এ মিশন শ্বাশ্বত এ মিশনের মৃত্যু নেই ?

লিখেছেন লিখেছেন আইল্যান্ড স্কাই ১৯ জুন, ২০১৩, ০১:৫৭:৩০ দুপুর

প্রতিটি মুসলমানের দায়িত্ব হল, যেকোন মুসলিম দেশে বিচ্ছিন্নতার প্রতিটি উদ্যোগকে শক্তি বলে রুখা। সেটি যেমন আজকের বাংলাদেশে প্রযোজ্য, তেমনি প্রযোজ্য ছিল একাত্তরের পাকিস্তানেও। কিন্তু বাংলাদেশের মুসলমানেরা শুধু পতিতাবৃত্তি, সূদী ব্যংক, ব্রিটিশের প্রণীত হারাম আইনকেই বরণ করে নেয়নি, শ্রদ্ধাভরে বরণ করে নিয়েছে এসব হারাম কাজের নেতাদেরকেও। দিয়েছে বন্ধুর (বঙ্গবন্ধুর) খেতাব। আজও বিপুল ভোটে নির্বাচিত করে বিভিন্ন দলের দুর্বৃত্ত নেতাদের। অথচ আল্লাহর কাছে প্রিয় এবং মুসলমানের বন্ধু হতে হলে তো তাকে মুসলমান ও ইসলামেরও বন্ধু হতে হয়। মুসলিম দেশের অখন্ডতার হেফাজতে কাফেরদের বিরুদ্ধেও বীরদর্পে রুখে দাঁড়াতে হয়। পবিত্র কোরআনে আল্লাহর তায়ালার ঘোষণা, “হে ঈমানদারগণ, তোমরা আল্লাহর সাহায্যকারি হয়ে যাও।..” আল্লাহর সাহায্যকারি হওয়ার অর্থ শুধু আমিও মুসলমান –এ টুকু বলা নয়। শুধু নামায-রোযা আদায় নয়। আল্লাহপাক তার বান্দাহ থেকে আরো বৃহ্ত্তর কিছু চান। এবং সেটি ইসলামের বিজয় ও মুসলিম ভূমির প্রতিরক্ষায় ব্যক্তির অঙ্গিকার ও কোরবানী। এটিই ছিল রাজাকারের জীবনে মিশন। এ মিশন শ্বাশ্বত। সেটি বিমূর্ত তার রাজনীতি ও যুদ্ধ-বিগ্রহে। মুজিব ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাধারিরা নামে মুসলমান হলেও আল্লাহর ঘোষিত এ মিশনকে তারা নিজেদের জীবনের মিশন রূপে গ্রহন করেনি। বরং ভারতের মিশন তাদের নিজেদের মিশনে পরিণত হয়। ফলে মুসলিম ভূমির প্রতিরক্ষার জন্য কিছু করার বদলে তারা সেটিকে ধ্বংস করেছেন। এভাবে প্রচন্ড খুশি বাড়িয়েছে তাদের কাফের বন্ধুদের।

মুজিব ও তার অনুসারিদের মুসলিম উম্মাহর শক্তিবিনাশী প্রয়াসকে রুখবার প্রাণপন চেষ্টা করেছে রাজাকারেরা। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাধারি তথা ইসলামের বিপক্ষ শক্তির কাছে রাজাকারদের আজও এটিই বড় অপরাধ। একজন কাফের, নাস্তিক, জঘন্য পাপাচারি বা হিন্দুস্থানী এজেন্ট মুসলিম রাষ্ট্রবিনাশী নেতাকে পরম বন্ধু বলবে সেটিই তো স্বাভাবিক। কিন্তু তাকে একজন মুসলমানও কি বন্ধু রূপে বরণ করে নিতে পারে? বন্ধু রূপে মেনে নিতে পারে কি কোন ইসলামি সংগঠনের নেতা, কর্মী বা সমর্থক। অথচ বাংলাদেশে সেটিও হচ্ছে। দেশটির ইসলামপন্থি নেতাকর্মীরা নিজেদের পত্র-পত্রিকা, লেখনি ও বক্তৃতা-বিবৃতিতে এমন নেতাকে বঙ্গবন্ধু বলছে এবং শ্রেষ্ঠ সন্তান বলছে মুক্তিযোদ্ধাদের। তাদের সাথে তাদের বিজয়ের দিনগুলোতে মিছিল করছে, উৎসবেও নামছে। দেশটিতে ইসলামি জ্ঞানশূণ্যতা ও চেতনাশূণ্যতা যে কতটা গভীরে পৌছেছে এ হল তার নমুনা। তাই পচন শুধু মুক্তিযোদ্ধাদের একার নয়, আক্রান্ত হয়েছে তথাকথিত ইসলামী সংগঠনগুলোর নেতা-কর্মীরাও। গ্রামে কলেরা লাগলে তাতে আস্তিক-নাস্তিক সবাই আক্রন্ত হয়। তেমনি দেশে বুদ্ধিবৃত্তিক পথভ্রষ্টতার প্লাবন শুরু হলে তাতে শুধু বেঈমানরাই ভাসে না, অনেকেই ভাসে। প্লাবনে যেমন শুধু শিকড়হীন কচুরিপানাই ভাসে না, ভাসে সে সব গাছপালাও যাদের শীকড় মাটির গভীরে যায়নি। বুদ্ধিবৃত্তিক পথভ্রষ্টতার প্লাবন থেকে বাঁচতে হলে ইসলামী জ্ঞানের শিকড় তাই অত্যন্ত গভীরে যাওয়া দরকার। নবীজী (সাঃ)র আমলে অজ্ঞতার সে প্লাবন অতি প্রবল ছিল আরবে। প্লাবনের সে স্রোত থেকে বাঁচানোর তাগিদে নবীজী লাগাতর ১৩টি বছর ধরে মক্কায় ইসলামি জ্ঞানচর্চকে তীব্রতর করেছিলেন। এভাবে গভীরতর করেছেন ইসলামী আক্বীদা ও দর্শনকে। পবিত্র কোরআনের মক্কী সুরাগুলোতে মহান আল্লাহতায়ালা তো এ বিষয়গুলোকেই বেশী গুরুত্ব দিয়েছেন। কাবাকে ঘিরে তখনও উলঙ্গ তাওয়াফ হত, মদ্যপান ও নাচগান হত, সাহিত্যের নামে কবিতা পাঠের আসর বসতো। আরব সংস্কৃতিকে অমর রাখতে মিনাতে তখন ফিবছর উৎসবও হত। কিন্তু সে যুগের নব্য মুসলমানেরা সে সাংস্কৃতিক প্লাবনে ভেসে না গিয়ে নিজেরাই বিপরীত ধারার স্রোত গড়েছেন। এবং সেটি সম্ভব হয়েছিল ইসলামি জ্ঞানের গভীরতায় আল্লাহর দ্বীনের সাথে দৃঢ় সম্পর্ক গড়ার কারণে। কোরআন হল আল্লাহর রশি। আর সে রশিতে তাঁরা নোঙর বেঁধেছিলেন সিরাতুল মোস্তাকিমের সাথে। ফলে তাদের জীবনে পথভ্রষ্টতা আসেনি। অথচ সে বাঁধনটি না থাকায় পথভ্রষ্টতার জোয়ারে ভেসে গিয়েছিল মদিনার ইহুদীরা। আল্লাহ ও তাঁর নবী হযরত ইব্রাহীম (আঃ), হযরত ইয়াকুব আঃ) ও হযরত মুসা (আঃ)র ন্যায় নবীরাসূলদের উপর বিশ্বাসী হওয়ার দাবীদার হওয়া সত্বেও তারা আল্লাহর সর্বশেষ নবী ও তাঁর অনুসারীদের নির্মূলে মক্কার পৌত্তলিক কাফেরদের সাথে কোয়ালিশন গড়েছিল। জঙ্গে-আহজাব তথা পরিখা যুদ্ধের সময় আরবের সকল কাফের গোত্র যখন একত্রে মদিনার উপর হামলা করেছিল, তখন তারাও সে হামলায় সমর্থন দিয়েছিল। আহলে কিতাবদের সমগ্র ইতিহাসে ইহুদীদের এ কর্ম ছিল যেমন গর্হিত তেমনি ছিল নজির বিহীন।

বিষয়: বিবিধ

৯২৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File