ঈদে অশ্লীল আনন্দ পরিহার করা উচিৎ
লিখেছেন লিখেছেন আইল্যান্ড স্কাই ০৯ আগস্ট, ২০১৩, ০১:৩০:৩০ রাত
প্রিয় কবি মতিউর রহমান মল্লিক বলেছেন-
আমীর ফকির এক হয়ে যায় যে ঈদে
আয়না সবাই এক হয়ে যাই সে ঈদে।
এক থাকি সব এমনি করে জীবন ভর
যাই ভুলে যাই উচু নিচু, আপন পর।
পবিত্র রমজান মাসে শুধু আনন্দ, খুশীতে মন ভরে যায়। আর সব খুশীর পরিপূর্ণতা লাভ করে ঈদের দিন। কিন্তু সমাজের কিছু সংখ্যক মানুষ রামাদান ও ঈদের নিছক খুশী বা আনন্দ করে (ঈদের দিন) গান বাজনা নিয়ে ব্যস্ত থাকে। কে কত দামের জামা কিনতে পারলো তার প্রতিযোগীতা করে। কিছু সংখ্যাক প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া রমজান ও ঈদের শিক্ষার সাথে সামঞ্জ্য নেই এমন গল্প, নাটক, চলচ্চিত্র প্রদর্শন করে। সামান্য ছোট-খাট বিষয় নিয়ে একে অন্যের সাথে ঝগড়ায় লিপ্ত হয়। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস পত্রের দাম বাড়িয়ে মানুষদের কষ্ট দেয়া হয়। অথচ রামাদানের সঠিক শিক্ষা গ্রহণ করলে এমনটি হওয়ার কথা ছিল না। আমরা যদি সত্যিকার মুত্তাকী হতে পারতাম তা হলে এমন হত না। অন্যদিকে দীর্ঘ একটি মাস সিয়াম সাধনার পরও অনেক মানুষ সত্যিকারের ঈদের খুশী করতে পারবে না। কারণ দেশের বিরাট জনগোষ্ঠীর উপর জুলুম নির্যাতন হচ্ছে, অসংখ্য মানুষ দীর্ঘদিন থেকে কারাগারে মানবেতর জীবন যাপন করছে। ইসলাম প্রিয় জনতার উপর গুলি চালিয়ে শতাধিক মানুষ হত্যা করা হচ্ছে। তাদের পরিবার এর আর্তচিৎকারে আকাশ বাতাস ভারী হচ্ছে। গ্রেফতারের নামে হাজার হাজার ছাত্র জনতাকে পঙ্গু করা হচ্ছে, অনেক তাজা প্রাণকে অন্ধ করে দেয়া হচ্ছে, শত শত মানুষ নিজের বাড়ী ঘর ছেড়ে যাযাবরের মত জীবনযাপন করছে। সেই সব মজলুম মানুষের মুখে ঈদের হাসির পরিবর্তে আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ “হে আল্লাহ আমাদেরকে এই জালিমদের হাত থেকে রক্ষা করুন, এই জালিমদের হেদায়াত করুন, হেদায়াত না হলে এদের ধ্বংস করুন।” এই ফরিয়াদের মাধ্যমে ঈদের আনন্দ হয় মজলুম মানুষের।
তাইতো জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম সত্যিই বলেছেন “যতদিন না কায়েম হবে খোদার বিধান এই ধরায়”।
কিসের আবার ঈদের খুশী এই অনুষ্ঠান অর্থহীন”
পবিত্র ঈদ-উল-ফিতরের আনন্দ তখনই পরিপূর্ণ হবে যখন আমরা সত্যিকার মুত্তাকী হবো। আমাদের অন্তরে আল্লাহর ভয় ছাড়া অন্য কোন ভয় থাকবে না। সব মানুষের সাথে সমান আচরণ করবো, রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস থেকে নির্যাতিত মানুষ মুক্তি পাবে। অর্থাৎ ইনসাফপূর্ণ সমাজ কায়েম এর মাধ্যমে ঈদের সত্যিকার খুশী সম্পন্ন হবে।
