সংগ্রামী জননেতা ভাষাসৈনিক অধ্যাপক গোলাম।
লিখেছেন লিখেছেন আইল্যান্ড স্কাই ২৭ জুলাই, ২০১৩, ১২:৪৪:০০ দুপুর
অহিংসবাদী ও সংগ্রামী নারী অং সান সুচি প্রায় পনের বছরের বন্দি জীবনের কালো অধ্যায় পেরিয়ে মুক্ত আলোয় ফিরেছেন। গত ২১ বছরের রাজনৈতিক জীবনের ১৫ বছরই কাটিয়েছেন কারাগারে আর গৃহবন্দি হিসেবে। এ সময়ে তিনি শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন। হারিয়েছেন স্বামী ড. মাইকেল এরিসকে। নেলসন ম্যান্ডেলার পর এটাই হ্েচ্ছ বিশ্বের সবচেয়ে আলোচিত রাজবন্দির মুক্তি। অ্যালান ক্লেমেন্টসের সাথে আলাপচারিতা ”দ্য ভয়েস অব হোপ” গ্রন্থে সাংবাদিক অ্যা.ক্লে অং সান সুচি কে রাজনৈতিক পলিসির স্থিরতা সম্পর্কে প্রশ্ন করলে তিনি বললেন -জনগনকে বোকা বানানো যাবেনা, বোকা ভাবাও উচিৎ না। ১৯৮৯ সালে আমি একবার ইনবলী হ্রদ এলাকায় গিয়েছিলাম, সেখানে একজন ভিক্ষু আমাকে একটা গল্প বলেছিলেন। গল্পটি হলো-
”উ-পো সেইন বার্মিজ থিয়েটার ট্রুপ... এর একজন বিখ্যাত নৃত্যশিল্পী। উ-পো সেইন এর ট্রুপে একজন কমেডিয়ান ছিলেন, যিনি অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার আগে বলতেন দেখুন উ-পো সেইন, এখানে যে সব দর্শকরা আছেন তাঁরা কেউই আপনার মত অত-সুন্দর নাচতে জানেন না। কিন্তু আপনি যদি নাচে কোন ভুল করেন তাহলে দর্শকরা যে কেউ-ই তা ধরতে পারবেন।” তো এই কথাটা রাজনীতির ক্ষেত্রেও সত্য। রাজনীতির প্রতি জনগণের বিতৃষ্ঝা থাকতে পারে।, রাজনীতি সম্পর্কে তারা উদাসীন হতে পারে কিন্তু আপনি যদি ভুল কোন ভুল পদক্ষেপ নেন তাহলে তারা তা বুঝতে পারবে, আপনি অস্থির।” পৃথিবীর ইতিহাসে অস্থির আর জনগনগনকে বোকা বানানো রেংকিং এ বাংলাদেশ সম্ভবত শীর্ষে। আমাদের রাজনীবিদরা কত অস্থিও আর কত ডিগবাজী খেলেন জনগনের সাথে, তার নমুনা পরীক্ষার জন্য খুব বেশী দুরে যেতে হবেনা। বর্তমান আলোচিত কেয়ারটেকার ইস্যু-ই যথেষ্ট। দেশের রাজনীতি ক্রমেই অস্থির হয়ে উঠছে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতির নিয়ে। কিন্তু এই আস্থিরতার জন্য দায়ী জনগন না, নেতৃত্ব?
বাংলাদেশে সবাই জানে, এই তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতির রূপকার ভাষা সৈনিক অধ্যাপক গোলাম আযম। একদা তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি প্রতিষ্ঠার জন্য বর্তমান আওয়ামী সরকার বাংলাদেশে তুমুল আন্দোলন করেছিল জামায়াত কে সাথে নিয়ে। হাজার কোটি টাকার সম্পদেও ক্ষতি আর জনগনের অনেক দূভোগের মধ্যে দিয়ে সে দাবী আদায় কওে বিএনপি থেকে। দুনিয়াতে সেই পদ্ধতির যথেষ্ট সুনাম হচ্ছে দেখে আমাদের বর্তমান মাননীয় প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা সদম্ভে দাবী করেছিলেন, তিনিই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রবক্তা। তদানীন্তন বিরোধী দলীয় সম্মানিত নেত্রী ও রাষ্ট্রের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া তত্ত্বাবধায়ক পদ্ধতিকে কটুক্তি করে বলেছিলেন, ”একমাত্র পাগল ও শিশু ব্যতীত কেউ নিরপেক্ষ নাই”। বর্তমানে দেশে দিন বদলের হাওয়া লেগে দু নেত্রী-ই বোল পাল্টিয়ে ফেলেছেন। সবকিছু উল্টো হয়ে গিয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে গলা টিপে হত্যা করেছে আর সম্মানিত বিরোধী দলয়ি নেত্রী খালেদা জিয়া তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবীতে রাস্তায় নেমেছেন। হায়রে পৃথিবী! হায়রে রাজনীতি! হায়রে দূর্বাগা জনগন!আর জামায়াত আওয়ামীলগিকে সাথে নিয়ে আন্দোলন করে কেয়ারটেকার সরকার পদ্ধতি আগে ও আনলেন, আর এখন ও আন্দেলন করছে বিএনপির সাথে। রাজনীতির সরলীকরণ হচ্ছে যে কারনে খালেদা জিয়া কেয়ারটেকার সরকার দিতে বাধ্য হয়েছেন ঠিক একই কারণে শেখ হাসিনা কেও তা মানতে হবে, নাম যাই হোক না কেন। সুরতাং বাংলাদেশের রাজনীতিতে গোলাম আযম দূরদর্শিতার এক মূর্তপ্রতিক তাতে সন্দেহ নেই। আর এই ঐতিহাসিক নজির প্রত্যক্ষ করেছে সারা দুনিয়া। ব্যাক্তিকে দময়ে রাখা য়ায় বিকৃত করা য়ায়, কিন্তু চিরতওে মুছে ফেলা য়ায়না। অধ্যাপক গোলাম আযম তার প্রকৃষ্ঠ উদাহরণ। আর আল-জাজিরা এই মহান নেতাকে নিয়ে রিপোর্ট করলে আর জাতি সংঘর আর বিশ্বনেতৃবৃন্দ জামায়াত নেতা দের মুক্তি চাওয়া আওয়ামীলেিগর জন্য কাঁটা গায়ে লবন ছিটার মত। অনেকের আর যেন সহ্য-ই হয়না । আওয়ামীলীগের তা যতই অসহ্য হোক না কেন। বাংলাদেশের রাজনীতে জামায়াত একটি বাস্তবতা, এটি অস্বীকার করার কোন সুযোগ আছে কি?
কিন্তু জাতি ইতিহাসের নির্মম বাস্তবতা দেখেছি সম্প্রতি। যেদিন অধ্যাপক গোলাম আযমকে কারাগারে নিলেন সেদিন সম্মানিত নেত্রী খালেদা জিয়া গোলাম আযমের বর্ণিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার দাবীতে প্রেসিডেন্টের দরবার হলে ঢুকেছেন! শুধু তাই নয়। অধ্যাপক গোলাম আযম কখন ও এমপি, মন্ত্রী কিছুই হননি সুযোগ থাকার পরও। বাংলাদেশের ইতিহাসে এক অভিনব এবং নির্যাতিত ব্যক্তি অধ্যাপক গোলাম আযম। ব্যক্তিগত খুঁটিনাটি, চাওয়া-পাওয়া বৃহত্তর স্বার্থে তার ত্যাগ এমন বহু বাস্তবতা এখন দৃশ্যের অন্তরালে। যিনি ক্ষমতায় না থেকেও ক্ষমতাসীন সকলের অপবাদের দায়ভার কাঁধে পড়েছে। যিনি দেশ, জাতি ও মানবতার কল্যানে সব সময় ভ’মিকা রেখেছেন কিন্তু তার বিনিময়ে সব সরকার থেকে উপহার পেয়েছেন কারাবরণ। বিশ্বজুড়ে তার অসম্ভব খ্যাতি, তাকে নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে কৌতূহলের শেষ নেই তবে বাস্তবতা হচ্ছে সব সময়ই ঐতিহাসিক সত্য বর্তমান অবস্থায় উপনীত হওয়ার ক্ষেত্র, তার আত্মনির্মাণ এভং বিকাশের ক্ষেত্রে বেশকিছু এখন বাস্তবতা, এবং সমকালীন স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক ঘটনাপ্রবাহ আজ স্বীকৃত। অবশ্য আমাদেও দেশে এখন এগুলো এখন খুবই স্বাভাবিক। যে দেশে স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান, মেজর জলিল, বঈবীর কাদের সিদ্দিকী, আর কর্ণেল আলি কে আওয়ামীলীগ রাজাকার আর যুদ্ধপরাধী বলতে দ্বিধা করেনা। সেখানে অধ্যাপক গোলাম আযমের ভাগ্যে কারাগার অতি নগন্যই মনে করে ফ্যাসিষ্ট আওয়ামী বাকশালীরা।
১১ জানুয়ারি ২০১২ কারাগারে যাওয়ার আগে জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া বক্তব্যে তিনি বলেন-” ১৯৮০’র দশকে এবং ১৯৯০ সালে এরশাদবিরোধী আন্দোলনে এবং ১৯৯৪ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত কেয়ারটেকার সরকারের দাবিতে বিএনপি’র বিরুদ্ধে আন্দোলনে জামায়াত ও আওয়ামী লীগ যুগপৎ আন্দোলন করেছিল। সকল আন্দোলনকারী দলের লিয়াজোঁ কমিটি একত্রে বৈঠক করে কর্মসূচি ঠিক করতো। তখন তো কোন দিন আওয়ামী লীগ জামায়াত নেতৃবৃন্দকে যুদ্ধাপরাধী মনে করেনি। ফেব্রুয়ারি ১৯৯১-এর নির্বাচনের পর সরকার গঠনের জন্য আওয়ামী লীগ জামায়াতের সহযোগিতা প্রার্থনা করে আমার নিকট ধরনা দিয়েছিল। আওয়ামী লীগের নেতা আমির হোসেন আমু সাহেব জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মুজাহিদ সাহেবের মাধ্যমে আমাকে মন্ত্রী বানাবার প্রস্তাবও দিয়েছিলেন। তখনও তো আওয়ামী লীগের মনে হয়নি যে, জামায়াতে ইসলামী যুদ্ধাপরাধী! পরবর্তীতে, আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী বিচারপতি বদরুল হায়দার চৌধুরী জামায়াতের সমর্থন লাভের আবদার নিয়ে যখন আমার সাথে সাক্ষাৎ করেন, তখনও তো তাদের দৃষ্টিতে জামায়াত নেতৃবৃন্দ ‘যুদ্ধাপরাধী’ ছিল না। এরপর এমন কী ঘটলো যে আওয়ামী লীগ ও কতক বাম দল জামায়াতকে ‘যুদ্ধাপরাধী’ আখ্যা দিয়ে জামায়াতকে নির্মূল করার জন্য জেহাদে নামলেন? এরূপ দু’মুখো নীতি কোনো সুস্থ রাজনীতির পরিচয় বহন করে না। ২০০১ সালের অক্টোবরে অনুষ্ঠিত ৮ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মাত্র ৫৮টি আসনে বিজয়ী হয় আর বিএনপি ১৯৭টি আসন পায়। জোটবদ্ধভাবে নির্বাচন হওয়ায় নির্বাচনে ইসলামপন্থী দলসমূহের শতকরা ২০ ভাগ ভোট একতরফা বিএনপি পাওয়ায় এসব ভোট থেকে বঞ্চিত হয়ে আওয়ামী লীগ মাত্র পাঁচ হাজার থেকে বিশ হাজার ভোটের ব্যবধানে বহু আসন হারায়। আওয়ামী লীগ নির্বাচনে শোচনীয়ভাবে পরাজিত হওয়ার কারু হিসেবে বুঝতে পেরেছিল যে, জামায়াতে ইসলামীকে ঘায়েল করতে না পারলে ভবিষ্যতে নির্বাচনে বিজয়ের কোনো আশা নেই। এ উপলব্ধি থেকেই ২০০১ সালের নির্বাচনের পর থেকে জামায়াত নেতাদেরকে যুদ্ধাপরাধীর অপবাদ দিয়ে আওয়ামী লীগ ব্যাপক প্রচারাভিযান চালায়। যাদেরকে এক সময় ‘কলাবরেটর’ আখ্যা দেয়া হয়েছিল তাদেরকেই এখন আওয়ামী লীগ ‘যুদ্ধাপরাধী’ হিসেবে বিচার করতে চাচ্ছে। ২০০১ সালের পূর্বে কখনো জামায়াত নেতাদেরকে যুদ্ধাপরাধী বলা হয়নি।”
অধ্যাপক গোলাম আযম একজন সৎ, ব্যক্তিত্ত্ব সম্পন্ন, খ্যাতিমান অহিংস রাজনৈতিক নেতা আন্তর্জাতিকভাবে শ্রদ্ধেয় পন্ডিত ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত। এই মেধাবী চৈাকস, ও অভাবনীয় নেতৃত্বেও গুনাবলী সম্পন্ন ক্ষনজন্মা মানুষটি ১৯২২ সালে ঢাকার লক্ষীবাজারে আমার নানার বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। ম্যাট্রিক ও ইন্টারমিডিয়েট ঢাকা থেকে পাস করেন। স্কুল, কলেজের গন্ডি পেরিয়ে প্রাচ্যের অক্সফোর্ড হিসাবে খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের থেকে বিএ এবং রাষ্ট্রবিজ্ঞানে এমএ পাস করের্ন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে সম্পৃক্ত হন ছাত্র আন্দোলনের সাথে। ১৯৪৭-৪৮ ও ৪৮-৪৯ সালে পরপর দু’বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু)-এর জিএস (জেনারেল সেক্রেটারি) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে সক্রিয় অংশ নিয়ে পাকিস্তান সরকার দ্বারা কারা নির্যাতিত হন। এই মহান নেতা ঐতিহাসিক ভাষা আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক ছিলেন। শেখ মুজিব কর্তৃক ৬৬ সালের ছয় দফা দাবি তৈরীতে অংশ নেয়া ২১ সদস্যের অন্যতম। ১৯৫৪ সালে যোগদান করেন জামায়াতে ইসলামীতে এবং প্রত্যক্ষভাবে শুরু করেন রাজনৈতিক জীবন। অখণ্ড পাকিস্তানে ১৯৫৫ থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন। কপ (ঈঙচ- ঈড়সনরহবফ ঙঢ়ঢ়ড়ংরঃরড়হ চধৎঃু), পিডিএম (চউগ- চধশরংঃধহ উবসড়পৎধঃরপ গড়াবসবহঃ), ডাক (উঅঈ- উবসড়পৎধঃরপ অপঃরড়হ ঈড়সসরঃঃবব) ইত্যাদি আন্দোলনে জনাব শেখ মুজিবুর রহমানসহ অন্য সকল দলের নেতাদের সাথে অংশগ্রহণ করে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। রাজনৈতিক কারণে ১৯৬৪ সালেও তাকে কারাবরণ করতে হয়েছিল। ভাষাসৈনিক অধ্যাপক গোলাম আযম একটি আন্দোলন, একটি জাগরন, একটি বলিষ্ঠ নেতৃত্বের নাম। একটি চেতনা ও বিশ্বাসের গগনজোয়ারী বিশ্বাসের কণ্ঠস্বর। বিশ্বব্যাপী সমাদৃত কেয়ারটেকার সরকার ফমূলার রূপকার। মেধা ও নৈতিকতার স্বমনয়ের একটি সম্ভাবনাময় দেশগড়ার চেতনার অগ্রপথিক। ১৯৭৩ সালে তৎকালীন সরকার অন্যায়ভাবে তার জন্মগত নাগরিকত্ব অধিকার হরণ করলেও পরবর্তীতে, ১৯৯৪ সালে, সুপ্রিম কোর্টের সর্বসম্মত রায়ে নাগরিক অধিকার ফিরে পান এবং তাহার বিরুদ্ধে আনীত সকল অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণিত হয়। এখন নতুন করে সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে আবার সেই একই অভিযোগের অবতারণা করা হচ্ছে।
স্বাধীন বাংলাদেশে ত্রিশ বছর জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতিতে থেকে সর্বশেষ সেচ্চায় অবসর গ্রহনকারী পদের ও ক্ষমতার প্রতি নির্লোভ একজন বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ অধ্যপক গোলাম আযম। উপমহাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের অনেক স্মরণীয ঘটনার সাথে সরাসরি জড়িত। এ প্রবীণ মজলুম জননেতা ও বিজ্ঞ রাজনীতিবিদ ইসলামী আদর্শের ভিত্তিতে মানবজীবনের যাবতীয সমস্যার সমাধানের মাধ্যমে সুখী সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গডার সংগ্রামে নিবেদিত প্রাণপুরুষ। আজ জীবন সন্ধিক্ষনে এ সংগ্রামী নেতা জাতীয ও আন্তর্জাতিক ষডযন্ত্র আর অপপ্রচারের শিকার। ষডযন্ত্রকারীরা মিথ্যার কালো পর্দার আড়ালে তার স্বর্ণোজ্জ্বল অনেক অবদানকে ঢেকে রাখার অপপ্রযাস চালাচ্ছে নিরন্তরভাবে। বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রফেসর গোলাম আযম সবচেয়ে আলোচিত ব্যাক্তিত্ব। গনতন্ত্র উত্তরনে ৯০ এ তার কেযারটেকার পদ্বতি জাতিকে দিয়েছিল মুক্তির দিশা। জাতির জীবনে প্রফেসর গোলাম এক জীবন্ত কিংবদন্তী। অধ্যাপক গোলাম বিশ্বব্যাপী উচ্চারিত একটি আওয়াজ। দেশ বিভাগের পর ১৯৪৭ সালে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার যে সংগ্রাম শুরু হয, তার সাথে তিনি প্রথম থেকেই প্রত্যক্ষভাবে ছিলেন। ভাষা আন্দোলনে নেতৃবৃন্দ দেযার কারণে পাকিস্তানি স্বৈরাচারী শাসকগোষ্ঠীর রোষানলে পরে তাকে হাজতবাসসহ শত সহস্র নির্যাতন সহ্য করতে হয়েছে। এ দেশের ছাত্র-জনতা যখন বুঝতে পারে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করে, বাংলা ভাষাকে নির্বাসন পাঠানোর যে আয়োজন করছে, তা বাস্তবাযতি হলে বাংলা ভাষাভাষী সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ কার্যত অশিক্ষিত জনগোষ্ঠীতে পরিণত হবে। এমন এক প্রেক্ষাপটে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ বিশেষ করে ছাত্ররা বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃত দেযার জন্য আন্দোলন শুরু করে।
১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ থেকে এই সাহসী বীরপুরুষ প্রত্যক্ষভাবে ভাষা আন্দোলনে শরিক হন। এই দিন রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে হরতাল পালিত হয। হরতাল সফল করতে অধ্যাপক গোলাম আযম ডাকসুর জিএস হিসেবে ছাত্রদের সংগঠিত করে, বিভিন্ন গ্রুপে বিভক্ত করে পিকেটিংযরে জন্য রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে আবস্থান নেন। হরতালে পিকেটিংযরে সময তাকে সহ ১০-১২ জনকে তেজগাঁও থানা পুলিশ গ্রেফতার করে নিয যায। এ বিক্ষোভের মূলে ছিল প্রধানত ছাত্ররা। ভাষার দাবিতে প্রথম গণবিক্ষোভ, ধর্মঘট বা হরতাল এবং ১১ মার্চ ঐতিহাসিক মর্যাদা পাওযার দাবি রাখে। (সুত্র:সোনার বাংলা)
অধ্যাপক গোলাম আযম বলেন- ১৯৪৮ সালে পাকিস্তানের প্রথম প্রধানমন্ত্রী লিযাকত আলী খান ঢাকায আসেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালযরে জিমনেসিযম মাঠে ছাত্রদের উদ্দেশ্যে ভাষণ দেন। তাকে ২৭ নভেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালযরে ছাত্রসমাজের পক্ষ থেকে রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবি সংবলিত একটি ঐতিহাসিক স্মারকলিপি প্রদান করা হয। এ স্মারকলিপি প্রণযনের দাযত্বি ছিল তৎকালীন ছাত্রনেতা সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের ভিপি (পরবর্তীতে বিচারপতি) আব্দুর রহমান চৌধুরীর ওপর। স্মারকলিপিটি ডাকসুর কাউকে দিয়ে পেশ করার ব্যাপারে চারটি হলের ছাত্র সংসদের নেতৃবৃন্দ ঐকমত্যে পৌঁছেন। ডাকসুর ভিপি ছিলেন অরবিন্দু বোস। তিনি যেহেতু হিন্দু তাই তাকে দিয পাঠ করালে সরকার বিষযটিকে ভিন্নভাবে চিত্রিত করতে পারে। এইদিক বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত হয ডাকসুর জিএস অর্থাৎ আমার ওপর দাযত্বি অর্পিত হয। রাষ্ট্রভাষা বাংলার কথাটি ছিল শেষের দিকে। এর আগে প্রাদেশিকতায আমরা বিশ্বাস করি না এমনভাবে আঞ্চলিকতার নিন্দার কথা বলা ছিল এ প্যারাটি পডার সময ছাত্রছাত্রীরা তুমুল করতালি দেয। করতালি শেষে আমার কানে এলো লিয়াকত আলীর স্ত্রী রানা লিয়াকত তার স্বামীকে বলছেন, ‘ল্যাঙ্গুযজেকে বারে মে সাফ বাতা দেনা।” তার কথা শোনার পর আমি লেট মি রিপিট দিস বলে আবার ভাষার দাবি সংবলিত প্যারাটি পডলাম। আবার মুহুর্মুহু করতালি শুরু হলো। আমি এবার করতালির জন্য একটু বেশি সময় দিলাম। আমি লিযাকত আলী খান এবং রানা লিযাকত আলী খানের খুব কাছে বসেছিলাম। আমি পরিষ্কার বুঝতে পারলাম বিষযটকে খুব ভালোভাবে নেননি তিনি। আমি মনে মনে স্থির করলাম বাংলাভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার বিরুদ্ধে কোন মন্তব্য তিনি তার বক্তব্যে করলে আমি সাথে সাথে প্রতিবাদ করে স্লোগান দেব। কিন্তু তিনি খুব ঝানু রাজনীতিবিদ হিসেবে উপসি'তির মনোভাব উপলব্ধি করে বিষযটি চেপে গেলেন। তার মনে ক্ষোভ থাকলেও এমনটি তার স্ত্রী অনুরোধ করার পরও ভাষার প্রসঙ্গে কোনো কথা বলেন না। শুধু বক্তব্যের একপর্যায়ে ক্ষোভের সাথে বলেন, ইফ ইট ইস নট প্রোভিনসিযালিজম, দেন হোযাট ইস প্রোভেনসিযালিজম? তার এ কথাগুলো শুনে আমরা মনে করেছিলাম তিনি হয়তো তো ভাষার ব্যাপারে আর ও কিছু বলবেন। কিন্তু না তিনি এ প্রসঙ্গটি এড়িয়ে গেলেন। আমার আর স্লোগান দেযা হলো না।”
১৯৫২ সালে পল্টন মযদানের এক জনসভায খাজা নাজিমুদ্দিন ছাত্রদের সাথে করা সাত দফা চুক্তির তোযাক্কা না করে ঘোষণা করলেন বাংলা নয উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্র ভাষা। তিনি রাষ্ট্রভাষা সম্পর্কে কাযেেদ আযমের বক্তব্যের পুনরাবৃত্তি করার পরই শুরু হয প্রতিবাদ বিক্ষোভ। বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবি। ২১ ফেব্রুযারি আন-র্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। ইউনেস্কোর ৩০তম সাধারণ সম্মেলনে ২১শে ফেব্রুযারিকে ‘আন-র্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’-এর স্বীকৃতি দিযেেছ জাতিসংঘ। বিশ্বের ১৯০টি দেশে এখন প্রতি বছর ২১শে ফেব্রুযারি ‘আন-র্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ উদযাপিত হচ্ছে। এদেশের মানুষ ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুযারি রাষ্ট্রভাষা বাংলার জন্য প্রাণ দিযেেছ। বর্তমানে বিশ্বের ৩০ কোটিরও বেশি লোক বাংলা ভাষায কথা বলে। এ বিশাল অর্জন একান্ত-ই আমাদের। বাংলাদেশ নামের ভূ-খণ্ডের অধিবাসীদের।
বিশ্বেও ইহিহাসে সম্ভবত ভাষার জন্য জীবন দেয়ার ইতিহাস আমরাই কায়েম করতে সক্ষম হয়েছি। আবার বিশ্বের ইহিহাসে সম্ভবত আমরাই প্রথম যারা ৯০ বছর বয়স্ক ভাষা সৈনিক কে কারাগাওে আবদ্ধ কওে রেখেছি। ১১ জানুয়ারি ২০১২ কারাগাওে যাওয়ার পূর্বে তিনি লিখেছেন- প্রিয় দেশবাসী, ২০১১ সালের নভেম্বরে আমার ৮৯ বছর পূর্ণ হয়ে গেল। বার্ধক্যে রোগের অন্ত থাকে না। আমার ডান পায়ে সায়াটিকা ও বাম হাঁটুতে আর্থরাইটিস। এর জন্য দু’বেলা এমন কতক ব্যায়াম করতে হয়, যা অন্য কারো সাহায্য ছাড়া করা যায় না। একা চলাফেরা করতে পারি না। ডান হাতে ক্র্যাচে ভর দিয়ে বাম হাত একজনের কাঁধে রেখে মসজিদে যেতে হয়। তাই অত্যাবশ্যক না হলে কোথাও যাই না। ব্লাডপ্রেসারসহ নানা অসুখের কারণে রোজ নিয়মিত ওষুধ খেতে হয়। এ অবস্থায়ও সরকার ৯০ বৎসর বয়সে আমাকে জেলে নিচ্ছে। আমি জীবনে চারবার জেলে গিয়েছি। জেল বা মৃত্যুকে আমি ভয় পাইনা। আমি আল্লাহ ছাড়া কাউকেই ভয় পাইনা। শহীদ হওয়ার জযবা নিয়েই ইসলামী আন্দোলনে শরিক হয়েছি। মিথ্যা মামলায় ফাঁসি দিলে শহীদ হওয়ার মর্যাদা পাবো ইনশাআল্লাহ। এবার বার্ধক্যে ও অসুস্থতা নিয়ে বন্দিজীবন কেমন করে কাটবে সে ব্যাপারে মহান মাবুদের উপর ভরসা করে আছি।”
আমি জেল, জুলুম, নির্যাতন, এমনকি মৃত্যুকেও ভয় পাই না। মৃত্যু অত্যন্ত স্বাভাবিক, অনিবার্য। একদিন সবাইকে মৃত্যুবরণ করতে হবে। আমি দৃঢ়ভাবে আল্লাহকে বিশ্বাস করি, আখিরাতে বিশ্বাস করি, তাক্বদির বিশ্বাস করি। আরও বিশ্বাস করি যে, আল্লাহর ইচ্ছা ছাড়া কোন কিছুই হয় না এবং তিনি যা করেন তা বান্দাহর কল্যাণের জন্যই করেন। সুতরাং, আমি আমার মৃত্যু নিয়ে সামান্যও শঙ্কিত নই। আমি নিশ্চিত, আমি এ দেশের মানুষের অকল্যাণের জন্য কোনো কাজ কোনোদিনই করিনি। নিরপেক্ষ তদন্ত ও নিরপেক্ষ বিচার হলে আমি নির্দোষ প্রমাণিত হবো, এ ব্যাপারে আমার কোন সন্দেহ নেই। যারা আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রচারণা চালাচ্ছেন, তারাও জানেন যে, আমি দোষী নই- এ সবই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। তবে যে রকম প্রহসনের বিচার হচ্ছে তেমন হলে তো আর কোনো বক্তব্য থাকে না। আমার দীর্ঘ ৫০ বছরের কর্মজীবনে সারাদেশে ব্যাপক সফর করেছি। জনগণের মধ্যেই বিচরণ করেছি। উন্নত নৈতিক চরিত্রে ভূষিত হওয়ার জন্য জনগণকে উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টা করেছি। মানবতাবিরোধী যেসব অপরাধের অভিযোগ আমার বিরুদ্ধে তোলা হচ্ছে তা কখনো জনগণ বিশ্বাস করবে না। আমাকে ফাঁসি দিলেও জনগণ আমাকে আল্লাহর সৈনিক হিসেবেই গণ্য করবে, ইনশাআল্লাহ।”
প্রিয়পাঠক বৃন্দ-সবমিলিয়ে আজ আমাদের মাঝে এমন এক গোলাম আযম উপস্থিত যার প্রজ্ঞা, রাজনৈতিক অন্তর্দৃষ্টি, ক্ষমা, ,মহানুভবতা, নিয়মানুবর্তিতা, ধৈর্য্য এবং সহনশীলতার মতো যাবতীয় মহৎ গুণাবলীর বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মাঝে কালোত্তীর্ণ। নির্যাতিত-নিপীড়িত, নিষ্পেষিত জনতার অধিকার এবং মর্যাদাবোধ সম্পর্কে এক আবহ তৈরি করতে সাহায্য করেছে, যার উদাহরণ নিকট অতীতে বিরল, একবিংশ শতাব্দীর উষালগ্নে মানাবাধিকার, গনতন্ত্র, ইসলাম,জাতিগত অধিকার এবং সচেতনতা, পারস্পরিক মর্যাদাবোধ নিয়ে বিশ্ব যখন চরম সঙ্কটের মোকাবিলা করছে, ঠিক তেমনি একটি মুহূর্তে নিজের কর্মমহানুভবতার মাধ্যমে সমহিমায় নিজেকে এমনই এক প্রতীকে রূপায়িত করেছেন ভাষাসৈনিক অধ্যাপক গোলাম আযম।
আর ছোট একটি ঘটনা দিয়ে ইতি টানছি- দক্ষিণ আফ্রিকার সংগ্রামী নেতা নেলসন ম্যান্ডেলার দীর্ঘ ২৭ বছর কারাভোগ তাকে সাজিয়েছে অন্যরকম এক মানুষ হিসেবে। এই রকম একটি মজার ঘটনা- লন্ডনের ওয়েস্ট মিনিস্টার হলে পার্লামেন্টের প্রাচীনতম অংশে সংবধনা। এটি কারো জীবনে দু,বার দেখা বড়ই ভাগ্যোর ব্যাপার। ১৯৬০ সালে-এ জেনারেল ডি গল এর। আর ১৯৯৬ সালে প্রেসিডেন্ট নেলসন ম্যান্ডেলার। তবে সংবধনার সবচেয়ে বিস্ময়কর ছিল। দর্শকসারির অনেক রাজনীতিকই অতীতে তাদের শত্রƒ হিসেবে গন্য করতেন। কখনোই তার দেশের নেতৃত্বে আসা উচিৎ নয় বলে মনে করতেন। পার্লামেন্টের অনেক রক্ষনশীল সদস্য ম্যান্ডেলাকে একজন সন্ত্রাসী মনে করতেন। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী লেডি থ্যাচার, যিনি সামনের সারির কাছকাছি বসেছিলেন। নয় বছর আগে তিনি বলেছিলে যে, কেউ যদি ভেবে থাকে আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেস কখনো দক্ষিণ আফ্রিকার সরকার গঠন করতে পারবে তবে সে এক অন্ধকার অলীক রাজ্যে বাস করছে। আর এখন সেই অন্ধকার অলীক রাজ্য স্বয়ং লন্ডনের ওয়েস্ট মিনিস্টার হলে এসে ভর করেছে।”(সুত্র: এনথনি স্যাম্পসন ম্যান্ডেলা) বাংলাদেশেও সেই ঘটনার পুনরাভিত্তি হবে না তাহাই-ইবা কে জানে?
বাংলার বুকে লক্ষ লক্ষ শিক্ষিত যুবক এখন ইসলামের পতাকাতলে সমবেত। যারা চিরদিন গোলাম আযম মনে রাখবে, চিরদিন ভালবাসবে, সম্মান করতে থাকবে নিজের গরজে। আপনাকে এই শ্রদ্ধা পেতে রাষ্ট্রের কোন আইনের প্রয়োজন পড়বে না। আপনার লিখনি অনাগত যুবকদের জন্য হবে নতুন পথের দিশা এবং ঘটবে নব উত্থান। আপনি দীর্ঘজীবী হোন সত্য পথে চলার অনুসারীদের কাছে। আপনি যে ভাষার জন্য আতœত্যাগ স্বীকার করেছেন সে মাসে ও আপনি বন্দী। এটি আমাদের ব্যার্থতা, জাতির জন্য লজ্জাজনক। শেষবয়সে যখন অনেকের সহযোগীতায় নামাজ,খাওয়া আর নিত্য প্রয়োজণীয় কাজ সারার কথা তখন আপনি একাকী নিভৃতে কারাগারের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে আবদ্ধ হয়ে আছেন!। বাথরুমে পড়ে পায়ের চামড়া উঠে যাওয়ার খবর এবং প্রতিনিয়ত আপনার কষ্ট্রের খবর কাঁদায় দেশে বিদেশে আপনার অনেক ভক্ত ও আনুরক্ত কে। আমরা সকলে আপনার মুক্তির অপেক্ষায়..
বিষয়: বিবিধ
১১৪৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন