খ্যাতনামা কথাসাহিত্যিক শফীউদ্দিন সরদার ও বাংলাদেশ: জানা-অজানা
লিখেছেন লিখেছেন মহাশয় ০৯ মে, ২০১৩, ১১:৫১:৩৬ রাত
ইসলামী মূল্যবোধের ধারক, আত্মপরিচয় বিমুখ, রাষ্ট্র কর্তৃক উপেক্ষিত, খ্যাতনামা কথাসাহিত্যিক, বহু গ্রন্থের রচয়িতা শফীউদ্দিন সরদার। ১৯৩৪ সালের ১লা মে নাটোর সদর উপজেলার হাটবিলা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন বাংলা ঐতিহাসিক উপন্যাসের কালজয়ী এ কথাশিল্পী। যিনি ঐতিহাসিক ও ঐতিহ্যবাহী মুসলিম বীরত্বগাঁথার মহান উপস্থাপক। তিনি আমাদের সবচেয়ে বিশ্বস্ত কথাশিল্পী।
তিনি ১৯৫০ সালে মেট্রিকুলেশন পাশ করার পর রংপুর কারমাইকেল কলেজ থেকে আইএবিএ অনার্স এবং এমএ ডিগ্রি লাভ করেন। পরে তিনি লন্ডন থেকে ডিপ্লোমা-ইন-এডুকেশন ডিগ্রি লাভ করেন। নিজ গ্রামের স্কুলে প্রধান শিক্ষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করে তিনি একে একে রাজশাহী সরকারি কলেজ ও সরদহ ক্যাডেট কলেজে অধ্যাপনা এবং বানেশ্বর কলেজ ও নাটোর রাণী ভবাণী সরকারি মহিলা কলেজে অধ্যক্ষ হিসেবে শিক্ষকতা করেন।
১৯৮২ থেকে ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত তিনি প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।
তার রচিত প্রথম সামাজিক উপন্যাস ‘চলনবিলের পদাবলি’ দেশের কোনো প্রকাশনা সংস্থা প্রকাশ না করায় তিনি আজীবন ঐতিহাসিক ও সামাজিক উপন্যাস রচনার সিন্ধান্ত নেন। সেই থেকে তিনি একে একে রচনা করেন রুপনগরের বন্দী, বখতিয়ারের তালোয়ার, গৌড় থেকে সোনারগাঁ, যায় বেলা অবেলায়, বিদ্রোহী জাতক, বারো পাইকার দূর্গ, রাজ বিহঙ্গ, শেষ প্রহরী, বারো ভূঁইয়া উপাখ্যান, প্রেম ও পূর্ণিমা, বিপন্ন প্রহর, সূর্যাস্ত, পথহারা পাখি, বৈরী বসতী, অন্তরে প্রান্তরে, দাবানল, ঠিকানা, ঝড়মুখো ঘর, অবৈধ অরণ্য, দখল, রোহিণী নদীর তীরে ও ঈমানদার-এর মতো জনপ্রিয় ঐতিহাসিক উপন্যাস। এ ছাড়াও অপূর্ব অপেরা, শীত বসন্তের গীত, পাষাণী, দুপুড়ের পর, রাজ্য ও রাজকন্যারা, থার্ড পণ্ডিত, মুসাফির ও গুনাগার নামে বেশ কয়েকটি সামাজিক উপন্যাস বরই উপভোগ্য। তার রচিত ভ্রমণ কাহিনীর মধ্যে ”সুদূর মক্কা মদীনার পথে’ উল্লেখযোগ্য। কল্প কাহিনী সুলতানার দেহরক্ষী, রম্য রচনা রাম ছাগলের আব্বাজান, চার চাঁন্দের কেচ্ছা ও অমরত্বের সন্ধানে উল্লেখযোগ্য।
শিশু সাহিত্য উল্লেখ করার মতো ভূতের মেয়ে লীলাবতী, পরীরাজ্যের রাজকন্যা ও রাজার মেয়ে কবিরাজ। ৭৯ বছর বয়সে গত এক বছরে তিনি বখতিয়ারের তিন ইয়ার, রাজ নন্দিনী, লা-ওয়ারিশ, রূপনগরের বন্দী ও দ্বিপান্তরের বৃত্তান্ত নামে পাঁচটি বই লিখেছেন। তার লেখা বইয়ের সংখ্যা ৫০-এর অধিক। তিনি আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ লেখা লেখে যেতে চান।
কবি আল মাহমুদের ভাষায় ‘শফীউদ্দিন সরদার বাংলাদেশের সমকালীন সাহিত্যে এক বিচিত্র অভিজ্ঞতা নিয়ে উপস্থিত হয়েছেন। যিনি ঐতিহাসিক ও ঐতিহ্যবাহী মুসলিম বীরত্বগাঁথার মহান উপস্থাপক। তিনি আমাদের সবচেয়ে বিশ্বস্ত কথাশিল্পী। কবি আল মাহমুদের পছন্দের কথাশিল্পী আজও রাষ্ট্রীয়ভাবে তার কর্মের কোনো স্বীকৃতি পান নাই।
এদিকে, ১লা মে (২০১৩) বুধবার শহরের কাপুড়িয়া পট্টি এলাকায় লেখকের সরদার মঞ্জিলের লেখাঘর চত্বরে পালন করা হয় এই সাহিত্যিকের জন্মদিন। এ সময় স্থানীয় সাংবাদিক, সাহিত্যিক, রাজনীতিবিদ ও এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিরা তাকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান।
অতিথিরা সবাই লেখকের দীর্ঘ জীবন কামনা করে তার প্রকৃত মুল্যায়নে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। পরে শফীউদ্দিন সরদার তার অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে বলেন, "তার সব লেখাই কিছুটা ইসলামী ভাবধারার এবং শালিনতাপূর্ণ। বর্তমানে রাষ্ট্র ক্ষমতায় ধর্ম নিরপেক্ষ সরকার। ফলে ইসলামিক ফাউন্ডেশন ও বাংলা একাডেমী তার কোনো বই প্রকাশ করছে না । এমনকি একই কারণে গত চার বছর তার কোনো বই কোনো মেলায়ও স্থান পায়নি"।
ইসলামী ভাবধারার এবং শালিনতাপূর্ণ সাহিত্যকে কোণঠাঁসা করে রাখার এ প্রবণতা খুবই নিন্দনীয়।
সংগ্রহিত, সংক্ষিপ্ত।
বিষয়: বিবিধ
১৭৬৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন