রাজনৈতিক প্রতিহিংসা নাকি নিয়তির পরিহাস ???
লিখেছেন লিখেছেন চন্দ্রোদয় ১৫ আগস্ট, ২০১৩, ০১:১১:১৩ রাত
বড়ই দুঃখের বিষয়--- পৃথিবীতে হাজার হাজার মিডিয়া থাকতে মিশরের সেনাবাহিনী কর্তৃক মুরসি সমর্থকদের উচ্ছেদ অভিযানের প্রকৃত খবর জানা যাচ্ছে না !! সরকার সমর্থক কিছু মিডিয়া ছাড়া অন্য কোন মিডিয়া নিউজ কাভার করতে দিচ্ছে না মিশর সেনাবাহিনী। এমনকি যেখানে আল-জাজিরা যেখানে সেনাবাহিনীর মৌন সমর্থক সেই আল-জাজিরার সাংবাদিককেও গ্রেফতার করা হয়েছে। ভেতরের যেটুকু সংবাদ পাওয়া যাচ্ছে তা মূলত ব্যক্তিগত উদ্যোগে এবং আল-আযহার বিশবিদ্যালয়ের কিছু ছাত্রের অনলাইন দেয়া আপডেট থেকে। যারা হত্যা করেছে তারাই যদি ৯৫ এর উপরে মারা যাওয়ার কথা সীকার করে তবে প্রকৃত সংখ্যা যে অর্ধসহস্রাধিকের নিচে নয় তা বলাই বাহুল্য ! বিবিসি, সিএনএন, স্কাই নিউজ যে খবর দিচ্ছে তা মূলত বাইরের অবস্থা ! আহতের সংখ্যাতো কয়েক হাজার । এমন কিছু মারাত্মক আহত আছে যাদের বেচেঁ থাকার চেয়ে মৃত্যুবরণ করাই বরং ভাল ছিল ! যদিও বাংলাদেশের অধিকাংশ মিডিয়া এ সামরিক অভিযানে যারপরনাই খুশি হবে!! আর রাতে টকশো পরিচালনার সময় সুর নেবে “মানবাধিকারের”। কারণ, আমি নিজে দেখিছি, শাপলা চত্ত্বরের অপারেশনের পরদিন সকালে রক্তের দাগ না শুকাতেই ইন্ডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের দুই সংবাদ উপস্থাপক শাপলা চত্ত্বরে সেই রাতের বিভিষিকাময় ও নারকীয় হত্যাকান্ডের খবর পড়ার সময় চাপা হাসি যেন উপচে পড়ছিলো। মানুষ মরার খবরও যে এতো আনন্দের সেদিন জীবনে প্রথম দেখলাম!! অপেক্ষা করলাম রাতে তাদের জনপ্রিয় টকশো “আজকের বাংলাদেশ”-এ কি বিষয়ে আলোচনা হয়। উল্লেখ্য, সেদিন আলোচনার বিষয় ছিল রাজনীতির বাইরের একটি প্রেক্ষাপট নিয়ে। দুজন আলোচককে নিয়ে জনপ্রিয় টকশো উপস্থাপক খালেদ মুহিউদ্দীন হাসতে হাসতে চেয়ার থেকে যেন পড়ে যাচ্ছিলেন। আমি তার সেই হাসির দৃশ্য আর কোনোদিন দেখিনি। পুরো দেশ যখন কান্নায় ভাসছে, তখন মৃত মানুষের প্রতি তার এই পরিহাস আমি কোনদিনই ভুলব না। এই দৃশ্যটি দেখে সেদিন বুকে প্রচন্ড ব্যথা অনুভব করেছিলাম। কোন দলের হয়ে নয়, মানুষ হিসেবে !! কিন্তু সবচেয়ে বেশি হতাশ লাগে যখন দেখি মিশরের টেলিভিশনগুলো বাংলাদেশের অধিকাংশ টেলিভিশনের মত সেক্যুলারদের পদলেহন করছে।
(প্রসংগত) আজ সকালে রাজধানীর যাত্রাবাড়িতে এক শিবির নেতাকে কাছ থেকে গুলি করে হত্যা করেছে যাত্রাবাড়ি থানার এস আই প্রদীপ কুমার দীপ (/অবনী)। অথচ নির্লজ্জের মত পুলিশ বলছে, গাড়ির সাথে ধাক্কা লেগে সে আহত হয় এবং পরে মারা যায় !!! ভিডিওটি ফেইসবুকে সবাই দেখেছে ।
(বন্ধুর সাথে একান্তে খলিলুর রহমান। আর কি হবে দেখ ? বন্ধু………)
শিবিরের মিছিলটি পুলিশকে আগে লক্ষ্য করেনি। হঠাত করেই পুলিশের সামনে এসে পড়ে মিছিলটি। সবাই ছোটাছুটি করে পালানোর মূহুর্তে মাত্র ২৫/৩০ হাত দূর থেকে এস আই তার হাতে থাকা রিভলবার দিয়ে (টার্গেট) গুলি ছোড়ে এবং গুলিটি মাথায় (মাঝ বরাবর) লাগার কারণে সাথে সাথেই রাস্তায় লুটিয়ে পড়ে খলিলুর রহমান নামের এক শিবির নেতা। ঘটনাটি ঘটে ৩০-৪০ সেকেন্ডের মধ্যে। রাস্তাটি গলির মত। মূলত, রিক্সা/ভেনগাড়ি চলাচল করে আর মাঝে মধ্যে সিএনজি। গুলিটি লাগার পর এক পুলিশ সদস্য এসে হায় হায় করে। সে তুলতে গেলে তাকে অন্য এক পুলিশ সদস্য তাকে বাধা দেয়। পরে একটি সিএনজি ডেকে তার প্রাণহীন দেহ পুলিশ এবং সিএনজি ড্রাইভারের সহায়তায় যখন সিএনজিতে তোলা হয়, তখনি সিএনজি ড্রাইভারকে তখন বলতে শোনা যায়, “স্যার, মনে হয় মইরা গেছে”। সত্যিই তখন সে আর জীবিত নেই। কারণ, বুলেটটি সরাসরি তার মস্তিস্কে ঢুকে গেছে। গুলি ছোড়া থেকে শুরু করে মৃত্যু পর্যন্ত পুরো ঘটনাটি ঘটতে সময় নিয়েছে সর্বোচ্চ ৩/৪ মিনিট। আর এই সময়ের মধ্যে কোনো গাড়িতো দুরের কথা একটি রিক্সাও তার লাশ অতিক্রম করেনি। অথচ কাপুরুষ পুলিশ মিথ্যার ফুলঝুরি ছোটাচ্ছে!!!
(গুলিটি সরাসরি মাথায় আঘাত করে তাঁর)
শুধুমাত্র ইটিভি ছাড়া অন্য টেলিভিশনে খবরটি এসেছে “পুলিশ ও পিকেটারদের (/হরতালকারীদের) সংঘর্ষে একজন নিহত”। কিছু কিছু টিভি খবরটি একটু ঘুরিয়ে প্রকাশ করেছে। সময় টিভি, চ্যানেল ২৪… তাদের স্ক্রলে লিখেছে “যাত্রাবাড়ির দনিয়ায় পুলিশের ধাওয়ায় এক শিবির কর্মী নিহত”। লক্ষ্য করুন “পুলিশের ধাওয়ায়” (???)। এখন প্রশ্ন হল, “পুলিশ ধাওয়া” দিলে মাথায় গুলি্বিদ্ধ হয় নাকি গাড়ির সাথে “ধাক্কা লাগলে” মাথায় গুলি লাগে ? কোনটি সত্য ? সত্য যাই হোক- যে চিহ্ন লাশ তার দেহে বহন করছে তাকে কি মুছে ফেলা যাবে ?
(গলায় রুপার চেইন এবং ডান হাতে সেই রিভলবারটি ধরে আছেন এস আই প্রদীপ কুমার দীপ)
ইটিভি সকালে ঘটনাস্থল থেকে তাদের লাইভ নিউজ কাভারে কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শীর সাক্ষাতকারে পুলিশের গুলি করার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। যদিও এখন ইটিভি-র স্ক্রলে লেখা “পুলিশের সাথে সংঘর্ষ চলাকালে”। আসল কথা হল “ওরা মানুষ নয়, শিবির”। এই তাদের অপরাধ !! আজ এই নিহতের নাম খলিলুর রহমান না হয়ে যদি বিশ্বজিৎ, সুভ্রত কুমার, অনিল কুমার সেন হতেন, তবে এতক্ষণে মিডিয়া কাভারেজ ইতিহাস রেকর্ড করতো, যেমনটা হয়েছিল বিশ্বজিৎ হত্যার বেলায়। কার আগে কে সুশীল হবে, রীতিমত প্রতীযোগিতা শুরু হয়ে যেত!! বিশ্বজিৎ একজন মানুষ আর খলিলুর রহমান একজন মানুষ। কিন্তু বিশ্বজিতের পঞ্চাশ ভাগের এক ভাগ সময়ও কি পাবে খলিলুর রহমান? আমার কথা বিশ্বজিৎ নিয়ে নয়, বিশ্বজিৎ এখানে উপলক্ষ মাত্র। প্রশ্ন হল সাম্প্রদায়িকতার বিষ সমাজে ছড়াচ্ছেন কারা ?!!
এই মুহুর্তে আমার মনে পড়ছে কিছু কুলাঙ্গার, খুনি পুলিশ অফিসারকে। অনিচ্ছা সত্তেও আজ বলতে বাধ্য হচ্ছি, এরা অধিকাংশই হিন্দু (যাদের নাম মনে পড়ছে)। নিঃসন্দেহে মুসলমানও আছে অনেকেই, এডিসি হারুন কিংবা মেহেদী হাসান প্রমুখ। আজকে খলিলুর রহমানের হত্যাকারী অবনী, বিপ্লব কুমার, প্রদীপ কুমার (যে চট্টগ্রামে শিবির কর্মীদের গ্রেফতারের পর প্রকাশ্যে (মিডিয়ার সামনে) হাটুতে, পায়ে- পিস্তল ঠেকিয়ে সিঙ্গেল শর্ট নিয়ে গুলি করেছিল)। ধরা যায়, ৯৫% হিন্দুই আওয়ামী লীগকেই সমর্থন করে। কিন্তু এই অফিসারেরা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের হওয়া সত্তেও কেনো এতোটা বেপরোয়া তা বোধগম্য নয়। এই সরকারই কি শেষ সরকার ? আমার হিন্দু বন্ধুরা (যারা আমাকে চিনেন বা আমার হিন্দু বন্ধু) জানেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে কতটা অসাম্প্রদায়িক মনোভাবের। সংখ্যালঘুরা আমাদের কাছে (মুসলমানদের) আমানত স্বরুপ। এটি আমার কথা নয়, ইসলামের বিধান।
যারা নিয়মিত দেশের খোঁজখবর রাখেন তারা অবগত আছেন, পুলিশি হেফাযতে হত্যাকান্ড, রাজনৈতিকভাবে ভিন্ন মতালম্বীদের নির্যাতন, (বিশেষ করে) জামাত-শিবিরকে চরম নির্যাতন, গ্রেফতারের পর হাতকড়া লাগিয়ে বেদম প্রহার, বন্দুকের নল পায়ে ঠেকিয়ে গুলি করা, জামাত-শিবির ধরতে চিরুনি অভিযান, আল্লাহ- রাসূল নিয়ে বিভিন্ন স্কুলে কটূক্তি, নামায- রোযা নিয়ে কটূক্তি, বোরখা নিয়ে কটুক্তি ইত্যাদি স্পর্শকাতর বিষয়ে যারা জড়িত এদের তালিকা করলে দেখা যাবে আনুপাতিক হারে প্রায় শতকরা ৬০% (আমার দেখা মতে) হিন্দু ধর্মাবলম্বী। ইসলাম ধর্ম ও বোরখা নিয়ে কটূক্তিকারী প্রায় ৮০% হিন্দু। অথচ জনসংখ্যার হিসেবে ১০০ জন কুলাঙ্গারের মধ্যে ৯ জন (+/-) হিন্দু আর ৮৬ জন (+/-)মুসলমান হওয়ার কথা। কিন্তু এক্ষেত্রে সংখ্যালঘুরাই বেশি বেপরোয়া। ক্ষমতার পট পরিবর্তন হলে এই পুলিশ অফিসারদের কে ছেড়ে দেবে ? সাবধান হউন!!! অমুক সালের, অমুক তারিখের, অমুক দিনের, ঐ দায়িত্ত্ব কে ছিল তা বের করা ২ মিনিটের কাজ। সেদিন শিকার আর শিকারী উভিয়ই মুখোমুখি হবে। যারা আপনাকে আজ ব্যবহার করছে তাদের পুড়ে খেতেও পাবেন না । সেদিন যদি নির্যাতনের স্বীকার হন তবে কি বলবেন, রাজনৈতিক প্রতিহিংসা নাকি নিয়তির পরিহাস ??? কোনটা সত্য দাদা !!!!!!
দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে এদেশের সুশীল সমাজ, বুদ্ধিজীবী, টকশো স্টার, প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া এবং তাদের কর্ণাধারদের কাছ থেকে দেখার চেষ্টা করেছি। আলহামদুলিল্লাহ, সবার প্রকৃত মুখোশ নিজে পর্যবেক্ষণ করেই উন্মোচন করেছি। আল্লাহর নামে শপথ করে বলছি, কোন দলীয় দৃষ্টিকোণ থেকে নয়, কারো কাছে শুনে নয়, নিজে চোখ দিয়ে দেখে এবং নিজের কানে শুনে। এখন কোন খবর শুনলেই মন্ত্রের মত এর পেছনের ঘটনাগুলি বলে দিতে পারি। হ্যাঁ, এটাই আজ বাস্তবতা !!!
আজ আমার আলোচনায় ইচ্ছাকৃত হিন্দু বিষয়টি চলে এসেছে। এতে কোনো হিন্দু বন্ধু আহত হলে আমি দুঃখিত। আমি হিন্দু ধর্ম নয়, হিন্দু ধর্মাব্লম্বী কুলাঙ্গারদের কথা বলতে চেয়েছি।
আমার পরিচিত অমুসলিম বন্ধুদের আমি ব্যক্তিগতভাবে আগেই ওয়াদা দিয়েছি, যদি কোনোদিন তাদের রাজনৈতিক/ ধর্মীয়ভাবে কোনো সমস্যা হয়, আর তার সমাধান যদি আমার ন্যুনতম সাধ্যের মধ্যে থাকে, তবে আমার সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকবে তার জন্য। তার নিরাপদে থাকার জন্য আমার ঘরের দরজা সবসময়ই খোলা থাকবে। সেদিন মুখে নয়, কাজ করে প্রমাণ দেব----
“আমি একজন মুসলিম”।
বিষয়: বিবিধ
২০৪১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন