শুক্রবার একটি সেরা দিন ?
লিখেছেন লিখেছেন আইল্যান্ড স্কাই ১৩ মে, ২০১৩, ১২:০৭:৫৫ দুপুর
" শুক্রবার অন্যান্য দিন থেকে অনেক মর্যাদাশীল এবং মাহাত্ম্যময় একটি দিন। রাসূল সাঃ-এর কাছে এ দিনটির অনেক মর্যাদা ছিল। তিনি এই দিনটিকে সাপ্তাহিক ছুটি হিসেবে নয়, বরং সম্মিলিত ইবাদতের দিন হিসেবে পালন করতেন। এমনকি খোলাফায়ে রাশেদিনের সময়েও শুক্রবার ছিল সম্মিলিত ইবাদতের দিবস। আবু হুরায়রা রাঃ বর্ণিত রাসূল সাঃ বলেন, ‘মুসলিম উম্মাহ হিসেবে আমাদের দুনিয়ায় আগমন পরবর্তী যুগের লোক হিসেবে আর কেয়ামতের দিন আমরা হব অগ্রগামী। তবে এটা মনে রেখো, ইহুদি ও নাসারাদের কিতাব দেয়া হয়েছে আমাদের আগে। আর আমাদের কিতাব (কুরআন) দেয়া হয়েছে তাদের পরে। আল্লাহতায়ালা সম্মিলিতভাবে ইবাদতের জন্য একটি দিন নির্ধারণ করে দিয়েছেন, আর তা হলো শুক্রবার। কিন্তু বিভিন্ন সম্প্রদায় এর মধ্যে মতভেদ করলে আল্লাহ আমাদের শুক্রবার দিবসের প্রতি হেদায়েত করলেন। অর্থাৎ যেহেতু আমরা শুক্রবার পালন করি তাই আমরা অগ্রগামী আর অন্য জাতি এ ব্যাপারে আমাদের পশ্চাৎগামী। ইহুদিরা শনিবার আর খ্রিষ্টানরা পরদিন (রোববার) উপাসনার দিন পালন করে’ (বোখারি ও মুসলিম) "।
সাপ্তাহিক ছুটির দিন পরিবর্তনের বিষয়টি এখন দেশব্যাপী বিভিন্ন মহলে ব্যাপকভাবে আলোচিত হচ্ছে। ব্যবসায়ী-শিল্পপতিদের একটি বৃহৎ অংশ শুক্র ও শনিবারের পরিবর্তে সরকারি ছুটি রোববার করার পক্ষে। অপর দিকে দেশের ব্যাপক জনগোষ্ঠী ও ধর্মীয় মতাবলম্বী নেতৃবৃন্দ সরকারি ছুটি শুক্রবার রাখার দাবি করে আসছেন শুরু থেকেই। এ নিয়ে একধরনের দ্বিধাবিভক্তি পুরো জাতির মধ্যে।
ইসলামি সম্মেলন সংস্থার (ওআইসি) সভায় সর্বসম্মতিক্রমে সাপ্তাহিক ছুটি শুক্রবার করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল। ওআইসি’র ফোরামের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ইসলামি দেশগুলো রেড ক্রসের পরিবর্তে রেড ক্রিসেন্ট করা হয়েছে। সৌদি আরব, মিসর, ইরাক, ইরান, কুয়েত, আরব আমিরাত, কাতারসহ ওআইসি’র ৫০টির বেশি সদস্য দেশ এখনো শুক্রবার ছুটি ভোগ করে আসছে। আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ মালদ্বীপও এ রীতি অনুসরণ করছে। শুধু মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও পাকিস্তান এ ক’টি দেশে শুক্রবারের পরিবর্তে অন্য দিন ছুটি পালন করছে।
আশির দশকের মাঝামাঝি সময়ে ইসলামি সম্মেলন সংস্থার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী রোববারের পরিবর্তে সরকারি ছুটি শুক্রবার করার সময় দেশে কোনো বিতর্ক সৃষ্টি হয়নি। অথচ সাম্প্রতিক দিনগুলোতে সরকারি ছুটির দিন পরিবর্তন করে আশির দশকের অবস্থায় ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্তে জনগণের মাঝে ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। ৯০ শতাংশ মুসলমানের দেশে এমন সিদ্ধান্ত জনরোষের সৃষ্টি হতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা ধারণা করছেন। সাপ্তাহিক ছুটি দুই দিনের পরিবর্তে এক দিন করা বাংলাদেশের জন্য বাস্তবসম্মত। কিন্তু শুক্রবারের পরিবর্তে রোববার ছুটির দাবির কোনো যুক্তিসম্মত ভিত্তি নেই। কারণ পশ্চিমাদের সাথে তাল মিলিয়ে যারা রোববার ছুটি দাবি করছেন তাদের কাছে শুক্রবারের ভালো বা মন্দ বিষয়ে তেমন কোনো সমীক্ষা নেই। তা ছাড়া শুক্রবার ছুটির কারণে আমদানি-রফতানির কোনো ক্ষতি হয়েছে এমন দৃষ্টান্তও তাদের কাছে নেই। দ্বিতীয় হলো, বিশ্বের যেসব দেশে রোববার ও শনিবারকে ছুটির দিন হিসেবে বেছে নিয়েছে তার ভিত্তি যদি ধর্মীয় বা সাংস্কৃতিক হয়, তাহলে একই কারণে বাংলাদেশের মতো বিশ্বের তৃতীয় বৃহৎ মুসলিম দেশের সাপ্তাহিক ছুটি শুক্রবার হলে সমস্যা কোথায়? উপরন্তু যুক্তিসম্মত। তা ছাড়া মধ্যপ্রাচ্যের অধিকাংশ মুসলিম দেশের সাপ্তাহিক ছুটি শুক্রবার থাকায় তাদের ব্যবসায়-বাণিজ্যে যদি অসুবিধা না হয়, তাহলে আমাদের অসুবিধার কথা কী করে যুক্তিগ্রাহ্য হয়।
দুই যুগ ধরে এ দেশের মানুষ সাপ্তাহিক ছুটি শুক্রবার ভোগ করে আসছেন। তাতে ব্যবসায়-বাণিজ্যের এমন কোনো ক্ষতি হয়নি যা দেশের অর্থনৈতিক দিককে ভরাডুবি করেছে। আবার যে সময় রোববার সাপ্তাহিক ছুটি ছিল তখন ব্যবসায়-বাণিজ্যের উল্লেখযোগ্য কোনো লাভও হয়নি। তা ছাড়া বাংলাদেশ বিগত বছরগুলোতে দুর্নীতিতে পাঁচবার চ্যাম্পিয়ন হওয়ার কারণ ব্যবসা-বাণিজ্যে ব্যাপক দুর্নীতি। শুক্রবারের ছুটির কারণে নয়। সুতরাং এমন খোঁড়া যুক্তি দেখিয়ে সাপ্তাহিক ছুটি রোববার করার পেছনে কোনো যুক্তি নেই। আমাদের দেশের অর্থনৈতিক বা ব্যবসায়-বাণিজ্যের এমন নাজেহাল বা খারাপ অবস্থার জন্য শুক্রবারের ছুটি দায়ী নয়। বরং দেশের অভ্যন্তরীণ নানা সমস্যা আমাদের অর্থনৈতিক উন্নয়নে পেছনে ফেলে রেখেছে। যদি দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা হয়, সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা হয়, সব দিকের দুর্নীতি বন্ধ করা হয়, সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজির অবসান ঘটানো হয় তবেই দেশের শিল্পের বিকাশ এবং ব্যবসায়-বাণিজ্যের উন্নতি স্বাভাবিকভাবেই ঘটবে। অর্থনৈতিক দুরবস্থার অবসান হবে।
সুশীলসমাজের কেউ কেউ সূরা জুমার ১০ নম্বর আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেছেন, নামাজের পরই জীবিকা অন্বেষণে বেরিয়ে যেতে হবে। শুক্রবার ছুটি থাকলে এই রুজি অন্বেষণে বাধা হচ্ছে। এ কারণে কুরআনের স্পিরিট রক্ষা হচ্ছে না বলেও তারা মন্তব্য করেছেন। তাদের এই মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে প্রথমত বলতে হচ্ছে, যাদের কাছে নামাজ পড়া-না পড়া সমান এবং ব্যবসায়-বাণিজ্য ও ক্রয়-বিক্রয়ের ক্ষেত্রে হারাম-হালাল বাছাইয়ের কোনো পার্থক্য নেই, তাদের পক্ষে এমন যৌক্তিকতার কোনো মূল্য আছে বলে মনে হয় না। দ্বিতীয়ত, বলতে হচ্ছে কুরআনুল হাকিমে এ আয়াতটি অবতীর্ণ হওয়ার কারণ হচ্ছে মানুষকে নামাজের প্রতি উৎসাহী করা। যাতে করে তারা ক্রয়-বিক্রয় ক্ষেত্রে আল্লাহতায়ালাকে স্মরণ করে এবং সময়মতো নামাজের জন্য মসজিদে গমন করে।
বিষয়: বিবিধ
১৩৩৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন