দরবেশ বাবা Vs গোলাম মাওলা রনি

লিখেছেন লিখেছেন চন্দ্রোদয় ২৬ জুলাই, ২০১৩, ০৩:০৮:৫৮ দুপুর



একদা এই সরকারের আমলে শেয়ারবাজারের মুল্যসূচক বাংলাদেশের ইতিহাসের সর্বোচ্চ হয়েছিল। তখন ঢাকায় আমি নতুন প্রায়। সে সময় শেয়ারবাজার খবর শুনলে ১ম, ২য়, ৩য় স্থানের মধ্যে দুটি কোম্পানীর নাম প্রায় সবসময় থাকত। তার একটি বেক্সিমকো ফার্মা অন্যটি বেক্সিমকো টেক্সটাইল বা বেক্সটেক্স। কৌতূহল বশত কোম্পানী দুটির মালিকানাধীন ব্যাক্তির নাম জানতে ইচ্ছা হল। সেই বিশেষ ব্যক্তিটি আর কেউ নন, আমাদের অতি পরিচিত “সালমান এফ রহমান”।

তখন তিনি শুধু সালমান এফ রহমান নামে পরিচিত হলেও বর্তমানে “দরবেশ বাবা” হিসেবেই সমধিক পরিচিত। (উল্লেখ্য, দরবেশ বাবা উপাধিটি দিয়েছিলেন আমাদেরই ভোলার উদীয়মান তরুন রাজনীতিবিদ ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ (এম পি)। এই দরবেশ বাবার এক “ফুঁ”তেই নাকি রাস্তার ফকির রাতারাতি হাজার কোটি টাকার মালিক বনে যায় । এলাহি কাণ্ড !!!!

এই সালমান এফ রাহমান নাকি বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্ণর ও পরবর্তীতে সেনা সমর্থিত তত্তাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ফখরুদ্দীন আহমেদকেও কার্যালয়ে গিয়ে তার গাল-কর্ণসমেত কষে এক চর লাগিয়ে দিয়েছেন, যখন ড. ফখরুদ্দীন আহমেদ বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্ণরের পদে আসীন। তখনও তিনি পুরোপুরি “দরবেশ বাবা” হয়ে ওঠেননি। একথা শুনেতো রীতিমত প্রমোদ গুনলাম !!!

এই দরবেশ বাবা আজ ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কল্যাণেই হাজার হাজার (+হাজার) কোটি টাকার মালিক। তার টাকার হিসেব নেয় এমন দুঃসাহস দুদকের বাবারও নেই। তার কাছে যত বড় নেতা, প্রশাসনিক কর্মকর্তা এমনকি প্রধানমন্ত্রী আসুক না কেন- সবাই তার “মুরিদ” হয়ে যায়। এইটা “বাবার” “অলৌকিক ক্ষমতা” বলতে পারেন !!!

এহেন “বাবা” বর্তমানে “ইনডিপেন্ডেন্ট টেলিভিশনের” মালিক। আর এই “আধ্যাতিক বাবা”-র টেলিভিশনের সাংবাদিককে পিটিয়েছে সাংসদ গোলাম মাওলা রনি। “বাবা” তার দরবেশীয় দাঁড়ি ডানে-বায়ে একবার ঝঁকিয়ে হাত ঝারলেন !!! আর যায় কোথায় ? এতেই ক্ষমতাসীন দলের এমপি রনি গ্রেফতার।

সুশীল (?) মিডিয়ার কিঞ্চিত সমাচার :

এদেশে যারা প্রিন্ট বা ইলেকট্রনিক মিডিয়ার মালিক তাদের অধিকাংশই বিরাট মাপের চোর এবং দুর্নীতির হেডকোয়ার্টার। এরা কেউই সাংবাদিকতা করতে আসে নাই, আসছে নিজেদের অপকর্ম ঢাকতে। যেমন ধরুন, বসুন্ধরা গ্রুপের ৪টি মিডিয়া— প্রিন্ট মিডিয়ার মধ্যে দৈনিক কালের কন্ঠ, দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিন, ইংরেজী ডেইলি সান এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়া হল “চ্যানেল ২৪”। বসুন্ধরা গ্রুপ যে কত বড় “ভূমিদস্যূ বা জমি চোর” তা কে না জানে? অথচ আপনি থানায় মামলা করতে গেলে পুলিশ মামলা তো নেবেই না বরং লাল দালানে যাওয়ার সমূহ সম্ভাবনা দেখা দিতে পারে! অন্যদিকে তাদের বিরুদ্ধে আজ কেউ কিছু বললে ৪ টি মিডিয়া সমস্বরে হামলে পড়বে তার উপর। আর যায় কোথায় ??? অভিযোগকারীর ব্যক্তিজীবন থেকে শুরু করে সংসার জীবন, বিবাহপূর্ব প্রেম থেকে শুরু করে বিবাহ পরবর্তী দাম্পত্য জীবনের মত একান্তই ব্যক্তিগত বিষয় কিছুই ঐ পত্রিকার সাংবাদিকের লেখার বাইরে যাবে না।

তেমনি একজন “দরবেশ বাবা”। বাবার বুদ্ধির কোনো তুলনাই নাই! কারণ, এই সরকারের আমলে তিনি একটি ইলেকট্রনিক মিডিয়ার কর্ণাধার এবং কতিপয় মিডিয়ার “আদর্শ ব্যক্তিত্ব” হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন। তার রয়েছে একপাল বিবেক বিসর্জন দেয়া দৃশ্যত অতি বুদ্ধিমান ও উর্বর মস্তিষ্কজাত (!) সাংবাদিক। তাদের অধিকাংশের কাছেই কোন তথ্যের সত্য-মিথ্যার প্রভেদ নাই। তারা সংবাদ প্রকাশের আগে দেখে সংবাদটি “আমাদের” জন্য তথা “মিডিয়া কর্তৃপক্ষের” জন্য কতকটা অনুকূলে। এভাবে বাবা তার হাতের পরিধি বাড়ালেন যাতে কেউ বলতেও না পারে “বাবার হাত বড়”। আর এই মিডিয়ার জোরেই তিনি আজ ক্ষমতাসীন দলের নির্বাচিত এম পি কে গ্রেফতার করিয়ে প্রমান করলেন, তিনি “বাবা” বটে !!!

রনি সমাচার :

কথাটি একটু অপ্রকাশিত সত্য যে, “আওয়ামী লীগ এবং ইসলাম” শিরোনামটি একসাথে যায় না। মনের কোথাও যেন একটু অড অড (বেখাপ্পা) লাগে। মুক্তচিন্তার মানুষ মাত্রই আমার সাথে একমত হবেন বলে আশা রাখি। তেমন একটি দলের এম পি হয়ে রনি ইসলামের ইতিহাস, ঐতিহ্য নিয়ে ব্যাপক লেখালেখি করলেন। বসুন্ধরা গ্রুপের পত্রিকা বাংলাদেশ প্রতিদিনে তিনি মোঘল হেরেমের ভিতরের জৌলসভরা কাহিনী লিখলেন। পাঠকরা ব্যাপক (আমি নিজেও) হজম করলেন এই লেখা। একই সাথে পত্রিকায় কোরআন, হাদীসের ব্যাখ্যা থেকে শুরু করে খালীদ বিন ওয়ালীদের মত বীরযোদ্ধা সাহাবীদের জীবনকথা লিখে মুন্সিয়ানার পরিচয় দিলেন। তার লিখার সাবলীল বাচনভঙ্গী, শব্দচয়ন ও সাহিত্যমান পাঠককে আকর্ষণ করার মত। এদিকে কেউ কেউ (আমার পরিচিত) বলেন রনি ছাত্রজীবনে শিবির করত(!!)। কিন্তু যে ছেলে মনেপ্রাণে শিবির করে সে অন্তত আওয়ামী লীগ করবেনা কোনো কালেই, তাকে যত বড় পদই দেয়া হোক। যেহেতু “আওয়ামী লীগের সাথে শিবির ও ইসলাম” বিষয়টি আমার কাছে অড মনে হয়, তাই সন্দেহ দূর করতে ২০১৩ –র একুশে বইমেলা থেকে ২৪০ টাকা দিয়ে গোলাম মাওলা রনির লিখিত একখানা বই কিনলাম। পড়লাম । পড়ে মনে হল তিনি জামাত-শিবির নন। কারণ- তিনি ছাত্রজীবনে প্রেম করেছেন যেটা ছাত্রশিবিরের ছেলেরা করে না। করলে তাকে বহিস্কৃত করা হয়। আর রনি শিবিরের বহিস্কৃত সদস্যও নন। তবে ছাত্রজীবনে বা জীবনের কোনো এক সময় তিনি শিবিরকে খুব কাছ থেকে দেখছেন, এইটুকু আন্দাজ করা যায়।

বুদ্ধিমান রনিও বুঝে ফেললেন বাংলাদেশে মিডিয়ার অপরিহার্যতা। তিনিও কোটি কোটি টাকার মালিক। তার নির্বাচনী এলাকায় তার বিরুদ্ধে বেশ কিছু অভিযোগ আছে। সঙ্গত কারনে ইতিমধ্যেই তিনি নিজ পরিচালনায় ব্লগ চালু করেছেন। তাছাড়া তার গ্রেফতারের এক দিন আগ থেকে তার মালিকানাধীন একটি পত্রিকা প্রকাশিত হচ্ছে (এই খবরটি আমি নিশ্চিত নই, ফেইসবুক থেকে প্রাপ্ত)। তবে মিডিয়ায় শক্ত অবস্থান তৈরী না করতেই দরবেশের পাতা ফাঁদে পা দিলেন রনি।

এই হল আমাদের দেশের সুশীল (?) মিডিয়ার অতি সংক্ষিপ্ত পরিচয়। চ্যানেল একাত্তর ও এটিএন নিউজের মিথ্যার ফুলঝুরি দিয়ে তৈরী করা রাজনৈতিক রিপোর্টের কথা আজ না হয় না-ই বললাম। আমি মোটামুটি নিশ্চিত, সরকার পরিবর্তন হলে এই বসুন্ধরা গ্রুপের পত্রিকাগুলো দুটি ভাগে বিভক্ত হয়ে- দুটি সেই নির্বাচিত সরকারের তোষামুদ করবে, আর দুটো থাকবে নিউট্রাল। এরা জনমতের ইনটেনশন লক্ষ্য করে রিপোর্ট করবে। তবে এ কথাও নিশ্চিত যে, “ফোর্থ স্টেট” খ্যাত সংবাদপত্র এবং “জাতির বিবেক” নামক সংবাদিকরা যখন ক্ষুদ্র সার্থ চরিতার্থ করতে নৈতিকতা বিসর্জন দেয় তখন আমাদের মনে ভাবনার উদয় হয়- “জাতির বিবেকের আসনে বসে এই অশুভ প্রতিযোগীতা আমাদের কোথায় নিয়ে যাবে??

তবে সবশেষে আমি চাইব, গোলাম মাওলা রনি ভাষ্যনুসারে তিনি যে জন্য লড়ছেন সে সত্য প্রমানিত হোক। কারণ, রনির মত তরুন প্রজন্মের উদীয়মান রাজনীতিবিদরা মানুষের সমর্থন হারালে ভবিষ্যত প্রজন্ম সব শ্রেণীর রাজনৈতিক ব্যক্তির উপর আস্থা হারাবে। এটি অদূর ভবিষ্যতে মেধাবী নেতৃত্ত তৈরীতে প্রধান অন্তরায় হিসেবে কাজ করবে।

গোলাম মাওলা রনি এখন কারাগারে হাজতী হিসেবে আছেন। আজকে তার জামিন নামঞ্জুর হয়েছে। তারপরও হয়ত ছাড়া পাবেন শীঘ্রই, তবে দরবেশ মনেপ্রাণে না চাইলে জামিন নাও পেতে পারেন। কারণ, আসন্ন নির্বাচনে দরবেশ শেখ হাসিনাকে যে মোটা অংকের একটা অ্যামাউন্ট দিবেন তাতো বলা-ই যায়। তাছাড়া তিনিতো এই সরকারেরই লোক!!!!! ভয় কি হে….!!

যদি জনাব গোলাম মাওলা রনি নেহাতই দরবেশের চক্রান্তের শিকার হন তবে এই মুহুর্তে কাশিমপুর কারাগারের কুঠুরিতে বসে রবিঠাকুরের “দুই বিঘে জমি” কবিতার শেষ চরণ দুটি মনে মনে বার বার আবৃত্তি করতে পারেন---

আমি শুনে হাসি, আঁখিজলে ভাসি,

এই ছিল মোরে ঘটে -

তুমি মহারাজ সাধু হলে আজ,

আমি আজ চোর বটে"।।

বিষয়: বিবিধ

৩৮৮০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File