আলেম হত্যা কার নির্দেশে
লিখেছেন লিখেছেন আইল্যান্ড স্কাই ০৯ মে, ২০১৩, ০২:৩৫:০৭ রাত
গত ৫ ও ৬ এপ্রিল মতিঝিলের শাপলা চত্বরে আলেম হত্যাযজ্ঞ কার নির্দেশে হয়েছে? এ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে বিভিন্ন মহলে। এ হত্যার জন্য কেউ কেউ পুলিশের আইজি হাসান মাহমুদ খন্দকার ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীরকে দায়ী করেছেন। তবে বেশিরভাগের অভিমত হলো, সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ ছাড়া এতো স্পর্শকাতর সিদ্ধান্ত গ্রহণ অর্থাত্ ইতিহাসের এমন ভয়ানক গণহত্যা সংঘটিত করা সম্ভব নয়। এরই মধ্যে এ হত্যাযজ্ঞের কারণ ও নির্দেশদাতাদের খুঁজতে শুরু করেছে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা ও সংগঠন। হয়তো একদিন বের হয়ে আসবে আসল রহস্য। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি মতিঝিল অপারেশনের নিরপেক্ষ তদন্ত চেয়েছে। তদন্ত চেয়েছে এশিয়ান হিউম্যান রাইটস কমিশন। প্রধান বিরোধীদল বিএনপি এ হত্যাযজ্ঞের আন্তর্জাতিক তদন্ত দাবি করেছে। বিএনপি স্পষ্ট করে বলেছে, তাদের দল ক্ষমতায় এলে এসব আলেম-ওলামা হত্যার বিচার করা হবেই।
দু’দিন পার হয়ে গেলেও মতিঝিলে আলেম হত্যার নৃশংসতা ভুলতে পারছেন না দেশের মানুষ। মাদরাসা পড়ুয়া ছাত্র ও আলেমদের ঘরে ঘরে কান্নার রোল পড়েছে। নিহতের জন্য ঘরে ঘরে দোয়া হচ্ছে। সন্তানহারা মায়ের আহাজারিতে ভারি হয়ে উঠেছে বাতাস। মাদরাসায় পড়ুয়া অতি দরিদ্র লাখ লাখ ছাত্রের পরিবারে দেখা দিয়েছে চরম উদ্বেগ-উত্কণ্ঠা। তাদের মা-বাবা ও আত্মীয়-স্বজনরা দুশ্চিন্তায় ঠিকমতো ঘুমাতে পারছেন না।
৬ মে মধ্যরাতে ঢাকার মতিঝিলে যে ন্যক্কারজনক হত্যাযজ্ঞ সংঘটিত হয়েছে তা দেশের মানুষকে বেদনায় কাতর করেছে। কেন আলেমদের এভাবে হত্যা করা হলো? এর কোনো জবাব খুঁজে পাচ্ছেন না তারা।
মহানবীর (সা.) ইজ্জত ও ইসলামের মর্যাদা রক্ষায় ১৩ দফা বাস্তবায়নের দাবি নিয়ে ৫ মে সারাদেশ থেকে কয়েক লাখ আলেম এসে জড়ো হয়েছিলেন মতিঝিলের শাপলা চত্বরে। তাদের প্রায় সবার সঙ্গে ছিল জায়নামাজ, তসবিহ আর পানির বোতল।
দুপুরে শাপলা চত্বরমুখী লাখো আলেমের স্রোত সহ্য করতে পারেনি সরকার। জিকির করতে করতে একদল আলেম যখন বিবি অ্যাভিনিউর পাশ দিয়ে আসছিলেন, আকস্মিকভাবে হায়েনার মতো তাদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে সরকারি দল আওয়ামী লীগের ক্যাডাররা। পিটিয়ে হত্যা করা হয় এক আলেমকে। আহত হন আরও অনেকে। রক্তাক্ত এসব আলেমের কেউ কেউ সমাবেশস্থলে আসার পর উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এরপরও আলেমরা সর্বোচ্চ ধৈর্য ধারণ করেন। এরই মধ্যে শুরু হয়ে যায় বিভিন্ন স্থানে আলেমদের মিছিলে হামলা। শত বাধা পেরিয়ে লাখ লাখ আলেম সমবেত হন মতিঝিলে। আলেমদের এ স্রোত মতিঝিল শাপলা চত্বর ছাপিয়ে দৈনিক বাংলা মোড়, বায়তুল মোকাররম হয়ে পল্টন পর্যন্ত কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। তখনও আলেমদের মিছিল আসছিল। এরই মধ্যে শুরু হয় পুলিশের অ্যাকশন। পাল্টা প্রতিরোধ গড়ে তোলেন নিরস্ত্র আলেমরা। পুলিশের গুলিতে বেশ ক’জন আলেম নিহত হন। বিনা উসকানিতে পুলিশ ও সরকারি দলের ক্যাডার কর্তৃক নিরীহ আলেমদের হত্যার ঘটনায় সমাবেশস্থলে যখন উত্তেজনা দেখা দেয় ঠিক তখনই (বিকালে) আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক স্থানীয় সরকারমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফ এক সংবাদ সম্মেলনে সব সন্ত্রাসী তত্পরতার জন্য হেফাজতে ইসলামকে দায়ী করেন। তিনি তাদের ‘রাজাকার-আলবদরের নতুন প্রজন্ম’ বলে উল্লেখ করে সন্ধ্যার মধ্যে সমাবেশ শেষ করে ঢাকা ছাড়ার নির্দেশ দেন। অন্যথায় হেফাজতে ইসলামকে গর্তে ঢুকিয়ে দেয়ার হুমকি দেন তিনি। সৈয়দ আশরাফ বলেন, হেফাজতকে দমন করতে আওয়ামী লীগই যথেষ্ট। তাদেরকে ঘর থেকেও বের হতে দেয়া হবে না বলেও হুংকার দেন সরকারের দায়িত্বশীল এ মন্ত্রী ।
এ ধরনের হুমকিতে আরও বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন ইসলামের খাদেম ওলামা-মাশায়েখরা। তারা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত ঘরে না ফেরার ঘোষণা দেন।
রাতে সমাবেশস্থলে চলছিল জিকির ও নফল নামাজ আদায়। রাত আড়াইটার দিকে কেউ কেউ জিকির করছিলেন, অনেকে ক্লান্ত হয়ে রাস্তায় ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। এরই মধ্যে হঠাত্ করে ‘ঘুমন্ত ও জিকিররত’ আলেমদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে র্যাব, পুলিশ, বিজেপি ও সরকারি দলের সশস্ত্র ক্যাডাররা।
সরকারের সর্বোচ্চ মহলের নির্দেশ পাওয়ার পর ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার শেখ মারুফ হাসান রাত ২টা ১০ মিনিটে মাইকে ঘোষণা দেন, আমরা এখনই অভিযান শুরু করছি। কোনো সাধারণ মানুষ এখানে থাকলে সরে যান। ডিএমপির আইন অনুযায়ী শাপলা চত্বরের আশপাশে যারা বসে আছেন, তারা অবৈধভাবে অবস্থান করছেন। আমরা কোনো গুলি করব না, শুধু শাপলা চত্বর খালি করতে এবং অবৈধ অবস্থানকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে যা যা করা দরকার, তা-ই করা হবে। এই ঘোষণার কিছুক্ষণ পরই অভিযান শুরু করে পুলিশ, র্যাব ও বিজিবির যৌথবাহিনী। সঙ্গে সরকারি দলের ক্যাডাররা যোগ দেয় বলে অভিযোগ রয়েছে।
গুলি, টিয়ার শেল ও সাউন্ড গ্রেনেডের আওয়াজে প্রকম্পিত হয়ে ওঠে মতিঝিল ও এর আশপাশ এলাকা। গুলি আসতে থাকে চার দিক থেকে। এপিসি নিয়ে যুদ্ধসাজে সজ্জিত যৌথবাহিনী বেপরোয়া গুলি চালিয়ে হত্যা করে অজানা সংখ্যক আলেমকে। বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন, হেফাজতে ইসলাম ও বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট দাবি করেছে শাপলা চত্বর গণহত্যায় প্রায় ৩ হাজার আলেমকে হত্যা করা হয়েছে। তবে সরকারের তরফ থেকে ডিএমপি কমিশনার বেনজীর আহমেদ ৮ জনের লাশ উদ্ধারের কথা স্বীকার করেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের কালো রাতে ঘুমন্ত মানুষের ওপর যে পৈশাচিক গণহত্যা চালানো হয়েছিল ৫ মে কালো রাতে তার চেয়েও নৃশংস গণহত্যা সংঘটিত হয়। এ বর্বরতা ঔপনিবেশিক ভারতের কুখ্যাত ‘জালিয়ানওয়ালাবাগের’ হত্যাকাণ্ডকেও হার মানিয়েছে। মানবতার ইতিহাসে ক্ষমাহীন এ জঘন্য হত্যাযজ্ঞ কলঙ্কের এক নতুন অধ্যায় হয়ে থাকবে।
জঘন্যতম এ হত্যাযজ্ঞের প্রতিবাদ জানিয়ে আসছে বিভিন্ন সংগঠন। প্রধান বিরোধী দল বিএনপি এক বিবৃতিতে দাবি করেছে, হত্যাযজ্ঞটি সম্পূর্ণভাবে ঠাণ্ডা মাথায় সুপরিকল্পিতভাবে ঘটানো হয়েছে। আওয়ামী সশস্ত্র ক্যাডারদের আগে থেকে মোতায়েন করা, তাদের পরিকল্পিত তাণ্ডব, হেফাজতের ওপর এর দোষ চাপানো, বিদ্যুত্ সরবরাহ বন্ধ করা, অভিযানের আগে ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার সাংবাদিকদের ঘটনাস্থল থেকে বিতাড়িত করা থেকে তা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
মধ্যরাতের এই নিষ্ঠুর হত্যাকাণ্ডে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে আধা-সামরিক বাহিনীকে রণসজ্জায় সজ্জিত করে অভিযানে নামানো হয়। আর্মড পারসোনেল ক্যারিয়ারসহ (এপিসি) যুদ্ধক্ষেত্রে ব্যবহৃত ভয়ঙ্কর সব মারণাস্ত্র ও সাজ-সরঞ্জাম নিরস্ত্র জনগণের সমাবেশ ভাঙতে ব্যবহার করা হয়। অথচ দেশবাসী জানেন, বিডিআর বিদ্রোহের সময় পিলখানায় আটক সেনা কর্মকর্তা ও তাদের পরিবারের সদস্যদের রক্ষার জন্য শতমুখী করুণ ফরিয়াদ সত্ত্বেও এই সরকার এ ধরনের কোনো অভিযান পরিচালনার অনুমতি দেয়নি।
গভীর উদ্বেগ জানিয়ে বিএনপির বলেছে, ‘এ হেফাজত কর্মীদের বেশিরভাগই গ্রামের দরিদ্র পরিবার থেকে আসা মাদরাসা ছাত্র, যাদের একটি বিরাট অংশ এতিম। কিশোর ও বৃদ্ধরাও ছিলেন তাদের মধ্যে। সারাদিনের পথশ্রমে ক্লান্ত-শ্রান্ত এসব মানুষ ছিলেন ক্ষুধার্ত ও তৃষ্ণার্ত। দেশনেত্রী খালেদা জিয়া নগরীর এই মেহমান ও মুসাফিরদের খাদ্য ও পানীয় সরবরাহের জন্য ঢাকাবাসী ও দলীয় নেতাকর্মীদের আহ্বান জানালেও সরকারি দলের সন্ত্রাসী ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বেষ্টনীর মধ্যে তা সরবরাহ করতে তারা ব্যর্থ হন।’
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘পৈশাচিক ঘটনা সম্পর্কে সরকারের তরফ থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো বিবরণ বা প্রেসনোট দেয়া হয়নি। হতাহতের কোনো সঠিক পরিসংখ্যানও দেশবাসীকে জানানো হয়নি। বিদেশি গণমাধ্যমসহ বিভিন্ন সূত্রে আড়াই থেকে ৩ হাজার লোককে হত্যা এবং ১০ হাজারেরও বেশি মানুষ আহত হওয়ার কথা জানা যাচ্ছে। বিভিন্ন আলোকচিত্র ও ভিডিও ফুটেজে অভিযানে বেপরোয়া গুলিবর্ষণ, অসংখ্য লাশের ছড়াছড়ি, মৃতদেহের ওপর দিয়ে ভারি যানবাহন চালিয়ে দেয়া এবং ট্রাকভর্তি লাশ সরিয়ে নেয়ার নৃশংস দৃশ্য দেখে দেশবাসীর সঙ্গে আমরাও শিউরে উঠেছি।
হেফাজতে ইসলামের নেতারা গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেছেন এদেশের আলেম সমাজ ইতিহাসের এক নিষ্ঠুরতম নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার। এমন নিষ্ঠুরতম পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড বাংলাদেশে এর আগে আর ঘটেছে বলে আমাদের জানা নেই। এদেশের নিরীহ আলেম ও ধর্মপ্রাণ মানুষের রক্তের দাগ এখনও রাজপথে লেগে আছে, লাশ পড়ে আছে হাসপাতালে মর্গে, অজানা স্থানে। মহান আল্লাহ ও তার রাসুলের ভালোবাসার টানে ঘর থেকে বের হওয়া হাজার হাজার নিরীহ ধর্মপ্রাণ মানুষ এখনও ঘরে ফেরেনি। তারা কোথায়, কী অবস্থায় আছেন, জীবিত আছেন কী না আমরা কিছুই জানতে পারছি না। এক চরম বিভীষিকাময় পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে দেশ অতিক্রম করছে। তারা দাবি করেন, রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বর এলাকায় ৫ মে রাতে ঘুমন্ত, জিকিররত নিরীহ, নিরস্ত্র লাখ লাখ ধর্মপ্রাণ আলেম-ওলামার ওপর সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম দেশের মুসলমান নামধারী সরকার রাতের আঁধারে পুলিশ, র্যাব, বিজিবি ও দলীয় সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে নৃশংস, নির্মম, বর্বর অমানবিক হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে। সেখানে কত লোক শহীদ হয়েছেন, সেই পরিসংখ্যান যাতে না পাওয়া যায়, সেজন্য সঙ্গে সঙ্গেই লাশ গুম করা হয়েছে। ট্রাকভর্তি করে লাশ নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এই লাশের সংখ্যা আড়াই হাজার থেকে ৩ হাজার পর্যন্ত হতে পারে। সেখান থেকে আলামত দ্রুত সরিয়ে নেয়া হয়েছে। হাজার হাজার মানুষকে আহত করা হয়েছে। আলেমদের বেইজ্জতি করে ঢাকা থেকে বের হতে বাধ্য করা হয়েছে। আমাদের রাজধানীতে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ দেয়া হয়নি। হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব আল্লামা বাবুনগরীকে গ্রেফতার করে নির্যাতন করা হচ্ছে। অন্য শত শত আলেমকে গ্রেফতার করার জন্য মিথ্যা মামলা করা হচ্ছে।
মতিঝিলের শাপলা চত্বরে ৬ মে রাতে আসলে কত লোক নিহত হয়েছে এর সঠিক হিসাব এখনও মেলেনি। বিভিন্ন সামাজিক গণমাধ্যমের বরাত দিয়ে এশিয়ান হিউম্যান রাইটস কমিশন জানায়, নিহতের সংখ্যা ২,৫০০ এরও বেশি হতে পারে। হেফাজতে ইসলামের হিসাবে নিহতের সংখ্যা ৩০০০-এরও বেশি হবে। বিরোধী দল বিএনপিও বলছে, শাপলা চত্বরে আড়াই থেকে তিন হাজার লোককে হত্যা করেছে নিরাপত্তা বাহিনী।
মার্কিন টিভি স্টেশন সিএনএন বার্তা সংস্থা এপির বরাত দিয়ে জানায়, ৬ মে রাতের নিহতের প্রকৃত সংখ্যা হয়তো কখনোই জানা যাবে না। বামপন্থী রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও নিউ এজ সম্পাদক নুরুল কবির বাংলাভিশনের টকশোয় বলেছেন, সাংবাদিকদের কাছে তিনি শুনেছেন, শত শত লোককে হত্যা করা হয়েছে। তবে তার ব্যক্তিগত ধারণা, অন্তত শতাধিক লোককে হত্যা করা হয়েছে।
মানবাধিকার কর্মীদের ধারণা, নিহতের সংখ্যা এত বেশি যে সরকার কোনো দিনই তা প্রকাশ হওয়ার সুযোগ দেবে না। বিবিসি বলেছে, পুরো মতিঝিল এলাকার পরিবেশটা একটা যুদ্ধবিধ্বস্ত এলাকার মতোই লাগছিল। একজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, শাপলা চত্বরে তিনি ১৫টি লাশ পড়ে থাকতে দেখেছেন। তিনি নিজে গুণে দেখেছেন।
মতিঝিলের শাপলা চত্বরে ৬ মে মধ্যরাতে শত শত নিরস্ত্র হেফাজতে ইসলামের কর্মীকে নির্বিচারে হত্যা করা হয়েছে জানিয়ে দেশের শীর্ষস্থানীয় মানবাধিকার সংগঠন অধিকার বলেছে, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের কালোরাতের পর গত ৪২ বছরে ঢাকায় এমন হত্যাকাণ্ডের ঘটনা আর ঘটেনি।
অধিকারের এক বিবৃতিতে বলা হয় গুলি, রাবারে ঢাকা স্টিলের বুলেট, টিয়ারগ্যাস ও সাউন্ড গ্রেনেডের হামলা চালিয়ে নির্বিচারে নিরস্ত্র হেফাজত কর্মী ও নেতাদের হত্যা করা হয়েছে। এ সময় তাদের অনেকেই দিনব্যাপী কর্মসূচির শেষে ঘুমাচ্ছিলেন। হামলায় পুলিশ, র্যাব ও বিজিবির ১০ হাজার সদস্যের পাশাপাশি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ক্যাডাররাও অংশ নেয়। হামলার আগেই মিডিয়াকর্মীদের সরিয়ে নেয়া হয়। এরপর পরিপূর্ণ অন্ধকারের মধ্যে নিরস্ত্র জনতার ওপর হামলা চালানো হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, এটা অবধারিত যে অভিযানের বর্বরতা এবং হতাহতের সংখ্যা লুকানোর জন্যই এ কাজ করা হয়েছে। জানা গেছে শত শত লোককে হত্যা করা হয়েছে। হেফাজত দাবি করেছে ২ হাজারেরও বেশি লোককে হত্যা করা হয়েছে। অধিকার নিহতের প্রকৃত সংখ্যা জানার চেষ্টা করছে। তবে এ মুহূর্তে বস্তুনিষ্ঠ প্রমাণাদি পাওয়া খুবই কঠিন।
ঢাকা মেডিকেলে চিকিত্সাধীন একজন আহত ব্যক্তি রহমাতুল্লাহ অধিকারকে জানিয়েছেন, হামলার পর তিনি রাস্তায় অনেক লাশ পড়ে থাকতে দেখেছেন।
অভিযোগ পাওয়া গেছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ট্রাক ও কভার্ড ভ্যানে করে লাশ সরিয়ে নিয়েছে।
বাংলাদেশের চলমান সহিংসতা, বিশেষ করে গত রোব ও সোমবার ব্যাপক হতাহতের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ ও শোক জানিয়ে অবিলম্বে রাজনৈতিক ও ধর্মীয় নেতাদের সংলাপে বসার আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন। উদ্বেগ জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের ৯ রাষ্ট্রদূত। এ ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত চেয়েছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি।
রোববার রাতে শাপলা চত্বরে হেফাজতের নেতাকর্মীদের ওপর ফ্যাসিবাদী সরকারের যৌথ বাহিনীর অভিযানে অসংখ্য লোকের নিহতের ঘটনাকে ‘গণহত্যা’ বলে অভিহিত করেছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা এশিয়ান হিউম্যান রাইটস কমিশন (এএইচআরসি)। ‘বাংলাদেশ : বিক্ষোভকারীদের ওপর গণহত্যা’ শীর্ষক এক বিবৃতিতে সংস্থাটি বলেছে, বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য ‘সংবাদ সূত্রগুলো’ (গণমাধ্যম) নিহতের সংখ্যা নিয়ে নীরব থাকলেও ইন্টারনেটে বিভিন্ন সূত্র থেকে পাওয়া খবরে এ সংখ্যা ২৫০০ বা তার বেশি বলে উল্লেখ করা হয়েছে। অনেক ছবিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়েছে।
এএইচআরসি আহ্বান জানিয়ে বলেছে, বাংলাদেশে চলমান সহিংসতা এখনই বন্ধ করতে হবে।
বিষয়: বিবিধ
১১৫২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন