আবুল হাসান এর কয়েকটি অসাধারণ কবিতা StarStarStar

লিখেছেন লিখেছেন সন্ধার মেঘমালা ০৭ জুলাই, ২০১৩, ০৮:০১:২৫ রাত



প্রেমিকের প্রতিদ্বন্দ্বী

অতো বড় চোখ নিয়ে, অতো বড় খোঁপা নিয়ে

অতো বড় দীর্ঘশ্বাস বুকের নিশ্বাস নিয়ে

যতো তুমি মেলে দাও কোমরের কোমল সারশ

যতো তুমি খুলে দাও ঘরের পাহারা

যতো আনো ও-আঙ্গুলে অবৈধ ইশারা

যতো না জাগাও তুমি ফুলের সুরভী

আঁচলে আগলা করো কোমলতা, অন্ধকার

মাটি থেকে মৌনতার ময়ূর নাচাও কোন

আমি ফিরব না আর, আমি কোনদিন

কারো প্রেমিক হবো না; প্রেমিকের প্রতিদ্বন্দ্বী চাই আজ

আমি সব প্রেমিকের প্রতিদ্বন্দ্বী হবো



বৃষ্টি চিহ্নিত ভালোবাসা

মনে আছে একবার বৃষ্টি নেমেছিল?

একবার ডাউন ট্রেনের মত বৃষ্টি এসে থেমেছিল

আমাদের ইস্টিসনে সারাদিন জল ডাকাতের মতো

উৎপাত শুরু করে দিয়েছিল তারা,

ছোট-খাটো রাজনীতিকের মতো পাড়ায় পাড়ায়

জুড়ে দিয়েছিল অথই শ্লোগান ।

তবু কেউ আমাদের কাদা ভেঙ্গে যাইনি মিটিং -এ

থিয়েটার পশু হলো এ বৃষ্টিতে সভা আর

তাসের আড্ডার লোক ফিরে এলো ঘরে;

ব্যবসার হলো ক্ষতি দারুণ দুর্দশা,

সারাদিন অমুক নিপাত যাক ,আমুক জিন্দাবাদ

আমুকের ধ্বংস চাই বলে আর আবিজাবি হলো না পাড়াটা ।

ভদ্রশান্ত কয়েকটা গাছ শুধু বেফাঁস নারীর মতো

চুল ঝাড়ানো আঙ্গিনায় হঠাৎ বাতাসে আর

পাশের বাড়ীতে কোনো হারমোনিয়ামে শুধু উঠতি এক আগ্রহী গায়িকা

স্বরচিত মেঘমালা গাইলো তিনবার !

আর ক`টি চা`খোর মানুষ এলো

রেনকোট গায়ে চেপে চায়ের দোকানে ;

তাদের স্বভাবসিদ্ধ গলায় শোনা গেল:

কি করি বলুন দেখি দাত পড়ে যাচ্ছে তবু মাইনেটা বাড়ছেনা,

ডাক্তারের কাছে যাই তবু বাড়ছেই ক্রমাগত বাড়ছেই

হৃদরোগ , চোখের অসুখ !

একজন বেরসিক তার মধ্যে বলে উঠলো :

বৃষ্টি মানে বুঝলেন তো অযথাই যানবাহন , বাড়তি খরচ !

একজন বাতের রোগী গলা কাশলো:

ওহে ছোকরা, নুন চায়ে এক টুকরো বেশি লেবু দিও ।

তাদের বিভিন্ন সব জীবনের খুঁটিনাটি দুঃখবোধ সমস্যায় তবু

সেদিন বৃষ্টিতে কিছু আসে যায়নি আমাদের

কেননা সেদিন সারাদিন বৃষ্টি পড়েছিল,

সারাদিন আকাশের অন্ধকার বর্ষণের সানুনয় অনুরোধে

আমাদের পাশাপাশি শুয়ে থাকতে হয়েছিল সারাদিন

আমাদের হৃদয়ে অক্ষরভরা উপন্যাস পড়তে হয়েছিল !



নিঃসঙ্গতা

অতোটুকু চায় নি বালিকা!

অতো শোভা, অতো স্বাধীনতা!

চেয়েছিলো আরো কিছু কম,

আয়নার দাঁড়ে দেহ মেলে দিয়ে

বসে থাকা সবটা দুপুর, চেয়েছিলো

মা বকুক, বাবা তার বেদনা দেখুক!

অতোটুকু চায় নি বালিকা!

অতো হৈ রৈ লোক, অতো ভিড়, অতো সমাগম!

চেয়েছিলো আরো কিছু কম!

একটি জলের খনি

তাকে দিক তৃষ্ণা এখনি, চেয়েছিলো

একটি পুরুষ তাকে বলুক রমণী!



আকাঙ্খা

তুমি কি আমার আকাশ হবে?

মেঘ হয়ে যাকে সাজাব

আমার মনের মত করে ।

তুমি কি আমার নদী হবে?

যার নিবিড় আলিঙ্গনে ধন্য হয়ে

তরী বেশে ভেসে যাব কোন অজানা গন্তব্যের পথে ।

তুমি কি আমার জোছনা হবে?

যার মায়াজালে বিভোর হয়ে

নিজেকে সঁপে দেব সকল বাস্তবতা ভুলে ।

তুমি কি আমার কবর হবে?

যেখানে শান্তির শীতল বাতাসে

বয়ে যাবে আমার চিরনিদ্রার অফুরন্ত প্রহর ।



প্রশ্ন

চোখ ভরে যে দেখতে চাও

রঞ্জন রশ্মিটা চেনো তো?

বুক ভরে যে শ্বাস নিতে চাও

জানো তো অক্সিজেনের পরিমাণটা কত?

এত যে কাছে আসতে চাও

কতটুকু সংযম আছে তোমার?

এত যে ভালোবাসতে চাও

তার কতটুকু উত্তাপ সইতে পারবে তুমি?

বিষয়: সাহিত্য

৩৩৯১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File