শেখ হাসিনার নির্দেশে লগি বৈঠার হামলার হিংস্রতার দিন। ২৮ অক্টোবর-২০০৬ - রক্তাক্ত বাংলাদেশ ?

লিখেছেন লিখেছেন আইল্যান্ড স্কাই ১৮ অক্টোবর, ২০১৩, ১২:২৯:৪৭ দুপুর



২৮ অক্টোবর ২০০৬ ! স্বাধীনতা পরবর্তী প্রজন্ম এর চেয়ে ভয়াল হিংস্রতার দিন আর একটিও দেখেনি । হয়তোবা এদেশে এরকম দিন এসেছে আরো..এবং ২০০৬ এর পরেও হয়তোবা এসেছে.. কিন্তু সেদিনের বিভৎস নারকীয়তার টিভি চ্যানেলগুলোতে সরাসরি সম্প্রচার মানুষের হায়েনাত্বকে নতুন মাত্রা দিয়েছিলো ।

মানুষ সৃষ্টির পরিকল্পনা করার সময়ে মহান আল্লাহর কাছে ফেরেসেতাদের সেই আশঙ্কা ..এরা তো পৃথিবীতে রক্তপাত - হানাহানিতে লিপ্ত হবে !... ফেরেশতারা সেদিন আশ্বস্ত হয়েছিলো এমন জবাবে , যুগে যুগে এই মানুষেরা আল্লাহর নিকট হতে জীবন বিধান পাবে , পাবে নবী ও রাসুলগণকে যারা শিখিয়ে দেবেন জীবনের প্রতিটি কর্মকান্ড ও চিন্তাধারা ঠিক কিভাবে হলে পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠিত করা যাবে ...

শয়তান তার কিছুকাল পরে অহংকারের সুরে বলেছিলো, হে আল্লাহ, যেই আদমের জন্য আমাকে তোমার আশ্রয় হতে বিতারিত হতে হলো সেই আদম ও তার সন্তানদের অধিকাংশকেই তুমি তোমার প্রতি অকৃতজ্ঞ হিসেবে পাবে !

কঠোর সতর্কবানী ছিলো মহান স্রষ্টার..সেই সময়ে... .."তুমি ও তোমার অনুসারীদেরকে দিয়ে আমি জাহান্নাম পূর্ণ করবো"..

নবুওয়্যাতের ধারার সমাপ্তকারী , রাসুল মুহাম্মাদ সা: এর মাধ্যমে আল্লাহ তার ওয়াদা পূর্ণ করলেন । মানুষের জন্য এলো সবশেষ ও পূর্বে আগত সকল আসমানী বইয়ের পরিপূর্ণতা দানকারী বই , আল-কুরআনুল কারীম । যে বইটি এসেছিলো পৃথিবীর শেষ মুহুর্ত পর্যন্ত পৃথিবী তথা মহাবিশ্ব ও মানবজাতিকে সব ধরনের অন্ধতা, অজ্ঞতা ও অন্ধকার হতে মুক্তি দিয়ে শান্তিময় জীবনব্যবস্থার পরিপূর্ণ ফর্মুলা নিয়ে ।

শেষ নবীর মৃত্যুর পরে, তার অনুসারীগন পেলেন এক অনন্য মর্যাদা । যে মর্যাদা পান নি মানবজাতির আর কোন সময়ে বিচরণকারী সদস্যগণ । যে সুমহান দায়িত্ব অর্থাৎ আল্লাহর নির্দেশাবলী জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনা করে মানবজাতি ও সৃষ্টিকে সু-শৃংখল রাখার কাজ...যা এতদিন ধরে করতেন শুধুমাত্র আল্লাহর নবী ও রাসুলগণ... সেই দায়িত্বের দায়িত্বশীল হলেন একেবারে সাধারণ মানুষেরা - যারা মুহাম্মদ সা: এর উম্মাত ! কেননা, আর কোন নবী আসবেন না...

এককালের মর্যাদাশীল জ্বীন-জাতি সদস্য ইবলিশ, যে তার অহমের আতিশয্যে বিদ্রোহী হয়ে গিয়ে চিড় অভিশপ্ত হয়ে গেলো , তাকে সুষ্পষ্টভাবে ঘোষণা করা হয়েছিলো, এই মানবজাতির জন্য এক চিড়ন্তন পরীক্ষা হিসেবে । মানবজাতি যখন ই আল্লাহর বিধি-বিধানকে প্রতিস্ঠিত করার উদ্যোগ নিয়েছে, সেখানেই বাগড়া দিয়েছে ইবলিশ.. আল্লাহর ই দেয়া কিছু বিশেষ গুণাবলী ব্যবহার করে সে যুগে যুগে তার অনুসারী বানিয়ে নিয়েছে স্বাধীন চেতনা ও বিবেকের অধিকারী অথচ অজ্ঞ কিছু মানুষকে । কাজে লাগিয়েছে তাদেরকে সর্বশক্তি দিয়ে... বাঁধা দিয়েছে, বিঘ্নিত করেছে আল্লাহর নির্দেশাবলী মেনে চলা ও সবাইকে মেনে নেবার আহবানকারী সম্মানিত মানুষদেরকে !

ইসলামী আন্দোলনের এর কন্টকময় পথচলার , এই প্রাগৈতিহাসিক রক্তাক্ত ঘটনাপন্জীর , আল্লাহর নির্দেশাবলীকে সবচেয়ে সুউচ্চে তুলে রাখার জীবনবাজী প্রতিজ্ঞার চিড়ায়ত ধারাবাহিকতার একটিমাত্র দিন হলো ২৮ শে অক্টোবর, ২০০৬ ইশায়ী সন । এ দিনটি নতুন কিছু না.. এ দিনের আত্মত্যাগ আর শাহাদাতের নজরানার ঘটনাও বিচ্ছিন্ন কোন ঐকিকতার পরিচায়ক না !

কিছু সহজ কথা ....

আক্রান্ত মজলুম পক্ষ:

১. ওরা প্রত্যেকে ছিলো শিক্ষিত..

২. ওদের আচরণ ছিলো ভদ্রতা, নম্রতা আর সম্ভ্রমে পূর্ণ..

৩. ওরা ভালোবাসতো ওদের সহপাঠীদের , ওদের সহপাঠীরা ভালোবাসতো ওদেরকে..

৪. ওদেরকে কোন ব্যাপারে দোষারোপ করতে পারতো না পরিচিত কেউ !

৫. ওরা অন্যায় করতো না এবং কাউকে করতে দেখলেও নিষেধ করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করতো..

৬. ওরা মিথ্যা কথা বলতো না..ওরা নোংরা-বাজে কথা বলতো না.. শুনতো ও না..

৭. ওদের পোশাক থাকতো পরিচ্ছন্ন আর মার্জিত..

৮. ওরা ছিলো নামাজী .. ফজরের ওয়াক্তে আসসালাতু খাইরুম মিনান নাওম এদেশের যে ১৫ থেকে ২০ ভাগ তরুন শুনতে পায়, ওরা তাদের অন্তর্ভক্ত ছিলো..

৯. ওরা কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করতো শুদ্ধভাবে , কুরআনের অর্থ পড়তো..এবং বিস্তারিত তাফসীর ও পড়তো..

১০. ওরা জানতো.. নবীদের জীবনী, মুহাম্মাদ সা: এর জীবনের প্রতিটি মুহুর্ত, সাহাবীগণের অসাধারণ জীবনগাঁথা..

১১. ওরা পড়তো ওদের পাঠ্যবই, আরো পড়তো শতশত বই যা ইশকুল কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যসূচীতে ছিলোনা.. অথচ পৃথিবীকে গড়তে হলে যেগুলো পড়া খুব বেশি দরকার !

১২. ওরা সঙ্ঘবদ্ধ আর সুশৃংখল জীবনে অভ্যস্থ ছিলো, কেননা আল্লাহ বলেছেন এটা করতে..

১৩. ওরা রাতের গভীরে একত্রিত হয়ে আল্লাহর দরবারে হাত তুলে চোখের পানি ফেলতো..

১৪. ওরা চাইতো মনে প্রাণে, চারপাশে একজন ও অভাবী মানুষ না থাকে.. না থাকে একজন ও বঞ্চিত অসহায়..

১৫. ওদের আত্মীয়-স্বজন, বাবা মা, ভাই-বোন ও বন্ধুদের কাছে ওরা খুব প্রিয় ছিলো..

আরো কিছু সহজ কথা..

আক্রমণকারী পক্ষ

(..অধিকাংশ অথবা কেউকেউ..)

১. এরা ছিলো কেউ শিক্ষিত, কেউ অশিক্ষিত.. বেশিরভাগ ই ছিলো প্রায় মুর্খ..

২. এরা বেশিরভাগ সময়েই থাকে উগ্র ও বদমেজাজী অবস্থায়..

৩. এরা সিগারেট খায়, নেশা করে, মাদকের রাজ্যে নিয়মিত বিচরণকারী..

৪. এরা গালি দেয়, গালি শুনে এমনকি সাধারণ আড্ডাতেও নোংরা কথা বলা ও শোনাতে এদের যাবতীয় আনন্দ..

৫. এরা নামাজী নয় , নামাজী হলেও নিয়মিত নামাজী নয়..

৬. এদের পরিবারের সদস্যরা ও আত্মীয় স্বজনেরাও বেশিরভাগ সময়ে এদেরকে অভিযুক্ত করে নানান ধরনের অপছন্দনীয় অনিয়মের কারনে..

৭. এরা জানেনা বিধাতার দেয়া কুরআন শরীফ কিভাবে পড়তে হয়.. জানেনা ঐ কুরআনে কি লেখা আছে..

৮. এরা মিথ্যাচার করে , মানুষকে ঠকানোর সামান্যতম সুযোগ ও ছেড়ে দেয়না..

৯. এরা জানেনা, আল্লাহর দেয়া বিধান ও নির্দেশনা না মানলে কি কঠোর শাস্তির সম্মুখীন হতে হবে মৃত্যুর পরে এমনকি অশান্তিময় এই পার্থব জীবনেও..

১০. এরা ধর্মনিরপেক্ষতা নামের জীবনব্যবস্থার সমর্থণ করে বসে, যা আল্লাহর দেয়া একমাত্র গ্রহণযোগ্য আদর্শ ইসলামের সাথে বিদ্রোহের সামিল..

১১. এরা কখনো পড়েনি এমন একটা বা দুটা বই, যাতে লেখা আছে মুহাম্মাদ সা: এর জীবনেতিহাস, লেখা আছে সাহাবাগনের কাজের বর্ণনা.. অজ্ঞতার অন্ধকার-মাদকে বেহুশ জীবনযাপন করে..

১২. এরা অত্যাচারী ও পেশীশক্তির অহংকারে অহংকারী.. চাঁদাবাজী আর হুমকি ধমকি দিয়ে এরা একেকটা দিন পার করে..

১৩. এদের নিজস্ব বিবেক-বুদ্ধি, বিচার-বিবেচনার কোনই অবশিষ্ট নেই । সব বিকিয়ে দিয়েছে অনেক ধরনের প্রভুর প্রভুত্বের কাছে..

১৪. এরা সংকীর্ণ মানসিকতা আর খুব ক্ষীণ দৃষ্টি নিয়ে পৃথিবীকে দেখে.. ইসলামী জীবনব্যবস্থার মহাবিশ্বব্যাপী প্রশস্ততা এদের ধারনাতেও নেই..

১৫. ইসলামী জীবনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হোক, তা এরা কিছুতেই চায়না, যার সহজতম অর্থ হলো, আল্লাহর নির্দেশ- ইসলাম তথা তার আদেশ নির্দেশ প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠা করার সংগ্রামের এরা স্পষ্ট বিরোধীপক্ষ!

শহীদের আম্মুরা : !!!!



শহীদ মুজাহিদুল ইসলামের আম্মু : -মাহমুদা দেলোয়ার

“মহান আল্লাহ মুজাহিদের শাহাদাত কবুল করুন এবং যে উদ্দেশ্যে মুজাহিদ তার জীবন উৎসর্গ করলো আল্লাহ যেন এই জমিনে তাঁর দীন প্রতিষ্ঠা করে সে উদ্দেশ্যকে পূর্ণ করেন। যেসব কর্মী ভাইয়েরা ইসলামী আন্দোলনে আছেন, তাদের উপযুক্ত দীনি শিক্ষার মাধ্যমে এমনভাবে গড়ে তোলা হোক, যাতে তারা যেকোন পরিস্থিতি ধৈর্য এবং সাহসিকতার সঙ্গে মোকাবেলা করতে পারে।”



শহীদ হাফেজ গোলাম কিবরিয়া শিপনের আম্মু: - মাহফুজা খাতুন

“ আল্লাহর দরবারে আমার স্বপ্ন ছিল আমি শহীদের মা হবো, আল্লাহ যেন আমাকে একজন শহীদের মা হিসেবে কবুল করেন। শিপন সবসময় সত্যকে সত্য জানতো মিথ্যাকে মিথ্যা জানতো। এই দীনের আন্দোলন করতে গিয়ে সে শহীদ হয়েছে। এখন আমার বাবা শিপনের মতো যেন হাজার হাজার শিপন এই বাংলার জমিনে সৃষ্টি হয়ে শিপনের অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করে। আমার বাবা গোলাম কিবরিয়ার সদকা যেন কেয়ামত পর্যন্ত জারি থাকে। যাদের হাতে আমার বাবা শহীদ হয়েছে তাদের বিচার হিসেবে আল্লাহপাক তাদেরকে যেন হেদায়াত করেন। আল্লাহপাক তাদের অন্তরের খবর জানেন; যদি তাদের তকদিরে হেদায়াত না থাকে তাহলে তিনি যেন তাদের অশুভ শক্তিকে ধ্বংস করে দেন। আল্লাহপাক যেন সব শহীদকে কবুল করেন আমিন।”



শহীদ ফয়সলের এর আম্মু : - সাইয়েদা হাসনাবানু

“আলহামদুলিল্লাহ। আমি আশা করি ইনশাআল্লাহ আমার এই সুশিক্ষিত বিনয়ী ভদ্র, শান্ত, অমায়িক ও সুন্দর আচরণবিশিষ্ট সন্তানকে আল্লাহ শাহাদাতের মর্যাদা দান করবেন। আমার সন্তানদের মধ্যে সবচেয়ে প্রিয় সন্তানকে আল্লাহ কবুল করে নিয়েছেন সেজন্য আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করছি। আমি আল্লাহর কাছে এই বর্বর হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই। আল্লাহ আহকামুল হাকিমীন। অন্য ছেলেদের উদ্দেশে আমার অনুরোধ তারা যেন এই শহীদদের রক্তকে বৃথা যেতে না দেয়। তারাও যেন ইসলামী আন্দোলনকে উজ্জীবিত করার জন্য পিছ পা না হয়। আমার মুখে ভাষা নেই কলমে লেখা নেই- এখানেই ক্ষান্ত করছি।”



শহীদ সাইফুল্লাহ মোহাম্মদ মাসুমের আম্মু:

“আমি আমার ছেলের নাম রেখেছিলাম সাইফুল্লাহ মোহাম্মদ। তার প্রিয় নানুমণি নাম দিয়েছিলেন মাসুম। সব মিলে তার নাম হয়েছিল সাইফুল্লাহ মোহাম্মদ মাসুম। সাইফুল্লাহ মানে আল্লাহর তরবারি, মাসুম মানে নিষ্পাপ।

আমার জীবনের আশা ছিল আমার ছেলে খালিদ বিন ওয়ালিদ হবে, উমর হবে, অসত্যকে পরাজিত করবে। সমাজের আদর্শ ছেলে হবে, নিষ্পাপ হবে। আমার ছেলে হাসান-হুসাইন এর মত হবে। আমার আর এক ছেলে শামসুল আলম মাহবুব। সব সময় দোয়া করতাম সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করতে গিয়ে তারা যেন গাজী অথবা শহীদ হয়। সত্যি আমার প্রার্থনা আল্লাহপাক কবুল করেছেন। আমি মনে-প্রাণে সর্বদা আশা পোষণ করতাম মাসুম যেন ময়দানে সবার আগে থাকে। আল্লাহপাক আমার দোয়া কবুল করেছেন। আমি আমার সাইফুল্লাহর রক্তের বিনিময়ে এ দেশে ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হোক এই প্রার্থনা সব সময় করি।

আমার কলিজার টুকরা শিবিরের আব্বুদের কাছে আমার একান্ত অনুরোধ- মাসুম যেমন করে জীবনের মায়া, পরিবারের মায়াকে দূরে ঠেলে দিয়ে বাতিলকে পরাজিত করার জন্য বীরের বেশে লড়েছে, ঠিক সেইভাবে মাসুমের রেখে যাওয়া অসমাপ্ত কাজগুলো তারা যেন বীরের বেশে সমাপ্ত করে। বাতিলের বৈঠা ও লগির ভয়ে তারা যেন কাপুরুষের মতো পিছু হটে না যায়। এ রকম সাহসী শিবির যদি সবাই হতে পারে তাহলেই দীন কায়েম দ্রুত সম্ভব হবে। আল্লাহপাক সবাইকে কবুল করে নিন- আমীন।”

...................সংগৃহীত

বিষয়: বিবিধ

২০৯০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File