বিচ্ছিন্নতার ঘটনা পূর্ব-পরিকল্পিত ?
লিখেছেন লিখেছেন আইল্যান্ড স্কাই ০৫ জুন, ২০১৩, ০৪:০৯:১৬ বিকাল
মুসলমানেরা আজ যে ভাবে বিশ্বব্যাপী বিভক্ত ও শক্তিহীন, তা এরূপ জাতিয়তাবাদী চেতনার কারণেই। আওয়ামী লীগ নেতাদের মাঝে এ চেতনাটি বাসা বেধেছিল বহু আগেই। মুসলিম উম্মাহর শক্তিবৃদ্ধি ও ইসলামের গৌরবের বিষয়টি আদৌ তাদের রাজনীতির বিষয় ছিল না। ফলে সামান্যতম দরদও ছিল না অখন্ড পাকিস্তানের প্রতি। একারণেই সত্তরের নির্বাচনে পশ্চিম-পাকিস্তানে গিয়ে নির্বাচনী প্রচারে শেখ মুজিব সামান্যতম আগ্রহও দেখায়নি। কোন রূপ শক্তি বা সময়ও ব্যয় করেনি। অথচ তার দলটিই ছিল পাকিস্তানের সর্ববৃহৎ দল। আর একটি দেশের সর্ব বৃহৎ রাজনৈতিক দলের আচরণ দেশটির সাথে যদি এমন হয় তবে সে দেশটি কি বাঁচে? তবে আওয়ামী লীগ নেতাদের কাছে পশ্চিম পাকিস্তানে গিয়ে রাজনীতি সম্প্রসারণের বিষয়টি যে ১৯৭০য়ে গুরুত্ব হারিয়েছিল তা নয়, একই চেতনা প্রবল ছিল দলটির প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকেই। পাকিস্তানের শক্তিবৃদ্ধি ও দেশটির সমস্যাবলীর সমাধানে বাংলাদেশের মুসলমানদের দায়িত্ব ছিল পশ্চিম পাকিস্তানীদের চেয়েও অধিক। কারণ তারা ছিল সংখ্যাগরিষ্ঠ। কিন্তু সে বিশাল দায়িত্ব আওয়ামী লীগের ন্যায় একটি আঞ্চলিক দলের দ্বারা পালিত হয়নি। কারণ সেটির জন্য সংকীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গির উর্ধ্বে উঠতে হয়, অথচ সে সামর্থ আওয়ামী লীগ নেতাদের ছিল না। ফলে পাকিস্তানের ব্যর্থতা নিয়ে কি শুধু পশ্চিম পাকিস্তানীদের দায়ী করা যায়?
শেখ মুজিবের বিচ্ছিন্নতার পরিকল্পনা ছিল পুর্ব-পরিকল্পিত। তার দল নির্বাচনে অংশ নিয়েছে নিছক পাকিস্তান সরকার ও জনগণকে ধোকা দেওয়ার প্রয়োজনে। সমগ্র পাকিস্তানের রাজনীতি নিয়ে তার সামান্যতম আগ্রহও ছিল না। শেখ মুজিবের আসল মনযোগ ছিল, যে কোন প্রকারে সত্তরের নির্বাচনে পূর্ব-পাকিস্তানে বিজয়ী হওয়া। সে বিজয়ের সাথে সাথে পূর্ব পাকিস্তানের স্বাধীনতার দাবী তোলার জন্য একটি প্রেক্ষাপট তৈরি করা। এটির প্রমাণ মেলে নির্বাচনের পর। বিজয়ী হওয়ার সাথে সাথে তিনি তার রাজনীতির সুর পাল্টিয়েছেন। পাকিস্তান ভেঙ্গে পূর্ব পাকিস্তানের শাসন ক্ষমতা তার হাতে দেওয়ার দাবি তুলেছেন। ফলে যে উদ্দশ্যে সত্তরের নির্বাচন হযেছিল সেটি মুজিবের ক্ষমতালাভের লোভে সহসাই হ্যাইজাক হয়ে যায়। পরিকল্পিত শাসনতন্ত্র রচনার দায়িত্ব ভূলে আওয়ামী লীগ তার সমগ্র সামর্থ্য নিয়োগ করে পাকিস্তানের মানচিত্র খাওয়ায়। এভাবে পাকিস্তানী সেনাবাহিনী নয়, ভারতীয় গোয়ান্দা বাহিনীর পরিকল্পনা মোতাবেক শেখ মুজিব নিজেই রক্তাক্ষয়ী এক যুদ্ধকে বাংলাদেশের নিরস্ত্র মানুষের উপর চাপিয়ে দেন। এ লক্ষ্যে ২৫শে মার্চের বহু আগেই আওয়ামী লীগের কর্মীরা বাংলাদেশের বহু স্থানে অস্ত্র প্রশিক্ষণ শুরু করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হল ছিল তেমনি একটি অস্ত্র প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। কাঠের বন্দুক নিয়ে সেখানে ছাত্রলীগ ও ছাত্র ইউনিয়নের ছাত্রদের সামরিক প্রশিক্ষণ চলতো। তা নিয়ে গর্বভরে বইও লেখা হয়েছে। বাংলাদেশের মাটি রক্তাত্ব হয় মূলতঃ শেখ মুজিবের এমন একটি গোপন ষড়যন্ত্রের কারণে। বাংলাদেশের মানুষের সাথে এটি ছিল এক প্রচন্ড প্রতারণা। বহুদলীয় গণতন্ত্রের নামে ভোট নিয়ে তিনি যেমন একদলীয় শাসন চাপিয়ে দেন, তেমনি পাকিস্তানের শাসনতন্ত্র রচনার দায়িত্ব নিয়ে নির্বাচিত হয়ে একটি যুদ্ধ এবং সে যুদ্ধের সাথে আগ্রাসী ভারতীয় বাহিনীর দখলদারীও প্রতিষ্ঠা করেন। ভারতের মাটিতে ও ভারতীয় অর্থ ও নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্ম হয় এমন একটি যুদ্ধে দ্রুত বিজয় আনার লক্ষ্যে। তাই যারা বলেন, মুক্তিযুদ্ধের জন্ম হয়েছিল পাকিস্তান সেনাবাহিনীর পরিচালিত যুদ্ধ, রক্তপাত ও জুলুমকে প্রতিহত করার লক্ষ্যে সেটি মিথ্যা। বরং ভারত্ আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের ঘাড়ে বন্দুক রেখে একটি রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ পাকিস্তানের জনগণের উপর চাপিয়ে দেয়। ভারতের এমন আগ্রাসী ষড়যন্ত্র নিয়ে রাজাকারদের মনে সামান্যতম সন্দেহ ছিল না। এমন একটি যুদ্ধের প্রস্তুতি ভারত ১৯৪৭ সাল থেকেই শুরু করেছিল। সেটি যেমন শেখ মুজিব জানতেন। জানতেন সহরোওয়ার্দ্দি ও আবুল মনসূর আহমদের মত আওয়ামী লীগ নেতারাও।
বিষয়: বিবিধ
১০১৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন