কারো সততা তার কথায় ধরা পড়ে না
লিখেছেন লিখেছেন আইল্যান্ড স্কাই ১৩ আগস্ট, ২০১৩, ০৪:১৮:৪৪ বিকাল
সমাজের অতি দুর্বৃত্ত ব্যক্তিটিও নিজেকে সৎ ও নির্দোষ বলে দাবী করে। তবে প্রতি সমাজেই সততা পরিমাপের কিছু গ্রহনযোগ্য মাপকাঠি আছে। তা হল, তার আয় এবং গচ্ছিত সম্পদের হিসাব। একজন ভদ্রলোকের পক্ষে তার আয় ও সম্পদ কোনটাই লুকানোর বিষয় নয়। চাকুরি, ব্যবসা-বাণিজ্য বা চাষাবাদ যাই সে করুক না কেন তা থেকে যেমন তার সমুদয় আয়ের একটি হিসাব যে কেউ বের করতে পারে। তেমন তার ঘরবাড়ি ও গচ্ছিত সম্পদের পরিমাণ কত সেটিরও একটি হিসাব বের করা যায়। আযের সাথে সম্পদের সে অসঙ্গতিই বলে দেয় তার আসল সততা। তখন বেড়িয়ে আসে সে কতটা দুর্বৃত্ত। এ বিচারে বিশাল আদালত বসানো লাগে না। তাই মোটা বেতনের চাকুরি নাই, বিশাল ব্যবসা-বাণিজ্য নেই, পিতার জমিদারীও নাই এমন ব্যক্তি যদি ধানমন্ডি, গুলশান বা বনানীতে বিশাল বাড়ীর মালিক হন, তখন কি গবেষণার প্রয়োজন পড়ে এটুকু বুঝতে যে লোকটি আর যাই হোক সৎ হতে পারে না? শেখ মুজিবের মৃত্যুর পর তার গৃহে প্রাপ্তসম্পদের একটি তালিকা করা হয়। ৩০ শে অক্টোবর (১৯৭৫) দৈনিক ইত্তেফাক মোতাবেক শেখ মুজিবর রহমানের ধানমন্ডিস্থ ৩২ নং সড়কের ব্যক্তিগত বাসভবনে প্রাপ্ত সম্পদের বিররণ হলঃ
০ হীরা, মুক্তা, প্লাটিনাম ও স্বর্ণালঙ্কর - ৭ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা
০ নগদ বাংলাদেশী টাকা- ৯৪ হাজার ৪ শত ৬১ টাকা
০ ব্যক্তিগত মোটর গাড়ী - ৩ টি
০ বৈদেশিক মুদ্রা ১৭ হাজার ৫ শত টাকা (সমমূল্যের)
০ বিদেশী রাষ্ট্র প্রদত্ত ১ লক্ষ টাকার উপহার
০ বাতিলকৃত শতকী নোট - ৬ শত ২১ খানা
০ ১টি ভারী মেশিনগান, ২টি হালকা মেশিনগান, ৩টি এস,এম,জি, ৪টি স্টেনগান, ৯০ টি গ্রেনেডসহ গোলাবারুদ ইত্যাদি।
মুজিবের রাজনৈতিক সততা যাচাইয়ের বহু দলীল রয়েছে, বহু প্রমাণও রয়েছে। কোটি কোটি মানুষ তার রাজনৈতিক কর্ম ও আচরণ স্বচোক্ষে দেখেছে। রাজনৈতিক চরিত্রের পাশাপাশি অকাঠ্য প্রমাণ রয়েছে তার অর্থনৈতিক চরিত্র বিচারেও। মানুষ মারা যায় এবং রেখে যায় সম্পদ। আর সে গচ্ছিত সম্পদের মাধ্যমেই প্রকাশ পায় তার প্রকৃত চরিত্র। বস্তুতঃ ব্যক্তির চরিত্র পরিমাপে এ সম্পদই হল প্রকৃত গজ-ফিতা। তাই চরিত্র লুকানো যায় না, যেমন লুকানো যায় না গচ্ছিত সম্পদ। একারণেই যে কোন দেশে এবং যে কোন সমাজে সততা বা ন্যায়পরায়নতা যাচাইয়ে অতি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হল নাগরিকের গচ্ছিত সম্পদের তথ্য। তাই বহু দেশের সরকারই কড়া নজরদারি রাখে নাগরিকদের গচ্ছিত সম্পদের উপর। তাই মুজিবের চরিত্র বিচারে এ গচ্ছিত সম্পদ যে সুস্পষ্ট সাক্ষ্য দেয় সেটি কি অস্বীকার করা যায়? মুজিব ছিলেন একজন রাজনীতিবিদ। তার কোন ব্যবসা বাণিজ্য ছিল না। তার পিতাও কোন বিত্তশালী লোক ছিলেন না। তিনি প্রেসিডেন্ট হয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। সে সুবাদে কিছু সরকারি বেতনও পেয়েছেন। কিন্তু কথা হল, সে বেতন যত বিশালই হোক, তা দিয়ে কি এরূপ গচ্ছিত সম্পদ গড়ে উঠে? কেনা যায় কি তিনটি মোটর গাড়ি? জমে উঠে কি লাখ লাখ টাকার সম্পদ? নির্মিত হয় কি ধানমন্ন্ডির বিশাল বাড়ী? বাংলাদেশে যিনি সর্বোচ্চ সরকারি বেতন পান তার পক্ষেও কি এত সম্পদের মালিক হওয়া সম্ভব? তাই প্রশ্ন, কোথা থেকে পেলেন তিনি এ বিশাল সম্পদ? এ সম্পদ যে সৎ উপায়ে অর্জিত হয়নি তা নিয়ে কি সন্দেহ থাকে? আর যে ব্যক্তি সম্পদ-অর্জনে সৎ নন তিনি কি রাজনীতিতেও সৎ হতে পারেন? কথা হল, এমন ব্যক্তিকে কি শ্রেষ্ঠ বাঙালীর আসনে বসানো যায়? আর সেটি করলে কি একটি জাতির ইজ্জত থাকে? থাকে না বলেই, বহু পাশ্চাত্য দেশে মিথ্যা বললে বা আয়ের সাথে সঙ্গতি নাই এমন গচ্ছিত সম্পদ ধরা পড়লে এমন ব্যক্তিকে কোন দলই মন্ত্রীত্ব দেয় না, এমন কি দলীয় সদস্যপদও দেয় না। কোন দুর্বৃত্তকে নেতা বানালে দুর্বৃত্তের ক্ষতি হয় না, ভয়ানক ক্ষতি এবং সম্মানহানী হয় তাদের যারা তাকে নেতা বানায়। এটি অনেকটা গলিত আবর্জনা মাথায় করে বিশ্ব-দরবারে দাঁড়ানোর মত। তাই কোন বিবেকমান জাতিই দুর্বৃত্তের দায়ভার মাথায় নেয় না, বর্জ-আবর্জনার ন্যায় তাকেও তাই ইতিহাসের আবর্জনার স্তুপে ফেলে। দূর্নীতিপরায়ন ব্যক্তির প্রকৃত স্থান তাই জেলে, সমাজে নয়। দূর্নীতিই একটি ব্যক্তির চরিত্রের সবচেয়ে বড় কলংক। আর এমন ব্যক্তিকে সম্মান দিলে অসম্মান ও অপমান বাড়ে জাতির। আর আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের অপমান বাড়িয়েছে শুধু দেশকে তলাহীন ভিক্ষার ঝুলি বানানোর মধ্য দিয়ে নয়, বরং সবচেয়ে বড় অসম্মান বাড়িয়েছে দূর্নীতিবাজদের মাথায় তুলে।
বিষয়: বিবিধ
১৪০৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন