একঝাঁক স্বপ্নের অপমৃত্যু

লিখেছেন লিখেছেন আইল্যান্ড স্কাই ০১ জুন, ২০১৩, ১২:৩৮:২০ দুপুর



আমিরুল মোমেনীন মানিক: হুডখোলা রিকসায় পল্টনের বিজয়নগর পার হচ্ছিলাম। রিকসাটা আল রাজি কমপ্লেক্সের পাশ দিয়ে দ্রুত চলে যাচ্ছে। ভবনটার দিকে নতুন করে আরেকবার তাকালাম। বুকটা কেঁপে উঠলো ভূমিকম্পের মতো। চিন চিন একটা ব্যথা বুকের ভেতর দৌঁড়াতে লাগলো। আহা, ক’দিন আগে স্বপ্নবাজদের পদচারণায় মুখর ছিলো এই ভবনটার ৭ম, ৮ম আর নবম তলা। যেখানে দিগন্ত টেলিভিশনের খবর আর অনুষ্ঠান তৈরীর কারখানা। প্রায় এক মাস হতে চলল, সেই কারখানার সব উৎপাদন বন্ধ, শ্রমিকরাও বেকার।

... এইসব হিজিবিজি ভাবনার মধ্যে রিকসাটা অনেক দূর এগিয়ে গেছে। বুকের ভেতর থেকে একটা গভীর অক্ষম নি:শ্বাস বেরিয়ে এলো। বাম চোখের কোনাটা ভরে গেল অশ্রুতে। রিকসাটা চলছেই। রিকসাওয়ালা জিজ্ঞেস করছে, ভাই কোথায় থামবো ? আমার সেদিকে কান নেই। শেষে বিরক্ত হয়ে বললাম, আমার কোন গন্তব্য নেই; তোমার যেখানে ইচ্ছে যেতে পারো !

২.টিভি সাংবাদিকতার আট বছরের মাথায় বেকার হলাম। বন্ধ হয়ে গেলো প্রায় ৬০০ মানুষের রুটি-রুজির উঠোন। যদিও সরকারী তথ্যে বলা হয়েছে, সাময়িক। কিন্তু, মনের ভেতর শুধু শঙ্কা, কি হয়! কি হয়! যখন টিভি অনএয়ারে ছিলো, আমার পুরনো নকিয়া মোবাইল ফোনে কত যে ফোন আসতো ! বিশিষ্টজনদের, রাজনীতিকদের, আমলাদের। এমনকি প্রান্তিক মানুষেরও। এখনও মো্বাইল ফোনটা বাজে, তবে বিশিষ্টজনদের কলিং এ নয়, সাধারণ মানুষের উপচে পড়া উদ্বেগে।

দিগন্ত টিভির সম্প্রচার বন্ধ হবার পর শত শত সাধারণ দর্শক খোঁজ নিয়েছে। তবে, অনেক ‘বিশিষ্টজনরাই’ লাপাত্তা। তাদের কেউ কেউ হয়ত ভেবেছেন, এদের খবর নিতে গিয়ে আবার না বিপদে পড়ে যাই, যদি চাকুরী চায় অথবা টাকা ধার ! আহা, কত নির্মম সময়।

তবে, যখনই জীবনের প্রয়োজনে রাজপথে নামি, অসংখ্য মানুষের ভালোবাসায় স্নাত হই। এইসব অচেনা অনেকে বুকে জড়িয়ে ধরে বলে...আমরা তো আছি।

৩.অনেক মিডিয়াশ্রমিক আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন, তাদেরকে ধন্যবাদ। যারা অ্যাভয়েড করে গেছেন, তাদের প্রতিও শুভকামনা। মাবুদ, এদের জীবনে এমন দু:সময় দিওনা।

তবে, বেশ কয়েকজন মানুষ অসম্ভব আন্তরিক ভালোবাসা দিয়েছেন এই কয়েক দিনে। তাদের কথা মনে পড়লে কৃতজ্ঞতায় চোখে পানি চলে আসে। তাদের নাম বলে ছোট করতে চাইনা। বারবার খোঁজ নিচ্ছেন। এইসব দরদী মানুষের জন্য অন্তহীন ভালোবাসা।

৪.প্রতিনিয়ত তাদের কথা ভাবছি, যারা ছিলেন পরিবারের একমাত্র উপাজনক্ষম। যাদের বাসায় ছোট্ট সোনামনি আছে, তাদের কথা। মাস ফুরালে যারা তাকিয়ে থাকেন, বেতনের দিকে, তাদের কথা ।দিগন্ত আবার চালু না হলে এদের কি হবে ?

৫.দিগন্তে যারা কাজ করতেন তাদের অধিকাংশের একমাত্র ধ্যানজ্ঞান ছিল মিডিয়া।( আমার জানামতে) রাজনীতির কোন কূটচাল তাদের চিন্তার রাজ্যে কখনোই ছিলোনা।

হলফ করে বলতে পারি, পেশাদারিত্ব আর উৎকষতার বাইরে , আমি রাজনীতির ‘র’ কেও কখনোই পোষণ করিনি। দলবাজি তো দূরের কথা। মিডিয়ায় স্বপ্ন দেখাই কি তাহলে অপরাধ !

৬.দিগন্ত কবে আসবে ? এ প্রশ্ন আর শুনতে ভালো লাগেনা। জানিনা, জানিনা, জানিনা। অদৃশ্যের মালিকই ভালো জানেন।

৭.সাংবাদিকতার বাইরে লেখালেখি আর সংগীত আমার আলাদা একটা জগত। অসম্ভব ও দারুন ভালো লাগা এই দু’টো মাধ্যম নিয়েই এখন দিনযাপন করছি।

৮.সঞ্চয় ফুরিয়ে যাচ্ছে দ্রুত। কেরোসিনের বাতিটার তেল ফুরিয়ে যাবে এখনি। অন্ধকারে থাকতে চাইনা, রোদের তাপে পুড়ে মরেতে চাই।

৯.গতকাল রমিজ চাচা এসেছেন আমার বাসায়। চাচা বললেন, আবাদী জমি পড়ে আছে হালচাষের লোক পাচ্ছিনা।

বেরসিক টিকটিকিটা ঠিক ঠিক করছে।

চোখে ঝাঁপসা দেখছি

বিষয়: বিবিধ

১২৯৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File