শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের দূরদর্শীতা এবং প্রতি দেড় মিনিটে একজন নারীকে ধর্ষণ!

লিখেছেন লিখেছেন আইল্যান্ড স্কাই ০৪ আগস্ট, ২০১৩, ১২:২৯:৩০ রাত



হাটিহাটি পা পা করে বাংলাদেশের বয়স ৪০ বছরে এসে দাড়াঁলো। বাংলাদেশ ৪০ বছরে অনেক কিছু অর্জন করেছ এবং অনেক কিছু হারিয়েছে বা ধরে রাখতে পারেনি। একটি দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে তার প্রধান লক্ষ্য থাকে বিশ্ব দরবারে মাথা উচুঁ করে দাড়াঁবার। সেই লক্ষে দেশের মানব সম্পদকে সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করতে হয়। যে দেশ যতবেশি মানব সম্পদকে সুষ্ঠ ও সুন্দরভাবে ব্যবহার করতে পারবে, সেই দেশ ততবেশি মাথা উচুঁ করে দাড়াঁবে। মালোয়শিয়ার অর্থনীতি এক সময়ে আমাদের মতো ছিল। কিন্তু তারা মানবসম্পদকে সুব্যবহার করার কারণে তাদের অবস্থা আজ কত উচুঁ স্থানে। ঠিক সেই মূহুর্তে আমাদের অর্থনৈতিক অবস্থা কোথায়? আমরা আমাদের মানবসম্পদকে কাজে লাগাতে পারিনি। আমরা পারিনি আগামী দিনের জন্য সৎ,দক্ষ ও দেশপ্রেমিক সুনাগরিক তৈরি করতে। সুনাগরিক তৈরি না হওয়ার পেছনে সবচেয়ে বড় বাধা হচ্ছে আমাদের রাজনীতিবিদগণ। তারা অধিকাংশ সময়ে দেশ ও জাতীর মঙ্গলের জন্য কাজ করেনি বা করছে না। নিজেদের স্বার্থের জন্য রাজনীতি করে। এই ভ্রান্ত রাজনীতিবিদদের উদ্দেশ্যে মহান নেতার বাণী হচ্ছে, “সাত কোটি কম্বল আসলো, আমার কম্বল কোথায়? দেশটা চোরে ভরে গেছে। সবাই পায় সোনার খনি আমি পেলাম চোরের খনি।” এই ভ্রান্ত কুলাঙ্গার রাজনীতিবিদরা মুক্তিযোদ্ধোর সময়ে ভারতের বিলাস বহুল হোটেল দিন কাটিয়ে ছিলো।

স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে জাতিকে সামনে এগিয়ে নেয়া যেমন কর্তব্য। তেমনি ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করাও সরকারের কর্তব্য। সেই লক্ষ্যে মরহুম শেখ মুজিবর রহমান যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য আইন করেন। যার নাম international crimes(tribunal)Act 1973. একটু বুঝা দরকার যুদ্ধাপরাধী কি? যুদ্ধাপরাধী বা যুদ্ধ+অপরাধী মানে যুদ্ধ করতে গিয়ে যারা অপরাধ সংঘঠিত করেছে তারাই যুদ্ধাপরাধী। তাই এই আইনের অধীনে যাদেরকে অপরাধী হিসাবে সনাক্ত করা হয়েছে। তারা কেউ বাংলাদেশী নয়। সবাই পাকিস্তানী মিলিটারীর সদস্য। তাদের সংখ্যা ছিল ১৯৫ জন। দেশ প্রেমিক মহান নেতা জাতীয় স্বার্থকে চিন্তা করে উপমহাদেশের শান্তি ও সমঝোতার জন্য পাকিস্তানের forgive and forget এর আবেদনের প্রেক্ষিতে ১৯৫ জন যুদ্ধাপরাধীদেরকে সিমলা চুক্তির মাধ্যমে ছেড়ে দেন। এরই মাধ্যমে যুদ্ধাপরাধী বিষয়টির ইতি ঘটে। আবারো বলছি যুদ্ধাপরাধী বিষয়টির ইতি ঘটে।

এরপর যে বিষয়টি জাতীর সামনে আসে তাহলো, যারা যুদ্ধাপরাধীদের অপরাধ সংগঠিত করতে সাহায্য করেছে। তাদের জন্য সরকার আরেকটি আইন করে। যার নাম “কলেবরেটর এ্যাক্ট”। যাকে দালাল আইনও বলা হয়। এই আইনের অধিনে প্রাথমিকভাবে লক্ষাধিক মানুষকে প্রেফতার করা হয়। এদের মধ্যে অভিযোগ আনা হয় ৩৭,৪৭১ জনের বিরুদ্ধে। এর মধ্যে ৩৪,৬২৩ জনের বিরুদ্ধে কোন সাক্ষী প্রমাণ না থাকায় মামলা দায়ের করা সম্ভব হয়নি। বাকী ২,৮৪৮ জনকে বিচারে সোপর্দ করা হয়। বিচারে ৭৫২ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হয় এবং ২ হাজার ৯৬ জনকে বেকুসুর খালাস পায়। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো সরকার দেশের সার্বিক পরিস্থিতি,দেশের মধ্যে শান্তি ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠার লক্ষে এবং বিভেদ মুছে ফেলার জন্য শেখ মুজিবর রহমান সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেন। তবে একটি বিষয় উন্মুক্ত ছিলো, যারা হত্যা,ধর্ষণ,লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের সাথে জড়িত ছিল তাদের ক্ষমা করা হয়নি। সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার দীর্ঘদিন পর্যন্ত এই চার অভিযোগের ভিত্তিতে কারোর বিরুদ্ধে কেউ মামলা করেনি। তাই শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান কলেবরেটর এ্যাক্ট আইনটি বাতিল করেন। সরকারের এই সিদ্ধান্তটিকে An Act of state বলা হয়।

প্রেসিডেন্ট জিয়া কেন এই কাজটি করলেন? দেশের সার্বিক পরিস্থিতি এবং মধ্যপ্রাচ্যের সাথে সুসম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করা ছাড়া অন্য কোন উপায় ছিল না। পাশাপাশি যুদ্ধাপরাধী হিসাবে চি‎িহ্নত ১৯৫ জনকে এবং দালাল আইনের মাধ্যমে অভিযুক্তদের শেখ মুজিবর রহমান ক্ষমা করে দিয়ে গেছেন। যে চারটি অপরাধের কথা বলা ছিল তা দীর্ঘদিন হলেও কেউ কারোর বিরুদ্ধে মামলা পর্যন্ত করেনি। এই জন্যে কলেবরেটর এ্যাক্টটি বাতিল করা হয়। এর মাধ্যমে দেশের মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠা ও বহির্বিশ্বের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক সুদৃঢ় হয়। এটা জিয়াউর রহমানের দূরদর্শীতারই প্রমাণ করে।

এখন আসা যাক আমাদের বর্তমান “আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল” এর কথায়-

বর্তমান সরকার নির্বাচিত হওয়ার আগে ঢাকঢোল পিটিয়ে বলেছে, যেকোন মূল্যে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করবে। যারা আমাদের ২লক্ষ মা-বোনকে ধর্ষণ করেছে তাদের বিচার করতে হবে, এটা অত্যন্ত ভালো কথা। কিন্তু আওয়ামীলীগ কোন যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করবে? ১৯৫ জনকে? না, তারা না। এই যুদ্ধাপরাধী হচ্ছে যারা দেশের জন্য জন্ম থেকে অদ্যাবধি কাজ করে চলেতেছে। যারা দেশকে ভারতের তাবেদার রাষ্ট্রে পরিণত করতে চায় না। যারা আল্লাহর উপর আস্থা ও ইসলাম প্রতিষ্ঠার কথা বলে তারাই এই যুদ্ধাপরাধী। আওয়ামীলীগ ২০০১ সালের নির্বাচনের আগে কখনো “যুদ্ধাপরাধী” শব্দটি মুখে পর্যন্ত আনেনি। ১৯৯১ সালের স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে আওয়ামীলীগ,বিএনপি এবং জামায়াত এক সাথে আন্দোলন সংগ্রাম করেছিল। আওয়ামীলীগ ১৯৯৬ সালে জামায়াতের সাথে বি,এন,পির বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছিলো। এই আওয়ামীলীগ ১৯৯১ সালে জামায়াতকে তিনটি মন্ত্রণালয় এবং ৭টি মহিলা আসনের প্রস্তাব দিয়ে ছিলো। দীর্ঘ সময়ে বিএনপি-জামায়াতকে তারা কেউ যুদ্ধাপরাধী বলেনি। কারণ বিভিন্ন সময়ে জামায়াত-বিএনপির সাহায্য দরকার ছিলো ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য। এতে কোন সন্দেহ নেই যে, জামায়াত-বিএনপির কেউ যুদ্ধাপরাধ মূলক কাজ করেনি। যুদ্ধাপরাধী ছিল পাকিস্তানের মিলিটারিরা। তারাই যুদ্ধ করতে গিয়ে বিভিন্ন অপরাধ সংঘঠিত করেছে। সেখানে বিএনপির কেউ ছিল না। আর জামায়াত তো প্রশ্নই উঠে না। কারণ তারা যুদ্ধই করেনি। পরবর্তীতে দালাল আইনে যাদের প্রেফতার বা অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। সেখানে জামায়াত-বিএনপির কেউ ছিল না। আজকে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে যুদ্ধাপরাধী বলা হয়। অথচ তিনি নিজ এলাকা থেকে বহুবার নির্বাচিত হয়েছেন। এইভাবে আব্দুল আলীম, মতিউর রহমান নিজামী, আল্লামা দেলওয়ার হোসেন সাঈদী, আলী আহসান মুজাহিদসহ সকলেই এই দেশের কৃতি সন্তান। স্বাধীনতার পরে তারা কেউ পালিয়ে যায়নি। বরং বাংলাদেশের রাজনীতিতে তারা উজ্জ্বল নক্ষত্র। দেশের এদের যে অবদান তা ভুলে যাওয়ার মতো নয়। কিন্তু শেখ হাসিনা ভুলে গেছে ভাষাসৈনিক অধ্যাপক গোলাম আযমের পা ছুয়ে সালাম করার কথা। যুদ্ধাপরাধী বিষয়টি আসলে যেন অধ্যাপক গোলাম আযমের কথা চলে আসে। অথচ হাইকোর্ট দ্বারা স্বীকৃত যে, তিনি ৭১সালে কোন প্রকার অপরাধের সাথে জড়িত ছিলেন না। অধ্যাপক গোলাম আযম স্যারকে আরেকটি অপবাদ দেয়া হয়। তিনি নাকি ১৯৭১ সালে ৩ লক্ষ মা-বোনের ইজ্জ্বত লুন্ঠন করে ছিলেন।

নাগরিকত্বের মামলায়ঃ ১৯৯২-১৯৯৪ সালে অধ্যাপক গোলাম আজমের বিচারের শুনানি কালে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী এবং তদানীন্তন এটর্নি জেনারেল জনাব আমিনুল হক বিচারককে বললেন, স্বাধীনতা যুদ্ধকালে এই ব্যক্তি(অধ্যাপক গোলাম আজম) অনেক অপরাধের সাথে জড়িত ছিলেন। তিনি লক্ষ লক্ষ মানুষের মৃত্যুর জন্য দায়ী, তিনি ৩ লক্ষ মা-বোনের ধর্ষণ কারেছেন........ অধ্যাপক গোলাম আজমের আইনজীবী ব্যারিষ্টার এ,আর,ইউসুফ মাঝ পথে এটর্নি জেনারেলকে থামালেন, তারঁ পকেট থেকে ক্যালকুলেটর বের করে হিসাব করে বললেন। মাননীয় বিচারক, ৩ লক্ষ ৮০ হাজার মিনিটের লড়াইয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে, আর আমার মক্কেলের বিরুদ্ধে এই মুহূর্তে ৩ লক্ষ নারী ধর্ষণের অভিযোগ আনা হল! সেই হিসাবে আমার মক্কেল গোলাম আজমকে উক্ত রেকর্ড পরিপূর্ণ করতে প্রতি দেড় মিনিটে একজন করে নারী ধষর্ণ করতে হবে। একজন মানুষ হিসাবে তার বিরুদ্ধে এই অভিযোগ গ্রহণযোগ্য নয়। পৃথিবীর কোন মানুষের পক্ষেই এ ধরনের দূরহ কাজ করা সম্ভব নয়। আপনি এই যুক্তি আমলে নিবেন না। যুক্তির মাধ্যমে কথাটি সন্দেহাতীত ভাবে প্রমাণিত হবার ফলে মাননীয় বিচারক সামান্য সময়ের জন্যও এটর্নি জেনারেলের দাবীকে গ্রহণ করেনি। উপরে লিখিত কথাটি অবিকল এভাবে আদালতে উপস্থাপিত হয়নি, তবে কথার মূল বিষয় বস্তু এটাই ছিল। দীর্ঘ দিনের শুনানি শেষে এই বিচারের রায় গোলাম আজমের পক্ষে গিয়েছিল।

আসুন এবার নাগরিকত্ব মামলার রায়ের উল্লেখযোগ্য অংশ দেখে নেয়া যাক। মাননীয় বিচারপতি বলেনঃ “কতিপয় সংবাদ ভাষ্য ও একটি ছবিতে দেখা যায় যে আবেদনকারী অধ্যাপক গোলাম আযম, জেনারেল টিক্কাখান ও জেনারেল ইয়াহিয়া খানের সাথে সাক্ষাত করেছেন। এ ব্যতীত পাকিস্তানের বাহিনী বা তাদের সহযোগী রাজাকার, আল-বদর বা আল-শামস কর্তৃক কথিত নৃশংসতার সাথে আবেদনকারী প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ছিলেন বলে কিছু পাওয়া যায় না। আবেদনকারী স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় সামরিক জান্তার সাথে সাক্ষাত করেছেন, এ ব্যতীত আমরা এমন কিছু দেখি না যাতে বলা যায় যে আবেদনকারী স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় কথিত নৃশংসতার সাথে জড়িত ছিলেন” (দ্রষ্টব্যঃ ৪৫নং ঢাকা ল’ রিপোর্ট, হাইকোর্ট বিভাগ, পৃষ্ঠা নং ৪৩৩)

সুতরাং প্রমাণিত হলো অধ্যাপক গোলাম আজম স্যার যুদ্ধাপরাধী বা রাজাকারের সাথে জড়িত ছিলেন না। তিনি গ্রেফতার হওয়ার সপ্তাহখানেক আগে মিডিয়ায় সাক্ষাতকার দেন। সেখানে তিনি স্পষ্টভাবে বলেছেন, “তারঁ বিরুদ্ধে একটি অপরাধও প্রমাণ করতে পারবে না এবং তারঁ বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করা হয়েছে তা সবই আপবাদ।”

একটু লক্ষ্য করে দেখুন, শেখ মুজিব সরকার যুদ্ধাপরাধীদের জন্য যে আইন করেছিলো। সেই আইনে এখন তাদের বিচার করা হচ্ছে । পূর্বেই বলেছি international crimes (tribunal) 1973. আইনটি করা হয়েছিল পাকিস্তান মিলিটারীদের শাস্তি দেয়ার জন্য।

এই ট্রাইবুনাল সম্পর্কে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত কিছু জ্ঞানীগুনীদের মতামত---

* প্রথমেই যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে ট্রাইবুনালের গ্রেফতারে অস্বচ্ছতার প্রশ্ন তুলেন এডভোকেট আনিসুল হক। তিনি বলেন- মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে আটক জামায়াত-বিএনপি নেতাদের গ্রেফতারের বিষয়টি আইনসম্মত হয়নি।

* গত ২২ এপ্রিল সুপ্রীম কোর্ট বার এসোসিয়েশনের সভাপতি খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেছেন, এই ট্রাইবুনালের প্রতি আমার আস্থা নেই। এটিকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল হিসাবে বিশ্বাস করি না। রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার উদ্দেশ্যে বেছে বেছে রাজনৈতিক নেতাদের আটক করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক ট্রাইবুনালের ‘আন্তর্জাতিক’ শব্দ ছাড়া এখানে আন্তর্জাতিকতার আর কিছু নাই। বিচারক থেকে শুরু করে প্রসিকিউটর পর্যন্ত সবাই এই দেশের। আন্তর্জাতিক ট্রাইবুনালে যে দক্ষতা এবং যোগ্যতার প্রয়োজন রয়েছে সেটা এই ট্রাইবুনালের কারোর নাই। ‘ল’ অব প্রিন্সিপল অনুসারে প্রধান আসামীদের অর্থাৎ পাকিস্তানের ১৯৫ জন যুদ্ধপরাধী ছেড়ে দিয়ে সহযোগীদের বিচার করা আইনের লঙ্ঘন।

* বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা এবং আওয়ামী লীগের নেতা শাহ্ মোয়াজ্জেম হোসেন দাবি করেছন যে সবার আগে প্রধানমন্ত্রীর বেয়াইয়ের বিচার করতে হবে (০৪-০৪-২০১০)।

* মরহুম খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন বলেছেন, তদন্ত কর্মকর্তা,বিচারক ও আইনজীবী সকলেই দল বিশেষের সদস্য। কাজেই এখানে নিরোপেক্ষ বিচার হতে পারে না (০২-০৪-২০১০)।

* স্বাধীনতার পতাকা উত্তলোনকারী প্রাক্তন ছাত্রনেতা আ স ম আব্দুর রব বলেছেন, স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি বলে কিছু নেই। ক্ষমতা যাওয়ার জন্য এটি আওয়ামী লীগের স্টান্টবাজি(০২-০৪-২০১০)।

* বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বলেছেন, ট্রাইবুনালের প্রধান আইজীবী গোলাম আরিফ টিপু একজন অযোগ্য ব্যক্তি। তিনি বলেন, ছাগল দিয়ে যেমন ধান মাড়াই করা যায় না, তেমনি বাছুর দিয়েও যুদ্ধাপরাধের বিচার করা যায় না (০৪-০৪-২০১০)।

* আজ থেকে ২০বছর আগে জাতীয় সংসদে বক্তৃতা করার সময় ১৯৯২ সালের ১৫ই এপ্রিল তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী জমিরউদ্দিন সরকার বলেছেন, যুদ্ধাপরাধী হিসাবে গোলাম আজমের বিচার করা যাবে না। যাদের কথা এতক্ষণ বলা হলো তারা কিন্তু কেউই মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষ শক্তি নন। বরং সকলেই মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তি।

* এমনকি ঐ মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মিজানুর রহমান বলেছেন, আইন আনুযায়ী যারা যুদ্ধ করেছে শুধুমাত্র তারাই যুদ্ধাপরাধী, সেই হিসাবে সেনা বহিনীর সদস্যরাই যুদ্ধাপরাধী।

* গত বছর ২৯ অক্টোবর আওয়ামী লীগপন্থী পত্রিকা ‘দৈনিক ইনকিলাবে’ প্রকাশিত রিপোর্ট মোতাবেক আওয়ীমী লীগ দলীয় মানবাধিকার কমিশন চেয়ারম্যান ড. মিজানুর রহমান বলেছেন, ১৯৭৩ সালের আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইবুনাল) এ্যাক্টে বিচার যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করা সম্ভব নয়। আন্তর্জাতিক মহলে এ বিচার নিয়ে প্রশ্নদেখা দিতে পারে। এ ট্রাইবুনালের মাধ্যমে বিচার করলে সাকা চৌধুরী-নিজামীরা পার পেয়ে যেতে পারে।

* গত মার্চ মাসে বিশ্ব বিখ্যাত সাময়িকী লন্ডনের ‘দি ইকোনোমিষ্ট’ আশংকা প্রকাশ করেছেন যে ন্যায়বিচার না হয়ে যুদ্ধাপরাধের বিচারের নামে প্রতিহিংসা চরিতার্থ করা হচ্ছে।

২০০৮ সালের ২৬ মার্চ ‘দৈনিক প্রথম আলো’ দালাল আইনে অভিযুক্ত ও সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের ওপর প্রধান সংবাদ হিসাবে একটি বড় রিপোর্ট ছেপেছে। ঐ রিপোর্টে বাংলাদেশের কোথায় কোথায় কার কার যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে সাজা হয়েছিল তার একটি বিবরণ প্রকাশ করা হয়েছে। কিন্তু ঐ বিবরণে জামায়াতের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ এবং জনাব সাকা চৌধুরী এবং আব্দুল আলিমের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ উত্থাপিত করা সম্ভব হয়নি সেখেনে ৩৯ বছর পর যেসব অভিযোগ করা হচ্ছে সেগুলো অবশ্যই বানোয়াট।

* মাত্র কয়েকদিন আগেইতো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ বিষয়ক বিশেষ দূত স্টিফেন জেযাপপ সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, ১৯৭১ সালের যুদ্ধাপরাধ বা মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য ১৯৭৩ সালে প্রণীত আইন যথেষ্ট নয়। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশ যে আইনে ৭১ এর মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার করছে সেই আইনটি হতে হবে আন্তর্জাতিক মানদন্ডে উন্নীত। বর্তমানে বিদ্যমান ৭৩ এর আইন আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন নয়। বাংলাদেশ সরকারের আমন্ত্রণে ৪ দিনের সফর শেষে ঢাকা ত্যাগের প্রাক্কালে এক সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি উপরোক্ত মত প্রকাশ করেন। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে স্টিফেন বলেন, অভিযুক্তকে পর্যাপ্ত আইনী সুযোগ দিতে হবে। ট্রাইবুনাল যেসব আদেশ এবং পরোয়ানা দিবে অপরাধীর বিরুদ্ধে, অপরাধীকে তা পুনর্বিবেচনার জন্য প্রয়োজনীয় আইনী আদালত থাকতে হবে। আটককৃত ব্যক্তিদের মৌলিক অধিকার আজ সবচেয়ে লঙ্ঘিত হচ্ছে।

* গত ৭ ডিসেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ দূতাবাসের মাধ্যমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটর জন বুজম্যান বাংলাদেশের প্রধামন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে লেখা একটি চিঠিতে ১৯৭১ সালে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে আটকদের মৌলিক অধিকার খর্ব করার অভিযোগ করেছেন। তিনি এই বিচারের প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করলেও ১৯৭৩ সালের আন্তর্জাতিক অপরাধ(ট্রাইবুনাল) এ্যাক্টকে ত্রুটিপূর্ণ বলে উল্লেখ করেছেন। জন বুজম্যান ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধকালীন বিভিন্ন অপরাধের অভিযোগে এ পর্যন্ত যাদের আপক করা হয়েছে, তাদের মানবাধিকার সমুন্নদ রাখার এবং আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ রাখা হয়নি বলে অভিযোগ করেন।

* আইনটির বিষয়ে সবচেয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এশিয়া বিভাগ, দ্য ওয়ার ক্রাইমস কমিশন অব দ্য ইন্টারন্যাশনালের পক্ষ থেকে। তিনি বলেন, প্রয়োজনীয় সংশোধন ছাড়া এই আইনের মাধ্যেমে বিচারকাজ চালিয়ে গেলে বাংলাদেশ রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং বিতর্ক বাড়বে।

* সিনেটর বুজম্যান বলেন, গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদে দেখা গেছে যে, ধর্মীয় অনভূতিতে আঘাত করার মতো বিষয়ের সাথে জড়িয়ে জামায়াতের প্রথম সারির বেশ কয়েকজন নেত কে গ্রেফতার করা হয়েছে। এসব অভিযোগে গ্রেফতার করে তাদের যুদ্ধাপরাধ বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে; এতে করে আইনটির রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহারের বিষয়টি আবারো সামনে এসেছে। প্রধানমন্ত্রীকে তিনি বলেন, যেগেতু আপনার সরকারের প্রধান প্রতিপক্ষ দলের একনিষ্ঠ মিত্র জামায়াত, সেহেতু জামায়াতকে ক্ষতিগ্রস্ত করার মাধ্যমে প্রধান প্রতিপক্ষকে দুর্বল করাই হলো ট্রাইবুনালের প্রথম কাজ; এ বিশ্বাসই সমাজে এখন বিদ্যমান। যুদ্ধাপরাধ আদালত গঠনের উদ্যোগকে আন্তর্জাতিক বিচার অঙ্গনের অনেকেই স্বাগত জানিয়েছিল। কিন্তু স্বচ্ছ এবং নিরপেক্ষ বিচার অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের অনাগ্রহের কারণে তারা সবাই উদ্বিগ্ন যে, এর মাধ্যমে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করা হতে পারে।

* এর আগে ১৪ জুলাই ব্রিটিশ আন্তর্জাতিক উন্নয়নবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ডাককান ঢাকায় সফরে আসলেন সরকারের ধারণা ছিল এখন বোধ হয় তাদের মানসিতার পরিবর্তন হয়েছে। ব্রিটিশ এ মন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলনে স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করা প্রয়োজন। এ বিচার প্রক্রিয়াকে রাজনৈতিকভাবে বিবেচনা করলে চলবে না।

* আমেরিকার হার্ডকোর মুখপাত্র হিসাবে খ্যাত টাইম ম্যাগাজিনের দৃষ্টিতে বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধের বিচার, ইশান ঠাকুরের লেখা ওই প্রতিবেদনটি টাইম-এর ৩রা আগস্ট অনলাইন সংস্কারণে প্রকাশিকত হয়। ‘বাংলাদেশ : ব্রিফিং এ ফরগটেন জেনোসাইড টু জাস্টিস’ শীর্ষক রিপোর্টে বলাহয়, বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন কম্বোডিয়ার মতো বাংলাদেশেও এ বিচার প্রক্রিয়ার জন্য বেশ কয়েক বছর সময় লাগবে। তবে আশঙ্কা করা হচ্ছে সরকার তার পরিচিত প্রতিপক্ষ এবং রাজনৈতিক শক্রদেরকে দমন করতেই এ বিচারকে ব্যবহার করছে। ‘এ বিচার প্রক্রিয়া যতটা সম্ভব স্বচ্ছ হতে হবে। সরকার যদি পুরোপুরিভাবে সেটা করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে এটা সমগ্র জাতির জন্য বিপর্যয় বয়ে আনবে।’

* ২ এপ্রিল, ঢাকায় এম কে আনোয়ার অভিযোগ করেন , যে পদ্ধতিতে বিচার হচ্ছে, তাতে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের আত্মপক্ষ সমর্থনের পূর্ণ সুযোগ দেয়া হয়নি। জামায়াত নেতা দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর বিরুদ্ধে করা মামলায় পুলিশের কাছে দেয়া ১৫ জন সাীর জবানবন্দি তাঁদের অনুপস্থিতিতে ট্রাইবুনাল গ্রহণ করার যে আদেশ দিয়েছেন, তার সমালোচনা করে তিনি এ কথা বলেন। তিনি তদন্তকারী কর্মকর্তাদের কাছে দেওয়া জবানবন্দি গ্রহণ করে ট্রাইবুনালের আদেশকে প্রাগৈতিহাসিক মন্তব্য করে বলেন, এটি আইনের শাসন নয়। এই কাজ জঙ্গলের শাসনের চেয়েও খারাপ।

এটা প্রমাণিত যে, আমাদের এই বর্তমান ট্রাইবুনাল দেশীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে ভিত্তিহীন। বর্তমান যুব সমাজের কাছে আবেদন। আর কত দিন ভ্রান্তির মাঝে থাকবেন? চোখ খুলে দেখুন এই বিচার ন্যায় বিচারের জন্য নয়। এই বিচার হচ্ছে স্বাধীনতা,সার্বভৌমত্ব,গণতন্ত্র,ইসলাম,ইসলামী আন্দোলকে ধ্বংস করার হাতিয়ার। এই বিচার ১৮ দলীয় ঐক্যজোটকে ভঙ্গার জন্যে। এর লক্ষ্য নেতৃবৃন্দকে হেয় করার মাধ্যমে দেশে বাকশাল প্রতিষ্ঠা করা। কারণ বিএনপি-জামায়াত এক থাকলে আওয়ামী লীগ আগামী দিনে মাথা উচুঁ করে দাঁড়াতে পারবে না।

তাই ট্রাইবুনালের বিচারপতি নাসিম, ট্রাইবুনালে শুনানি চলা কালে দেলওয়ার হোসেন সাঈদীর আইনজীবি বলেছেন, “আমরা ন্যায় বিচার করবো না”। তার কথার মাধ্যমে স্পষ্ট এই বিচারের লক্ষ্য কি। যুব সমাজকে বলবো যুদ্ধাপরাধের বিচার নিয়ে যারা মাতামাতি করছে তাদের জিজ্ঞাসা করুন--* দালাল আইনে যাদের গ্রেফতার করা হয়েছিল, তাদের তালিকা কোথায়? * এখন যাদেরকে বিচার করার জন্য বলা হচ্ছে তা কি সেই তালিকাতে ছিল? * ১৯৭২ সালের দালালদের তালিকাই আসল, কারণ সেই সময়ে যারা দালালি করেছিল তাদেরকে সবাই চিনতো। এখন যাদের বিচারের কথা বলা হয় তারা কোন তালিকার ভিত্তিতে?? * আওয়ামী লীগের মধ্যে কি কোনোই যুদ্ধাপরাধী/রাজাকার নেই?

মামলার রায় আগের থেকেই ঠিক করা আছে। তাই আসুন অন্যায়ের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন সংগ্রাম গড়ে তোলি। আওয়ামী লীগ মাওলানা নিজামী,সাঈদী,মুজাহিদ,সাকা চৌধুরীকে ফাঁসি দেয়ার দিবাস্বপ্ন দেখতেছে। তাদের উদ্দেশ্যে আমি বলবো, না আমি বলবো না। জামায়তে ইসলামীর প্রতিষ্ঠাতা বিশ্ববরেণ্য আলেমে দ্বীন মাওলানা সাইয়েদ আবুল আলা মওদূদী (রহHappy কে পাকিস্তান সরকার বিনা অপরাধে ফাঁসির আদেশ দেয়। তখন ফাঁসির কাষ্ঠুরি থেকে তিনি বলেছিলেন, “জীবন-মৃত্যুর ফয়সালা আসমানে হয়, জমীনে নয়”। আওয়ামী লীগ যতই যড়যন্ত্র করুক কেন আল্লাহর ফয়সালাই চূড়ান্ত।

শেষ করবো মতিউর রহমান রেন্টুর ‘আমার ফাঁসি চাই’ বইয়ের দুইটি লাইন দিয়ে, “ক্ষমা না চাইতেই স্বধীনতা বিরোধী রাজাকার, আল-বদরদের ঢালাওভাবে ক্ষমা করার অপরাধে শেখ মুজিবের মরণোত্তর শাস্তি চাই”(রাজাকার বা আল-বদরের সাথে জামায়াতের কোন সম্পর্ক আদৌ নেই)।

বিষয়: বিবিধ

১৮১৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File