বাংলার আকাশে কালো মেঘ ?
লিখেছেন লিখেছেন আইল্যান্ড স্কাই ২০ মে, ২০১৩, ১২:৫৪:০৩ রাত
১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে রচিত হয় এই কালো অধ্যায়। এদিন সংসদে শেখ মুজিবুর রহমান পেশকৃত চতুর্থ সংশোধনী বিল পাসের মাধ্যমে দেশের সব রাজনৈতিক দল বিলুপ্তির মাধ্যমে গণতন্ত্রকে হত্যা করে একদলীয় শাসন তথা বাকশাল গঠনের পথ উন্মুক্ত করা হয়। একই সঙ্গে এ সংশোধনীর মাধ্যমে সংসদীয় পদ্ধতির সরকার ব্যবস্থা বিলুপ্ত করে রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হয় এবং শেখ মুজিব রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। আর এ পদক্ষেপকে শেখ মুজিবুর রহমান তার দ্বিতীয় বিপ্লবের সূচনা হিসেবে উল্লেখ করেন। এরই ধারাবাহিকতায় তিনি মানুষের সব মৌলিক রাজনৈতিক অধিকার হরণ করে দেশের সব রাজনৈতিক দল বিলুপ্তির মাধ্যমে ১৯৭৫ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি এক আদেশ বলে ‘বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ’ (বাকশাল) নামে একটি জাতীয় রাজনৈতিক দল গঠন করেন। একই সঙ্গে নিজেকে এই দলের চেয়ারম্যান হিসেবে ঘোষণা দেন। পাশাপাশি দল পরিচালনার ক্ষেত্রেও যাবতীয় ক্ষমতার অধিকারী হন তিনি। প্রেসিডেন্টের এই আদেশের ফলে অন্যান্য রাজনৈতিক দল স্বাভাবিকভাবে বিলুপ্ত হয় এবং দেশে বিরাজ করে একটি মাত্র রাজনৈতিক দল—বাকশাল। এই বাকশালের দর্শন বাস্তবায়নের জন্য ১৯৭৫ সালের ১৬ জুন এক আদেশ বলে দেশের সবক’টি সংবাদপত্র বিলুপ্ত করে বাকস্বাধীনতা হরণ করা হয়। শুধু সরকারি ব্যবস্থাপনায় দৈনিক ইত্তেফাক, দৈনিক বাংলা, বাংলাদেশ অবজারভার এবং বাংলাদেশ টাইমস—এ চারটি পত্রিকা সাময়িকভাবে প্রকাশনার সুযোগ দেয়া হয়। এসব ঘটনা ওই সময় দৈনিক ইত্তেফাক, দৈনিক বাংলাসহ বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক গুরুত্বের সঙ্গে প্রকাশ করে। ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট শেখ মুজিবের মৃত্যুর পর পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে দেশে আবার বহুদলীয় রাজনৈতিক ব্যবস্থা চালু হয়।
চতুর্থ সংশোধনী বিষয়ে বিশিষ্ট রাজনীতিক ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের লেখা ‘বাংলাদেশ : শেখ মুজিবুর রহমানের শাসনকাল’ শীর্ষক বইয়ে উল্লেখ করা হয়, ‘১৯৭৫ সালের ২৫ মার্চ (শনিবার) এক নজিরবিহীন ন্যূনতম সময়ের মধ্যে (মাত্র ১১ মিনিট) চতুর্থ সংশোধনী বিলটি সংসদে গৃহীত হয় এবং তা আইনে পরিণত হয়। অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হলেও বিলটি নিয়ে সংসদে কোনো আলোচনা বা বির্তক অনুষ্ঠিত হয়নি। প্রশাসন ব্যবস্থায় এক যুগান্তকারী পরিবর্তন সাধন করে এই বিলের মাধ্যমে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা কায়েম করে রাষ্ট্রপতির ওপর নির্বাহী, আইন ও বিচার বিভাগের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণাধিকার ন্যস্ত করা হয়। একই সংশোধনী বলে শেখ মুজিব দেশের রাষ্ট্রপতি হিসেবে ক্ষমতায় অভিষিক্ত হন। একটি সাংবিধানিক বিলের মধ্য দিয়ে মোহাম্মদ উল্লাহর পরিবর্তে শেখ মুজিবুর রহমান রাষ্ট্রপতি হিসেবে রাষ্ট্রক্ষমতার উচ্চতম আসনে আরোহণ করেন। বিল পাস হওয়ার অব্যবহিত পরেই পদত্যাগ করার সুযোগ পর্যন্ত না দিয়ে নিরীহ শান্ত মোহাম্মদ উল্লাহকে রাষ্ট্রপতির পদ থেকে অপসারণ করা হয় এবং শেখ মুজিব তত্ক্ষণাত্ স্পিকারের কাছে নয়া রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন’।
বিষয়: বিবিধ
১০৯০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন