"নারায়ে তকবীর আল্লাহু আকবর" ইহা ঈমানের প্রতিধ্বনি ? জয় বাংলা নয়।

লিখেছেন লিখেছেন আইল্যান্ড স্কাই ২৭ মে, ২০১৩, ০১:২০:৩৫ দুপুর



একাত্তরের রাজাকারদের উপর জুলুম শুধু মুক্তিযুদ্ধের চেতনাধারিদের দ্বারাই হয়নি। হচ্ছে তাদের দ্বারাও যারা একাত্তরে রাজাকার ছিল এবং ইসলামী সংগঠনের নেতা রূপে রাজাকার বাহিনীকে সংগঠিত করেছিল। একাত্তরের পরাজয় এসব তথাকথিত নেতাদের মনবলই ভেঙ্গে দিয়েছে। এখন তারা নিজেদের অস্তিত্ব বাঁচানোর ফিকিরে ব্যস্ত। ইসলামী চেতনা, শরিয়তের প্রতিষ্ঠা, রাজাকারের ত্যাগের ইতিহাস -এসব নিয়ে তাদের আর ভাবার সময় নেই। নিজেদের প্রতিষ্ঠা বাড়াতে এখন মার্কিন মুল্লুক ও মধ্যপ্রাচ্যের স্বৈরাচারিদের দরবারে ধর্ণা দেওয়াকে বেশী গুরুত্ব দিচ্ছে। যুগে যুগে এমন পরাজিতরাই বিজয়ীদের দলে ভিড়ে তাদের বিজয়-উৎসবকে নিজেদের উৎসব রূপে পালন করে। এমন পরাজিত চেতনার কারণেই ক্লাইভের বিজয়ী বাহিনী যখন মুর্শিদাবাদে প্রবেশ করেছিল তখন সে বাহিনীকে দেখতে এলাকার হাজার হাজার মানুষ হাজির হয়েছিল। এমন পরাজিত চেতনা নিয়েই রবীন্দ্রনাথ ব্রিটিশ সম্রাটের ভারত আগমন উপলক্ষ্যে তার সম্মানে কবিতা লিখেছেন এবং স্যার উপাধিও পেয়েছেন। এমন এক পরাজিত চেতনার কারণেই একাত্তরের রাজাকার নেতাদের স্মৃতি থেকে বিলুপ্ত হয়েছে সরলমনা সেসব অসংখ্য যুবকদের নিষ্পাপ নিরীহ চেহারা যারা নিছক ঈমানের তাড়নায় সেদিন ভারতীয় ষড়যন্ত্রের মোকাবেলায় পিতামাতার ঘর বা কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় ও মাদ্রাসার হোস্টেল ছেড়ে রণাঙ্গনে নেমে এসেছিল। অনেকের পিতামাতাই সেদিন নিজের রাজাকার সন্তানদের লাশও দেখতে পারেনি। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাধারিরা হাত-পা বাধা অবস্থায় তাদের দেহে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে শুধু হত্যাই করেনি, লাশকেও বিকৃত করেছে। বহু ঘটনা এমনও ঘটেছে, হত্যার আগে তাদের দেহে জ্বলন্ত সিগারেট দিয়ে জ্বালানো হয়েছে এবং মুক্তিযুদ্ধের কালেমা "জয়বাংলা” বলতে বলা হয়েছে। বাংলাদেশের মুসলমানদের স্লোগান সব সময় নারায়ে তকবীর আল্লাহু আকবর ছিল। মুসলমানের দায়িত্ব হল কাজ ও কথার মধ্য দিয়ে মহান আল্লাহ যে সর্বশ্রেষ্ঠ সেটিরই ঘোষণা দেওয়া। দেশ, ভাষা, বর্ণ বা রাজা-বাদশাহকে নয়। জয়োধ্বনি দিতে হলে দেশ, ভাষা, বর্ণের স্রষ্টা মহান আল্লাহর উদ্দেশ্যে দিতে হবে, সৃষ্টিকে নয়। সে নির্দেশটিই দেওয়া হয়েছে পবিত্র কোরআনে। “নারায়ে তকবীর, আল্লাহু আকবর” -তাই নিছক রাজনৈতিক স্লোগান নয়। এটিই মুসলমানের ঈমানের প্রতিধ্বনি। ঈমানের সে প্রতিধ্বনি জয় বাংলায় প্রকাশ পায় না। “জয়বাংলা” স্লোগানে যেটি প্রকাশ পায় সেটি হল একটি ভূগোলকে বিজয়ী করার চেতনা, একাত্তরের প্রেক্ষাপটে তা ছিল একটি মুসলিম দেশের খন্ডিত বা দূর্বল করার চেতনা। কথা হলো, একজন মুসলমান এমন কথা কেন বলবে যার মধ্য দিয়ে প্রকাশ পায় ভূগোল-ভিত্তিক অহংকার এবং একটি মুসলিম দেশের ক্ষতির অঙ্গিকার। এটি তো হারাম। তাই কোন রাজাকার সেদিন জয় বাংলা স্লোগান দেয়নি। অবর্ণনীয় কষ্ট সয়ে তারা বরং কালেমায়ে শাহাদত পাঠ করেছেন। এবং কালেমায়ে শাহাদত পাঠ করতে করতে মৃত্যুকে বরণ করে নিয়েছেন। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাধারীদের কাছে তাদের কবরটুকুও সেদিন প্রাপ্য মনে হয়নি। কুকুর-শৃগাল দিয়ে তাদের অনেকের লাশ খাইয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা হয়েছে, কখনও বা বিকৃত লাশকে নদীতে ফেলা হয়েছে বা মাটিচাপা দেওয়া হয়েছে। একই আচরণ হয়েছে অবাঙ্গালীদের সাথে। সে নৃশংস হত্যা ও নির্যাতন নিয়ে ওরিয়ানা ফালাসীর মত প্রখ্যাত বিদেশী সাংবাদিকেরা বহু পৃষ্ঠা লিখছেন। বিদেশী পত্র-পত্রিকায় সে সব বীভৎস ঘটনার ছবি এবং বিবরণ ছাপাও হয়েছে। অথচ এসব ইসলামী দলের বড় বড় নেতারা অর্ধ পৃষ্ঠাও লিখেননি। তবে তারা যে বই লিখেন না তা নয়। কিন্তু তাদের স্মৃতিতে ইসলামের এ বীর সন্তানেরাও যে স্থান পায়নি সে প্রমাণ মেলে তাদের বই পড়লে। এখন এসব নেতারা মুক্তিযোদ্ধাদেরকে দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান বলতে ব্যস্ত। তাদের স্মৃতি স্তম্ভে ফুলের মালা চড়াচ্ছেন, নগ্ন পদে চলছেন। অথচ একাত্তরে তারা নিজেরাই তাদেরকে দুস্কৃতিকারী বলেছেন। কথা হলো, ইসলামে কি এরূপ দু'মুখো নীতি চলে? আর তাতে কি চেতনায় ইসলাম বাঁচে ?

মুসলমানের বিশেষ বৈশিষ্ট শুধু এ নয় যে, আল্লাহর রাসূল ও রাসূলের অনুসারিদের তারা প্রচন্ড ভাবে ভালবাসে। ঈমানদারের আরেক অবিচ্ছেদ্দ্য বৈশিষ্ট হল, যারা ইসলামের বিপক্ষ শক্তি এবং ইসলামের ও মুসলমানের যারা ক্ষতি করে তাদেরকে প্রচন্ড ঘৃণা করা। ঈমানদারের গুণাগুণ বলতে গিয়ে পবিত্র কোরআন বলেছে, “আশাদ্দু আলাল কুফ্ফার” এবং “রুহামাও বায়নাহুম” –অর্থাৎ আল্লাহর অবাধ্য তথা কাফেরদের বিরুদ্ধে তারা অতিশয় কঠোর আর নিজেদের মধ্যে তারা পরস্পরে বড়ই রহমদিল বা আন্তরিক। ভাল মানুষ ও দুর্বৃত্তদের ভালবাসার কাজ একসাথে চলে না। এ বিষয়ে নবীজী (সাঃ)র হাদীস, “গুনাহ বা ক্ষতিকর কাজ হতে দেখলে ঈমানদারের দায়িত্ব হল সে কাজ শক্তি বলে রুখা। শক্তি না থাকলে মুখের কথা দিয়ে প্রতিবাদ করা। আর সেটিও না থাকলে মন থেকে সেটিকে ঘৃণা করা। আর এ ঘৃণাটুকুও না থাকলে বুঝতে হবে, তার অন্তরে শরিষার দানা পরিমান ঈমানও নেই”। একটি মুসলিম দেশকে খন্ডিত করার চেয়ে জঘন্য খারাপ কাজ আর কি হতে পারে? মুসলিম উম্মাহর বিরুদ্ধে এর চেয়ে বড় ক্ষতিকর কাজই বা আর কি হতে পারে? দেশের ভূগোলের উপর হামলা রুখতে সাহাবায়ে কেরাম জ্বিহাদ করেছেন, দলে দলে শহীদ হয়েছেন। মুসলিম উম্মাহর অপুরণীয় ক্ষতি করতেই আরব বিশ্বকে খন্ডিত করেছে মুসলিম-দুষমন পাশ্চাত্যের ঔপনিবেশিক সাম্রাজ্যবাদী শক্তি। অখন্ড ভূগোলকে ভেঙ্গে বাইশ টুকরায় বিভক্ত করেছে। আরবদের এভাবে দূর্বল ও নির্জীব করার পরই প্রতিষ্ঠা করেছে ইসরাইল। দেশ খন্ডিত হওয়ার পর যে দূর্বলতা বাড়ে সেটি কি মাথাপিছু আয়ু বাড়িয়ে দূর করা যায়? কুয়েত, আবুধাবি, কাতার সৌদি আরবের মাথাপিছু আয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চেয়েও অধিক। কিন্তু তাতে কি শক্তি বেড়েছে? বেড়েছে কি প্রতিরক্ষার সামর্থ্য। তাই কোন শত্রুপক্ষ যখন কোন দেশবাসীকে দূর্বল করতে চায় তখন তারা সে দেশটির মানচিত্রে হাত দেয়। ভারত সেটি করেছিল পাকিস্তানের বিরদ্ধে। তাই কোন ঈমানদার কি কাফের শক্তির হাতে মুসলিম উম্মাহর দেহ এভাবে টুকরো টুকরো হতে দেখে খুশি হতে পারে? খুশি হলে তার মনে শরিষার দানা পরিমাণ ঈমান আছে সেটিও কি বিশ্বাস করা যায়? এমন বিধ্বংসী কাজে একমাত্র শয়তান এবং শয়তানের অনুসারীরাই খুশি হতে পারে। কোন ঈমানদার নয়। আফ্রিকার সর্ববৃহৎ রাষ্ট্র সূদানকে আজ খন্ডিত করার কাজ চলছে। সেটিকে মুসলমানেরা নিজেদের রক্ত দিয়ে রুখছে। একই ষড়যন্ত্র চলছে ইরাক ও তুরস্কের বিরুদ্ধে। কোন মুসলমান কি সূদান, ইরাক, তুরস্ক বা অন্যকোন মুসলিম দেশের খন্ডিত করার সাম্রাজ্যবাদী চেষ্টায় খুশি হতে পারে? অথচ মুসলিম পরিচয়ধারি হয়েও শেখ মুজিব এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনাধারিরা একাত্তরে তো সে কাজটিই করেছে। তারা শুধু বিশ্বের সর্ববৃহৎ মুসলিম দেশটিকেই ধ্বংস করেনি, পৌত্তলিকদের ন্যায় মূ্র্তি বসিয়েছে পথেঘাটে ও বিশ্ববিদ্যালয়ের চত্বরে এবং কোরআনের আয়াত খসিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোগ্রাম থেকে। ক্ষমতার মসনদে বসে মানুষের জানমালের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হলে কি হবে, প্রথমে ইসলামের প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য নিয়ে রাজনীতিকে নিষিদ্ধ করেছে এবং অসম্ভব করেছে আল্লাহর আইন তথা শরিয়তের প্রতিষ্ঠা। অথচ বহু কাফের দেশেও মুসলমানদের উপর এরূপ নিষেধাজ্ঞা নেই। মুজিব একদলীয় বাকশাল প্রতিষ্ঠা করেছে এবং পদদলিত করেছে মৌলিক নাগরিক অধিকার। অথচ গণতন্ত্র-বিরোধী, নূন্যতম মানবিক-অধিকার বিরোধী এ ব্যক্তিটিই হলেন মুক্তিযোদ্ধদের আদর্শ পুরুষ !

বিষয়: বিবিধ

১৭০৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File