কোন কান্ডজ্ঞান হীন মূর্খ্য ব্যাক্তি ছাড়া "মূতার যুদ্ধকে" কোন কিছুর সাথে তুলনা করতে পারে না ।

লিখেছেন লিখেছেন আইল্যান্ড স্কাই ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ০৫:০৮:২৭ বিকাল

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিভিন্ন রাজা-বাদশাহদের নিকট ইসলামের দাওয়াত সম্বলিত যেসব চিঠিপত্র পাঠান, তার একটি ছিল শুরাহবিল ইবনে আমর গাচ্ছানীর কাছে। শুরাহবিল সম্রাট হিরাক্বিয়াসের নিযুক্ত বুসরার গভর্নর ছিল। বুসরা ছিল সিরিয়ার একটি প্রদেশ। রাসূলুল্লাহ (স.) তার কাছে হারিছ ইবনে উমায়ের (রা)-কে চিঠি দিয়ে পাঠান। এ চিঠি নিয়ে তিনি যখন মদীনা থেকে মূতা নামক স্থানে পৌঁছান, তখন শুরাহবিল তাঁকে সেখানে হত্যা করায়। এ খবর জেনে রাসূলুল্লাহ (স.) শুরাহবিলকে শায়েস্তা করার সিদ্ধান্ত নেন। তিনি ৩০০০ সৈন্যের একটি বাহিনী প্রস্তুত করেন এবং হযরত যায়েদ (রা.)-কে এর সেনাপতি মনোনীত করেন। আরোও বলেন :

যদি যায়েদ শহীদ হয়, তবে জাফর ইবনে আবূ তালিব সেনাপতি হবে। যদি জাফরও শহীদ হয়, তাহলে আবদুল্লাহ ইবনে রাত্তাহা সেনাপতির দায়িত্ব নিবেন। এরপর যদি আব্দুল্লাহ শহীদ হয়, তবে মুসলিম বাহিনী যাকে ইচ্ছা তাদের সেনাপতি বানিয়ে নেবে।

সেনাবাহিনী প্রস্তুত হলে রাসূলুল্লাহ (স.) তাদের এগিয়ে দেয়ার জন্য ‘ছানিয়াতুল বেদা’ পর্যন্ত যান এবং এরূপ উপদেশ দেন :

আমি তোমাদের সবাইকে উপদেশ দিচ্ছি আল্লাহ্কে ভয় করার জন্য। তোমরা আল্লাহ্র সন্তুষ্টি লাভের জন্য জিহাদ করবে। সেখানে তোমরা গীর্জার পাদ্রীদের দেখতে পাবে, তাদের কিছু বলবে না। কোন নারী, শিশু ও বৃদ্ধকে হত্যা করবে না এবং গাছ-পালা ও ঘর-বাড়ীর ক্ষতি সাধন করবে না।

মুসলিম সেনাবাহিনী যখন সিরিয়ায় প্রবেশ করে, তখন তাদের মুকাবিলার জন্য এক লাখ সৈন্য প্রস্তুত করে, হিরাক্লিয়াস এক লাখ ও অন্যান্য খৃষ্টান সম্প্র‌দায়ের লোকেরা রোমকদের সাহায্যে সেখানে যায়। এভাবে তাদের সৈন্য সংখ্যা প্রায় আড়াই লাখে দাঁড়ায়। ‘মাআন’ নামক স্থানে পৌঁছে মুসলমানরা যখন জানতে পারে যে, শত্রুর বিশাল বাহিনী তাদের মুকাবিলার জন্য আসছে, তখন আবদুল্লাহ্ ইবন রাত্তাহা অত্যন্ত দৃপ্তকণ্ঠে বলেন :

বন্ধুগণ! তোমরা যে কাজের জন্য এসেছ, তা করতে ভয় পাবে না। তোমরা তো শহীদ হবার জন্য বেরিয়েছ। আমরা সংখ্যাও সমরশক্তির উপর নির্ভর করে যুদ্ধ করি না, আমরা তো আল্লাহ্র যমীনে আল্লাহ্র দ্বীনকে বিজয়ী করার জন্য যুদ্ধ করি। আমাদের সামনে দু’টি কল্যাণ রয়েছে, যার একটি আমরা অবশ্যই পাব। তা হচ্ছে- বিজয় অথবা শাহাদত।

এ কথা শুনে সবাই বললো :

আল্লাহর কসম! আবদুল্লাহ ঠিক কথা বলেছে।

তারপর মুসলিম বাহিনী পূর্ণ উদ্যম ও আবেগ নিয়ে রোমকদের মুকাবিলায় এগিয়ে গেল এবং মূতা প্রান্তরে পৌঁছে রোমক বাহিনীর সামনা-সামনি ছাউনি ফেললো। মুসলিম বাহিনীর সেনাপতি হযরত যায়েদ (রা.) এক হাতে ঝান্ডা এবং আরেক হাতে তরবারি নিয়ে বীরত্বের সাথে লড়াই করতে করতে শহীদ হলে, হযরত জাফর ইবনে আবূ তালিব এগিয়ে এসে ঝান্ডা হাতে নেন।

তিনি ও যুদ্ধ করতে করতে শহীদ হলে, হযরত আবদুল্লাহ (রা.) এসে ঝান্ডা তুলে নেন। অবশেষে তিনিও শহীদ হলে সমবেত বাহিনী অভিজ্ঞ বীরযোদ্ধা হযরত খালিদ ইবনে ওলীদ (রা.)-কে সেনাপতি মনোনীত করে। তিনি সারাদিন বীরবিক্রমে যুদ্ধ চালান এবং বিশাল রোমক বাহিনীকে স্তব্ধ করে দেন। যুদ্ধ থেমে যায় এবং উভয় বাহিনী তাদের তাঁবুতে ফিরে যায়। পরদিন যুদ্ধ শুরু হলে হযরত খালিদ (রা.) রোমকদের উপর প্রচন্ড হামলা করেন। সেদিন তাঁর হাতেই আটখানি তরবারী ভেঙ্গেছিল। রাসূলুল্লাহ (স.) খালিদের জন্য দু‘আ করে বলেন :

ইয়া আল্লাহ্! খালিদ তোমারই এক তরবারি। তুমি তাকে সাহায্য কর।

এ থেকেই হযরত খালিদ (রা.) ‘সায়ফুল্লাহ’ বা আল্লাহ্র তরবারি নামে খ্যাত হন। এদিন মুসলিম বাহিনী শত্রুদের উপর এমন প্রচন্ড হামলা করে যে, তারা এ আক্রমণের বেগ প্রতিহত করতে অক্ষম হয়ে অচিরেই ছত্রভঙ্গ হয়ে পালিয়ে যায়। তখন মুসলিম সৈন্যরা বহু গরীমতের মাল, বিজয় গৌরব নিয়ে মদীনায় ফিরে আসে। মূতা রনাঙ্গনের খবর রাসূলুল্লাহ (স.) মদীনায় থেকে ওহী যোগে জেনে বর্ণনা করেন। হযরত আনাস (রা.) বলেন :

মূতা হতে কোন সংবাদ আসার আগেই রাসূলুল্লাহ (স.) হযরত যায়দ, হযরত জাফর ও হযরত আবদুল্লাহ ইবন রাওয়াহা (রা.)-এর শহীদ হওয়ার খবর বর্ণনা করে বলেন : ‘যায়দ পতাকা হাতে যুদ্ধে অগ্রসর হচ্ছে। একটু পরে বলেন- যায়দ শহীদ হলো। এখন জাফর পতাকা নিয়ে যুদ্ধে অগ্রসর হচ্ছে। কিছুক্ষণ পর বলেন- জাফর শহীদ হয়ে গেল। তারপর আবদুল্লাহ ইবন রাওয়াহা পতাকা হাতে নিয়েছে এবং সে শহীদ হলো। রাসূলুল্লাহ (স.) যখন এরূপ খবর দিচ্ছিলেন, তখন তাঁর চোখ মোবারক থেকে পানি গড়িয়ে পড়ছিল। এরপর তিনি (স.) বলেন: এখন সায়ফুল্লাহ্ খালিদ পতাকা হাতে নিয়েছে এবং আল্লাহ্ তা‘য়ালা বিজয় দান করেছেন।

— সহীহুল বুখারী, ২য় খন্ড, পৃ. ৬১১

রাসূলুল্লাহ (স.) শহীদ পরিবারের সদস্যদের প্রতি সহানুভূতি ও সমবেদনা জ্ঞাপন করে সবর করতে বলেন এবং তাদের জন্য কান্নাকাটি করতে নিষেধ করেন।

বিষয়: বিবিধ

১৭০৯ বার পঠিত, ৮ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

360102
২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ বিকাল ০৫:৩২
কুয়েত থেকে লিখেছেন : আল্'হামদুলিল্লাহ! এই যুদ্ধে তিন জন সেনাপতি শহিদ হবেন তা নবীজি(সাঃ)আগেই বলে দিয়েছিলেন। তারপরেও যে বিরত্ব আল্লাহর দ্বীনের জন্য তারা দেখিয়েছেন তা পৃথিবীর ইতিহাসে স্বর্ণক্ষরে লেখা। আজো ঈমানদারেরা ইসলামের জন্য সঠিক ভাবে কাজ করলে পরাজয় তাদের নেই ধন্যবাদ আপনাকে
২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ সন্ধ্যা ০৬:৪৬
298465
আইল্যান্ড স্কাই লিখেছেন : আপনাকেও ধন্যবাদ,এই মুতার যুদ্ধকে আলেম নামের কলংক ধর্মনিরপেহ্ম বাদীদের দালাল মাজার পূজারী আলেম বায়তুল মোকাররম মসজিদের খতিব সালাউদ্দিন বাংলাদেশের ইতিহাসের এক আলোচিত হত্যাকান্ড যে হত্যাকান্ড গণতন্ত্র ও মানুষের বাক স্বাধীণতা রহ্মার সাথে ওতপ্রোত ভাবে জড়িত ছিল সেই সফল অভিযানের সাথে তুলনা করেছে ।
360111
২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ রাত ০৮:০৬
শেখের পোলা লিখেছেন : প্রকৃত মুমিনের এমনই ইচ্ছা হওয়া উচিৎ, শহীদ অথবা গাজী৷ এ দুই প্রাপ্তির মাঝেই রয়েছে কল্যাণ৷ আমাদের সুযোগ্য ওলামারা দ্বীন কায়েম চান কিন্তু এ দুটির একটিও চান না৷ ধন্যবাদ আপনাকে৷
২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ রাত ০৮:২১
298469
আইল্যান্ড স্কাই লিখেছেন : মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ আমরা আশাবাদী শহীদদের লাশের সারি যত দীর্ঘায়ীত হবে তত তাড়াতাড়ী শহীদদের রক্ত স্নাত এই বাংলার জমিনে ইসলামের পতাকা উড়বে ইনশ-আল্লাহ।মুতার যুদ্ধের শহীদরা জমিনে রক্ত ঢেলে তাই প্রমান করেছেন।
360117
২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ রাত ১০:৪২
মহুয়া লিখেছেন : সেসময়ে প্রায়শঃ মুসলিমগণ তাদের দ্বিগুণ - বা তিনগুণের বেশী সৈন্যদের মুকাবিলা করেছে- ( যেমন বদরের যুদ্ধে ৩১৩ বনাম ১০০০) কিন্তু এ লেখায় ৩০০০ এর বিরুদ্ধে আড়াই লাখ শত্রু সৈন্যের উল্লেখ 'ইতিহাস সম্মত নয়!
আরও যাচাই করে তথ্য গুলো দিলে লেখার মান আরও ভাল হবে!
২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ সন্ধ্যা ০৭:১২
298512
আইল্যান্ড স্কাই লিখেছেন : ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য
360130
২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ রাত ১২:৩২
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ
২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ সন্ধ্যা ০৭:১২
298513
আইল্যান্ড স্কাই লিখেছেন : আপনাকে ও অনেক ধন্যবাদ

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File