পূর্ণেন্দু পত্রীর অসাধারণ কিছু কবিতা Rose Rose Rose

লিখেছেন লিখেছেন সন্ধার মেঘমালা ০৩ জুলাই, ২০১৩, ০৭:১৫:২০ সন্ধ্যা



কথোপকথন-১১

– তুমি আজকাল বড্ড সিগারেট খাচ্ছ শুভন্কর।

– এখুনি ছুঁড়ে ফেলে দিচ্ছি…

কিন্তু তার বদলে??

–বড্ড হ্যাংলা। যেন খাওনি কখনো?

– খেয়েছি।

কিন্তু আমার খিদের কাছে সে সব নস্যি।

কলকাতাকে এক খাবলায় চিবিয়ে খেতে পারিআমি,

আকাশটাকে ওমলেটের মতো চিরে চিরে,

নক্ষত্রগুলোকে চিনেবাদামের মতো টুকটাক করে,

পাহাড়গুলোকে পাঁপর ভাজার মতো মড়মড়িয়ে,

আর গঙ্গা?

সে তো এক গ্লাস সরবত।

–থাক। খুব বীরপুরুষ।

–সত্যি তাই…

পৃথিবীর কাছে আমি এই রকমই ভয়ন্কর বিস্ফোরণ।

কেবল তোমার কাছে এলেই দুধের বালক,

কেবল তোমার কাছে এলেই ফুটপাতের নুলো ভিখারি,

এক পয়সা, আধ পয়সা কিংবা এক টুকরো পাউরুটির বেশী আর কিছু চিনিয়ে নিতে পারিনা।

–মিথ্যুক..।

–কেন?

–সেদিন আমার সর্বাঙ্গের শাড়ি ধরে টানমারনি?

– হতে পারে।

ভিখারিদের কি ডাকাত হতে ইচ্ছে করবে না একদিনও??



একমুঠো জোনাকী

একমুঠো জোনাকীর আলো নিয়ে

ফাঁকা মাঠে ম্যাজিক দেখাচ্ছে অন্ধকার।

একমুঠো জোনাকীর আলো পেয়ে

এক একটা যুবক হয়ে যাচ্ছে জলটুঙি পাহাড়

যুবতীরা সুবর্ণরেখা।

সাপুড়ের ঝাঁপি খুলতেই বেরিয়ে পড়ল একমুঠো জোনাকী

পুজো সংখ্যা খুলতেই বেরিয়ে পড়ল একমুঠো জোনাকী।

একমুঠো জোনাকীর আলো নিয়ে

ফাঁকা মাঠে ম্যাজিক দেখাচ্ছে অন্ধকার।

ময়দানের মঞ্চে একমুঠো জোনাকী উড়িয়ে

জয়ধ্বনি দিয়ে উঠল যেন কারা।

রবীন্দ্রসদনে তিরিশজন কবি তিরিশদিন ধরে আউড়ে গেল

একমুঠো জোনাকীর সঙ্গে তাদের ভাব-ভালোবাসা।

ইউনেসকোর গোল টেবিল ঘিরে বসে গেছে মহামান্যদের সভা

একমুঠো জোনাকীর আলোয়

আফ্রিকা থেকে আসমুদ্র হিমাচল সমস্ত হোগলা বন আর ফাটা দেয়ালে

সাজিয়ে দেবে কোনারক কিংবা এথেন্সের ভাস্কর্য।

সাত শতাব্দীর অন্ধকার এইভাবে

ফাঁকা মাঠে ম্যাজি দেখিয়ে চলেছে একমুঠো জোনাকীর আলোয়।



নিষিদ্ধ ভালোবাসার তিন সাক্ষী

তুমি যখন শাড়ির আড়াল থেকে

শরীরের জ্যোৎস্নাকে একটু একটু করে খুলছিলে,

পর্দা সরে গিয়ে অকস্মাৎ এক আলোকিত মঞ্চ,

সবুজ বিছানায় সাদা বাগান,

তুমি হাত রেখেছিলে আমার উৎক্ষিপ্ত শাখায়

আমি তোমার উদ্বেলিত পল্লবে,

ঠিক তখনই একটা ধুমসো সাদা বেড়াল

মুখ বাড়িয়েছিল খোলা জানালায়।

অন্ধকারে ও আমাদের ভেবেছিল

রুই মৃগেলের হাড় কাঁটা।

পৃথিবীর নরনারীরা যখন নাইতে নামেআকাঙ্খার নদীতে

তখন রুই মৃগেলের চেয়ে আরো কত উজ্জ্বল

দীর্ঘশ্বাস সহ সেই দৃশ্য দেখে বেড়ালটা ফিরে চলে গেলো

হাড়কাঁটার খোঁজে অন্য কোথা অন্যকোনখানে।

দ্বিতীয় সাক্ষী ছিল তোমার হত্যাকারী চোখ

আর তৃতীয় সাক্ষী আমার রক্তের সঙ্গে ওতপ্রোত শুয়ে আছে।

বিষয়: সাহিত্য

৮৫৫৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File