নাস্তিকদের কুরআনের অপব্যাখ্যার জবাবঃ (১)

লিখেছেন লিখেছেন প্রকৃত মানুষ ০২ মে, ২০১৩, ০৫:৫৭:৩৩ বিকাল



সূরা বাকারাঃ১৮

তারা মুক, বধির ও অন্ধ। সুতরাং তারা ফিরে আসবেনা।

সূরা বাকারাঃ২০

আল্লাহ চাইলে তাদের শ্রবণশক্তি ও দৃষ্টিশক্তি একেবারেই কাড়ে নিতে পারতেন।

এই দুটি আয়াতের উল্লেখ একটা বিশেষ কারণে করলাম। প্রথম আয়াত দ্বারা এটা নিশ্চিতভাবেই বোঝা যায় যে নাস্তিকেরা কখনোই সঠিক পথে ফিরে আসবেনা। কিন্তু এখানে নাস্তিকরা দাবি করে যে তারা সঠিক পথেই আছেন। কারণ হরদম মানবতার বুলি তারাই আওড়ান। মানুষের ভালোর চিন্তা নাকি তারাই করেন। সুতরাং তারা সঠিক পথেই আছেন। এ ব্যাপারে দ্বিতীয় আয়াতটি তাদের এইসকল কাজের ব্যাখ্যা দেয়। আল্লাহ তায়ালা কোনো ব্যাক্তিকে ততটুকুই রহমত করেন, ততটুকুই সুবুদ্ধি দান করেন যতটুকু সে চায়। অর্থাৎ নাস্তিকদের মাঝে যারা হালকা পাতলা মানবতার কথা বলেন তাদের এইসকল কাজ দেখে এটা বলার কোনোই যুক্তি নেই যে তারা সঠিক পথে আছেন।

এখন আসি মূল আলোচনায়। নাস্তিকরা একটি আয়াত নিয়ে লাফালাফি করে বলে যে কুরআনে সাইন্টিফিক ইরর আছে। আয়াতটি হলো-

সূরা বাকারাঃ২২

তিনিই পৃথিবীকে তোমাদের জন্য বিছানা ও আকাশকে ছাদ করেছেন। আর আকাশ হতে পানি বর্ষণ করে তদ্বারা জীবিকার জন্য ফলমূল উৎপাদন করেন। সুতরাং জেনেশুনে কাউকে আল্লাহর সমকক্ষ দাড় করাবেনা।

নাস্তিকদের অভিযোগ- কীকরে পৃথিবীকে বিছানা আর আকাশকে ছাদ বলা যেতে পারে? যেখানে আকাশ শুধু অসীম শুন্যতা ছাড়া কিছুই নয়। আর পৃথিবীর স্থানে স্থানে উচুনিচু থাকার পরও কিভাবে তাকে বিছানার সাথে তুলনা করা যেতে পারে? পানি কিভাবে আকাশ হতে বর্ষিত হয়? আর তারথেকে কিকরেই বা ফলমুল উৎপাদিত হয়??????? কিভাবে???? কিভাবে???????

এখানে তারা সুকৌশলে আয়াতের শেষের অংশটি এড়িয়ে যায়। আমি এখানে নাস্তিকদের এই ভ্রান্ত ব্যাখ্যার জবাব নিচে দেবার চেষ্টা করব, আশা করি সম্পূর্ণ ব্যাখ্যাটিই পড়বেন। নয়ত ভুল ধারণা থেকেই যাবে।

♦♦ পৃথিবী ও আকাশের আকার আকৃতির সাথে আল কুআনের অর্থাৎ দুনিয়ার এ সুমহান নৈতিক ও আত্মিক ব্যবস্থাপত্রের কোনো সম্পর্ক নেই। আসমান কি নিরেট ও জড় উপাদানের অধিকারী, না দৃষ্টির শেষ সীমায় নিছক অসীম শুন্যতা- এসকল প্রশ্নের আগাগোড়া সম্পর্ক জাগতিক জ্ঞান ও পরীক্ষা নিরীক্ষার সাথে। কুরআনের লক্ষ্য হচ্ছে আসমানের সেই বৈশিষ্ট্যটুকু শুধু বর্ণনা করা, যা খিলাফাত ও খলিফাতুল্লাহর সাথে সংশ্লিষ্ট। [এখানে বলে রাখি, আমি হিযবুত তাহরিরের সমর্থক নই। সুতরাং তাদের সম্পর্কিত যাবতীয় প্রশ্নের উত্তর দিতে আমি অপারগ] সেটা কুরআন চমৎকারভাবেই করেছ। সভ্যতা সমৃদ্ধ অথচ মূর্খতার পাকে নিমজ্জিত পৃথিবীর সবকটি মুশরিক জাতি আকাশ ও পৃথিবীর পূজা করেছে। বিশেষতঃ আকাশকেতো গ্রীক, ভারতীয় সবাই বড় দেবতা বলে বিশ্বাস করে এসেছে। কুরআনের মূল আঘাত এ সকল শিরকবাদী আকীদা ও জাহিলী চিন্তা-বিশ্বাসের উপরই পতিত হয়।

কোনো দেবদেবী নয়, তিনিই যিনি একক এবং নিরংকুশ স্রষ্টা , এ সত্যের শিক্ষা তুলে ধরাই এখানে উদ্দেশ্য যে আকাশ ও বৃষ্টি সব আল্লাহরই সৃষ্টি। আকাশ দেবতা, বৃষ্টি দেবতা কিংবা father jews বলে কিছু নেই। এগুলো কালদানীয়, মিশরীয়, পারসীয়, ভারতীয় ও গ্রীক-রোমকদের আজগুবি চিন্তামাত্র।

আকাশ ও বৃষ্টিপূজা আজো পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হয়নি। এশিয়া, আফ্রিকা, আমেরিকা- এই তিন মহাদেশে হাজার এলাকায় এখনো এই শিরক বিদ্যমান।

আরবি সামাউন শব্দটি ব্যাপক অর্থবহ। তাই সামাউন থেকে বারি বর্ষণ, মেঘ থেকে বৃষ্টি নামা, বাষ্পের জমাট বাধা এবং তাপের স্পর্শে বৃষ্টি হয়ে নেমে আসা অথবা এ ধরণের অন্যান্য মাধ্যমের সাথে মোটেই বিরোধপূর্ণ নয়।

পৃথিবীতে অনেক ধরনের মুশরিক সম্প্রদায় রয়েছে। যেমন ফল ও ফসলের দেবতা, বন বনানীর দেবতা, জল ও সমুদ্রের দেবতা............... আরো কত কী......!!!!! প্রকৃতি বিজ্ঞান, নভো বিজ্ঞান, প্রাকৃতিক ভূগোল ইত্যাদি শিক্ষা দেওয়া কুরআনের কাজ নয়। বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে থাকা এসকল শিরকী আকীদা বিশ্বাস ও জাহিলী ধ্যান ধারণার মূলোৎপাটন করতে এসেছে আল কুরআন। জগতে যা কিছু ঘটছে তা স্ব-সৃষ্টি নয়, কারণহীন নয়, নয় অন্য কোনো শক্তির সৃষ্টি। এসব সর্বক্ষমতাময়ের নিপুণ সৃষ্টি কুশলতারই ফল।

‘বিহুন অর্থাৎ পানিকে উপাদান বা মাধ্যমরুপে ব্যবহার করে’

সর্বপ্রকার উদ্ভিদ ও ফসলের ক্ষেত্রে পানই যে মহা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে তা বলে বুঝানোর প্রয়োজন নেই।

যখনই খলিফাতুল্লাহ তার অবস্থান ও মর্যাদা বিস্মৃত হয়ে অধঃপতনে নেমেছে, তখনই সে মাথা ঝুকিয়েছে ফল বৃক্ষের সামনে, পূজা নিবেদন করেছে আকাশ ও ধরণীর উদ্দেশ্যে। এ মহা নির্বুদ্ধিতা ও মূর্খতা সম্পর্কেই কুরআন তাকে সতর্ক কুরেছে। যেহেতু এত নেয়ামত দিয়ে তিনি তোমাদের সৃষ্টি করেছেন, সেহেতু একমাত্র তাকেই তোমরা ইলাহ হিসেবে স্বীকার করো। অন্য কাউকে তার শরীক বানাবেনা।

আয়াতের শেষাংশে তাই মন থেকে সকল দেবতার প্রতি মনের ভক্তির মূলোচ্ছেদ করে এক আল্লাহর দাসত্ব গ্রহন করতে বলা হয়েছে। শিরক করে তার সমকক্ষ বানাতে মানা করা হয়েছে।

আশা করি, এই আয়াতের ব্যাখ্যা বোঝার তয়াওফিক আল্লাহ আমাদের সবাইকে দান করবেন। ♦♦

এখন আসি একটু অন্য আলোচনায়। এখানে পুরো আলোচনা করা হয়েছে মুশরিকদের নিয়ে। আর নাস্তিকেরাও একধরনের মুশরিক, [আমার ধারণা]। স্টিফেন হকিংস এর The Grand Design বইটিতে যে বর্ণনা দেওয়া হয়েছে তাতে বিশ্বাস স্থাপন করাকে আমি শিরকের সাথেই তুলনা করব। কারণ সেখানে এটাই প্রমাণ করার চেষ্টা করা হয়েছে যে, বিশ্বজগৎ সৃষ্ট নয়, বরং তা একা একাই এসেছে, বা স্ব-সৃষ্টি। সুতরাং এই আয়াতটি নাস্তিক মুশরিক উভয় সম্প্রদায়ের জন্যেই প্রযোজ্য।

NB: যেকোনো গঠনমূলক সমালোচনা আমার ভুল ধরিয়ে দিতে সাহায্য করবে। তাই তা থেকে বিরত হবেননা প্লিজ। তবে অপ্রাসঙ্গিক কিছু না বলার অনুরোধ জানাচ্ছি। আল্লাহ সবাইকে তার কাজের উত্তম জাজাহ দান করুন, আমীন।।

বিষয়: বিবিধ

১২২১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File