্থানে পাকিস্তান সরকারের শাসনও স্বীকৃত দেয় না। তারা পুরোপুরি পাকিস্তান সরকারের অধীনে নয়। তারা নিজেরা তাদের গোত্রের জন্য আইন তৈরী করে এবং যদি পাকিস্তান সরকার তাদের উপর কোন আইন চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে তবে তারা অস্ত্র হাতে লড়াই করার জন্য তৈরী থাকে। এসব কারনে, পাকিস্তান সরকার এই সীমান্তের অংশটি নিয়ন্ত্রন করার সাহস করে না। এর বিনিময়ে এখানকার লোকেরাও পাকিস্তান সরকারের কোন ক্ষতি করে না।
সীমান্তে বসবাসকারী লোকেরা তাদের ভাইদের মতো। এসব লোকেরা তাদের প্রচণ্ড সাহস, প্রতিরক্ষামূলক ব্যাপার আর স্বাধীন থাকার ইচ্ছা – এসব কিছুর জন্য বাইরের লোকদের কাছে পরিচিত।
আল কায়েদার নতুন বন্ধু : পাকিস্তানি তালিবান (২০০২-২০০৬ +) [ব্ল্যাক ফ্ল্যাগ সিরিজঃঅধ্যায় ৫]
ওসামা এবং তার সাথীরা পাকিস্তানে প্রবেশ করার পর আল কায়েদার মতাদর্শ প্রচারের জন্য অনেককে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিলো।
আমেরিকা ওসামা আর সাথীদের পাকিস্তানে প্রবেশের ব্যাপারে এবার পুরোপুরি সচেতন ছিল। এরপর তারা দুটি টার্গেট ঠিক করলো – আফগানিস্তানের পাহাড়ে তালিবান নেতৃত্ব এবং পাকিস্তান বর্ডারে আল কায়েদা নেতৃত্ব।
আমেরিকা নতুন এক টেকনলজি ব্যাবহার করা শুরু করলো –প্রিডেটর ড্রোন, এটি একটি রিমোট কন্ট্রোল দ্বারা নিয়ন্ত্রিত মানববিহীন বিমান, যা আমেরিকা থেকে নিয়ন্ত্রন করা হয়, এটি গুপ্তচর হিসেবে ব্যাবহার করা যায় এবং নির্দিষ্ট কোন টার্গেটে মিসাইল নিক্ষেপ করতে পারে।
আমেরিকা পাকিস্তান বর্ডারের উপর এরপর থেকে ড্রোন পরিচালনা করত এবং বর্ডারে অবস্থিত আল কায়েদা নেতাদের টার্গেট করত। আল কায়েদার সব মেম্বারদের এক জায়গায় অবস্থান করার বিপদ জেনে শুধুমাত্র কিছু মেম্বার বর্ডার এলেকাতে থেকে গেলেন। এই থেকে যাওয়া আল কায়েদা সদস্যরা স্থানীয় গোত্রগুলোর সাথে বন্ধুত্ব স্থাপন করলেন এবং তাদের মতাদর্শ প্রচার করলেন, তারা তাদের সমর্থকদের সাথে গরিলা যুদ্ধকৌশল ও টেকনলজি আইডিয়া শেয়ার করলেন। আল কায়েদার এই নতুন সমর্থকরা পরবর্তীতে TTP (তেহরাক ই তালিবান পাকিস্তান, সংক্ষেপে টি টি পি) নামে পরিচিত হয়। মেহসুদ গোত্রের লোকেরা নেতা হিসেবে নির্বাচিত হয় –আবদুল্লাহ মেহসুদ,বাইতুল্লাহ মেহসুদ এবং বর্তমান নেতা (এই বইটি লিখার সময় পর্যন্ত – ২০১২) হাকিমুল্লাহ মেহসুদ – এক সাহসী যুবক। মেহসুদদের সাথে রাশিয়ার বিরুদ্ধে ৮০ ‘র দশকে জিহাদের সময় থেকেই আল কায়েদা ও তালিবানদের ভাল সম্পর্ক ছিল।
বন্ধুত্ব বিস্তৃতি আর শক্তি বৃদ্ধির লক্ষে তারা স্থানীয় গোত্রগুলোর সাথে একত্রে কাজ করলেন।
আল কায়েদার জন্য এরা পাকিস্তানে অনেক বড় সাপোর্ট হল। আল কায়েদা বুঝতে পারছিল যদি আফগানিস্তানের তালিবানরা কখনও হারের মুখোমুখি হয় এবং আমেরিকার সাথে শান্তিচুক্তির দিকে ঝুকে পড়ে তখন আল কায়েদার হাতে পাকিস্তানের তালিবান থাকার কারনে তারা তাদেরকে এবং তাদের মতাদর্শকে রক্ষা করতে পারবে।
পাকিস্তানের বর্ডারে তীব্র ড্রোন হামলার সময়টাতে এমন এক স্থানে আত্মগোপন করেছিলেন যে দুই- একজন ছাড়া কোন মানুষ জানত না তিনি কোথায় আছেন। ওসামা সেখন থেকেই নির্ভরযোগ্য সদস্যদের মাধ্যমে চিঠি দিয়ে আল কায়েদার বাকি সদস্যদের কাছে তার ম্যাসেজ পাঠাতেন। তার অবস্থান যাতে সনাক্ত করা না যায় সে জন্য তিনি ফোন বা ইন্টারনেট ব্যাবহার করতেন না। তার সেই থাকার স্থান ছিল পাকিস্তানের অ্যাবোটাবাদ, এটি একটি শান্ত ও মধ্যবিত্তদের শহর, কেউ মনে করতে পারবে না যে এখানেই একজন আদর্শিক বড় নেতা রয়েছেন। তিনি আফগানিস্তানের গুহা থেকে দ্রুত তার স্ত্রী ছেলে-মেয়ে ও নাতিনাতনি সহ চলে গিয়েছিলেন ৩-৪ তলার এক বিল্ডিংয়ে।
পাক – আমেরিকা মৈত্রীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ
পাকিস্তানের সাথে আমেরিকার মজবুত মৈত্রীত্ব স্থাপন হল। আমেরিকা পাকিস্তান আর্মিকে তীব্রভাবে চাপ দিতে থাকল পাকিস্তান আর আফগানিস্তানে থাকা তালিবানকে আক্রমণ করতে।
১৯৯০ এর দিকে পাকিস্তান আফগানিস্তানের তালিবানকে অ্যাটাক করার ব্যাপারটি পছন্দ করত না এবং আফগান আর বর্ডারের গোত্রীয় লোকেরাও পাকিস্তানে অ্যাটাক করা পছন্দ করত না। উভয় পক্ষই একে অপরকে নিরাপদ এলাকা হিসেবে ব্যাবহার করত কারন উভয়ই মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ ভুমি ছিল এবং পাকিস্তান এ থেকে নিরাপত্তা বোধ করত এবং তাদের আসল ফোকাস ছিল ইন্ডিয়ার বিরুদ্ধে নিজেদের প্রতিরোধে সব রকমের ও সর্বোচ্চ চেষ্টা করা। আফগান তালিবানরা পাকিস্তানের মতো একটি প্রতিবেশী পেয়ে খুশী হয়েছিলো।
কিন্তু ৯/১১ এর পর আমেরিকা পাকিস্তানকে আর্থিক সাহায্য (যাকে ঘুষ বলা হয়) ও চাপ দিয়েছিলো বর্ডারে আশ্রয় নেওয়া আল কায়েদার মুসলিমদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য। এটা করার ব্যাপারে পাকিস্তান মোটেও খুশী ছিল না এবং তারা ছোটখাটো কিছু অ্যাটাক মঞ্চায়িত করেছিলো যাতে তারা আমেরিকাকে বলতে পারে তারা এই ব্যাপারে কিছুটা সফল হয়েছে। অনেক সময়ই পাকিস্তানি আর্মি বর্ডারের গোত্রগুলোকে হামলার আগে বন্ধুত্বমূলক পূর্বাভাস দিত যে তারা কোন কোন স্থানে হামলা মঞ্চায়িত করতে যাচ্ছে, যাতে গোত্রগুলো আগে থেকে প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে পারে। কিন্তু আমেরিকার সাথে পাকিস্তানের এই প্রতারনার কথা জানার পর আমেরিকা পাকিস্তানের উপর আরও তীব্র চাপ দিতে থাকে এবং ওই বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কে ফাটল ধরে।
আমেরিকা পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর পিছনে আরও অর্থ খরচ করলো এবং তাদেরকে একদিকে অর্থের প্রলোভন দিল আর অন্যদিকে যুদ্ধের ভয় দেখালো। পারভেজ কায়ানি (চরম উগ্র এবং আমেরিকাপন্থী) জেনারেল হিসেবে আসার পর যখন সে আর্মি কম্যান্ডের কন্ট্রোল হাতে পেল,তখন থেকে তালিবানের সাথে পাকিস্তানি আর্মির সম্পর্ক খারাপ হতে লাগলো। সে গোত্রীয় এলাকাগুলোতে নিরীহ লোকদের হত্যা করতে লাগলো এবং এতে অবশ্য আল কায়েদার সাথে গোত্রগুলোর একতা আরও দৃঢ় হল। এটি সেই সময়ে ঘটনা যখন অনেক আল কায়েদা মেম্বাররা করাচীতে আটক হয়েছিলো এবং তাদেরকে পাকিস্তান, বাগ্রাম,গুয়ান্তানামো বে‘র মতো গোপন টর্চার সেলগুলোতে নিয়ে যাওয়া হয়েছিলো, যেখানে তাদেরকে বিভিন্ন উপায়ে টর্চার করা হয়েছিলো (ছাদে ঝুলিয়ে রাখা, চাবুক মারা, ছুরি দিয়ে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ –প্রত্যঙ্গ কাটা, মানসিক টর্চার, পরিবারের সদস্যদের ধর্ষণ ও হত্যার ভয় দেখানো ইত্যাদি)।
এর ফলে আল কায়েদা এবং গোত্রগুলোর (পাক-আফগান তালিবান) মধ্যে পাকিস্তানের প্রতি ঘৃণা আরও বেড়ে গেল। কিন্তু এই ব্যাপারে তালিবানরা পাক-আমেরিকা মিত্রবাহিনীকে আক্রমণ করতে ভয় পেল যে তারা মুসলিম আর্মিকে হত্যা করতে যাচ্ছে।
আল কায়েদা তাদেরকে এ ব্যাপারটি পরিষ্কার করার জন্য কুরআনের এই আয়াতটি মনে করিয়ে দিলেন :
“ হে ইমানদারগণ, ইহুদি ও খ্রিস্টানদের তোমরা বন্ধু হিসেবে গ্রহণ কর না, তারা একে অপরের বিন্ধু, এবং তোমাদের মধ্যে কেউ যদি তাদের কাউকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ কর তবে সেও তাদের অন্তর্ভুক্ত হবে।” (সূরা মায়িদাহ, ৫ : ৫১)
আল কায়েদা এই আয়াতকে দলীল হিসেবে গ্রহণ করে এটা প্রমাণ করতে চেয়েছিল যে আমারিকান খ্রিস্টান আর ন্যাটো বাহিনীকে (যারা প্রধানত খ্রিস্টান এবং প্রায়ই জায়নিস্ট ইহুদিদের আদেশ ও দিকনির্দেশনায় তাদের দিয়ে যুদ্ধ পরিচালিত হয়)। এছাড়া তারা এমন কিছু মুসলিমদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছিলো যারা ইসলামিক শারিয়াহকে প্রতিষ্ঠা করতে চাচ্ছিল – এটা সবচেয়ে জঘন্যতম অপরাধ।
কিন্তু তালিবানরা এই ব্যাপারে এরপরও সন্দেহে ছিলেন যতক্ষণ না পর্যন্ত তারা বুঝতে পেরেছিলেন যে এই পাকিস্তান আর্মি তাদের দ্বীনকে কৌতুক হিসেবে নিয়েছিল এবং বিভিন্ন নিকৃষ্ট উপায়ে তাদের ভাইদেরকে জেলে নির্যাতন করছিলো।
আবু মারওয়ান আল-সুরি ছিলেন এক আফগান-আরব। একবার তাকে বাস চেকপয়েন্টে থামান হল। যে তাকে থামিয়েছিলো সে একজন আফগান আর্মি পেট্রোল ছিল। তিনি তার অস্ত্র উঁচু করে বললেন যে তিনি একজন মুজাহিদ। তারা তাকে ছেড়ে দিয়ে তার দিকে তাকিয়ে হাসলো এবং তাকে গ্রেপ্তারের জন্য প্রস্তুত হল, কিন্তু তিনি গুলি করেননি এই ভয়ে যে তারা মুসলিম এবং এজন্য তাকে বিচার দিবসে আল্লাহ’র কাছে জবাব দিতে হবে। তারা তাকে ধাওয়া করলো এবং পিছন থেকে গুলি করে হত্যা করলো। পশ্চিমা সৈন্যরা এতে খুশী হয়ে তাদের মেডেল দিয়ে পুরস্কৃত করলো। এই ঘটনার পর স্থানীয় লোকেরা প্রচণ্ড রকম রেগে গেল এবং তারা ওই এলাকার সব আর্মি পেট্রোল ও আর্মি ব্যাকআপ ধ্বংস করে দিল।
সাদিক নামের আরেকজন মুজাহিদ, যিনি অধিকৃত কাশ্মীরের জন্য পাকিস্তানি আর্মিকে সাহায্য করার জন্য একত্রে যুদ্ধ করেছিলেন,কিন্তু যখন তিনি আফগান তালিবানদের সাহায্য করার জন্য আফগানিস্তানে হিজরত করে যেতে চাইলেন তখন পাকিস্তানি ISI (গোপন গোয়েন্দা সংস্থা) তাকে গ্রপ্তার করলো। তারা তার এক হাত বেঁধে ঝুলিয়ে রাখল এবং ছুরি দিয়ে তার পায়ে তারকা চিহ্ন খোদাই করে দিল। তিনি বুঝতে পারলেন যে প্রকৃতপক্ষে পাকিস্তানি আর্মি ইসলামের শত্রু যারা কাশ্মীরের মুজাহিদদেরকে দ্বীনের (ইসলামের) কারনে নয় বরং অন্য কোন উদ্দেশ্যে ব্যাবহার করেছিলো। জেলে থাকার সময় তিনি এদের চরম নির্যাতন ও প্রকৃত চেহারা (বিশেষ করে মুজাহিদদের বিরুদ্ধে এদের আচরণ) দেখেছিলেন, তাই তিনি জেল থেকে বের হয়ে তাদের বিরুদ্ধে জিহাদ করতে চেয়েছিলেন।
এই ঘটনাগুলো তালিবান সদস্যদের গোত্রীয় যোদ্ধা থেকে আল কায়েদার ভাবাদর্শীতে পরিনত করে এবং এর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের কাছে নিজেদের সম্পৃক্ত করে। আমেরিকার সাথে পাকিস্তানের এই পাশবিক মৈত্রীত্ব তালিবান যোদ্ধাদের একটি নতুন জেনারেশন তৈরী করে যারা কিনা আমেরিকা ও তার বন্ধুদের আরও তীব্র বিরোধিতা করে, ভবিষ্যতে যেকোন শান্তি চুক্তির সম্ভাবনা প্রত্যাখ্যান করে এবং পাকিস্তান সরকারকে চাপ দেয় গোত্রীয় যুদ্ধের পরিবর্তে জীবনের উদ্দেশ্য হিসেবে আমেরিকার স্বার্থের বিরুদ্ধে লড়াই করতে।
আল কায়েদা এবং তালিবানের পরবর্তী প্রজন্ম
ওসামা বিন লাদেন এবং আবদুল্লাহ আযযাম কতৃক তোরা বোরা পাহাড়ে (১৯৮০-২০০৪) গঠিত প্রাথমিক আল কায়েদা মধ্যবিত্ত আরব ও মুসলিম নিয়ে গঠন করা হয়েছিলো যারা প্রধানত ইঞ্জিনিয়ারিং,মেডিসিন, ইকনমিক্স ইত্যাদি বিষয় নিয়ে লেখাপড়া করতেন। তারা ছিলেন শিক্ষিত এবং সুন্দর ভবিষ্যতের আশা করতেন। কিন্তু তারা এর থেকে বড় কোন লক্ষে অর্থাৎ আল্লাহর দ্বীনকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য আল কায়েদায় যোগ দিয়েছিলেন।
আল কায়েদা ও তালিবানের নতুন প্রজন্মও (২০০৫-২০১২ +) মধ্যবিত্ত মুসলিম পরিবারের যুবক। কিন্তু তারা পূর্ববর্তী প্রজন্মের তুলনায় আরও বেশী বিপদজনক ও টেকনলজিক্যালী এগিয়ে।
পুরনো এবং নতুন প্রজন্ম এর তুলনা
(১) পুরনো প্রজন্মের তালিবানরা প্রায়ই পাকিস্তানি আর্মির সাথে বন্ধুভাবাপন্ন আচরণ করত এটা মনে করে যে তারা মুসলিম এবং তাদের কোন ক্ষতি করবে না। (কারন রাশিয়ার বিরদ্ধে জিহাদের সময় পাকিস্তানি সরকার আফগান তালিবানদের সাহায্য করেছিলো)।
নতুন প্রজন্মের তালিবানরা পাকিস্তানি এবং পশ্চিমা আর্মির নিষ্ঠুরতা দেখছে এবং বুঝতে পেড়েছিল তাদের বিশ্বস্ততার ব্যাপারে। এটি পুর্ববর্তী প্রজন্মের তুলনায় তাদের আরও বেশী চরমপন্থী করলো।
(২) নতুন প্রজন্মের তালিবানরদের পুরনো প্রজন্মের তালিবানদের তুলনায় আল কায়েদার মতাদর্শ আরও বেশী করে দেখা যায়। পুরনো প্রজন্মের তালিবানদের উদ্দেশ্য ছিল একটি ন্যাশনাল এজেন্ডা ( স্থানীয় গোত্রগুলো নিয়ে ), কিন্তু নতুন প্রজন্মের তালিবানদের এজেন্ডা হল গ্লোবাল কারন তারা জাতীয় বা গোত্রীয় পরিচয়ের থেকে মুসলিম পরিচয়কেই প্রাধান্য দেয়, যদিও এটার জন্য তাদের গোত্রের নেতার কথা বিপরীতে যেতে হয়। আল কায়েদার জন্য এটি কয়েক ধাপ এগিয়ে জাওয়া যাদের শতভাগ অনুগত কমান্ডার দরকার।
(৩) টেকনলজিক্যাল স্কিলের উন্নতিসাধন: পুরনো প্রজন্মের তালিবানের তুলনায় নতুন প্রজন্ম বাস্তবধর্মী প্রযুক্তির ব্যাপারে আরও উন্মুক্ত, এটা প্রধানত এজন্য যে এখন ইন্টারনেট ও অবাধ তথ্যের যুগ।
আল কায়েদার সাথে তারা মেশার কারনে স্পষ্টভাবেই তাদের মধ্যে গতানুগতিক দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন হতে দেখা যায়, এই যেমন পুরনো প্রজন্মের তালিবানের তুলনায় নতুন প্রজন্মের তালিবানের মধ্যে আত্মঘাতী হামলা অনেক বেশী হতে দেখা যায়, যা কিনা পুরনদের কাছে অকল্পনীয় ছিল।
সারমর্ম হিসেবে বলা যায়, নতুন প্রজন্মের তালিবান এবং আল কায়েদা আরও সাহসী, পুরো বিশ্বে সংখ্যায় আরও অনেক বড়, প্রযুক্তিগত ক্ষেত্রে বাস্তবধর্মী, আদর্শিকভাবে আরও বেশী দুর্দমনীয় হয়েছে এবং বর্তমানে তাদের একটি আন্তর্জাতিক এজেন্ডা আছে – সেটা হল জায়নিস্টদের কাছ থেকে জেরুজালেম পুনরুদ্ধার করা এবং খিলাফাহ প্রতিষ্ঠা করা।
এসব কিছু বাস্তবায়ন করা থেকে তাদের রোধ করা যেত শুধু একটা বক্তব্য দিয়ে –ওসামাকে দেখা মাত্রই বিমান হামলা চলবে (৯/১১ এর পূর্বে)। কিন্তু লোভ যেন কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তিদেরকে পেয়ে বসল, আর আজ যুক্তরাষ্ট্রের জন্য সেই ভুলের মাশুল দেওয়া প্রায় অসম্ভব যার ফলাফল হল আজকের ক্রমবর্ধমান ট্রিলিয়ন ডলার ঋণ।
অনেক সত্য লুক্কায়িত আছে আমাদের কাছে । আমরা শুধু বিবিসি কিংবা রয়ার্টস এর নিউজ নিয়েই ব্যস্ত থাকি কিন্তু কখনো তালেবানের অফিসিয়াল সাইট ভিজিট করি না ! ৯৫% সাইটের ঠিকানা জানি না ! আমি বলছি না আপনাকে তালেবানদের নিউজকে হুবহু বিলিভ করতে হবে । কিন্তু কুফফার মিডিয়ার নিউজ জাস্টিফাই না করে বিলিভ করা কি সুরা হুজুরাতের ৬ নাম্বার আয়াতের বিরুদ্ধে গেলো না ?
ব্ল্যাক ফ্লাগ সিরিজের থেকে দশটি লেখা আমি টুডে ব্লগে দিবো ইনশা আল্লাহ । তবে মডুদের প্রতি অনুরোধ করছি এই লেখাগুলো সরাবেন না । এই লেখাগুলো আপনাদের নীতিমালার সাথে সাঙ্ঘ্রষিক নয় । সত্যকে জানানোর চেষ্টা মাত্র । আর আমি কোন দলের সাথেও যুক্ত নয়
বিষয়: বিবিধ
২৫৭৩ বার পঠিত, ৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মুসলিম-সমাজ এখন নয়, অনেক আগে থেকেই অন্যদের ক্রীড়নক হিসাবে কাজ করছে। বাহ্যিকভাবে সবাই হিতাকাংক্ষী, গভীরে দালাল। কেউ সচেতনভাবে, কেউ অচেতনভাবে। আপনার আলোচনার ভাঁজে ভাঁজে তাই ফুটে উঠছে।
আরো লিখুন। পড়ি আর দেখি দালালির কত রকমফের আছে।
ধন্যবাদ।
এই পোষ্টটি দেথতে পারেন। পাকিস্তান সেনাবাহিনি যাই হোক না কেন সেটার প্রতিশোধ এভাবে নেওয়া কি যায় বা জায়েজ?
সার্বক্ষনিক হিন্দু ভারত এর মুখোমুখি থাকা পাকিস্তানকে অস্থিতিশিল করেও কি লাভ হচ্ছে তাদের।
“ নতুন প্রজন্মের তালিবান এবং আল কায়েদা আরও সাহসী, পুরো বিশ্বে সংখ্যায় আরও অনেক বড়, প্রযুক্তিগত ক্ষেত্রে বাস্তবধর্মী, আদর্শিকভাবে আরও বেশী দুর্দমনীয় হয়েছে এবং বর্তমানে তাদের একটি আন্তর্জাতিক এজেন্ডা আছে – সেটা হল জায়নিস্টদের কাছ থেকে জেরুজালেম পুনরুদ্ধার করা এবং খিলাফাহ প্রতিষ্ঠা করা।
“
কিছু মনে করবেন না । দয়া করে বলবেন কি :
১। ইসলাম প্রতিশোধপ্রবণ হওয়ার শিক্ষা দেয় কি ?
২। ইসলাম প্রতিশোধ নেওয়ার বিষয়টাকে ইতিবাচক হিসেবে নিতে শিক্ষা দেয় কি ? না নেতিবাচকভাবে ?
৩। ইসলাম শব্দের অর্থ কি ? ইসলাম শব্দের অর্থ যদি আত্মসমর্পণ করাও হয়, তাহলে যার উপর আত্মসম্পর্ণ করার কথা বলা হয় তিনি কি ইসলাম পছন্দ লোকদের এমন প্রতিশোধপরায়ণ হতে বলেছেন না তার বার্তাবাহককে বলেছেন ?
দেখুন, প্রতিশোধ নিয়ে কেহ মহৎ হতে পারে না ।
আমার এক ভাই মারা যাওয়ার কারণ আমি দেড় বছর পর জানতে পারি । আমি এই ব্যাপারটা বাড়িতে বলি । আমার এই কথা শুনে আমার বাবা বলেন আমি জানতাম । আমরা অবাক হলাম ।
ব্যাপারটা আমি ফেসবুকের গ্রপ Justice For Dr. Shamarukh Mahjabin এ তুলে ধরেছিলাম আর একটা স্যাটাসেও তুলে ধরেছিলাম । আমি বলেছিলাম :
” ফেসবুক অনেক সময় সত্য কথাকে প্রকাশ করে দেয় । আমার এক ভাই ছিল ডাক্তার । এফসিপিএস ফাস্ট পার্ট শেষ করেছিলো আটাশ বছর বয়সে । বিএসএস পরীক্ষার মৌখিক অংশটা সে দিয়ে যেতে পারেনি । কারণ তার কয়েক দিন আগে সে মারা যায় কক্সবাজারে ।
তার মৃত্যুর সময় ও মৃত্যুর কারণ বন্ধুদের কাছ হতে যা আমরা জেনেছিলাম তা পরে আমার অনুসন্ধানে ভুল প্রমাণিত হয় ।
তার মৃত্যুর কারণ ফেসবুকে জানলাম প্রায় দেড় বছর পর । কিন্তু যখন জানলাম তখন আমাদের কিছুই করার ছিল না ।
আমি আমার ফেসবুকের তরুণ বন্ধুদের অনুরোদ করছি :
১. বন্ধুদের সাথে চলাফেরা করার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকুন ।
২. বাবা-মা ও পরিবারের সদস্যরা হলো সবচেয়ে কাছের বন্ধু । তাদের সাথে সব বিষয় শেয়ার করুন ।
৩. অন্য ধর্মের লোক এবং অসম্ভব আদর্শ ধারণকারী লোকদের হতে দুরে থাকুন । কারণ তাদের সাথে সামান্য মত-পার্থক্যই আপনার জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটতে পারে ।
৪. আপনি আপনার বিপরীত লিঙ্গের ফ্রেন্ডদের ব্যাপারে সতর্ক থাকুন । তারা আপনার জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে । উপরন্তু এধরণের সম্পর্কের কোন দায়িত্ববোধ নেই এবং বৈধতার দিক থেকেও দুর্বল । ”
আপনাদের বলছি :
১। আমরা মুসলিম । ইসলাম ধর্মের লোকদের সংখ্যা পৃথিবীতে ক্রমবর্ধমান । এক সময় ইসলাম ধর্মের লোকরা সংখ্যাগরিষ্ঠ হবে । অমুসলিমরা আমাদের সব কাজ ও দৃষ্টিভঙ্গিকে নিরীক্ষণের দৃষ্টিতে দেখে । তাদের কিছু অংশ সন্দেহ ও প্রতিপক্ষ ভেবে সব কিছু বিচার করে ।
২। আমরা সব কিছুই শান্তিপূর্ণপন্হায় করতে পারি । শান্তিপূর্ণপন্হায় যা কিছু করা হোক না কেন তাতে সবারই সমর্থন থাকে ।
৩। বাংলাদেশে ইসলাম অশান্তির মাধ্যমে আসেনি । শান্তি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ইসলাম এসেছে । ১৩০৩ সালে শাহজালাল রহ অত্যাচারীদের অত্যাচার নির্যাতন নিপীড়ন দুর করার জন্য বাংলাদেশের এক কোনায় এসেছিলেন । .. তার পরের ইতিহাস আমাদের জানা । আমরা কি এসব ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেবো না ।
আমাদের অবশ্যই তালেবান-আল কায়দা - আই এস - বোকো হারাম - আহলে হাদিস .. ইত্যাদি ইত্যাদি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হতে দুরে থাকতে হবে । এব্যাপারে সহিহ হাদিস পর্যন্ত রয়েছে । তাতে বলা হয়েছে যে পূর্ব দেশ হতে এক দল লোক উদয় হবে তাদের দেখে চরম পরহেজগার মনে হবে , তাদের পরহেজগারী বা কুুরআন তেলোয়াত.. ইত্যাদি ইত্যাদি তাদের গলার নিচে নামবে না । আর এই হাদিসটাতে আমাদের এসব দল হতে দুরে থাকার উপদেশ দেওয়ার পাশাপাশি তাদের লোকদের হত্যা করার নির্দেশ পর্যন্ত দেওয়া হয়েছে । আমরা তাদের হত্যা করবো কি - তারাই আমাদের অস্তিত্ব ও সম্মানের জন্য হুমকি হয়ে দাড়িয়েছে ।
অনেক বিষয় উঠে এসেছে আপনার লেখায়।চালিয়ে যান...........!!
মন্তব্য করতে লগইন করুন