যুদ্ধ শুরু হবার আসল কারণ ?
লিখেছেন লিখেছেন আইল্যান্ড স্কাই ১৩ জুন, ২০১৩, ০৩:৩৯:০৯ দুপুর
শেখ মুজিব দাবি তোলেন শুধু পূর্ব পাকিস্তানের শাসনক্ষমতা তার হাতে তুলে দেবার। অথচ ইয়াহিয়ার প্রস্তাব ছিল ভূট্টোকে উপ-প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্র মন্ত্রী করে শেখ মুজিব সমগ্র পাকিস্তানের শাসন ক্ষমতা হাতে নিক। কিন্তু তাতে তিনি রাজী হননি। জেনারেল ইয়াহিয়া খান মুজিবের দাবীর কাছে তিনি নতি স্বীকার করেননি। আর তখনই শুরু হয় যুদ্ধ। আর এমন একটি যুদ্ধের জন্য ভারত মুজিবের অনুসারিদের পূর্ব থেকেই প্রস্তুত রেখেছিল। অথচ একাত্তরের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধটি সহজেই পরিহার করা যেত। কিন্তু মুসলমানদের শত্রুপক্ষের সেটি কাম্য ছিল না। তারা চাচ্ছিল মুসলমানদের মাঝে ভাতৃঘাতি একটি ভয়ানক যুদ্ধ শুরু হোক। রক্তের গভীরে ডুবে যাক সাত চল্লিশের প্যান-ইসলামি চেতনা এবং চিরস্থায়ী হোক বাঙ্গালী-অবাঙ্গালী মুসলমানদের মাঝে তিক্ততাটি । আর সেটি বুঝা যায়, একাত্তরের যুদ্ধ শেষ হওয়ার পরই শেখ মুজিব ঘোষণা দেন তিরিশ লাখ বাঙ্গালী হত্যার কথা। এ মিথ্যা তথ্যটি বলা হয়েছে নিছক বাঙ্গালী-অবাঙ্গালী মুসলমানদের সম্পর্কটাকে রশাতলে ডুবানোর স্বার্থে। ভারতকে খুশি করার এর চেয়ে বড় কাজ আর কি হতে পারে? ভারত তো সেটিই চাইতো। ভিয়েতনামে যুদ্ধ চলেছে ১২ বছর ধরে। সেখানে ১২ বছরে নিহত হয়েছে প্রায় ১০ লাখ মানুষ। অথচ সেখানে নাপাম বোমা, ক্লাস্টার বোমাসহ নানান ধরণের বহু হাজার বোমা ফেলা হয়েছে বার বছর ধরে। এর পরও প্রতি বছর যা মারা গেছে তা গড়ে ৮৩ হাজারের বেশী নয়। অথচ বলা হচ্ছে, বাংলাদেশে ৯ মাসেই মারা গেছে ৩০ লাখ! অর্থাৎ প্রতিদিন গড়ে ১১ হাজারেরও বেশী! হ্টিলারের অনেকগুলো গ্যাস চেম্বার ছিল। কিন্তু তারপরও প্রতিদিন মানুষ হত্যার গড় হার এর চেয়ে অনেক কম ছিল। অর্থাৎ শেখ মুজিব তিরিশ লাখের তথ্য শুনিয়েছিলেন পাকিস্তান আর্মিকে হিটলারের বাহিনী থেকেও বর্বর রূপে চিত্রিত করার লক্ষ্যে। অথচ মজার ব্যাপার হলো যাদের কে তিনি এমন জঘন্য খুনি রূপে চিত্রিত করলেন তাদের একজনে বিরুদ্ধেও কোন রূপ অভিযোগ খাড়া করতে পারেননি। প্রমাণের অভাবে নিজ দেশে বা আন্তর্জাতিক আদালতে এ নিয়ে কোন মামলাও দায়ের করতে পারেননি। ফলে পাকিস্তানী সেনাসদস্যদের বিনা বিচারে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছেন। শত শত মানুষকে নিয়োগ করে আজও তেমন প্রমাণ খাড়া করতে পারছে না শেখ হাসিনার সরকার।
শেখ মুজিব এবং সে সাথে আওয়ামী রাজনীতির মূল লক্ষ্য হল ক্ষমতা লাভ, এবং সে লক্ষ্যেই প্রয়োজন ছিল প্রকান্ড প্রপাগান্ডার। সে প্রপাগান্ডার সার্থেই প্রয়োজন পড়েছিল বিশাল আকারের মিথ্যা রটনার। মেকিয়াভেলিয়ান নীতিবিদদের রাজনীতি তো বেঁচে থাকে এমন মিথ্যার উপরই। মুজিব মারা গেছেন। তবে তার রচিত সে মিথ্যার মৃত্যু ঘটেনি। তার দলীয় নেতা-কর্মীরা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাধারিরা আজও তিরিশ লাখের সে মিথ্যা কথাটি বাঁচিয়ে রেখেছে এবং সেটিই বিরাম বলে বেড়াচ্ছেন। এখন এ মিথ্যাটিতে বিশ্বাসী হওয়া মু্ক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী হওয়ার অপরিহার্য শর্ত। কালেমা না পড়লে যেমন মুসলমান হওয়া যায় না তেমনি এ তিরিশ লাখের মিথ্যা তথ্যে বিশ্বাসী না হলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাধারিও হওয়া যায় না।
পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতীয় ষড়যন্ত্রের কথা রাজাকারদের কাছে অজানা ছিল না। ফলে তাদের পক্ষে পাকিস্তানের সে দূর্দীনে নীরব বা নিষ্ক্রীয় থাকাটি অস্বাভাবিক ছিল। অবশ্য অনেক সুযোগ সন্ধানীও জুটেছিল। প্রতি সমাজে এমন লোকের সংখ্যাও প্রচুর যাদের নিজেদের কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণের সামর্থ্য থাকে না। তারা ভেসে চলে জনতার স্রোতে। আর বাংলাদেশের মত দেশে এমন স্রোতে ভাসা মানুষের সংখ্যা অনেক বেশী। এরা যেমন রাজাকার হয়েছে তেমনি মুক্তিবাহিনীও হয়েছে। বাংলাদেশ সৃষ্টির পর এসব রাজাকারেরা আবার বিজয়ী পক্ষের সাথে দলে ভিড়ে যায়। এদের অনেকেই আজ রাজাকারদের পরাজয়ের দিনগুলোকে বিজয়ের উৎসবরূপে পালন করে। এ উৎসব পালনে তারা মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে আজ রাজপথেও নামছে।
কোন মুসলিম দেশে বিবাদ থাকাটি অস্বাভাবিক নয়। এমন বিবাদ সাহাবীদের সময়ও ছিল। কিন্তু অস্বাভাবিক হল, এবং সে সাথে অভাবনীয় হল, সে বিবাদকে বাহানা করে একটি কাফের শক্তিকে নিজ দেশে আহ্বান করা বা কাফের দেশে গিয়ে আশ্রয় গ্রহণ করা। এব্যাপারে মহান আল্লাহর সুস্পষ্ট সতর্কবাণী হল,
“ঈমানদারগণ যেন ঈমানদারদের ছেড়ে কোন কাফেরদের বন্ধু রূপে গ্রহণ না করে। যারা এরূপ করবে আল্লাহর সাথে তাদের কোন সম্পর্ক থাকবে না।” -(সুরা আল ইমরান, আয়াত ২৮)
এ আয়াতটির মূল কথা হল, কাফেরদের সাথে সম্পর্ক গড়ার অর্থ আল্লাহর সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করা। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাধারীদের অধিকাংশ মুসলিম নামধারী হলেও তাদের কাছে আল্লাহর এ ঘোষণা আদৌ গুরুত্ব পায়নি। তাই তারা কাফের ইন্দিরার কাছে ধর্না দিয়েছে। আর তার ফল দাড়িয়েছে এই, ভারত সরকারের সাথে বন্ধুত্বের মাঝেই শেখ মুজিব ও আওয়ামী লীগের সম্পর্ক সীমিত থাকেনি। বিজয় লাভের পরপরই আওয়ামী লীগ কোরআনের শিক্ষা বা ইসলামী চেতনাকে সাম্প্রদায়ীক বলে সেটির বিনাশে নেমেছে। অবস্থান নিয়েছে ইসলামের প্রতিপক্ষ হয়ে। কোরআনের বাণী “আল্লাহর সাথে তাদের কোন সম্পর্ক থাকবে না” – এ সত্যটিকেই তারা প্রবল ভাবে প্রমাণিত করেছে এবং আবির্ভূত হয়েছে শয়তানের স্বপক্ষ রূপে।
রাজাকারগণ সংখ্যায় বেশী ছিল না। তাদের সামনে ছিল প্রবল প্রতিপক্ষ। প্রতিপক্ষ শুধু মুক্তিযোদ্ধারাই ছিল না, ছিল বিশাল ভারত ও বিশাল রাশিয়া। তারা জানতো বিজয় লাভ এতটা সহজ নয়। কিন্তু প্রবল প্রতিপক্ষের ভয়ে নীরব ও নিষ্ক্রীয় হয়ে যাওয়া কি মুসলমানের সাজে? পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছেঃ “তোমাদের প্রস্তুতি হালকা হোক বা ভারি হোক বেরিয়ে পড় এবং জিহাদ কর আল্লাহর রাস্তায় তোমাদের জান ও মাল দিয়ে। এটিই তোমাদের জন্য কল্যাণকর যদি তোমরা বুঝতে পারতে।” -(সুরা তাওবাহ, আয়াত ৪১) পাকিস্তান বাঁচানোর কাজকে তার জ্বিহাদ গণ্য করেছে। ১৯৪৭ ছিল ভারতীয় মুসলমানদের বিজয়ের দিন। সে বিজয় এসেছিল একতার বলে। মুসলমানদের একতার ভিত্তি ভাষা নয়, বর্ণও নয়। সেটি হল কোরআন। আল্লাহর রাসূল এ কোরআনকেই বলেছেন আল্লাহর রশি। ভাষা, বর্ণ ও অঞ্চলের দোহাই বন্ধন গড়ার অর্থ আল্লাহর সে রশি থেকে মুসলমানদের সরিয়ে নেওয়া। ইসলামে এটি হারাম। একারণেই আরব, ইরানী, তুর্কী, কুর্দীসহ নানা নানা ভাষাভাষী মানুষ শত শত বছর একত্রে একই ভূগোলে বাস করেছে। কিন্তু আওয়ামী লীগ একত্রে বসবাসের সে অভ্যাস পাকিস্তানে চালু রাখতে দেয়নি। পাকিস্তানের জীবনে ২৩টি বছরও পূর্ণ হতে দেয়নি। এমন বিভক্তি শুধু পরাজয়ই আনে না, সত্যপথ থেকে চরম বিচ্যুতিও আনে। আনে বিশাল আযাব। হেদায়েত পাওয়ার অপরিহার্য শর্ত হল, মুসলমানদের আল্লাহর নির্দেশাবলীকে ঐক্যবদ্ধভাবে আঁকড়ে ধরতে হবে। যারা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল, কোরআনের ভাষায় তারাই পথভ্রষ্ট হয়ে গেল এবং আযাব ডেকে আনলো। এ বিষয়ে পবিত্র কোরআনের সুস্পষ্ট ঘোষণাটি হলঃ “তোমরা আল্লাহর রশিকে সুদৃঢ় হস্তে আঁকড়ে ধর এবং পরস্পরে বিচ্ছিন্ন হয়ো না।” –(সুরা আল ইমরান, আয়াত ১০৩) “এবং যে ব্যক্তিই আল্লাহকে তথা কোরআনে বর্ণীত আল্লাহর নির্দেশাবলীকে আঁকড়ে ধরলো সেই সরল পথের দিকে হেদায়েত পেল।– (সুরা আল ইমরান, আয়াত ১০১) “তোমরা তাদের মত হয়োনা যারা আল্লাহর পক্ষ থেকে সুস্পষ্ট ঘোষণা আসার পরও পরস্পরে বিভক্তি গড়লো এবং বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল, এবং তারাই হল সে সব ব্যক্তি যাদের জন্য রয়েছে বিরাট আযাব।” –(সুরা আল ইমরান, আয়াত ১০৫)
বিষয়: বিবিধ
১৪০৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন