ধর্মদ্রোহী নাস্তিক মুরতাদদের শাস্তি কেবল মৃত্যুদন্ড ?
লিখেছেন লিখেছেন আইল্যান্ড স্কাই ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৩, ০৩:৪২:১৭ দুপুর
স্মরণ রাখতে হবে যে, মুরতাদ (প্রকাশ্য মুরতাদ অথবা মুনাফেক মুরতাদ দুজনই) আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের বিরুদ্ধে বিদ্রোহকারী মুহারিব। ইসলাম ও মুসলমানকে অপমানকারী বিশ্বাসঘাতক। আল্লাহর জমিনে শান্তি বিনষ্টকারী প্রতারক। সকল মুহারিব ও ফেৎনাবাজ দুষ্কৃতিকারীর শাস্তি প্রসঙ্গে কোরআন মাজীদের ইরশাদ হয়েছে- যারা আল্লাহ ও তার রাসুলের বিরুদ্ধে দুশমনিতে লিপ্ত হয় এবং পৃথিবীতে অশান্তি ও বিপর্যয় সৃষ্টির পাঁয়তারা করে, তাদের শাস্তি কেবল মৃত্যুদন্ড, শূলিবিদ্ধ করে হত্যা কিংবা হাত পা বিপরীত দিক থেকে কেটে ফেলা অথবা নির্বাসিত করা (কারাগারে নিক্ষেপ করা)। এ তো হল তাদের পার্থিব অপমান। আর পরকালেও তাদের জন্য অপেক্ষা করছে মর্মন্তুদ শাস্তি। (মায়েদা ৬ : ৩৩)
আয়াতে বিভিন্ন প্রকার ফেতনা-ফাসাদ সৃষ্টিকারী মুহারিবের এবং তাদের অপরাধের ধরন ও মাত্রাভেদে বিভিন্ন শাস্তির কথা উল্লেখ করা হয়েছে। আর মুহারিব ও মুফসিদ (বিপর্যয় সৃষ্টিকারী) এর মাঝে সবচে’ মারাত্মক হল যারা দ্রোহের ঘোষণা দিয়ে ইসলাম ত্যাগ করে, ইসলামের অবমাননা করে মুসলিম পরিচয় দিয়ে মুমিনদেরকে তাদের ঈমানের ব্যাপারে সন্দিহান করে-ফেলার মতো দুষ্কর্মে লিপ্ত হয়। উল্লিখিত আয়াতে শব্দে সর্বপ্রথম এ ধরনের মুহারিব এবং নিরপরাধ মানুষকে হত্যাকারীর শাস্তি মৃত্যুদন্ড বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া উল্লিখিত আয়াত প্রসঙ্গে লিখেছেন, (অর্থ আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ দু’ভাবে হতে পারে। একটা অস্ত্রের মাধ্যমে আরেকটা যবানের মাধ্যমে। আর দ্বীনী বিষয়ে কখনো কখনো অস্ত্রের যুদ্ধের চেয়ে যবানের যুদ্ধ মারাত্মক হয়ে থাকে। এই জন্য নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অস্ত্রের যুদ্ধে লিপ্ত অনেককে বেঁচে থাকার সুযোগ দিতেন, কিন্তু আল্লাহ ও তার রাসুলের বিরুদ্ধে যবানি দুশমনিতে লিপ্ত কাউকে ক্ষমা করতেন না। তেমনি পৃথিবীর শান্তি শৃংখলা কখনো অস্ত্র বিস্তারের কারণে বিনষ্ট হয় আর কখনো হয় যবান দরাজির কারণে। আর দ্বীনি বিষয়ে যবান দরাজির মাধ্যমে যে বিশৃংখলা সৃষ্টি হয়, তা অস্ত্রের মাধ্যমে সৃষ্ট বিশৃংখলার চেয়ে বহু গুণে মারাত্মক।’-আছ ছা-রিমুল মাছলূল পৃ. ৩৯১
হাদীসে নববীতে মুরতাদের শাস্তি-প্রসঙ্গ
হাদীস ইসলামী শরীয়তের স্বয়ংসম্পূর্ণ দলিল এবং কুরআনের তাফসীর। এখন আমরা সহীহ হাদীস ও আছারে সাহাবার আলোকে মুরতাদের শাস্তির বিষয়ে শরীয়তের নির্দেশনা তুলে ধরবো। তা থেকে মুরতাদের শাস্তির বিষয়ে শরীয়তের দ্বিতীয় দলিলের ফয়সালা সামনে এসে যাবে এবং সুন্নাহর মাধ্যমেও এ কথা স্পষ্ট হয়ে যাবে যে, উল্লিখিত আয়াতসমূহের বক্তব্য তা-ই যা উপরে বলা হয়েছে।
১. ইকরিমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আলী রা. এর নিকট কয়েকজন মুরতাদ-যিন্দীককে ধরে আনা হল। তিনি তাদের পুড়িয়ে ফেলার নির্দেশ দিলেন। এ-খবর ইবনে আববাস রা এর নিকট পৌছলে তিনি বললেন, আমি হলে পুড়িয়ে হত্যা করার আদেশ দিতাম না। কেননা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘তোমরা আল্লাহ পাকের শাস্তি দানের বস্ত্ত (আগুন) দ্বারা শাস্তি দিও না।’ আমি বরং এদেরকে হত্যা করতাম। কেননা আল্লাহর রাসুল বলেছেন, ‘যে নিজের দ্বীন পরিবর্তন করবে, তাকে হত্যা করে ফেলবে।’ (সহীহ বুখারী, হাদীস ৬৯২২, জামে তিরমিযী, হাদীস ১৪৫৮, সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৪৩৫১, মুসনাদে আহমদ, হাদীস ১৮৭১)
প্রসিদ্ধ হাদীসে এসেছে-
২. আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে মুসলমান সাক্ষ্য দেয়, আল্লাহ ছাড়া কোনো মাবুদ নেই আর আমি আল্লাহর রাসূল, তিন কারণের কোনো একটি ব্যতীত তার রক্ত প্রবাহিত করা হালাল নয় : অন্যায়ভাবে কাউকে হত্যা করা, বিবাহিত ব্যক্তি যেনা করা, ইসলাম ত্যাগ করে উম্মত থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া। (সহীহ বুখারী, হাদীস ৬৮৭৮, জামে তিরমিযী, হাদীস ১৪০২, মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক, হাদীস ১৮৭০৪, বায়হাকী ৮:১৯৪ ইত্যাদি)
অন্য একটি হাদীসে এসেছে-
৩. আবু মুসা আশআরী রা. বলেন, আমি নবীজীর নিকট এলাম। আমার সঙ্গে দুজন আশআরী লোক ছিল। তারা দু’জনেই প্রশাসনিক পদ প্রার্থনা করল। নবীজী চুপ করে রইলেন। একটু পর আমাকে বললেন, আবু মুসা! তোমার কী মত? আমি বললাম, যে আল্লাহ আপনাকে সত্যসহ প্রেরণ করেছেন, তার কসম করে বলছি, এরা দু’জন তাদের মনের কথা আমাকে জানায়নি। আমিও ভাবতে পারিনি যে, তারা পদের আশায় এসেছে। আবু মুসা বলেন, আমি যেন এখনো দেখতে পাচ্ছি নবীজীর মেসওয়াক ঠোঁটের তলে উচু হয়ে আছে। হুজুর বললেন, আমরা কোনো উমেদারকে প্রশাসনের কাজে নিযুক্ত করি না। তবে আবু মুসা, তুমি যাও। অতঃপর নবীজী তাকে ইয়ামান পাঠালেন। তার পিছনে পাঠালেন মুআয ইবনে জাবালকে।
বর্ণনাকারী বলেন, মুআয যখন আবু মুসার কাছে পৌঁছলেন, তখন আবু মুসা তাকে স্বাগতম জানালেন এবং বসার জন্য তাকিয়া এগিয়ে দিলেন। ইতিমধ্যে দেখা গেল, আবু মুসার পাশে বাঁধা অবস্থায় পড়ে আছে এক ব্যক্তি। মুআয বললেন, এর কী হল? তিনি বললেন, এই লোক ইহুদী ধর্ম ছেড়ে ইসলাম গ্রহণ করেছিল। কিন্তু আবার সে তার বিকৃত ধর্মে ফিরে গেছে। মুআয বললেন, একে হত্যা করার আগ পর্যন্ত আমি বসব না। এটাই আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের ফায়সালা। আবু মুসা বললেন, হাঁ, ঠিক আছে। আপনি একটু বসুন। কিন্তু তিনি বললেন, না, একে হত্যা করার আগ পর্যন্ত আমি বসব না। এটাই আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের নিদের্শ। তিনি এ-কথা তিনবার বললেন। অবশেষে আবু মূসা লোকটিকে হত্যা করে ফেলার আদেশ দিলেন এবং তাই করা হল। (সুনানে আবু দাউদ : হাদীস ৪৩৫৪)
আরও এক হাদীসে এসেছে-
৪. যখন উমর রা. এর নিকট ‘তুসতার’ নামক এলাকা বিজয়ের সংবাদ এলো, তখন তিনি সংবাদবাহীদের কাছে কোনো বিরল ঘটনা ঘটেছে কি না জানতে চাইলেন। লোকেরা বললো, এক মুসলমান ব্যক্তি মুশরিক হয়ে গিয়েছিলেন তাকে আমরা গ্রেফতার করে নিয়েছি। তিনি বললেন, ঐ লোকের সঙ্গে তোমরা কী আচরণ করেছো? তারা বললো, আমরা তাকে হত্যা করে ফেলেছি। হযরত উমর বললেন, যদি তাকে একটি ঘরে আবদ্ধ করে রাখতে এবং ক্ষুধা নিবারণের জন্য প্রতিদিন রুটি দিতে। এইভাবে তিনদিন তওবা তলব করতে তাহলে কত ভালো হতো! তখন সে তওবা করলে তো করল, না হয় হত্যা করে ফেলতে।’ (মুসান্নাফ ইবনে আবি শায়বা, হাদীস ২৯৫৮৮)
বিষয়: বিবিধ
১৫৭৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন