কোরআন ও হাদীসের আলোকে নারী ?

লিখেছেন লিখেছেন আইল্যান্ড স্কাই ২৭ আগস্ট, ২০১৩, ০৫:৪৫:৩১ বিকাল

ضَرَبَ اللَّهُ مَثَلًا لِلَّذِينَ كَفَرُوا اِمْرَأَةَ نُوحٍ وَامْرَأَةَ لُوطٍ كَانَتَا تَحْتَ عَبْدَيْنِ مِنْ عِبَادِنَا صَالِحَيْنِ فَخَانَتَاهُمَا فَلَمْ يُغْنِيَا عَنْهُمَا مِنَ اللَّهِ شَيْئًا وَقِيلَ ادْخُلَا النَّارَ مَعَ الدَّاخِلِينَ.

অর্থ : আল্লাহ কাফেরদের জন্য নূহের স্ত্রী ও লূতের স্ত্রীকে দৃষ্টান্ত হিসাবে পেশ করেছেন। তারা উভয়েই আমার দু’জন সৎকর্মশীল বান্দার বিবাহাধীন ছিল; কিন্তু তারা (স্ত্রীদ্বয়) বিশ্বাসঘাতকতা করেছিল। ফলে আল্লাহর পাকড়াওয়ের সামনে তারা (নূহ ও লূত) তাদের কোনো কাজে আসেনি। আর তাদেরকে বলা হল, (জাহান্নামে) প্রবেশকারীদের সাথে তোমরাও জাহান্নামে প্রবেশ কর।-সূরা তাহরীম : ১০

যত নিকটাত্মীয়ই হোক আখিরাতে কাফের মুমিনের দ্বারা কোনো উপকার পাবে না। যেমন আমরা এই আয়াতে দেখি, স্বামী নবী হওয়া সত্ত্বেও স্ত্রীর কোনো উপকারে আসছেন না, কারণ স্ত্রী কুফরী করেছে। এই আয়াতের পরপরই আল্লাহ তায়ালা ফিরআউনের স্ত্রীর মাধ্যমে দৃষ্টান্ত পেশ করেছেন; খোদাদ্রোহী স্বামীর স্ত্রীও ঈমান আনার দ্বারা নাজাত পেয়েছেন ও চির স্মরণীয় ও আদর্শ হয়ে আছেন।

হযরত নূহ আ.-এর স্ত্রী তার মহাত্মা স্বামীর বিরুদ্ধাচারণ করত এবং তাকে পাগল বলত। তাঁর গোপন বিষয় কাফিরদের কাছে ফাঁস করে দিত। আর হযরত লূত আ.-এর স্ত্রীও ছিল স্বামীর অবাধ্য। সেও তাঁর শত্রুদের সাহায্য করত। (রুহুল মাআনী) আর ফিরআউনের স্ত্রী ছিলেন হযরত আসিয়া রা.। তিনি মূসা আ. এর উপর ঈমান এনেছিলেন। ফিরআউন এ সংবাদ জানতে পেরে তাঁকে কঠিন শাস্তি দেয়। বিভিন্ন বর্ণনায় এসেছে যে, চার হাত-পায়ে পেরেক পুঁতে তাঁকে প্রখর রোদে ফেলে রাখা হয়, তবুও তিনি ঈমান ত্যাগ করেননি। (তাওযীহুল কুরআন)

এই আয়াত থেকে বোঝা যায়, প্রত্যেকে নিজ নিজ কর্মের ফল ভোগ করবে। এ কারণে নবীর স্ত্রী হওয়া সত্ত্বেও হযরত নূহ আ. ও হযরত লূত আ. এর স্ত্রী নাজাত পায়নি; বরং আল্লাহ ও তার রাসূলের বিরোধিতার কারণে তাদেরকে আযাবের শিকার হতে হয়েছে। সুতরাং নাজাতের মানদন্ড হল ঈমান ও আমলে ছালেহ। অতএব নিজ আত্মীয় যত বড় ওলী বা বুযুর্গ হোক না কেন নিজে নেক আমল না করে সে পার করে নিবেন ভেবে বসে থাকার কোনো সুযোগ নেই। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাদীস শরীফে বিষয়টি পরিষ্কারভাবে এসেছে। সূরা শু‘আরা এর ২১৪ নং আয়াত-

وانذر عشيرتك الاقربين

(অর্থ) ‘‘আপনার নিকটাত্মীয়দের সতর্ক করুন’’ যখন নাযিল হল তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাফা পাহাড়ে উঠলেন এবং ( নিকটাত্মীয়দের ইসলামের দাওয়াত ও আখেরাতের ভয় দেখালেন, একপর্যায়ে) বললেন, হে মুহাম্মাদের মেয়ে ফাতেমা! হে সাফিয়্যা বিনতে আবদিল মুত্তালিব! হে আবদুল মু্ত্তালিবের সন্তানেরা! আমার সম্পদ থেকে যা চাও দিতে পারব, কিন্তু আল্লাহর পাকড়াওয়ের সামনে আমি তোমাদের কোনো উপকার করতে পারব না।-সহীহ মুসলিম, হাদীস : ৩৫০

হাঁ, ঈমান ও আমলে ছালেহ যদি থাকে তাহলে আল্লাহ পরবর্তী বংশধরকে পূর্ববর্তীদের (সন্তান-সন্ততিকে পিতা-মাতার) সাথে মিলিয়ে দিবেন যদিও তাদের মাঝে মর্যাদার তারতম্য থাকে। সূরা তুরের ২১ নং আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, (অর্থ) এবং যারা ঈমান আনে আর তাদের সন্তান-সন্ততি ঈমানে তাদের অনুগামী হয়,তাহলে তাদের সাথে তাদের সন্তান-সন্ততিকে মিলিয়ে দিব এবং তাদের কর্মফল সামান্যও কমাব না; প্রত্যেক ব্যক্তি নিজ কৃতকর্মের জন্য দায়ী।

আলোচ্য আয়াত থেকে আরো বোঝা যায়, একের কর্ম ও কীর্তি যেমন অপরকে মুক্তি দিতে পারে না তেমনি একজনের মন্দ কর্মের ফলও অন্যকে ভোগ করতে হবে না। স্ত্রীর ঈমান না আনা ও মন্দ কর্মের জন্য না নূহ ও লূত আ. কে পাকড়াও করা হবে, না সন্তানের কারণে নূহ আ. জিজ্ঞাসিত হবেন। তবে প্রত্যেকেই নিজ দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে এবং প্রত্যেকেই স্বীয় কর্মের ফল ভোগ করবে।

আর প্রত্যেকের দায়িত্বে নিজের অধীনস্থদের তালীম-তরবিয়তের বিষয়টিও শামিল আছে।

আলোচ্য আয়াত থেকে আরো বোঝা যায়, আমলের ছাওয়াবের ক্ষেত্রে নারী-পুরুষে কোনো ভেদাভেদ নেই। যিনিই ঈমান এনে নেক আমল করবেন তিনিই আল্লাহর নৈকট্য ও সন্তুষ্টি পাবেন। আল্লাহ তাআলা বলেন, (অর্থ) পুরুষ হোক নারী হোক মুমিন অবস্থায় যেই নেক আমল করবে তাকে আমি পবিত্র জীবন দান করব এবং তাদেরকে তাদের আমলের শ্রেষ্ঠ পুরষ্কার দান করব।-সূরা নাহল : ৯৭

বিবি আসিয়া ঈমান এনেছেন এবং নেক আমল করেছেন সুতরাং তিনি নারী হয়েও শ্রেষ্ঠ ও প্রশংসিত। পক্ষান্তরে স্বামী ফিরআউন ঈমান আনেনি ফলে সে পুরুষ হয়েও নিকৃষ্ট ও ধিকৃত

عن عائشة أم المؤمنين رضي الله عنها استأذنت النبي صلى الله عليه وسلم في الجهاد، فقال : جهادكن الحج.

উম্মুল মুমিনীন আয়েশা রা. বলেন, আমি (অন্য রেওয়ায়াতে আছে, আমরা) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে জিহাদের অনুমতি চাইলাম। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তোমাদের জিহাদ হল হজ্ব।-সহীহ বুখারী, হাদীস : ২৮৭৫

আলোচ্য হাদীসে জিহাদের প্রতি নারীদের আগ্রহের কথা ফুটে উঠেছে। ইমাম বুখারী রহ. এ অধ্যায়ের শিরোনাম দিয়েছেন جهاد النساء নারীদের জিহাদ। অর্থাৎ নারীদের জিহাদ হল হজ্ব। কারণ বিভিন্ন হাদীস থেকে এ কথা স্পষ্ট যে,নারীদের উপর জিহাদ ফরজ নয়। আবার হাদীস শরীফে এ কথাও এসেছে যে, জিহাদ সর্বোত্তম আমল। এখন জিহাদের মত সর্বোত্তম আমলের ফযীলত শুধু পুরুষরাই লাভ করবে এমনটি নয়; বরং হজ্ব আদায়ের মাধ্যমে নারীরাও এ ফযীলত লাভ করতে পারবে।

جهادكن الحج

‘তোমাদের জিহাদ হলো হজ্ব’-এ কথা বলে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ দিকেই ইঙ্গিত করেছেন। হযরত আয়েশা রা. থেকে বুখারীর আরেক বর্ণনায় এসেছে, তিনি বলেন, হে আল্লাহর রসূল! আমরা দেখছি জিহাদ সর্বোত্তম আমল। আমরাও জিহাদে যেতে চাই। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, (তোমাদের জন্য) সর্বোত্তম জিহাদ হল হজ্জে মাবরুর। -সহীহ বুখারী, হাদীস : ১৫২০

আরেক হাদীসে এসেছে আয়েশা রা. বলেন, হে আল্লাহর রসূল! নারীদের উপর কি জিহাদ আছে? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, হাঁ, এমন জিহাদ যাতে কোনো লড়াই নেই-হজ্ব ও ওমরাহ।-সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস : ২৯০১

নারীদের জিহাদের ফযীলত লাভ করার আগ্রহকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্বাগত জানিয়েছেন। তবে সাথে সাথে বলে দিয়েছেন; কোন্ আমল করলে তারা সর্বোত্তম আমল জিহাদের ফযীলত লাভ করতে পারবে। জিহাদের মধ্যে যেমন অনেক প্রতিকূল পরিস্থিতির মোকাবেলা করতে হয় তেমনি হজ্বের মধ্যেও বিভিন্ন প্রতিকূল পরিবেশের সম্মুখীন হতে হয়। এই কষ্ট সহ্য করে ধৈর্য্যের সাথে যদি নারীরা হজ্ব আদায় করেন তাহলে তারাও জিহাদের ফযীলত লাভ করবেন।

এ হাদীসে সামর্থ্যবান নারীর বেশী বেশী হজ্ব করার ফযীলতের প্রতিও ইঙ্গিত পাওয়া যায়। আরেক বর্ণনায় এসেছে, হযরত আয়েশা রা. বলেন, হে আল্লাহর রসূল! আমরা কি আপনাদের সাথে জিহাদে বের হব না? তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, (না,তোমাদের জন্য) উত্তম ও সুন্দর জিহাদ হজ্ব, মাবরূর হজ্ব। আয়েশা রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর এ বাণী শোনার পর থেকে আমি হজ্ব ছাড়িনি।-সহীহ বুখারী, হাদীস : ১৮৬১

বিষয়: বিবিধ

২৪৬৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File