মধ্যরাতের খাদক সোনার ছেলে ছাত্রলীগের সেই পান্ডারা।
লিখেছেন লিখেছেন আইল্যান্ড স্কাই ২৭ মে, ২০১৩, ০৮:০৬:৩১ রাত
নরপশু ছাত্রলীগ সেই রাত্রীতে হ্মুদার্থ কুকরকে ও হার মানিয়েছিল।
একুশ শতকের পৃথিবী আজ অন্য রকম। বাংলাদেশও। দুঃসংবাদ হলো, এই অন্য রকমটা ইতিবাচক নয়। নেতিবাচক। খুলনা থেকে যে নৃত্যশিল্পীকে সাতক্ষীরায় নিমন্ত্রণ করে এসেছিল আওয়ামী লীগের ছাত্রসংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ তাঁদের অনুষ্ঠানে নৃত্য পরিবেশন করার জন্য, বাজেট ‘ফেল’ করলে তাঁকে ফুলের তোড়া দিয়ে সসম্মানে খুলনা ফিরে যাওয়ার ব্যবস্থা করতে পারত, অন্য আরও অনেক দিনের মতো সেই শিল্পী দীর্ঘশ্বাস বুকে চেপে বাড়ি ফিরতেন, পরদিন সকালে বা বিকেলে আবার পায়ে নূপুর বাঁধতেন, হয়তো কোনো নৃত্যানুষ্ঠান বা নিয়মিত চর্চার পাটাতনে দাঁড়াতেন, নৃত্য মুদ্রাগুলো চোখে-মুখে আঙুলে বাঙময় হয়ে উঠত, জরা ও মৃত্যুকে অস্বীকার করে জীবন হয়ে উঠত আশাবাদের প্রজাপতি...! সেসব কি আর হবে? ঘুমের ভেতর আঁতকে ওঠার মতো, তীব্র অসম্মানের সেই রাতের কথা তিনি বিস্মৃত হবেন কীভাবে? নূপুর পায়ে বাঁধার কথা মনে হলেই তাঁর মনে পড়বে একটা নির্জন বাড়ির কথা। অনুষ্ঠান শেষে স্বামীসহ তাঁকে সেই বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল রাতের খাবার খাওয়ানোর জন্য। মধ্যরাতের সেই ঘরে কোনো খাদ্য ছিল না তাঁর জন্য। অপেক্ষা করছিল কতিপয় খাদক। তিনি নিজেই ছিলেন তাদের খাদ্য। পুঁজিবাদী এই সমাজ আর পুরুষতান্ত্রিক মনের গহিনে নারীর পরিচয় তো এর বেশি কিছু না। ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের মদদ পাওয়া ছাত্রলীগের সেই পান্ডাদের হাতে কিছুক্ষণ আগের সচল নৃত্যমুদ্রাগুলো মধ্যরাতে নিহত হলো। উৎফুল্ল মনে সেই নৃত্যশিল্পী আর কখনো নাচবেন কি?
স্বাভাবিক মৃত্যুতেও আমাদের শোক হয়। আমরা কাঁদি। বিলাপ করি। স্বজন হারানোর শোক আমাদের ব্যথিত করে। আর অস্বাভাবিক বা অকালমৃত্যুতে আমরা বিক্ষুব্ধ হই। যদি কেউ খুন হয়, আমরা প্রতিবাদে মুখর হই, সমবেত হই, সমস্বার্থে উচ্চকিত হই। সভ্যতা আমাদের তাই শিখিয়েছে। সাতক্ষীরা ও খুলনা থেকে রাজধানী ঢাকা কতদূর? লাঞ্ছনার সেই সংবাদ তো গণমাধ্যম আমাদের কাছে ঠিকই পৌঁছে দিল। এখানে সংস্কৃতিচর্চার হেডকোয়ার্টার। সেই হেডকোয়ার্টারে কত সভাপতি কত সাধারণ সম্পাদক। কত কেন্দ্রীয় কমিটি। শিল্পকলার নানা শাখায় অবদান রাখার জন্য কতজন কত রাষ্ট্রীয় পদক পেয়েছেন। গুণীজন সম্মাননা পেয়েছেন। ঢাকায় কত নৃত্যসংগঠন, নারী সংগঠন। আমরা কেউ মুখর হলাম না প্রতিবাদে! আমরা কেউ বললাম না সত্যভাষণ। যেন, ও কেবল সাতক্ষীরার বিষয়। যেন, ও কেবল ওই নৃত্যশিল্পীর নিজস্ব লাঞ্ছনা। নাকি, আমরা বলার যোগ্যতা হারিয়েছি। আমরা আমাদের নিজস্ব বুদ্ধি বন্ধক দিয়েছি অন্যের কাছে। শিল্পের প্রতি দায়বদ্ধতা, মানুষের ও সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা, নীতি-নৈতিকতা—এসব কথা ও ধারণা এখন কি কেবলই রুদ্ধদ্বার কক্ষের সেমিনারের আলোচ্য বিষয়?
ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটি লাঞ্ছনাকারী দুজন পান্ডাকে বহিষ্কার করেছে, সাতক্ষীরা জেলা কমিটি বাতিল করেছে। পুলিশ প্রশাসন অভিযুক্ত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার করেছে। উচিত ছিল, ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির পক্ষ থেকে অসম্মানিত নৃত্যশিল্পীর কাছে ক্ষমা চাওয়া। সেটা তারা করেনি। ছাত্রলীগের উপদেষ্টা যাঁরা বা যিনি সেই আওয়ামী লীগ নেতৃত্বও তা করেনি। তার মানে, রাষ্ট্র এই অসম্মানকে বৈধতা দিয়েছে। এই রাষ্ট্র মানুষ ও মনুষ্যত্বকে অসম্মান করে, করছে এবং করতে শেখাচ্ছে। সে কারণেই আমরা মৌন ও বধির। একই কারণে ছাত্রলীগ ও ক্ষমতাসীনেরা এমন বেপরোয়া। মৌনতা দিয়ে বেপরোয়া কাউকে আটকানো যায়?
বিষয়: বিবিধ
১৭৯৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন