আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী : কারাপ্রকোষ্ঠে জনতার প্রিয় মুখ

লিখেছেন লিখেছেন মহাশয় ০৯ মে, ২০১৩, ১০:৩৩:৫৭ সকাল

সৌম্য সুন্দর চেহারার এক ষাটোর্ধ সুপুরুষ। সরলতা, আত্মবিশ্বাস ও পুণ্যময় অভিব্যক্তি তার চোখে-মুখে। দেখামাত্রই শ্রদ্ধা জমে মনের কোণে। আসলে তিনি এমনই এক ব্যক্তি। জীবনে শিক্ষাচর্চা ছাড়া আর কিছুই করেননি তিনি। উত্তর চট্টলার এক বনেদী দরবেশ পরিবারে তার জন্ম। পিতা উপমহাদেশের অন্যতম সেরা হাদীসবিদ যার রচিত গ্রন্থ ভারত, পাকিস্তান এমনকি বিশ্বজুড়ে কওমী ধারা সকল মাদরাসায় উপ-পাঠ্যসূচির অংশ। ‘তানযীমুল আশতাত’ গ্রন্থের সংকলন শাইখুল হাদীস আল্লামা আবুল হাসান তার নাম। সুযোগ্য পুত্র জানুয়েদ বাবুনগরীও পিতার মতোই হাদীস বিশারদ। দীর্ঘ ৪০ বছর তিনি হাদীস পড়াচ্ছেন। বেশির ভাগ সময় উপমহাদেশের প্রাচীনতম ও ঐতিহ্যবাহী মাদরাসা দারুল উলুম মুঈনুল ইসলাম হাটহাজারীতে। তার মাতুল বংশও ইসলামী শিক্ষা ও আধ্যাত্মিক দীক্ষায় লালনকারী বিখ্যাত বংশ। আল্লামা হারুন বাবুনগরী তার মাতামহ। ইসলামী চেতনার পুরোধা আল্লামা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী তার মামা। জানুয়েদ বাবুনগরী একজন খাঁটি শিক্ষাবিদ। প্রামাণ্য বিষয়ে গবেষণা ও লেখালেখিও তার কাজ। আন্দোলন, সংগ্রাম বা প্রচলিত রাজনৈতিতে তার ভূমিকা ছিল না বললেই চলে।

বিগত কিছুদিন ধরে সমাজ ও রাষ্ট্রে ইসলামবিরোধী নানা প্রবণতা দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্র, ঈমানবিরোধী কার্যকলাপ মহানবী (সা.) এর প্রতি ইতিহাসের জঘন্যতম কটূক্তি দেশের ধর্মপ্রাণ মানুষের পাশাপাশি তাকেও উদ্বিগ্ন করে। তিনি হাটহাজারীর নবতিপুর আধ্যাত্মিক শায়েখ, দেশের শীর্ষ আলেম আল্লামা শাহ আহমাদ শফীর আহ্বানে গঠিত হেফাজতে ইসলাম আন্দোলনে যোগ দিয়ে এর মহাসচিব মনোনীত হন।

বিগত ৬ এপ্রিলের লংমার্চ, পরবর্তী নানা কর্মসূচি, দেশব্যাপী জনসমাবেশ, গণসংযোগ, আন্দোলনের গতি-প্রকৃতি, সবশেষে ৫ মে ঐতিহাসিক ঢাকা অবরোধ তার নেতৃত্বকে করেছে অনেক শাণিত ও দৃঢ়। মিডিয়ার কল্যাণে তার জ্যোতিময় চেহারার সাথে যেমন মানুষ পরিচিত হয়, গণসংযোগের ফলে তার ব্যক্তিত্বের পরিচয়ও পেতে শুরু করে হাজারো মানুষ। ৫ মে শেষ রাতে মতিঝিলে শাপলা চত্বর ঘটনার সময় তিনি মঞ্চে ছিলেন। হাজার হাজার র‌্যাব, বিজিবি, পুলিশ ও সরকারী নানা লোকজনের সমবেত যৌথ আক্রমণে ল-ভ- শাপলা চত্বরের বিষাদময় কাহিনী পেছনে ফেলে তিনি যখন লালবাগের পথে তখন ঢাকেশ্বরী এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। শাহ আহমাদ শফীকে যখন পুলিশ চট্টগ্রামের বিমানে তুলে দেয়, তখন তিনি বলেছিলেন, বিমানে সীট থাকলে আল্লামা জুনায়েদকেও আমার সঙ্গে যেতে দেয়া হোক। পুলিশের জবাব ছিল, বিমানে আসন থাকা সত্ত্বেও তাকে যেতে দেয়া যাবে না। তার ব্যাপারে উপরের নির্দেশ অন্যরকম।

এরপর যখন তার গ্রেফতারের সংবাদ মিডিয়ায় প্রচারিত হয়, তখন দেশব্যাপী তার ছাত্র, ভক্ত ও পরিচিতদের মাঝে নেমে আসে শোক-দুঃখের আবহ। আদালতে হাজির করার সময় বাবুনগরীর নিষ্পাপ চাহনি ও অমলিন অভিব্যক্তি অনেক কিছুই বলে দেয়। বিচারক তাকে ৯ দিনের রিমান্ড দিলে দেশব্যাপী হেফাজতের নেতাকর্মী, সমর্থক ও কল্যাণকামী সমাজে নেমে আসে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার ছায়া।

গতকাল ছিল তার রিমান্ডের প্রথম দিন। তিনি তার সরল ভাষায় সত্যকথনে জবাব দিয়েছেন নানা জিজ্ঞাসার। কোরআনের জন্য যারা জীবন উৎসর্গ করে রেখেছেন, যারা কোরআন পড়েন, মুখস্থ করেন, কোরআন-সুন্নাহকে সম্মান ও শ্রদ্ধা করেন এবং মানুষকে এসব শেখান তারা কী করে কোরআনে আগুন দিতে পারে? যারা টাকা-পয়সা, স্বর্ণ, হীরা-মনি-মুক্তা পায়ে ঠেলে সাধনার জীবনযাপন করেন তারা কেন ব্যাংক লুটের চিন্তা করবেন? এসব বিষয় সরকারী তরফে বলা হয়, মিডিয়ায় উচ্চারিত হওয়ায় হেফাজত সমর্থকরা ভীষণ মর্মাহত।

গত পরশু আদালতে তার আইনজীবীদের মাধ্যমে জানা যায়, তিনি আদালতে থাকার পুরো সময়টিজুড়েই অন্তত তিনশ’ আইনজীবী তাকে ঘিরে রাখেন। তারা আল্লাহু আকবার ধ্বনি তুলে মিছিল করেন। বাঙালীর মুক্তি চেয়ে নানা স্লোগানও দেন তারা। উচ্চ আদালতে হেফাজতের সমাবেশে নিহত অজ্ঞাতসংখ্যক আলেম-ওলামা, হাফেজ, ক্বারী, ইমাম, খতীব, পীর-মাশায়েখ ও ধর্মপ্রাণ মানুষের গায়েবানা জানাযা অনুষ্ঠিত হয়। দেশের নানা প্রান্ত থেকে আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরীর শান্তি ও মুক্তি কামনা করে সরকারের উচ্চপর্যায়ের নানা জনকে কোনো ও এসএমএস পাঠান তাদের পরিচিত ব্যক্তিরা। শোনা গেছে, কারাগারে রাত-দিন ২৪ ঘন্টা নীরব ধ্যান, মগ্নতা ও পাক কালাম শরীফ অনুধ্যানের মাধ্যমে সময় কাটাচ্ছেন। এ যুগের জুনায়েদ বাগদাদী আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী। যারা তার কাছে ঘেঁষতে পারছেন তারাই তার প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে দোয়া চাইছেন। কেউ কেউ মাথায় ও বুকে ফুঁক নিচ্ছেন। সংশ্লিষ্ট পুলিশের সদস্যদের মনেও আল্লামা বাবুনগরীর প্রতি বিশেষ সম্মানবোধ। দেশে নানা প্রান্তে তার হাজার হাজার ছাত্র ও তাদের অভিভাবক-আত্মীয়দের আন্তরিক দোয়া, মুনাজাত কান্না-আহাজারির ফলে আল্লামা জুনায়েদ সকল ষড়যন্ত্র, মিথ্যা, বানোয়াট, বিভ্রান্তি ও দায় থেকে মুক্ত হয়ে শিগগিরই ফিরে আসবেন। তার দীক্ষাদানের পবিত্র মসনদে। আমৃত্যু চালিয়ে যাবেন সত্যপথের শান্তিপূর্ণ সংগ্রাম। মিথ্যা, জুলুম ও ষড়যন্ত্র তার মনোবল দুর্বল করতে পারবে না। মিশন ব্যর্থ করতে পারবে না। পারবে না তার বিজয়, কাফেলা পথরোধ কিংবা লক্ষ্যচ্যুত করতে। আজকের কঠিন সময়েও বিশ্বাসী মানুষের এটাই দৃঢ় আশা। নিঃসন্দেহে আল্লাহর সাহায্য ও বিজয় মুমিনদের জন্যই অবধারিত। ইসলামপ্রিয় গণমানুষের আন্দোলনের মৃত্যু নেই। ইনশাআল্লাহ, আল্লাহর রাসূলের (সা.) মর্যাদার লড়াইয়ে জীবন দানকারী মানুষেরই জয় হবে।

সূত্র: দৈনিক ইনকিলাব,

http://www.dailyinqilab.com/details_news.php?id=107175&&+page_id=+5

বিষয়: বিবিধ

১২৪৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File