ইসলাম ধর্মের ঈদ কি কোরআন-হাদিসে এভাবে পালন করার কথা বলা আছে । ঈদ আসলেই শুরু হয় নতুন সিনেমা, নাটক,গান-বাজনা। তারা ইসলাম ধর্মে হারাম নাচ-গান, সিনেমা, অশ্লীলতা, শরাব আর বেহেল্লাপনার উদ্যমতা নিয়েই তথাকথিত ঈদ আনন্দ উপভোগ করতে চায়। মহিলারা রোজার মাসে মাথায় কাপড়/বোরকা পড়লেও ঈদের দিন থেকে ল্যাংটা সাংস্কৃতিক অনুকরণে নেটের মতো পাতলা অশ্লীল পোষাক পরিধান করে। বিজাতীয় আচরণ প্রদর্শন। নারী-পুরুষ একে অপরের বেশ ধারণ। নারীদের খোলামেলা অবস্থায় রাস্তাঘাটে বের হওয়া। গান-বাজনা করা, অশ্লীল সিনেমা ও নাটক দেখা। বেহুদা কাজে সময় ব্যয় করা। জামায়াতের সঙ্গে ফরজ সালাত আদায়ে অলসতা করা। অবাধে নারীদের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ করা। অপচয় ও অপব্যয় করা। ঈদের দিনকে কবর জিয়ারতের জন্য নির্দিষ্ট করা। জুয়া খেলা ও আতশবাজি করা। মানুষকে কষ্ট দেয়া। ঈদের সালাত আদায় না করে কেবল আনন্দ ফুর্তি করা।
ঈদ সম্পূর্ন ধর্মীয় তথা ঈদ উৎসব তাই মুসলমানদের ধর্মীয় বিধান অনুযায়ী ঈদ পালন করতে হবে।
ইবনে জারির (রা.) বর্ণনা মতে, দ্বিতীয় হিজরিতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রথম ঈদ পালন করেছেন। শুধু খেলাধুলা, আমোদ-ফুর্তির জন্য যে দুটো দিন ছিল আল্লাহ তায়ালা তা পরিবর্তন করে এমন দুটো দিন দান করলেন যে দিনে আল্লাহর শুকরিয়া, তার জিকির, তার কাছে ক্ষমা প্রার্থনার সঙ্গে সঙ্গে শালীন আমোদ-ফুর্তি, সাজসজ্জা, খাওয়া-দাওয়া করা হবে।
ঈদ একটি ইবাদাত। আনন্দ ও ফুর্তি করার মাধ্যমেও যে ইবাদাত পালন করা যায়, ঈদ তার অন্যতম উদাহরণ। শরিয়াহ সম্মতভাবে আনন্দ প্রকাশ করার বিষয়ে কোরআনে এসেছে, ‘বল, এটা আল্লাহর অনুগ্রহ ও রহমত, সুতরাং এ নিয়েই যেন তারা খুশি হয়। এটি যা তারা জমা করে তা থেকে উত্তম।’ [সূরা ইউনুস : ৫৮]
আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব প্রকাশ এবং শুকরিয়া আদায়ের মাধ্যমে আমরা ঈদ উদযাপন করব ইনশাআল্লাহ। এ বিষয়ে আল কোরআনে আল্লাহ বলেন, ‘আর যাতে তোমরা সংখ্যা পূরণ কর এবং তিনি তোমাদের যে হেদায়েত দিয়েছেন, তার জন্য আল্লাহর বড়ত্ব ঘোষণা কর এবং যাতে তোমরা শোকর কর।’ [সূরা আল বাকারাহ : ১৮৫
ঈদ আমাদের জন্য এক বিরাট নিয়ামাত। কিন্তু আমরা এদিনকে নিয়ামত হিসেবে গ্রহণ করি না। এদিনে অনেক কাজ আছে যার মাধ্যমে আমরা আল্লাহ তায়ালার নিকটবর্তী হতে পারি এবং ঈদ উদযাপনও একটি ইবাদতে পরিণত হতে পারে। ঈদের চাঁদ দেখার পর থেকে তাকবির পাঠ করা। ফজরের নামাজ জামায়াতে আদায় করা। ঈদের সালাত আদায় করা। ঈদের দিন গোসল করা। পায়ে হেঁটে ঈদগাহে যাওয়া। ঈদের দিনে খাবার গ্রহণ। ঈদে শুভেচ্ছা বিনিময়ের করা। নতুন বা পরিচ্ছন্ন পোশাক পরিধান করা। ঈদের খুতবা শ্রবণ করা। দোয়া ও ইস্তেগফার করা। মুসাফাহা ও মুআনাকা করা। ফিতরা দেয়া। এতিম ও অভাবিকে খাবার খাওয়ানো। আত্মীয়-স্বজনের খোঁজ-খবর নেয়া। প্রতিবেশীর খোঁজ-খবর নেয়া। মন-মালিন্য দূর করা। শরিয়তের নিয়ম অনুযায়ী আনন্দ প্রকাশ করা।
বিষয়: বিবিধ
১৬২২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন