বেড়ার ফাঁক দিয়ে দেখ...
লিখেছেন লিখেছেন আবুসাঈদ আনসারী ১৮ মে, ২০১৩, ০৪:১৩:২৬ রাত
তোর মা নেই তো কি হোয়েছে
আমি তো আছি খোকা, যা পড়তে বস।
আরো কয়েকটা সুরা তোর মুখস্থ করতে হবে
তা না হোলে হিফজে চানস পাবি না...!
সুর কোরে জোরে জোরে কোরান পড়া কে তুমি বডড ভালোবাসতে খালা।
মকতবে যেতে হুজুরের জন্য বাড়তি নাসতা দিতে, যেনো হুজুর আমাকে মার না দিয়ে আদর করেন বেশি, খুব সহজ হিসেব। মকতবের বেড়ার ফাঁক দিয়ে তোমার অস্পষ্ট চেহারা দেখা যেতো। মনে হোতো পৃথিবীর তাবৎ প্রেষ পেয়ে বসেছে তোমার নিষ্পাপ চেহারায়। আমি হাসতাম তারপর ঈমানে মুজমাল আমানতু বিললাহি...আরম্ভ করতাম গলার সব জোর দিয়ে।
হুজুর আমাকে কখনো মারেননি জেনেও তুমি বেড়ার ফাঁক দিয়ে থাকতে চেয়ে। ফজরের আজানের সাথে সাথে যখন পাখিরাও মোয়াজজিন হোয়ে যেতো তখন দ্বৈত সুরে আমাদের ঘুম ভাংগতো। শীতের সকালে তোমার দেয়া গরম পানি দিয়ে ওজু করতাম শরীর থেকে আকাশে উড়তো ধোয়া...
কেতলির খড় খড় আ ওয়াজে বিরক্ত হোতো তোমার 'দোলন' নামক 'তিড়িং বিড়িং বাছুর'। খালুর চাদর ধরে মাসজিদে ছুটতাম আমি। নামাজ শেষে এসে দেখতাম মাদুরে রাখা মানকচুর পাতার সাইজের পরোটা...!
মাদরাসায় পড়বো বোলে যেদিন তোমার কাছ থেকে বিদায় নেবো সেদিনকার দৃশ্য ছিলো রৌদ্রজ্জ্বল দিনের মাঝে হঠাৎ কালবৈশাখীর মতো। তুমি বার বার বোলছিলে ' মা নেই ছেলে টার' ' মা নেই ছেলে টার' আর সংজ্ঞাহীন হচ্ছিলে। খালু বলছিলেন সেতো মাদরাসায় যাচ্ছে, জ্ঞানের জন্য বের হলে সাগরের মাছ পর্যন্ত দোয়া করে, সাঈদি সাবের ওয়াজে শুনোনি... ?
সাগরের মাছ আমার জন্য দোয়া কোরেছে কিনা জানিনা, কিনতু সাগরের সমস্ত কালি দিয়ে যার গুনাগুন লেখা যাবে না সে মহান প্রভুর জন্য আজ আমি এখানে এসেছিলাম, পৃথিবীর সবচেয়ে দরদি মানুষটার জন্য আমি এসেছিলাম, কোরআনের জন্য আমি এসেছিলাম, খালা তুমি আমার জন্য দোয়া করো।
শাপলাচত্তরে আমাকে এই মাত্র যারা গুলি করলো, আমার বাবা মা নেই বোলে তারা বেচে গেছে, কে আসবে আমার লাশ নিতে...? খালা, না তুমি এসো না, আমার লাশ নিতে তুমি এসো না। আমার বুকে কোরআন নিয়ে আমি তার মালিকের কাছে যাচিছ, দেখ কত মানুষেরা বুকে কোরআন নিয়ে বড় হচেছ ঐ মকতবের বেড়ার ফাঁক দিয়ে দেখ খালা।
১৭।০৫।১৩
.
বিষয়: সাহিত্য
১৫৩৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন