‘সওম’

লিখেছেন লিখেছেন আইল্যান্ড স্কাই ২৯ জুলাই, ২০১৩, ১২:৫৪:৪১ দুপুর



সূর্য উদয়ের কিয়ত্কাল আগে থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত উপবাস থাকা ও সেই সঙ্গে সব ধরনের পানাহার ও পাপাচার থেকে নিবৃত্ত থাকাকে রোজা বলে। আরবি ‘রমাদান’ থেকে রমজান শব্দের উত্পত্তি, যার অর্থ হলো দগ্ধিকরণ, দহন বা জ্বালিয়ে দেয়া। আরবি ভাষায় এ রোজাকে ‘সওম’ বলা হয়, যার অর্থ হলো বিরত থাকা। তাই স্বভাবত পবিত্র রমজান মাসের ত্রিশটি রোজা ধর্মপ্রাণ মুসলিম নর-নারীদের জন্য এক সাধনা। রমজান মাস মুসলিম জাহানের জন্য এক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মাস। এ মাসের আগমনের সঙ্গে সঙ্গে মুসলিম সমাজে এক নতুন প্রাণচাঞ্চল্য শুরু হয়ে যায়। বিশিষ্ট মুসলমানরা এ মাসের প্রতীক্ষায় অধীর আগ্রহে দিন কাটান।

রোজার ফজিলত সম্পর্কে খোদ আল্লাহপাক বলেন, ‘রোজা আমার জন্য এবং আমি নিজে এর প্রতিদান দেব।’ রমজান মাসে রোজা রাখা প্রত্যেক মুসলমান নর-নারীর জন্য ফরজ বা বাধ্যতামূলক—পুরুষ অথবা মহিলা, ধনী বা দরিদ্র, অন্ধ বা বধির যেই হোক। একমাত্র বদ্ধ পাগল ও ছোট ছেলেমেয়ে, অসুস্থ ও আরও কিছু বিশেষ ক্ষেত্রে রোজা বাধ্যতামূলক নয়। যারা রোজা ভঙ্গ করে এবং রমজান শরিফকে অবহেলা করে তাদের জন্য কঠিন আজাব রয়েছে। অন্যদিকে রমজান মাস রহমত, বরকত, সৌভাগ্য, সংযম, আত্মশুদ্ধি, ধৈর্য এবং মানুষের সঙ্গে সহানুভূতি করার মাস। এ মাসের মর্যাদা অত্যন্ত বেশি, কারণ প্রায় সব আসমানি কিতাব এ মাসে নাজিল বা অবতীর্ণ হয়েছিল। হজরত ইব্রাহিমের (আ.) ‘ছহিফা’, হজরত দাউদের (আ.) ‘যবুর’, হজরত মূসা (আ.)-এর ‘তৌরাত’, হজরত ইসা (আ.)-এর ‘ইঞ্জিল’ ও সর্বশেষ এবং সর্বশ্রেষ্ঠ নবী হজরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর নাজির বা অবতীর্ণ হয় কোরআন। রমজানে হজরত মোহাম্মদ (সা.) হজরত জিবরাইলকে (আ.) পুরো কোরআন শরিফ পড়ে শোনাতেন। তাই রমজান মাসে বেশি বেশি করে কোরআন শরিফ পাঠ করা অতি পুণ্যের কাজ।

রমজান মাসের বিশেষ ও প্রধান কাজ হলো রোজা পালন করা। রমজান মাসের রোজা পালনের দ্বারা মানুষের দৈহিক ও আত্মিক উত্কর্ষ সাধন হয়ে থাকে। রমজান মাসের রোজাদারদের জন্য একটি বিশেষ আমল হচ্ছে তারাবির নামাজ। এ নামাজ পড়া সুন্নত। যে ব্যক্তি কোনো কারণবশত রোজা রাখেননি তার জন্যও এ নামাজ পড়া সুন্নত। না পড়লে গোনাহ হবে। নবী করিম (সা.) এরশাদ করেন ‘আল্লাহতায়ালা তোমাদের জন্য মাহে রমজানের রোজা ফরজ করেছেন আর আমি সুন্নত হিসেবে তারাবির নামাজকে বিধিবদ্ধ করলাম।’ রোজা হচ্ছে ঢালস্বরূপ, সুতরাং অশ্লীলতা করবে না। কেউ যদি ঝগড়া করতে চায় তবে বলবে ‘আমি রোজাদার’। এ রমজান মাসে ‘বিতির’-এর নামাজ জামাতের সঙ্গে আদায় করা হয়। আল্লাহপাক রোজার পূর্বক্ষণে ‘সাহরি’ নামক খানাকে পুণ্যময় করেছেন। আর ‘ইফতার’ সম্পর্কে নবী (সা.) বলেন, তোমরা যখন ইতার কর তখন খেজুর দ্বারা ইফতার কর, কেননা এতে বরকত নিহিত আছে। খেজুর পাওয়া না গেলে পানি দ্বারা ইফতার কর কেননা এটা পাক। মহানবী (সা.) বর্ণনা করেন এটি এমন একটি মাস যার প্রথম ১০ দিন আল্লাহর রহমত অবতীর্ণ হয়, দ্বিতীয় ১০ দিনে মাগফিরাত ও তৃতীয় ১০ দিনে দোজখ থেকে মুক্তি দেয়া হয়। রহমত, মাগফিরাত ও জাহান্নাম থেকে মুক্তির এমন সুবর্ণ সুযোগ অন্য কোনো মাসে পাওয়া যায় না। আল্লাহপাক মাহে রমজানকে এত মহিমান্বিত করেছেন যে, এর প্রতিটি মুহূর্ত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ মাসের নফল ইবাদতগুলো অন্য মাসের ফরজের সমান।

বিষয়: বিবিধ

৯৬৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File