‘সুপিরিয়র কমান্ড রেসপনসিবিলিটি’ হিসেবে আসামি শেখ হাসিনা
লিখেছেন লিখেছেন আইল্যান্ড স্কাই ২৮ জুন, ২০১৩, ১১:৪৭:৫৪ রাত
বাংলাদেশে মানবাধিকার লংঘনের অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিসি) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ২৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।
হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড ডেভোলেপমেন্ট ফর বাংলাদেশ এবং গ্রেটার ওয়াশিংটন ডিসি বাংলাদেশি আমেরিকান নামের দুটি সংগঠনের পক্ষ থেকে মারটিন এফ. ম্যাকমহন অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটস বৃহস্পতিবার মামলাটি দায়ের করে।
অভিযোগটি সম্পর্কে বিস্তারিত জানানোর জন্য একই দিন বিকালে ওয়াশিংটন ডিসি ন্যাশনাল প্রেসক্লাবে অ্যাটর্নি মারটিন এফ. ম্যাকমহন সংবাদ সম্মেলন করেন। এ সময় অ্যাটর্নিকে সহযোগিতা করেন ওলিভার টডিল ও মুয়াজ রহমান।
অ্যাটর্নি মারটিন এফ. ম্যাকহাম সরাসরি মানবাধিকার লংঘনে সম্পৃক্ততার অভিযোগে আন্তর্জাতিক আদালতে বাংলাদেশ সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন। মামলায় মোট ২৫ জনকে আসামি করা হয়েছে।
তবে সরাসরি মানবাধিকার লংঘনের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ না এনে ‘সুপিরিয়র কমান্ড রেসপনসিবিলিটি’ হিসেবে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা ওয়াজেদসহ নয় জনকে আসামি করা হয়েছে।
‘সুপিরিয়র কমান্ড রেসপনসিবিলিটি’ হিসেবে বাকি আসামিরা হলেন- স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মহীউদ্দিন খান আলমগীর, তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকু, আইন প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, পুলিশের আইজি হাসান মাহমুদ খন্দকার, র্যা বের মহাপরিচালক মোকলেসুর রহমান ও বিজিবির মহাপরিচালক আজিজ আহমেদ।
বাকিরা হলেন ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার বেনজির আহমেদ, চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ থানার ওসি প্রদ্বীপ কুমার, ডিএমপি মতিঝিল জোনের এসি মেহদী হাসান, ডিএমপি লালবাগ বিভাগের ডিসি হারুন-অর রশিদ, মিরপুর মডেল থানার ওসি সালাউদ্দিন, গোয়েন্দা বিভাগের এডিসি মশিউর রহমান, দারুস সলাম থানার ওসি খলিলুর রহমান, কাফরুল থানার ওসি আবদুল লতিফ, কাফরুল থানার সাব ইনেসপেক্টর আশিক, যাত্রাবাড়ী থানার ওসি রফিকুল ইসলাম, মেট্রোপলিটন ম্যাজেস্ট্রেট আসাদুজ্জামান নূর, শহিদুল ইসলাম, এম এম মোস্তাফিজুর রহমান ও হারুন রশিদ, পাবলিক প্রসিকিউটর সাজ্জাদুল হক শিহাব ও আসলাম।
সংবাদ সম্মেলনে অ্যাটর্নি মারটিন বলেন, শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকেই দেশে মানবাধিকর লঙ্ঘন করে আসছে। মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রমাণ বাংলাদেশি মিডিয়াসহ আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম, বিভিন্ন মানবাধিকার ও এনজিও সংস্থার প্রতিবেদনে রয়েছে।
তিনি বলেন, ‘অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, রাষ্ট্রের চাপে মানবাধিকার লঙ্ঘনের দিক দিয়ে বাংলাদেশের গণতন্ত্র হুমকির মুখে আছে। গত কয়েক মাস ধরে রাষ্ট্রীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে বিচারবহির্ভূত বেসামরিক মানুষ হত্যা, হয়রানি এবং গ্রেপ্তার ও অত্যাচার করা হচ্ছে।’
২০১৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারী ও ৫-৬ মে’র হত্যাকাণ্ডসহ দৈনিক আমার দেশ’র ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে গ্রেপ্তার করে নির্যাতন, হেফাজতে ইসলামের নেতা আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী ও ছাত্রনেতা দেলোয়ার হোসেনকে গ্রেপ্তার ও নির্যাতন, বিরোধীদলীয় নেতা ইলিয়াস আলী গুম, শ্রমিক নেতা আমিনুল ইসলাম হত্যা, ছাত্রনেতা মোহাম্মদ ফিরোজ খান ও আনোয়ারুল ইসলাম মাসুমকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী পরিচয়ে অপহরণ এবং আল্লামা দেলোয়ার হোসাইন সাঈদীর সাক্ষী সুখরঞ্জন বালী নিখোঁজ ও কলকাতায় আটক থাকার ঘটনা তুলে ধরেন মারটিন।
তিনি দাবি করেন, বাংলাদেশ সরকারের নির্দেশে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীসহ র্যাাব, বিজিবি ও ডিজিএফআইসহ সরকারের বিভিন্ন সংস্থা চরম মানবাধিকার লঙ্ঘন করে আসছে।
অভিযোগে অ্যাটর্নি মারটিন উল্লেখ করেন, ‘বাংলাদেশে ২০০৯ সালে বিচারবহির্ভূত হত্যা ১৫৪ জন, ১০ সালে ১২৭ জন, ১১ সালে ৮৪ জন এবং ১২ সালে ৭০ জন। ২০০৯ সালে বন্দি অবস্থায় মৃত্য ৫০ জন, ২০১০ সালে ৬০ জন, ১১ সালে ১০৫ জন, ১২ সালে ৬৩ জন। ২০০৯ সালে গুম হয়েছেন ৩ জন, ১০ সালে ১৮ জন, ১১ সালে ৩০ জন, ১২ সালে ২৪ জন।
২০০৯ নির্যাতনে আহত ও নিহত হয়েছেন ৮৯ জন, ১০ সালে ৬৭ জন, ১১ সালে ৪৬ জন এবং ১২ সালে ৭২ জন। সাংবাদিক নির্যাতনের শিকার ২০০৯ সালে ২২১ জন, ১০ সালে ২৩১ জন, ১১ সালে ২৫৯ জন, ১২ সালে ২৮৯ জন।
রাজনৈতিক হত্যার শিকার ২০০৯ সালে ২৫১ জন, ১০ সালে ২২০ জন, ১১ সালে ১৩৫ জন ও ১২ সালে ১৬৯ জন।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে অ্যাটর্নি মারটিন বলেন, ‘আমরা অভিযোগটি দাখিল করেছি। আমরা আশা করছি, আসিসি অভিযোগগুলো তদন্ত করে বাংলাদেশ সরকারের বিরুদ্ধে চূড়ান্তভাবে মামলাটি গ্রহণ করে আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী দ্রুত প্রদক্ষেপ নেবে।’
বিষয়: বিবিধ
১২৩৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন