মতিঝিলের গণহত্যা নিয়ে লুকোচুরি কেন : সত্য জানাতে হবে জাতিকে ?

লিখেছেন লিখেছেন আইল্যান্ড স্কাই ১১ মে, ২০১৩, ০১:০৮:৩১ রাত



৫ মে মধ্যরাত থেকে রাজধানীর মতিঝিলে হেফাজতে ইসলামের কর্মীদের ওপর চালানো গণহত্যার অভিযান এবং সে অভিযানে হতাহতদের প্রকৃত সংখ্যা নিয়ে সরকার মিথ্যাচার করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। হেফাজতের পক্ষ থেকে তো বটেই, প্রধান বিরোধী দল বিএনপির পক্ষ থেকেও বলা হয়েছে, রাতের অন্ধকারে চালানো ওই অভিযানে হাজারের অংকে হেফাজত কর্মী নিহত হয়েছেন। প্রত্যক্ষদর্শীদের উদ্ধৃত করে বিশেষ করে ফেসবুক ও অনলাইন পত্রিকাসহ বিদেশি গণমাধ্যমে প্রকাশিত বিভিন্ন খবরে রীতিমতো ভীতিকর কিছু সংখ্যার উল্লেখ করা হয়েছে। কোনো কোনো খবর অনুযায়ী এই সংখ্যা এমনকি তিন হাজারেরও বেশি। এসব খবরের সঙ্গে অনেক লাশের ছবিও দেখা গেছে। অভিযোগ উঠেছে লাশ গুম করে ফেলারও। লাশগুলো ঠিক কোন সংস্থার ট্রাকে তুলে মতিঝিল থেকে পাচার করা হয়েছে সে বিষয়েও শোনা গেছে নানান কথা। বলা হচ্ছে, এ ধরনের কিছু দৃশ্য ধারণ ও সম্প্রচার করার কারণেই সরকার হঠাত্ করে দিগন্ত ও ইসলামিক টিভি নিষিদ্ধ করেছে। অন্যদিকে সরকারের পক্ষ থেকে যথারীতি প্রতিটি অভিযোগই অস্বীকার করা হয়েছে। কিন্তু লক্ষণীয় বিষয় হলো, সরকার এত বড় একটি অভিযান এবং হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারেও এ পর্যন্ত কোনো প্রেসনোট বা তথ্য বিবরণী প্রকাশ করেনি। কয়েকজন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীসহ ক্ষমতাসীনরা বরং যার যার মতো করে বক্তব্য রেখে চলেছেন। তারা বিরোধী দলের অভিযোগও খণ্ডন করছেন।

এদিকে সরকারের পক্ষে প্রথমে দৃশ্যপটে এসেছেন ডিএমপি তথা ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার। ৮ এপ্রিল এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এমনভাবেই ‘জেরো ক্যাজুয়াল্টির’ দাবি করেছেন যা শুনে মনে হয়েছে যেন মধ্যরাতের ওই অভিযানে কোনো মানুষেরই মৃত্যু হয়নি! অভিযানে তারা নাকি এমন সব অস্ত্র ও বিস্ফোরকই ব্যবহার করেছিলেন যেগুলো প্রাণঘাতী নয়! খুবই তাত্পর্যপূর্ণ তথ্য হলো, ডিএমপি কমিশনার নিজেই কিন্তু নিজের দাবিকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন। কারণ, একই সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ তথ্যও জানিয়েছেন, একটি ট্রাকের ওপর বানানো হেফাজতে ইসলামের মঞ্চে তারা সাদা কাপড়ে ও পলিথিনে মোড়ানো চারটি লাশ পেয়েছিলেন। অন্য একটি স্থানে পেয়েছিলেন আরও তিনটি লাশ। প্রশ্ন উঠেছে, ‘জেরো ক্যাজুয়াল্টির’ দাবি সত্য হলে এই সাতটি লাশই বা এলো কোত্থেকে? হেফাজতিরা নিজেরা নিশ্চয়ই নিজেদের হত্যা করেননি! সংশয়ের অন্য কিছু বিশেষ কারণও রয়েছে। যেমন সবই মিডিয়ার সামনে করার দাবি জানানো হলেও বাস্তবে কোনো টিভি বা গণমাধ্যমের রিপোর্টারকেই স্বাধীনভাবে কাজ করতে দেয়া হয়নি। তারা যেতে পেরেছেন শুধু সেদিকগুলোতেই, যেখানে তাদের যেতে দেয়া হয়েছিল। অর্থাত্ তারা ‘এমবেডেড’ রিপোর্টারের ভূমিকা পালন করতে বাধ্য হয়েছিলেন। কর্তাব্যক্তিদের এই ইচ্ছার বাইরে গিয়েছিল বলেই দিগন্ত ও ইসলামিক টিভির বিরুদ্ধে সে রাতেই ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

সব মিলিয়েই বলা যায়, ডিএমপি কমিশনার সত্য এড়িয়ে গেছেন। তাছাড়া ভোর রাতেই কেন সব গণমাধ্যমের রিপোর্টার ও ক্যামেরা পার্সনদের মতিঝিল ছেড়ে যেতে বাধ্য করা হয়েছিল সে প্রশ্নেরও কোনো জবাব মেলেনি। বলা হচ্ছে, লাশ গুম করার পাশাপাশি মতিঝিলের রাস্তা থেকে রক্তের চিহ্ন ধুয়ে-মুছে ফেলার কোনো প্রমাণ যাতে না থাকে সে জন্যই কাউকে সেখানে থাকতে দেয়া হয়নি। উল্লেখ্য, ডিএমপি কমশিনারকে দিয়ে শুধু নয়, বিজিবি মহাপরিচালককে দিয়েও সরকার বক্তব্য প্রচার করিয়েছে। তিনি বলেছেন, মতিঝিল থেকে গুম করে আনা কোনো লাশ নাকি পিলখানায় নেয়া হয়নি! অমন অভিযোগ ঠিক কারা করেছিল এবং বিজিবি মহাপরিচালককেই বা কেন আগ বাড়িয়ে কৈফিয়ত দিতে হয়েছে সে প্রশ্নের জবাব নিয়েও রাজনৈতিক অঙ্গনে জোর আলোচনা চলছে। সন্দেহ-সংশয় বাড়ছে জনমনে।

বলার অপেক্ষা রাখে না, সরকার যদি মধ্যরাতের যৌথ অভিযানের পর প্রথম সুযোগেই প্রেসনোটের মাধ্যমে সবিস্তারে সবকিছু জানিয়ে দিত, তাহলে সন্দেহ-সংশয় যেমন বাড়ত না তেমনি হেফাজতে ইসলামের পাশাপাশি বিএনপি বা অন্য কোনো দল ও মহলের পক্ষেও কোনো অভিযোগ উত্থাপন করা সম্ভব হতো না। অনলাইন পত্রিকাসহ বিদেশি গণমাধমেও হাজার হাজার মানুষের মৃত্যু এবং গণহত্যা চালানোর খবর প্রকাশিত হতো না। কিন্তু সরকার সেটা করেনি বলেই কথা না উঠে পারেনি। আমরা মনে করি, সরকারের জন্য এখনও সময় রয়েছে। সরকারের উচিত বিস্তারিত উল্লেখসহ জরুরি ভিত্তিতে প্রেসনোট জারি করা। সরকারকে একই সঙ্গে বিশ্বাসযোগ্য ও নিরপেক্ষ তদন্তেরও আয়োজন করতে হবে। আমরা তো মনে করি, সত্যি গণহত্যা না চালিয়ে থাকলে সরকারের দিক থেকে আপত্তির কিংবা মিথ্যাচার ও লুকোচুরি করার কোনো কারণই থাকতে পারে না। বলা বাহুল্য, উল্টো ব্যাপারই বরং জনমনে সন্দেহ-সংশয় বাড়িয়ে তুলবে, যার পরিণতি এক সময় ক্ষমতাসীনদের জন্য বিষময় হয়ে উঠতে পারে।

বিষয়: বিবিধ

১৩৮৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File