ড. মরিস বুকইলী: যেভাবে মুসলিম হলেন

লিখেছেন লিখেছেন মহাশয় ২৭ মে, ২০১৩, ০৩:২০:১৫ রাত



ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া মিত্রা ১৯৮১-১৯৯৫ সাল পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট ছিলেন। তিনি আশির দশকের শেষের দিকে ফিরাউনের মমিকে নিয়ে প্রত্নতাত্তিক গবেষণার জন্য মিসরের কাছে অনুরোধ জানালেন। মিসরের সরকার তাতে রাজি হলে কায়রো থেকে ফিরাউনের এল প্যারিসে। প্লেনের সিড়ি থেকেই ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট, তার মন্ত্রীবর্গ ও ফ্রান্সের সিনিয়র অফিসারগণ মাথা নিচু করে ফিরাউনকে স্বাগত জানালেন!!!

ফিরাউনকে জাঁকালো প্যারেডের মাধ্যমে রাজকীয়ভাবে বরণ করে ফ্রান্সের প্রত্নতাত্তিক কেন্দ্রের একটা বিশেষ ওয়ার্ডে নিয়ে যাওয়া হল, যেখানে ফ্রান্সের সবচেয়ে বড় সার্জনরা রয়েছে আর তারা ফিরাউনের মমির ময়নাতদন্ত করে সেটা স্টাডি করবে ও এর গোপনীয়তা উদঘাটন করবে।

মমি গবেষণার প্রধান সার্জন ছিলেন প্রফেসর ড. মরিস বুকাইলি। থেরাপিস্ট যারা ছিলেন তারা মমিটাকে পুনর্গঠন (ক্ষত অংশগুলো ঠিক করা) করতে চাচ্ছিল, আর ড. মরিস বুকাইলি দৃষ্টি দিচ্ছিলেন যে কিভাবে ফিরাউন মারা গেল! পরিশেষে, রাতের শেষের দিকে ফাইনাল রেজাল্ট আসলো। যাতে বলা হয়েছে তার শরীরে লবণের অংশ আছে আর ইহাই সবচেয়ে বড় প্রমাণ যে সে (ফিরাউন) ডুবে মারা গিয়েছিল আর মৃত্যু বরণের সঙ্গে সঙ্গে সমুদ্র (লোহিত সাগর) থেকে তোলা হয়েছিল তারপর লাশ দ্রুত মমি করা হয়েছিল। এখানে ফিরাউনের মমিটি প্রফেসর মরিসকে হতবুদ্ধি করে দিল, যে কিভাবে এই মমি অন্য মমিদের তুলনায় সুরক্ষিত অবস্থায় থাকল, যা এটা সমুদ্র থেকে তোলা হয়েছে। কারণ আদ্র পরিবেশে ব্যাকটেরিয়া দ্রুত বংশ বৃদ্ধি করে আর প্রতিটি আদ্র বস্তুকে দ্রুত ধ্বংস করে দিয়ে থাকে।

ড. মরিস ফাইনাল রিপোর্ট তৈরি করল যাতে তিনি বললেন: এটা একটা নতুন আবিস্কার। সেই সময় তাকে কেউ ফেরাউনের এই ডুবে যাওয়া মমি সম্পর্কে প্রকাশ্যে আলোচনা না করার পরার্মশ দেন, কিন্তু তিনি দৃঢ়ভাবে এর প্রতিবাদ করে বললেন যে, এরকম একটা বিশাল আবিস্কার যেটা আধুনিক বিজ্ঞানের উন্নতির জন্য সহায়তা করবে সেটা জানানো যাবেনা!!

কেউ একজন তাকে বলল যে কুরআনে ফিরাউনের ডুবে যাওয়া ও তার লাশ সংরক্ষণের ব্যাপারে বিশদ আলোচনা এসেছে। এই ঘটনা শুনে ডা. মরিস বিস্মিত হয়ে গেলেন এবং প্রশ্ন করতে লাগলেন, এটা কিভাবে সম্ভব?? এই মমি পাওয়া গিয়েছে মোটে ১৮৮১ সালে, আর কুরআন নাজিল হয়েছে আজ থেকে ১৪০০ বছর আগে!! আর প্রাচীন আরবেরা তো মমি করার পদ্ধতিই জানতো না, মাত্র কয়েক দশক আগে তা আমাদের হাতে আবিস্কৃত হয়!! ড. বুকাইলি ফিরাউনের লাশের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে গভীরভাবে ভাবছিলেন যে, মুসলিমদের কুরআনে কিভাবে ফিরাউনের লাশ সংরক্ষণের কথা এসেছে??

বাইবেলে ফিরাউন কর্তৃক মুসা (আ.)-এর পিছু নেয়ার কথা বলা আছে কিন্তু ফিরাউনের লাশের পরিনতি সম্পর্কে বিশেষ কিছু বলা নাই। তিনি নিজেকেই প্রশ্ন করছিলেন আর ভাবতে ছিলেন যে, এটা কিভাবে ধারণা করা যায় যে, এই মমি যার সে মুসার (আ.)-এর পিছু নিয়েছিল? আর এটা কেমন করে সম্ভব যে, মুহাম্মদ (সা.) ১৪০০ বছর আগেই এটা সম্পর্কে জানতেন?? এবং আরো অনেক কিছু.......।

ডা. মরিস সেই রাতে ঘুমাতে পারলেন না, তিনি তোরাহ (তাওরাত) আনালেন এবং সেটা পড়লেন। তোরাহতে বলা আছে, পানি আসলো এবং ফিরাউনের সৈন্য এবং তাদের যানবাহনগুলোকে ঢেকে দিল, যারা সমুদ্রে ঢুকল তাদের কেউই বাঁচতে পারল না। ড. বুকাইলি আশ্চার্য হয়ে দেখলেন যে, তাওরাতে লাশের সংরক্ষণের ব্যাপারে কিছু বলা নাই!!

অতপার তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন যে, তিনি মুসলিম দেশে যাবেন এবং সেখানে প্রখ্যাত মুসলিম ময়নাতদন্তে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের সাক্ষাৎকার নিবেন ও আলোচনা করবেন। তিনি তথায় পৌছে ফিরাউনের লাশ ডুবে যাওয়া পরবর্তী সংরক্ষণের যে রেজাল্ট পেয়েছেন তা নিয়ে আলেচনা করেন, তখন একজন মুসলিম বিশেষজ্ঞ পবিত্র কুরআন খুললেন এবং আয়াতটা ড. বুকাইলিকে শুনালেন যেখানে সর্বশক্তিমান আল্লাহ সুবহানাহুওয়া তা’য়ালা বলেনঃ

"“অতএব, আজকের দিনে বাঁচিয়ে দিচ্ছি আমি তোমার দেহকে যাতে তোমার পশ্চাদবর্তীদের জন্য নিদর্শন হতে পারে। আর নিঃসন্দেহে বহু লোক আমার মহাশক্তির প্রতি লক্ষ্য করে না।"” [আল-কুরআন; সুরাঃ ১০, আয়াতঃ ৯২]

তিনি এই আয়াতের দ্বারা খুবই প্রভাবিত ও অভিভূত হয়ে তখনি ইসলাম গ্রহনের সিদ্ধান্ত নিয়ে উচ্চ কন্ঠে ঘোষনা করলেন যে, আমি ইসলামে প্রবেশ করেছি এবং আমি এই কুরআনে বিশ্বাসী। [সুবহানাল্লাহ]

ডা. মরিস বুকাইলি ফ্রান্স ফিরে গেলেন এক ভিন্ন অবস্থায়। ফ্রান্সে ১০ বছর তিনি আর কোন ডাক্তারি প্রকটিস করেন নি বরং এই সময়ে তিনি আরবী ভাষা শিখেছেন আর পবিত্র কুরআনে কোন বিজ্ঞান নিয়ে গবেষনা করেছেন।

সব শেষে তিনি পবিত্র কুরআনের এই আয়াতটির গুরুত্ব অনুধাকন করতে পারলেন যাতে বলা আছেঃ

"“এতে মিথ্যার প্রভাব নেই, সামনের দিক থেকেও নেই এবং পেছন দিক থেকেও নেই। এটা প্রজ্ঞাময়, প্রশংসিত আল্লাহর পক্ষ থেকে অবতীর্ণ।"

” [আল-কুরআন; সুরাঃ ৪১, আয়াতঃ ৪২]

১৯৭৬ সালে ড. মরিস বুকাইলি বাইবেল, কুরআন এবং বিজ্ঞান” নামে একটি বই লেখেন যা পশ্চিমা বিজ্ঞানীদের টনক নাড়িয়ে দেয়। যা বেস্ট সেলার হয়। যা প্রায় ৫০ টিরও বেশি ভাষায় অনূদিত হয়েছে!!





(সংশোধিত, সংগ্রহিত)

সূত্র:

link-1.

link-2.

বিষয়: বিবিধ

৫০১৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File