প্রয়াত ক্ষণজন্মা দ্রোহ ও প্রেমের কবি রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ
লিখেছেন লিখেছেন সন্ধার মেঘমালা ২৩ জুন, ২০১৩, ০৬:০৭:২১ সন্ধ্যা
জাতির পতাকা খামচে ধরেছে আজ পুরোনো শকুন।
বাতাশে লাশের গন্ধ
নিয়ন আলোয় তবু নর্তকীর দেহে দুলে মাংসের তুফান।
মাটিতে রক্তের দাগ -
চালের গুদামে তবু জমা হয় অনাহারী মানুষের হাড়
এ চোখে ঘুম আসেনা। সারারাত আমার ঘুম আসেনা-
তন্দ্রার ভেতরে আমি শুনি ধর্ষিতার করুণ চিৎকার,
নদীতে পানার মতো ভেসে থাকা মানুষের পচা লাশ
মুন্ডহীন বালিকার কুকুরে খাওয়া বিভৎস্য শরীর
ভেসে ওঠে চোখের ভেতরে। আমি ঘুমুতে পারিনা, আমি
ঘুমুতে পারিনা…
এ যেন আজ প্রতিটি বাঙ্গালির কাতর উচ্চারণ !কবিতাটির ধ্বনিতে ধ্বনিতে যে অগ্নিকণা তা বাঙ্গালির রক্তে মিশে যায় অজান্তেই ।জলে ওঠে অগ্নিশিখা ।পোড়ে বাঙ্গালি ।পোড়ে মস্তিষ্কের সচেতন কোষগুলো । যা নতুন প্রজন্মকে ধোঁয়াশার ভেতর সত্যকে খুঁজতে শেখায় । নগ্ন বিভৎস বাস্তবতা আমাদের সামনে এসে ধরা দেয় ।সাধারণ বাঙ্গালি অসহায় বোধ করি ।
দেশপ্রেমিক ও রাজনীতি সচেতন কবি রুদ্র রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন ।জিবদ্দসায় সকল আন্দোলনে তাঁর ছিল সক্রিয় অংশগ্রহন ।বিশ্বাসের দ্বিধা আর জড়তাকে তিনি ঝেড়ে ফেলতে চেয়েছেন বাড়তি মেদের মত ।রুদ্রর মুখে আমরা শুনি আগুন ও বারুদের ভাষা ।
অতোটা প্রেমের প্রয়োজন নেই
ভাষাহীন মুখ নিরীহ জীবন
প্রয়োজন নেই- প্রয়োজন নেই
কিছুটা হিংস্র বিদ্রোহ চাই কিছুটা আঘাত
রক্তে কিছুটা উত্তাপ চাই, উষ্ণতা চাই
চাই কিছু লাল তীব্র আগুন।
(অবেলায় শঙ্খধ্বনি)
সমাজের উঁচু-নিচু শ্রেণীভেদ তাঁকে মর্মাহত করেছিল ।
কথা ছিলো, আর্য বা মোঘল নয়, এ-জমিন অনার্যের হবে।
অথচ এখনো আদিবাসী পিতাদের শৃঙ্খলিত জীবনের
ধারাবাহিকতা
কৃষকের রন্ধ্রে রক্তে বুনে যায় বন্দিত্বের বীজ।
মাতৃভূমি-খন্ডিত দেহের পরে তার থাবা বসিয়েছে
আর্য বণিকের হাত।
আর কী অবাক! ইতিহাসে দেখি সব
লুটেরা দস্যুর জয়গানে ঠাঁসা,
প্রশস্তি, বহিরাগত তস্করের নামে নানারঙা পতাকা ওড়ায়।
কথা ছিলো ’আমাদের ধর্ম হবে ফসলের সুষম বন্টন’,
আমাদের তীর্থ হবে শস্যপূর্ণ ফসলের মাঠ।
অথচ পান্ডুর নগরের অপচ্ছায়া ক্রমশ বাড়ায় বাহু
অমলিন সবুজের দিকে, তরুদের সংসারের দিকে।
জলোচ্ছাসে ভেসে যায় আমাদের ধর্ম আর তীর্থভূমি,
আমাদের বেঁচে থাকা, ক্লান্তিকর আমাদের দৈনন্দিন দিন।
(কথা ছিলো সুবিনয়)
ধর্ম ব্যাবসায়ী ভন্ডদের রুদ্র ঘৃণা করত ।তার অকপট ভাষা ও শৈলী সমালোচনার ঝড় তুলেছিল ।ভীষণ খামখেয়লী এই কবি একসময় 'অন্তর বাজাও' নামে গানের দল গড়েছিলেন ।রচনা করেছিলেন অত্যন্ত সুন্দর একটি গান ....
আমার ভিতর বাহিরে অন্তরে অন্তরে
আছো তুমি হৃদয় জুড়ে।
ভালো আছি, ভালো থেকো,
আকাশের ঠিকানায় চিঠি লিখো
দিও তোমার মালাখানি,
বাউলের এই মনটা রে।
ক্ষণজন্মা এই কবির রচনা মানের বিচারে অসাধারণ ।কল্পনার আতিশয্যহীনতা ও ধারালো বাস্তবতা তাঁর কবিতার বৈশিষ্ট ।তাঁর কর্মের জন্যই তিনি আমাদের মাঝে বেচে থাকবেন........
" চলে যাওয়া মানে প্রস্থান নয়- বিচ্ছেদ নয়
চলে যাওয়া মানে নয় বন্ধন ছিন্ন-করা আর্দ্র রজনী
চলে গেলে আমারও অধিক কিছু থেকে যাবে
আমার না-থাকা জুড়ে।"
-রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ
বিষয়: সাহিত্য
৩৩৫০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন