আবার সংঘাতের দিকে দেশ ?

লিখেছেন লিখেছেন আইল্যান্ড স্কাই ২২ জুন, ২০১৩, ০১:৩০:৩৫ দুপুর



নানা দুঃখের মাঝেও বাংলাদেশীদের সৌভাগ্য হল, একাত্তরের বহু বছর পর মুক্তিযুদ্ধের চেতনাধারীদের আসল রূপ তারা আবার দেখতে পাচ্ছে। অতীত ইতিহাস থেকে যাদের ছবক হাছিলের যোগ্যতা নেই আল্লাহতায়ালা তাদেরকে এভাবেই বার বার ছবক দিয়ে থাকেন। এখন মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সাথে তাদের নতুন ভাবে সাক্ষাত-পরিচয়টি হচ্ছে। আবার লাগাতর আঘাত হানা শুরু হয়েছে মুসলমানদের স্বাধীন ভাবে বাঁচার সামর্থ-বিনাশে। একাত্তরে ভারতীয় অস্ত্র নিয়ে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর সেনা অফিসার ও সেপাহীদের হত্যা করা হয়েছিল। অথচ সে সেনাবাহিনীটিও গড়ে তোলা হয়েছিল বাংলার মানুষের ট্যাক্সের অর্থে। লক্ষ্য ছিল, এ সেনাবাহিনী মুসলমানদেরকে আবার বিশ্বমাঝে মাথা তুলে দাঁড়াবার সামর্থ বাড়াবে। কিন্তু সেটি যেমন ভারতের ন্যায় কাফের শক্তির পছন্দ হয়নি, তেমনি পছন্দ হয়নি মুক্তিযুদ্ধের চেতনাধারিদের। একই ভাবে আজ ভারতীয়দের খুশি করতে খুন করা হচ্ছে কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে গড়ে তোলা বাংলাদেশের সেনা অফিসার ও সেপাহীদের। ৭১ থেকে ৭৫ অবধি যেভাবে পাটের গুদামে আগুন ও শিল্পকারাখানা ধ্বংস করা হয়েছিল সেটিই আবার শুরু হয়েছে। মুজিবামলে ছাত্ররা লাশ হত ক্যাম্পাসে। শুরু হয়েছে সেটিও। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাধারিরা সে আমলে ভারতকে অনুমতি দিয়েছিল ফারাক্কা বাঁধ থেকে পানি তুলে নেয়ায়। আজ সে অনুমতি দেয়া হচ্ছে টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণে। মুক্তিযোদ্ধাদের যে প্রবল চেতনাটি একাত্তরে সীমান্ত বাণিজ্যের নামে বাংলাদেশের সীমান্ত খুলে দিয়েছিল, এখন সে পথেই এগুচ্ছে ভারতকে ট্রানজিট দেওয়ার নামে। তবে পার্থক্য হল, একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রতিপক্ষ রূপে সে সময় লক্ষাধিক রাজাকারের প্রবল প্রতিরোধ ছিল। ফলে তাদের একার পক্ষে অসম্ভব হয়ে পড়েছিল বিজয়। তাই সেদিন বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ডেকে এনেছিল ভারতীয় সেনা। কিন্তু আজ ভারতীয় বাহিনীর প্রয়োজন পড়ছে না বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ঢুকার। তাদের পক্ষে সে কাজটিই অতি কুশলতার সাথে করছে তাদের হাতে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত একাত্তরের মুক্তিযোদ্ধারা।

ইতিহাসের সাক্ষ্য হলঃ কাফের শক্তির লাগাতর সাহায্য ও পরিচর্যা ছাড়া মুসলিম স্বার্থ বিনাশী কোন শক্তিই মুসলিম দেশে একাকী বাঁচতে পারে না। বিজয়ীও হতে পারে না। তাই যুগে যুগে মির জাফরেরা সব সময়েই ক্লাইভদের ঘাড়ে ভর করে। আফগানিস্তানের কম্যিউনিস্টরা তাই রুশ বাহিনীকে ডেকে এনেছিল। পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের সেকুলার শক্তি তাই মার্কিন বাহিনীকে ডেকে আনছে। পঁচাত্তরে বাংলাদেশে তারা ত্বড়িৎ সেটি পায়নি বলেই বাঁচতেও পারেনি। আর আজ তাদের বাঁচাতেই বাংলাদেশে ট্রজানের ঘোড়ার মত প্রবেশ করেছে হাজারে হাজার এনজিও। বিশ্বের তাবত ইসলাম-বিনাশী শক্তি এ কাজে একতাবদ্ধ। ভারতও গোঁফে তা দিচ্ছে এবং সেটিই প্রকাশ পেয়েছে ভারতের কেন্দ্রীয় মন্ত্রী প্রণব মুখার্জীর বক্তব্যে। তিনি বলেছেন, এবার আওয়ামী লীগ সরকারের উপর কিছু হলে ভারত বসে থাকবে না। একাত্তরে ইন্দিরাও একই কথা বলেছিল এবং আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় বসাতে যুদ্ধ শুরু করেছিল। একটি স্বাধীন দেশের অভ্যন্তরে এটি হল শক্তিশালী প্রতিবেশীর পক্ষ থেকে উলঙ্গ হস্তক্ষেপের হুমকি। আর এমন একটি হস্তক্ষেপের দাওয়াত দিতে আওয়ামী লীগ যেমন একাত্তরে পিছপা হয়নি, তেমন আগামীতেও হবে না। এভাবেই নিছক রাজনৈতিক ক্ষমতালিপ্সার কারণে তারা আবার রক্তাত্ব করবে বাংলাদেশের মাটি। তাদের একার পক্ষে বিজয় অর্জন ও সেটি ধরে রাখা দিন দিন অসম্ভব হয়ে উঠছে। ফলে দ্রুততার সাথে এ পক্ষটি ভারতের করুণা নির্ভরও হচ্ছে। দূর্বল দেশের স্থিতিশীলতা তো এভাবেই বিনষ্ট হয়। এভাবেই তো শুরু হয় রক্তক্ষয়ী সংঘাত। দূর্বল দেশকে এভাবে দূর্বল রাখার এটিই তো সাম্রাজ্যবাদীদের সনাতন কৌশল। বাংলাদেশ আজ সেটিরই শিকার। একাত্তরে রাজাকারেরা নিজেদের রক্ত ঢেলে সে আগ্রাসনের বিরোধীতা করেছিল। ভারতীয় সাম্রাজ্যবাদী শক্তির শত্রুতা এজন্যই রাজাকারদের বিরুদ্ধে এতটা গভীর। রাজাকারদের বিরুদ্ধে আজ যে লাগাতর প্রপাগান্ডা সে কাজে এজন্যই বিপুল অর্থ আসছে ভারত থেকে। অন্যান্য কাজকর্ম ছেড়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাধারীরা আজ যেভাবে রাজকারদের বিরুদ্ধে এত শ্রম, এত সময় ও এত অর্থ ব্যয় করছে সেটির মূল রহস্য তো এটিই। বাংলাদেশের প্রতি ভারত সরকারের এটাই তো মূল প্রায়োরিটি। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাধারীরা অন্য কাজে যেমন অর্থ পায় না, তেমনি আগ্রহও পায় না। অপরদিকে ভারতীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের প্রবল চেতনাটিই হল রাজাকারের চেতনা। তাই যতই বাড়বে এ চেতনা ততই বলবান হবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা।

বিষয়: বিবিধ

১৪৪৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File