হাওরবাসীর জীবন সংগ্রাম ও উন্নয়ন
লিখেছেন লিখেছেন শিহাব আহমদ ০৫ মে, ২০১৭, ০৭:৪১:১৫ সকাল
নৈস্বর্গিক সৌন্দর্যের এক অপরূপ চিত্র হাওর ও তার ভূ-প্রকৃতি। বিভিন্ন ঋতুতে তার রূপ বদলায়। বর্ষায় ধারণ করে সাগরের রূপ, সীমাহীন দৃষ্টি ছাড়িয়ে শুধুই অথৈ নীল জলরাশির খেলা। মাতাল বাতাসে উত্তাল হয়ে ওঠে হাওরের তরঙ্গমালা। স্থানীয় ভাষায় একে বলে ʼআফালʼ। প্রবল ঢেউয়ের প্রকোপে দ্বীপের মত গ্রামগুলো কেঁপে কেঁপে ওঠে। আফালের আঘাত থেকে বেঁচে থাকার জন্য হাওর পাড়ের কোন কোন গ্রামে দেয়া হয় বাঁশের প্রতিরক্ষা আড়। বর্ষায় গ্রামগুলো যেন এক একটি বিচ্ছিন্ন দ্বীপ। যাতায়াতের মাধ্যম শুধু নৌকা। তখন ছয়টি মাস মানুষের থাকে না কোন কাজকর্ম। বাড়ির আশেপাশের জলায় মাছ ধরা, বাঁশবেতের কাজ, সূচিকর্ম, বিয়েশাদী, নাইওরি, গানবাজনা, এগুলোতেই তখন সময় কাটায় হাওরবাসী। বর্ষাকালে সাধারণ নৌকা, ইঞ্জিনচালিত নৌকা ও লঞ্চে চলাচলের পথ সুগম হয়। গোলায় উঠা বৈশাখী ধানই এখানকার মানুষের সারা বছরের ভরসা। এর সঞ্চয় দিয়েই দীর্ঘ সময় ধরে চলে জীবিকা নির্বাহের এক প্রাণান্তকর চেষ্টা। বর্ষার পানি নেমে যাওয়ার সময়টি যোগাযোগের ক্ষেত্রে এক কঠিন সময়। স্বল্প পানিতে নৌকায় চলাচল বন্ধ হয়ে গেলে কাঁদাজলে হাঁটাই তখন যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম। এখনও গ্রামীন মানুষগুলো বাজারে বা শহরে যেতে দীর্ঘ পথ হেঁটেই পাড়ি দেয়। শীতের শুষ্ক মৌসুম হলো চাষাবাদের ব্যস্ত সময়। মানুষের কর্মব্যস্ততা বেড়ে যায়। হাওরে তখন ইরি-বোরো চাষের ধুম পড়ে। ইদানীং অনেক শাক-সব্জীও ফলানো হয়। অথচ এক সময় ছিল যখন মানুষ মাছে-ভাতেই তৃপ্ত থাকত, সব্জী খেত কম। ফলে অপুষ্টির হার ছিল অনেক বেশী। চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য সেবার ক্ষেত্রে হাওর এলাকা অনেক পশ্চাদপদ। জরুরী সেবার অভাবে মৃত্যু এখানে অনিবার্য। কাবিখা (কাজের বিনিময়ে খাদ্য) কর্মসূচীর আওতায় গ্রামে বেশ রাস্তাঘাট তৈরী হয়েছে। কিছু কিছু এলাকায় পাকা রাস্তা ও সেতু নির্মিত হয়েছে। এসব রাস্তায় লোকজন সাইকেল, রিক্সা, মটর সাইকেল, টেম্পো, ইত্যাদি যানবাহন ব্যবহার করে দূরের পথে পাড়ি জমায়। খুব অল্প গ্রামেই বিদ্যুত পৌঁছুতে পেরেছে। কোন কোন গ্রামে সৌর বিদ্যুতও চালু হয়েছে। সেই সাথে ফ্রিজ-টিভিও যাচ্ছে সেসব গ্রামে যেখানে বিদ্যুৎ আছে। তবে যোগাযোগের ক্ষেত্রে মোবাইল ফোন বিপ্লব সৃষ্টি করেছে। এর ব্যবহার ছড়িয়ে পড়েছে চারদিকে। ফলে দূরের মানুষ অনেক কাছে চলে এসছে।
চৈত্রের শেষে বা বৈশাখ মাসে সীমান্তের খাসিয়া পাহাড়ের ঢলে প্রায় বছরই বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় হাওর এলাকায়। এতে কোন কোন হাওরের নীচু জায়গার ফসল তলিয়ে গেলেও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয় কম। কিন্তু এ বছরের পাহাড়ি ঢল ও আগাম আকস্মিক বন্যায় দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা, হবিগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, সিলেট, মৌলভীবাজার ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় জেলাসমূহের ৪৮টি উপজেলার ৩৭৩টি হাওর একই সাথে বন্যা কবলিত হয়ে পড়ে। ফলে হাওরের দুই লক্ষাধিক হেক্টর জমির ফসল বিনষ্ট হয় এবং পানি দূষিত হয়ে পড়লে মাচ ও হাঁসে মড়ক লাগে। পশু-খাদ্যের অভাবে গরু-ছাগল বিক্রী করে দিতে হচ্ছে পানির দরে। ফসল, প্রাণী ও মৎস্যসম্পদ একই সাথে হারিয়ে হাওরবাসীর মধ্যে দুঃখ-দুর্দশা ও হাহকারের রোল পড়েছে। হাওড়ের দূষিত পানি ব্যবহারের কারণে মানুষজন বোগাক্রান্ত হয়ে পড়ছে। হাওরের মাছ ধরা ও দূষিত পানি ব্যবহার থেকে সাময়িকভাবে বিরত থাকতে কর্তৃপক্ষ পরামর্শ দিয়েছেন জনগণকে। এবারের যে বিপর্যয় তা স্পষ্টই প্রমাণ করে হাওরের জনপদগুলো কত অবহেলিত। হাওরের মানুষ এখন এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের সম্মুখীন। দুর্ভিক্ষের আশংকা ও দুর্ভাবনায় তাড়িত তাদের জীবন দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে। এ বিপুল ক্ষয়ক্ষতি ও আহাজারীর করুণ কাহিনী মিডিয়ায় বহুল আলোচিত হচ্ছে। অনেকেই বলছেন এটা মানবিক বিপর্যয়, তারা দুর্ভিক্ষের আশঙ্কা ব্যক্ত করে ক্ষতিগ্রস্ত হাওরাঞ্চলকে দুর্গত এলাকা ঘোষণার দাবী জানিয়েছেন। এসব বিষয়ে প্রচার-প্রচারণা ও দোষাদোষিই বেশী হচ্ছে, ত্রাণ ও পুনর্বাসনের কাজ এগুচ্ছে কম। অথচ বিপুল ক্ষয়ক্ষতির মোকাবিলায় জরুরীভিত্তিক ত্রাণ বিতরণ কর্মসূচীর অভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ও নিঃস্ব মানুষের মধ্যে বিরাজ করছে বিরাট হতাশা। অন্যদিকে অভিযোগ রয়েছে সরকারী ১০ ও ১৫ টাকা কেজির চাল সব এলাকায় পৌঁছায়নি, আবার যেখানে পৌঁছুতে পেরেছে সেখানে নিয়মিতভাবে পাওয়া যাচ্ছে না।
প্রাকৃতিক সম্পদের এক বিপুল ভান্ডার হলেও হাওরাঞ্চল সুপ্রাচীন কাল থেকেই বাংলাদেশের সবচেয়ে অবহেলিত জনপদের তালিকাভুক্ত হয়ে পড়ে আছে। এ জনপদবাসীর ভাগ্য প্রকৃতির খেয়াল-খুশীর ওপরই নির্ভরশীল। প্রকৃতি সুপ্রসন্ন থাকলে এখানকার মানুষ ভাত-মাছের প্রাচুর্য দেখতে পায়, নতুবা তাদেরকে অনাহার-অর্ধাহারে জীবন যাপন করতে হয়। আগাম বন্যা হলো হাওর এলাকার জন্য এক নীরব ঘাতক। এবারের বিপর্যয়-সৃষ্টিকারী আগাম বন্যা এসব এলাকার ধনী-গরিব সবার ওপর সমভাবে আঘাত হেনেছে। ধনী কৃষকেরা সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে দিশেহারা, কারণ তাদের সব ফসলই তলিয়ে গেছে। গরীবেরা হাওড়ের তলিয়ে যাওয়া ফসল কুঁড়িয়ে কিছুটা ধান সংগ্রহ করত, কিন্তু এবারে ধানে চাল আসার আগেই বানের পানিতে ধানগাছ তলিয়ে যাওয়ায় তারা সে সুযোগটাও পায়নি। তাই সবাই আজ নিঃস্ব ও বিপন্ন। ফসল তোলার মওসুমে মানুষ যখন নবান্নের স্বপ্নে বিভোর সে সময়ে এ আগাম বন্যায় ফয়-ফসলের এ ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি তাদের সে স্বপ্নকে ভেঙ্গে চুরমার করে দিয়েছে। তাদের জীবন-জীবিকা এখন বিপর্যস্ত। সারা বছরের খাদ্য-সংস্থান ও ব্যয়-নির্বাহের ভাবনায় তারা আতঙ্কিত। ছোট ছোট শিশুদের মুখে আহার যোগানো, তাদের লেখাপড়া ও চিকিৎসার ব্যয় কোথা থেকে আসবে সে ভাবনায় অভিবাকেরা উৎকন্ঠিত। তাই সবার মাঝে দেখা দিয়েছে হাহাকার।
এ মূহুর্তের সবচেয়ে জরুরী বিষয় হলো দীর্ঘ-মেয়াদী ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মসূচী। সরকার প্রধান এ ব্যপারে আশ্বাসও দিয়েছেন প্রয়োজনীয় সব ব্যববস্থাই নেওয়া হবে বলে। তবে বর্তমান রাজনৈতিক সংস্কৃতির বড় চ্যালেঞ্জ হলো লুটসর্বস্ব দলীয় ক্যাডার ও দুর্নীতিগ্রস্ত প্রশাসন। এছাড়াও আছে ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মসূচীর সমন্বিত ও পরিকল্পিত বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ার অভাব। এসব চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করে এই কর্মসূচীর সুফল তৃণমূল পর্যায়ে কতটা পৌঁছুবে তা ভাবনার বিষয়। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা, সিলেট ও কিশোরগঞ্জ জেলায় ২ কোটি ৫ লাখ মণ ধান নষ্ট হওয়ায় টাকার অংকে ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ২ হাজার ৫৩ কোটি টাকা। এ বিপুল খাদ্য ঘাটতি পূরণে সরকারকে দ্রুত ও যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে। দুর্গত এলাকায় খাদ্য-নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। এখনই সরকারের ভিজিএফ (ভালনারেবল গ্রুপ ফিডিং) বা দুঃস্থ খাদ্য সহায়তা কর্মসূচীর গ্রহণ খুবই জরুরী। এছাড়া ওএমএস (ওপেন মার্কেট সেইল) এর মাধ্যমে একটি সুষম বন্টন ব্যবস্থা গড়ে তোলা যাতে পরবর্তী ফসল উঠা পর্যন্ত স্বল্প মূল্যে খাদ্য সরবরাহ অব্যাহত থাকে। বিকল্প কর্মসংস্থানের জন্য ধনী-গরীব সব কৃষককেই সহজ শর্তে নগদ অর্থ সহায়তা দেওয়ার ব্যবস্থাও নিতে হবে। এছাড়া আসন্ন বর্ষায় স্থানীয় জাতের মাছের পোনা হাওরের পানিতে ছাড়ার উদ্যোগ নিতে হবে। এসব ত্রাণ ও পুনর্বাসন কাজ যাতে দুর্নীতিমুক্ত থাকে সেজন্যে কড়া তদারকি ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। ধান ও মাছের পঁচা দুর্গন্ধে ও দূষিত পানির কারণে ডায়রিয়াসহ নানান ধরনের অসুখ-বিসুখ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে দুর্গত এলাকায়। এ সময়ে শিশুরা পুষ্টিহীনতায় আক্রান্ত হয়ে রোগাক্রান্ত হয়ে পড়তে পারে। এ জন্য জরুরী স্বাস্থ্য সেবা চালু রাখার ব্যবস্থাও নিতে হবে। হাওরের ফসল-রক্ষা বাঁধগুলোর মেরামত কাজ জরুরীভিত্তিতে সেরে নিতে হবে শুষ্ক মওসুমেই। এছাড়া পানি নিষ্কাষণের জন্য যথেষ্ট সেতু ও কালভার্টের ব্যবস্থা রেখে গ্রামীন রাস্তাঘাট তৈরী করতে হবে যাতে জলবদ্ধতার সৃষ্টি না হয়।
হাওর অঞ্চলগুলোর সাথে যোগাযোগ ব্যবস্থা দুর্গম থাকায় বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের কাজের তদারকি কঠিন হয়ে পড়ে। ফলে ব্যাপক দুর্নীতির সৃষ্টি হয়। দুর্নীতির কারণে অনেক প্রকল্পই ভেস্তে যায়, এবারও তাই হয়েছে। ফসল প্রতিরক্ষা বাঁধগুলোতে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতি হওয়ায় বানের পানিতে ফসল তলিয়ে গেছে। এসব অবকাঠামো তৈরী ও মেরামত নিয়ে যে দুর্নীতি হয় তা খুবই দুর্ভাগ্যজনক। সরকারী অর্থ ব্যয়ে যেসব বাঁধ নির্মাণ ও মেরামত করা হয়েছিল সেগুলোর কাজ ঠিকমতো ও সময়মতো করা হয়নি বলেই ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এত বেশী হয়েছে। প্রকল্প বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় স্থানীয় জনগণকে সম্পৃক্ত করাতে পারলে দুর্নীতি ঠেকানো যেত। স্থানীয় জনগণের অংশগ্রহণের ফলে মনিটরিংয়ের কাজটি সহজ হবে এবং দুর্নীতিও কমে আসবে। দুর্গত এলাকায় ত্রাণ ও পুনর্বাসনের জন্য যে উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে সেগুলো যাতে দুর্নীতির বানে ভেসে না যায় সে জন্য এখনই সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। অনিয়ম ও দুর্নীতি দমনের মাধ্যমে সরকারকে এ চ্যলেঞ্জের মোকাবিলা করতে হবে। দুঃস্থ পরিবারগুলোর তালিকা তৈরীর জন্য দলীয় রাজনীতিকে দূরে সরিয়ে রাখতে হবে। নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু তালিকা করতে কিছু নীতি ও শর্ত নির্ধারণ করে দিতে হবে যাতে প্রকৃত দুঃস্থ পরিবারগুলো বাদ না পড়ে যায়। একদিকে দুর্নীতি প্রতিরোধ করার জন্য নিয়মিত তদারকি ব্যবস্থা গড়ে তোলা ও অপরদিকে দুর্নীতিবাজদেরকে প্রতিহত করতে কঠোর শাস্তির প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণের ওপরই নির্ভর করছে ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মসূচীসমূহের সাফল্য।
প্রকৃতি-নির্ভর হাওর অঞ্চলের মানুষের উন্নয়ন বলতে তেমন কিছু নেই। এখানে ছিটেফুটো উন্নয়ন বলতে যা বুঝায় তা হলো হাওড়ের ফসল রক্ষার জন্য নিম্নমানের কিছু মাটির তৈরী বাঁধ ও অপরিকল্পিতভাবে নির্মিত গ্রামীন কিছু কাঁচা রাস্তাঘাট। এর যৎসামান্য সুফল দ্বারা এই বিশাল জনপদের উন্নয়ন মোটেই চোখে পড়ার মত নয়। প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে পড়ে এখানকার মানুষ কোন রকমভাবে টিকে আছে, কিন্তু দারিদ্র সীমা অতিক্রম করে উন্নয়নের পথে হাঁটতে পারছে না। পরিকল্পিত উন্নয়ন ধারার বাইরে থাকায় উন্নয়নের ছোঁয়া হাওর এলাকায় নেই বললেই চলে। সরকার ২০-বছর মেয়াদী (২০১২-২০৩২) ২৮,০০০ কোটি টাকা বাজেটের হাওর উন্নয়নের একটি মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। ইতোমধ্যে এর ৫ বছর পার হতে চলেছে, কিন্তু উন্নয়নের পালে এখনও হাওয়া লেগেছে বলে মনে হয় না। এ মহাপরিকল্পনার উন্নয়ন তালিকায় কি আছে হাওরবাসীর অনেকেই তা জানে না। হাওর জনপদের মানুষকে উন্নয়নের মূল ধারায় আনতে হলে বিশেষজ্ঞ ও স্থানীয় জনগণের অংশগ্রহণের মাধ্যমে হাওর অঞ্চলের উন্নয়নে সমন্বিত পরিকল্পনা নিতে হবে। প্রকল্প বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রলালয়গুলোর কাজের সমন্বয় নিশ্চিত করতে হবে। প্রকল্প বাস্তবায়ন ও মনিটরিংয়ের ক্ষেত্রে স্থানীয় জনগণকে সম্পৃক্ত করতে হবে।
হাওর এলাকা প্রাকৃতিক সম্পদে খুবই সমৃদ্ধ। পরিবেশের ক্ষতি না করে এ সম্পদকে কাজে লাগাতে হবে যাতে মানুষের জীবনমান বৃদ্ধি পায়। মানব-সৃষ্ট বিপর্যয় ও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে প্রকৃতি ও পরিবেশ আজ হুমকির সম্মুখীন। অকাল বন্যা, জলাবদ্ধতা, পাহাড়ি ঢলের সাথে আগত পলি মাটির দ্বারা হাওরের গভীরতা হ্রাস, ইত্যাদি হাওরের পরিবেশকে বিপন্ন করে তুলেছে। ফলে হাওর এলকার টেকসই উন্নয়নের জন্য পরিবেশ সচেতনতাকে বেশী গুরুত্ব দিতে হবে। হাওরের জলমহালগুলোর লীজ প্রথা বাতিল করে মধ্যস্বত্বভোগী ও ইজারাদারদের কবল থেকে মৎস্যসম্পদকে রক্ষা করতে হবে। এরা জলমহালগুলোর কোন উন্নয়নতো করেই না, বরং মাছকে নির্বংশ করে ফেলে। ইজারাদাররা জলমহালের পানি পাম্প দিয়ে সেঁচে সব মাছই তুলে নেয়। ফলে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ হাওর থেকে বিলুপ্ত হওয়ার পথে। বর্ষার দীর্ঘ ছয়টি মাস হাওরের মানুষের কোন কর্মসংস্থান থাকে না। এ সময়ে গ্রামীন ও কৃষিভিত্তিক কুটিরশিল্পের মাধ্যমে তাদের কর্মসংস্থানের উদ্যোগ নিতে হবে। আজকাল ঘরে বসেই অনেক শিল্পদ্রব্য তৈরী করে বিশ্ব বাজরে রপ্তানী হচ্ছে। বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণের দ্বারা তাদের মধ্যে সৃজনশীল দক্ষতা সৃষ্টি করতে হবে। সেই সাথে আয় বৃদ্ধিমূলক কাজে সহজ শর্তে পুঁজি ও আর্থিক সহায়তার ব্যবস্থা করতে পারলে হাওরবাসীরা এক সময় আত্মনির্ভরশীলতা অর্জনে সক্ষম হতে পারবে। সর্বোপরি জনসম্পদ ও স্থানীয় সম্পদ উন্নয়নের দ্বারা হাওর অঞ্চলকে একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ সমৃদ্ধ জনপদে পরিণত করার অঙ্গীকার পালনে রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকতে হবে।
বিষয়: বিবিধ
১৩৬৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন