দেশপ্রেম ও আমরা (১)
লিখেছেন লিখেছেন প্রকৃত মানুষ ০১ মে, ২০১৩, ০৯:২৮:০০ রাত
প্রথমত আমরা দেশপ্রেম আসলে কী জিনিস তা জানার চেষ্টা করি। Wikipedia বলে “ Love of country; devotion (নিষ্ঠা) to the welfare of one’s country; the virtues and actions of a patriot; the passion which inspires one to serve one’s country.” Oxford dictionary বলছে, “Love of your country and willingness to defend it.
অর্থাৎ সাধারণ অর্থে, দেশের জন্য ভালোবাসা, নিষ্ঠা , দেশের মঙ্গল কামনা, দেশের জন্য কাজ করা এবং দেশকে রক্ষার জন্য যেই virtue আমাদের উদ্ভুত করে তাই দেশপ্রেম। নিউটনের তৃতীয় সূত্রটি একটু মনে করি। “প্রত্যেক ক্রিয়ারই একটি সমান ও বিপরীতমুখী প্রতিক্রিয়া আছে।” এই সুত্রটি শুধু পদার্থবিজ্ঞানের বিভিন্ন term নয়, বাস্তব জীবনেরও প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই সত্যরূপে দেখা যায়। যেমন এই দেশপ্রেমের ক্ষেত্রটি। আমরা যদি দেশপ্রেমকে সঠিকভাবে বুঝি এবং তার বাস্তবায়ন করি তাহলে এর প্রতিক্রিয়া স্বরূপ আমরা একটি সমৃদ্ধশালী দেশ পাবো। এটা দূরাশা নয় বরং এটাই হওয়া উচিত। কিন্তু বাংলাদেশের মতো একটি দেশপ্রেমিক জাতি থাকার পরও কেন এদেশে সমৃদ্ধি আসেনা, এই ব্যাপারটিই সবচেয়ে বিস্ময়কর।
দেশপ্রেম থাকার পরও কেন আমাদের সমৃদ্ধি নেই আসুন তা অনুসন্ধান করার চেষ্টা করি। প্রাথমিকভাবে আমাদের কিছু দুর্বলতা, জাতিগত দুর্বলতা আছে। যেমন, পড়াশুনার প্রতি অনীহা, চাকরীর জন্য সার্টিফিকেটের লোভ, টাকার জন্য দূর্নীতি করা, অন্যায়ের প্রতিবাদ না করা বা যথাসময়ে না করা ইত্যাদি। এইসব দূর্বলতার কারণে আমাদের মাঝে যে দেশপ্রেম আছে তা সঠিকভাবে জেগে উঠতে বা বিকশিত হতে পারেনা। একটু জটিলতায় আসি। আমাদের মাঝে কিছু মানুষ (সবাই নয়) অতিরিক্ত দেশপ্রেমিক। যারা কিনা নিজের দেশের ভুল ত্রুটি দেখেও না দেখার ভান করে কিন্তু অন্য কোন দেশ ভুল করলে তার প্রতিবাদে মুখর হয়ে ওঠে। যেমন ধরুন, সীমান্তে হত্যাকাণ্ড। অবশ্যই ভারতীয়রা বাংলাদেশের মানুশকে নির্মম ভাবে হত্যা করেছে এবং অধিকাংশই বিনা কারণে। কিন্তু বাংলাদেশের কি কোনই দোষ ছিলনা???? সীমান্তবর্তী এলাকায় যারা থাকেন তারা বুঝবেন, বাংলাদেশের তুলনায় ভারতে জিনিষপত্রের দাম অনেক কম হওয়ার কারণে প্রতিদিন অসংখ্য বাংলাদেশি চুরি করে বর্ডার পার হয়ে ওপাশে গিয়ে বাজার করে আনে। অবশ্যই তা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে। দেশপ্রেমের দৃষ্টিকোণ থেকে এই ব্যাপারটি ভারতীয়দের কাছে কেমন লাগবে??? অবশ্যই তারা এর বিরোধীতা করবে। তাদের দেশের আইন অনুযায়ী আমাদের দেশ থেকে যারা এইসব কাজ করে তারা নিশ্চয়ই বেআইনী কাজ করছে। যদিও এর শাস্তির বিধান কি তা জানিনা তবুও বাঙ্গালী হিসেবে আমাদের দেশের কারো মাঝে এই অনৈতিক কাজের তেমন কোন বিরোধীতা আমি লক্ষ্য করিনি। কিন্তু ভারত যে বেআইনী কাজ করছে তা খুব উচ্চকন্ঠে প্রচার করা হয়। তাহলে আমরা আরেকতা সিদ্ধান্তে আসতে পারি। দেশপ্রেম আমাদের সকল অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে সহায়তা করেনা বরং কিছুটা অন্ধ করে দেয়। অন্য দেশে বাংলাদেশিরা দোষ করলেও আমাদের দেশপ্রেম তার বিরোধিতা করতে উৎসাহ দেয়না অথচ নিজের দেশের ক্ষেত্রে তা প্রবল।
অর্থাৎ দেশপ্রেম যে শুধুই ভালো গুণ তা নয়, ক্ষেত্রবিশেষে তা বদগূণও বটে। ১৮৯৬ সালে লেভ এন তলস্তয় একটি চিঠিতে উল্লেখ করেছিলেন, “ patriotism cannot be good. What produces war is the desire for an exclusive good for one’s own nation –that is called patriotism. And so to abolish war, it is necessary to abolish patriotism, and to abolish patriotism, it is necessary first to become convinced that it is an evil.” এরকম আরও অনেকেই দেশপ্রেমকে খারাপ হিসেবে উপস্থাপন করে। এই গুণ বা দোষকে আমরা anti-patriotism বলতে পারি। Wikipedia বলছে, “Anti-patriotism is a ideology that opposes patriotism; it usually refers to those with cosmopolitan views and it is usually of an anti-nationalism nature as well. Normally anti-patriotism is wrong since people born in a country, whether they like it or not and regardless of their individuality, are encouraged to love the country or sacrifice themselves for it.
অর্থাৎ তারা cosmopolitan বা বৈশ্বিক অর্থাৎ বিশ্বপ্রেমকে সাপোর্ট করছে।
আচ্ছা যাই হোক অন্য একটা দিকে আসি। দেশপ্রেমের সাথে ওতোপ্রতভাবে জড়িয়ে আছে জাতীয়তাবাদ শব্দটি। এই শব্দটির সাথে আমরা অতি পরিচিত। আমাদের দেশের প্রধান দুটি রাজনৈতিক দলের মতাদর্শ জাতীয়তাবাদভিত্তিক। একটি বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদ অপরটি বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ। জাতীয়তাবাদ কী????? Wikipedia বলে, “ জাতীয়তাবাদ একটি আদর্শ যেখানে জাতিকে মানবসমাজের কেন্দ্রীয় অবস্থানে স্থাপন করা হয়, এবং অন্যান্য সামাজিক ও রাজনৈতিক আদর্শকে জাতিগত আদর্শের পরে স্থান দেয়া হয়। স্বাভাবিক দৃষ্টিতে বিবেচনা করলেই বোঝা যায়, জাতীয়তাবাদ মানুষের মনকে সংকীর্ণ করে তোলে। সেখানে প্রধান দুটি দল কি হিসেবে মতাদর্শ হিসেবে জাতীয়তাবাদকে স্থান দেয় এবং আমরা এব্যাপারে মূর্খামি করে তাদের সমর্থন জানি কি করে তা আমার বোধগম্য নয়। আমরা কবিতা পড়ি, “সকল দেশের রাণী, সে যে আমার জন্মভূমি”; “এদেশের মাটি ফুল ফল সকল দেশের চেয়ে সেরা” ব্লা ব্লা। এই কথাগুলো অতিরিক্ত আবেগ ছাড়া কিছুই নয়। সারাবিশ্বে একই প্রজাতির ফুল ফল সব জায়গায় একই রকম। আমাদের দেশেরটাই কেনো সেখানে সেরা হতে যাবে???? এই কথাগুলোকে প্রশ্রয় দেয়াও একধরনের সংকীর্নতা। আমার সোনার বাংলা- বাংলাই কি শুধু সোনার???? অন্যরা কি তাহলে সোনার নয়??? এখানে কি অন্যদের insult করা হচ্ছেনা???? চিরদিন তোমার আকাশ, তোমার বাতাস আমার প্রাণে বাঁজায় বাঁশি—আকাশ বাতাস কী বাংলার জন্য একরকম আর অন্য জায়গার জন্য অন্যরকম??? ধর্মান্ধ শব্দটার মাধ্যমে এমন কিছু মানুষকে বোঝায় যারা নিজের ধর্মের ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করে। বিবেচনা না করেই ধর্মের নামে কাজ করে, ফলে দোষতা পড়ে ধর্মের ঘাড়ে। ঠিক তেমনি দেশপ্রেম নিয়ে যারা বাড়াবাড়ি করে তাদের আমরা জাতীয়তাবাদী বলতে পারি। (চলবে)
বিষয়: রাজনীতি
১১৩০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন