সত্য পথের তীর্থ পথিক জাতীয় বীর মাহমুদুর রহমান।
লিখেছেন লিখেছেন আইল্যান্ড স্কাই ১২ জুন, ২০১৩, ১২:০৫:৫২ দুপুর
আওয়ামীলীগ সরকারের এই আধিপত্যবাদ ভজনা ও লাগামহীন ক্ষমতার লালসার বিরুদ্ধে বাদ সেধেছিলেন মাহমুদুর রহমান। সেখানেই যত গণ্ডগোল। সরকার চেয়েছিল তারা যা যা করছে তার প্রতিটি পর্যায় সম্পর্কে অন্যরা, অন্যান্য গণমাধ্যম যেভাবে ‘বাহবা’ ‘বাহবা’ দিয়ে ওঠে, ঠিক সেভাবেই মাহমুদুর রহমানও ‘বাহবা’ দেবে। অন্যরা যেভাবে সরকারের সব অপকর্ম সম্পর্কে চোখ-কান বন্ধ করে সামান্য খুদ-কুড়ার লোভে তাদেরই পায়ের ওপর সেজদায় পড়ে থাকে, মাহমুদুর রহমানও তা-ই থাকবে। যদি অন্যদের মতো হতেন এই মানুষটি, তাহলে শাসকরা তাকে মাথায় করে রাখত। সরকারি মন্ত্রী-এমপিরা তার পদধূলি নেয়ার জন্য হামেসাই হাজির হতেন আমার দেশ অফিসে। কিন্তু মাহমুদুর রহমান হলেন অন্য ধাতুতে গড়া। তার জীবনদর্শন হলো ‘শির দেগা নাহি দেগা আমামা’। সেজন্য এই সরকার যখন বাংলাদেশের স্বার্থবিরোধী কর্মে হাত লাগাল, তিনি রুখে দাঁড়ালেন। এই সরকার যখন বাংলাদেশের নদীগুলোকে একের পর এক বিনা প্রতিবাদে ভারতের হাতে তুলে দিতে লাগল, তিনি রুখে দাঁড়ালেন। তিতাস নদীর ঘাতকদের বিরুদ্ধে তিনি কোদাল হাতে নেমে গেলেন মাঠে। এই সরকার এবং তার দোসররা যখন রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার প্রতিটি অঙ্গকে অসাড় করে দিতে লাগল, তিনি রুখে দাঁড়ালেন। যখন পিলখানায় সেনা অফিসারদের হত্যা করা হলো, তিনি রুখে দাঁড়ালেন। যখন দুর্নীতি আর সন্ত্রাসে শাসকরা দেশকে দোজখে পরিণত করতে শুরু করল, তিনি রুখে দাঁড়ালেন। এদেশের মানুষের ধর্মবিশ্বাস ও সংস্কৃতির ওপর যখন আঘাত এলো, তিনি সর্বশক্তি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়লেন। যখন গণমাধ্যম ও বাকস্বাধীনতার ওপর আঘাত এলো, তিনি প্রতিবাদমুখর হয়ে উঠলেন। গুম খুন অপহরণের বিরুদ্ধে তিনি তার সবটুকু সামর্থ্য একত্র করে মানবাধিকারের পতাকাকে দু’হাত দিয়ে তুলে ধরলেন উঁচুতে।
শাসকদের হাতে গোপালগঞ্জের পুলিশ, শাসকদের হাতে কালো পোশাকের র্যাব, শাসকদের হাতে ডিবি, এসবি, সিআইডি পুলিশ। শাসকদের হাতে রিমান্ড, শাসকদের হাতে নির্মম নিষ্ঠুর নির্যাতন। শাসকদের হাতে হালাকু খাঁ, চেঙ্গিস খাঁ ও ইসরাইলিদের নৃশংসতা। শাসকদের হাতে আধিপত্যবাদের আর্শীবাদ। তাদের হাতে স্তাবকতায় আকাশ-বাতাস মুখর করে রাখা পা-চাটা গণমাধ্যম।
অন্যদিকে মাহমুদুর রহমানের হাতে মাত্র একটি কলম। তার সম্বল মাত্র দুটি হাত। মাত্র একটি হৃদয়। মাত্র একটি সংবাদপত্র। মাত্র কয়েকজন সহকর্মী। তারপরও মহা মহা প্রবল পরাক্রান্ত শাসকরা তার ভয়ে ভীত। সন্ত্রস্ত্র। মাত্র একজন মুক্ত মাহমুদুর রহমানকে তারা সহ্য করতে পারে না। তারা মনে করে, তাদের ক্ষমতার মঞ্চ থেকে ভাগাড়ে নিক্ষেপ করার জন্য এই একজন মাহমুদুর রহমানই যথেষ্ট। সেজন্য সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে বন্ধ করে দিয়েছে আমার দেশ। সিলগালা করে দিয়েছে আমার দেশ-এর ছাপাখানা। কারারুদ্ধ করেছে মাহমুদুর রহমানকে। তারপর তার ওপর চালিয়েছে চরম নির্যাতন। নির্যাতনের স্টিম রোলার চালিয়ে তারা স্তব্ধ করে দিতে চাচ্ছে বাংলাদেশের বিবেককে।
ভয়াবহ এক অসম যুদ্ধ। একদিকে পরাক্রান্ত সশস্ত্র শাসকরা; অন্যদিকে একজন নিরস্ত্র মানুষ। এই যুদ্ধের পরিণাম সম্পর্কে কি মাহমুদুর রহমান জানেন না? জানেন। তারপরও তিনি রুখে দাঁড়িয়েছেন দেশের জন্য, স্বাধীনতার জন্য, মানবতার জন্য, সর্বোপরি সত্যের জন্য।
এই সত্যের আলো তার হৃদয়ে প্রজ্বলিত করেছে দেশপ্রেম, নিজ দেশকে ভালোবাসতে শিখিয়েছে তার মহান ধর্ম। তার আদর্শ পুরুষ তাই কারবালার প্রান্তরের মহানায়ক হোসেন। উমাইয়া শাসক মুয়াবিয়ার পুত্র ইয়াজিদের বিশাল বাহিনীর বিরুদ্ধে মাত্র ৭০ জন সহচর নিয়ে হোসেন যখন সিনা টান করে সত্যের পক্ষে দাঁড়ালেন, সেদিন কি তিনি জানতেন না এই অসম যুদ্ধের পরিণাম? তিনি নিশ্চয়ই জানতেন। তারপরও তার সামগ্রিক আনুগত্য ছিল সত্যের পক্ষে, ন্যায়ের পক্ষে, অন্যায় ও জুলুমের বিরুদ্ধে। সমস্ত প্রলোভনকে পায়ে মাড়িয়ে তিনি তাই তো ঘোষণা করেছিলেন, ইয়াজিদের হাতে বায়েত গ্রহণ করার চাইতে তার তরবারির নিচে শহীদ হওয়া অনেক উত্তম। সেই উত্তম কাজটি তিনি সেদিন করেছিলেন বলেই প্রবল পরাক্রান্ত ইয়াজিদের তকমা জুটেছে খলনায়কের। আর দেড় হাজার বছর ধরে বিশ্বমানবতার ও ন্যায়ের প্রতীক হয়ে আছেন হোসেন। সেজন্যই মওলানা মোহাম্মদ আলী জওহর বলেছিলেন, কারবালা প্রান্তরে হোসেনকে হত্যা করে আসলে মরে গিয়েছিল ইয়াজিদ আর এভাবেই যুগে যুগে একেকটি কারবালা থেকে নতুনভাবে জীবন লাভ করে ইসলাম।
বিষয়: বিবিধ
১১৬৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন