নারী-পুরুষের অবাধ স্বাধীনতা
লিখেছেন লিখেছেন শিহাব আহমদ ০২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ১০:০৯:৩৫ রাত
বিদ্রোহী কবি নজরুল পরাধীনতার শৃঙ্খল ভাঙ্গার জন্য তাঁর বিদ্রোহী কবিতায় বলেছেন, ”আমি তাই করি ভাই যখন চাহে এ মন যা” অথবা ”আমি অনিয়ম উচ্ছৃঙ্খল, আমি দ'লে যাই যত বন্ধন, যত নিয়ম কানুন শৃংখল” - এটা দেশের এক অস্বাভাবিক পরিস্থিতি পরিবর্তনের উদাত্ত আহ্বান ছিল তাঁর কবিতায়। কিন্তু স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে ’মন যাহা চায়’ তা যেমন করা যায় না তেমনি ’অনিয়ম-উচ্ছৃঙ্খল’ হওয়াও যায়না। স্বাধীনতা মানুষের জন্মগত অধিকার হলেও এর মানে উচ্ছৃঙ্খলতা ন মানব মনের প্রকৃতিগত এক বৈশিষ্ঠ্য হলো তার অবাধ বিচরণ। কল্পলোকে তার বিচরণ বাধা-বন্ধনহীন। কিন্তু মনের এ অবাধ স্বাধীনতাকে নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রকৃতিগতভাবেই সব মানুষের মধ্যেই বিবেকবোধ নামীয় আর একটি বৈশিষ্ঠ্য সক্রিয় রয়েছে। ন্যায়-অন্যায়, সত্য-মিথ্যা, বৈধ-অবৈধ এবং ভাল ও মন্দের পার্থক্য বোঝার স্বাভাবিক জ্ঞান-সম্পন্ন এ বিবেকবোধই মানুষের চিন্তা-ভাবনাকে নিয়ন্ত্রণ করে। মানুষ শুধু সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীবই নয়, সামাজিক জীবও বটে। তার নিজের কাছে যেমন মনের চিন্তা-ভাবনার জবাবদিহিতা রয়েছে তেমনি সমাজ ও রাষ্ট্রের কাছেও তাকে জবাবদিহি করতে হয়। সর্বোপরি স্রষ্টার কাছেতো রয়েছে তার চূড়ান্ত জবাবদিহিতা। তাই আপন স্বার্থেই নৈতিকতার নির্দ্ধারিত গন্ডীর মধ্যেই তাকে বিচরণ করতে হয়। অর্থাৎ মানুষ পরস্পরের স্বাধীনতার সাথে সমন্বয় করে নিয়ন্ত্রিত স্বাধীনতা ভোগ করে থাকে যাতে সামজিক ও রাষ্ট্রীয় শান্তি ও শৃঙ্খলা এবং নীতি-নৈতিকতা বজায় থাকে। শান্তি, শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তার স্বার্থে মানুষকে নিয়ম-কানুন শৃঙ্খলা মেনে জীবন যাপন করতে হয়। মানব জীবনের শান্তি, শৃঙ্খলা, নিরাপত্তা ও সমৃদ্ধিকে নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ব্যক্তি বা চিন্তার স্বাধীনতার একটা সীমারেখা থাকাটাই বাঞ্ছনীয়। ব্যক্তির অবাধ স্বাধীনতাকে একটা নিয়ম-কানুন-শৃঙ্খলার মধ্যে করে রাখতে না পারলে অপরের স্বাধীনতা বিঘিœত বা বিপন্ন হওয়ার আশংকাই প্রবল। এ থেকে বুঝা যায় কোন স্বাধীনতাই অবাধ নয়, মানুষের স্বার্থেই এর সীমাবদ্ধতা রয়েছে। সুস্থ, স্বাভাবিক ও শান্তিপূর্ণ জীবনের জন্য মানুষকে তার ইচ্ছা-আকাঙ্খা ও চাহিদার মধ্যে সামঞ্জস্য বিধান করে চলতে হয়।
মানুষ সামাজিক জীব। সমাজ হলো এক সাথে বসবাসের একটি সুশৃঙ্খল ব্যবস্থার নাম। নারী ও পুরুষ নিয়েই গঠিত হয়েছে পরিবার ও সমাজ। নারী ও পুরুষের পবিত্র সম্পর্ক সৃষ্টি হয়েছে বিবাহ-বন্ধনের মাধ্যমে। সুতরাং বিবাহ হলো বৈধভাবে পারিবারিক জীবন যাপনের এক ধর্মীয়, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি। মানব সভ্যতার সূচনা থেকেই বিবাহের মাধ্যমে নারী-পুরুষের সম্পর্ক সৃষ্টি এক আদি ও অকৃত্রিম পদ্ধতি। পরিবারকে কেন্দ্র করেই বিকশিত হয়েছে বিশ্বব্যাপী মানব সমাজ। মানুষ ছাড়া অন্যসব প্রাণী শুধুমাত্র প্রজননের প্রয়োজনেই যৌনাচরণ করে থাকে। শুধু মানুষই প্রজনন এবং শান্তি ও সুখের এক স্বপ্ন-নীড় গড়ে তোলার জন্য বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপন করে। বিবাহ-বহির্ভূত অবাধ যৌন-মিলন ধর্মীয় ও সামাজিকভাবে অবৈধ ও পাপাচার। উচ্ছৃঙ্খল যৌনতার কারণে মানুষের পারিবারিক জীবন ধ্বংস হয়ে যায়, সামাজিক শৃঙ্খলা বিঘ্নিত হয়, সমাজ অনাচার ও অসুস্থতায় আক্রান্ত হয়। প্রকৃতিগত কারণেই পুরুষের কাছে নারী আকর্ষনীয় হয়ে থাকে। নৈতিক শৈথিল্যের কারণে পুরুষ জাতির লোলুপ দৃষ্টি নারীর ওপর পতিত হয়, ফলে নারী যৌন নির্যাতনের শিকার হয়, তাদের শ্লীলতাহানি ঘটে থাকে। পুরুষ ও নারী যখন পরস্পরের সাথে অবাধ বিচরণের সুযোগ পায় তখন তাদের মধ্যে অবৈধ সম্পর্ক গড়ে ওঠার প্রবণত বাড়ে। সেই সাথে নারীর শ্লীলতাহানির ঘটনাও বেড়ে যায়। আবার প্রকাশ্য বেহায়পনা এবং অশ্লীল পোষাক ও উগ্র সাজ-সজ্জার দ্বারা কিছু সংখ্যক নারী নিজেদেরকে পুরুষদের লোলুপতার শিকার বানিয়ে নেয়। নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা ও অশ্লীলতা বিবাহ-বহির্ভূত উচ্ছৃঙ্খল যৌনাচারকে প্রশ্রয় দেয়। আমরা আমাদের সমাজে এ ধরনের ঘটনা প্রায়ই প্রত্যক্ষ্য করে থাকি। ইদানীং আধুনিকতার দোহাই দিয়ে নারীর স্বল্প-বসনা হয়ে প্রকাশ্যে চলাফেরা এবং দৈহিক সৌন্দর্যকে খোলামেলাভাবে সবার সামনে প্রদর্শন করার প্রবণতা বেড়ে গেছে। ফলে আজকের নারী সমাজের অনেকেই ঈভ-টিজিং, ধর্ষণ, পরকীয়া, ব্যভিচার, অবৈধ গর্ভপাত, এমনকি আত্মহত্যা ও খুন, ইত্যাদি অপকর্মের শিকার হচ্ছেন। তাই শান্তি ও নিরাপত্তার স্বার্থে সমাজে নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা ও অশ্লীল আচরণ ধর্মীয় বিধান অনুযায়ী এবং সামাজিকভাবে নিষিদ্ধ ও নিন্দনীয়।
পশ্চিমা বস্তুবাদী বিশ্ব আধুনিকতার দোহাই দিয়ে নারী সমাজে নগ্নতা ও অশ্লীলতা ছড়ানোর প্রয়াস পাচ্ছে। দুটি কুমতলব তাদের এ হীন ষড়যন্ত্রের পিছনে কাজ করছে - এর একটি হলো নগ্নতার প্রসার ঘটিয়ে অবৈধ ও নির্বিচার যৌনতার স্বাদ আস্বাদন, এবং অপরটি হলো তাদের ব্যবসায়িক পণ্যের বিজ্ঞাপনে নারী-দেহকে প্রদর্শনী বানিয়ে ব্যাপক মুনাফা অর্জন। ইদানীং আমাদের সমাজেও আধুনিকতা ও প্রগতিবাদের নামে পশ্চিমা ধাঁচের নারী স্বাধীনতার জোয়ার বইছে। এ জোয়ারে নারী এখন বহির্মুখী। গৃহের অন্তরাল থেকে অবরোধ ভেঙ্গে বাইরের মুক্ত পরিবেশে ক্রমশই বাড়ছে নারীর অবাধ বিচরণ। শিক্ষা ও কর্মজীবনে তারা পুরুষের পাশাপাশি অবস্থান করছে। ফলে পুরুষের সাথে একই কাতারে পাল্লা দিতে গিয়ে বাড়ছে তাদের বিড়ম্বনা। কর্মজীবি নারীদের জীবন ঘর-বাইরের চাপে এখন ভারাক্রান্ত। নারীর এই বহির্মুখী প্রবণতা বিনষ্ট করেছে পারিবারিক অনাবিল শান্তির পরিবেশ। আধুনিক ব্যস্ত জীবনের প্রভাবে পারিবারিক ভারসাম্য হারিয়ে যাচ্ছে, পরিবারে শুরু হয়েছে ভাঙ্গন। ভগ্ন পরিবারের শিশুরা যথাযথ যত্ন ও পরিচর্যার অভাবে হারিয়ে ফেলছে মানসিক ভারসাম্য। অযত্নে বেড়ে ওঠা এসব শিশু-কিশোরদের মধ্যে ক্রমেই বেড়ে চলেছে বিভিন্ন ধরনের অপরাধ। উগ্রবাদী নারী-স্বাধীনতা নারীর পোষাক-পরিচ্ছদ ও আচরণ বদলে দিচ্ছে। নারী তার স্বাভাবিক লজ্জাশীলতা হারিয়ে নিমজ্জিত হচ্ছে নগ্নতা ও অশ্লীলতার আবর্তে। নগ্নতা প্রকৃতিগতভাবেই মানুষের মনে কাম-রিপুর উদ্রেক করে এবং কুবাসনা ও লালসার জন্ম দেয়। প্রগতি ও নারী-স্বাধীনতার নামে নারীকে বিবসনা করার কুটচাল চালানো হচ্ছে। নারী-দেহকে পণ্য করে পশ্চিমা কায়দায় অশ্লীল ছায়াছবি ও যৌন-আবেদনমূলক বিজ্ঞাপনচিত্র নির্মিত হচ্ছে যা সমাজে অনৈতিকতার বিষ-বাষ্প ছড়াচ্ছে। ইউটিউবের মাধ্যমে ছড়ানো হচ্ছে পর্ণগ্রাফি ও ব্লুফিল্ম (Blue film) । তরুণ-তরুণীরা এসবে আসক্ত হয়ে তাদের নৈতিক চরিত্রকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। ছাত্রসমাজ পড়াশুনায় ফাঁকি দিয়ে ইন্টারনেট ব্রাউজিংয়ের মাধ্যমে এসব অশ্লীল কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়ছে। বর্ষবরণ, ভ্যালেন্টাইন্স-ডে, ইত্যাদি উৎসবে তরুণ-তরুণীর অবাধ মেলামিশা তরুণীদের শ্লীলতাহানির জন্য দায়ী। জাতির ভবিষ্যত নাগরিকদের জীবন এখন ধ্বংসের পথে।
নারী তার শ্লীলতা বজায় রেখে আধুনিক ও নৈতিক শিক্ষায় শিক্ষিত ও মার্জিত নাগরিক হিসেবে সমাজে তার অবদান রাখুক এটা সবাই চায়। ধর্মীয় ও সামাজিক অনুশাসন মেনে নারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ও কর্মক্ষেত্রে বিচরণ করতে পারবে, এমনকি ব্যবসা-বাণিজ্যও পরিচালনা করতে পারবে। তবে এটা নিশ্চিত করতে হবে যে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এবং কর্মক্ষেত্রে নারী যাতে যৌন নির্যাতন, বঞ্চনা ও শোষনের শিকার না হয়। নারীর সুস্থ, সুন্দর ও স্বাভাবিক জীবনের এসব অধিকারকে স্বীকৃতি দিতে কারও আপত্তি নেই। অথচ এক শ্রেণীর এদেশীয় প্রগতিবাদীরা নারী স্বাধীনতার নামে পশ্চিমা বেহায়পনার অবাধ প্রচলনকে আধুনিকতা বলছেন এবং এর বিরোধিতাকে মধ্যযুগীয় সংস্কার আখ্যা দিচ্ছেন। তারা আমাদের আবহমান মূল্যবোধকে বৃদ্ধাঙ্গুলী প্রদর্শন করে নারীকে যৌন অনাচারের দিকে ঠেলে দেওয়ার পায়তারায় লিপ্ত। প্রগতির নামে নারীকে অশ্লীলতা ও লজ্জাহীনতার ফাঁদে ফেলে তার দেহকে ভোগ্যপণ্য ও লালসার বস্তুতে পরিণত করতে চায় এরা। দুশ্চরিত্র ও দুর্বল চিত্তের মানুষ এদের কুপ্ররোচনার ফাঁদে পা দিয়ে অবৈধ যৌন লালসা চরিতার্থ করার প্রয়াস পায়। যারা নারী-পুরুষের অবাধ বিচরণকে সমর্থন করেন তাদের উদ্দেশ্যে একটা উদাহরণ পেশ করতে চাই। কয়েক বছর আগে পহেলা বৈশাখে দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের টিএসসি চত্ত্বরে দিনে-দুপুরে পুলিশ সদস্যদের সামনেই ছাত্রলীগের বখাটে ছেলেরা মা-বোন-শিশুদের উপর শ্লীলতাহানির ঘটনাটি ঘটানোর সাহস পেয়েছিল। নারীর যৌন নির্যাতনের ঘটনা প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্যভাবে এদেশে এখন অহরহই ঘটছে। অতি সম্প্রতি আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারতের বেঙ্গালুরুতে ইংরেজী নববর্ষ বরণের রাতে গণ শ্লীলতাহানির যে ঘটনাটি ঘটে তা নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশার বিষফল হিসেই চিহ্নিত করা যায়।
বর্তমান বিশ্বে আমেরিকা নারী স্বাধীনতার ও মানবাধিকারের সবচেয়ে বড় প্রবক্তা। এতদসত্ত্বেও বেপর্দা ও নগ্ন সংস্কৃতির কারণে সেখানকার সমাজে বহু নারী যৌন নিগ্রহের শিকার হচ্ছে। আমেরিকার সবচেয়ে সুশৃঙ্খল সেনাবাহিনীর মধ্যে ক্রমাগতভাবে নারীর শ্লীলতাহানির ঘটনায় দেশটি পড়েছে ইমেজ সংকটে। সম্প্রতি নিউ ইয়র্ক থেকে সংবাদ সংস্থা এনা পরিবেশিত খবরে জানা যায়: ‘রণাঙ্গনে শত্রুর হামলায় যত সৈন্য নিহত হচ্ছে তার চেয়ে বেশি মহিলা সৈনিক যৌন হামলার শিকার হচ্ছেন আমেরিকান সেনা ছাউনিগুলোতে। আমেরিকান সৈন্য কর্তৃক মহিলা সৈনিকদের যৌন হামলার শিকার হবার উদ্বেগজনক ঘটনা ক্রমাগতভাবে বাড়ছে। একদিকে হামলাকারীর বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির পদক্ষেপ গ্রহণ এবং একই সঙ্গে হামলার ঘটনা বেড়ে চলায় পেন্টাগনের টেনশন এখন প্রকট। ২০১০ সালে আমেরিকার বিভিন্ন ক্যান্টনমেন্ট এবং রণাঙ্গনের ছাউনিতে ১৯ হাজার মহিলা সৈন্য স্বদেশী সৈন্য কর্তৃক যৌন লালসার শিকার হন। এর মধ্যে মাত্র ৩১৫৮ জন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠিত যৌন হামলা প্রতিরোধ ও বিচার বিভাগে অভিযোগ দায়ের করেন। অন্যেরা আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগ করতে আগ্রহী হননি, কারণ তারা হামলার শিকার হন তাদেরই ঊর্ধ্বতন অফিসার অথবা অধিনায়ক দ্বারা। এসব ভিকটিমের আশঙ্কা যে, বিচার তো পাবেনই না, উপরন্তু সহকর্মীদের বিরূপ দৃষ্টির মুখে পড়বেন। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ২০১১ সালে পেন্টাগন এবং প্রতিরক্ষা সচিব রবার্ট গেটস এবং সাবেক সচিব ডোনাল্ড রামসফিল্ডের বিরুদ্ধে ১৭ জন অফিসার মামলা করেছিলেন। তারা অভিযোগ করেন যে, যুক্তরাষ্ট্র সেনাবাহিনীর যৌন হামলার ঘটনা কিংবা ধর্ষণের বিষয়গুলো যাতে প্রকাশ না হয় সে ধরনের একটি সংস্কৃতি তৈরি করা হয়েছে। এমনকি ধর্ষক অথবা হামলাকারীরা যাতে শাস্তি না পায় সে ব্যবস্থাও খোলা রাখা হয়েছে। যার বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়েছে তার অধীনে কাজ করতেও বাধ্য করা হয় অভিযোগকারিণীকে। আরও অভিযোগ করা হয় যে, সেনা ইউনিটের কমান্ডারদের ব্যাপক প্রভাব রয়েছে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণের ওপর। এ জন্য প্রতি ৫টি অভিযোগের ৪টিরও সুবিচার পাওয়া যাচ্ছে না (মানব জমিন/২৮-০৮-২০১৩)।’ সি এন এন এক ভাষ্য অনুযায়ী, ‘পশ্চিমা বিশ্ব নারী স্বাধীনতার নামে নারীর শরীরকে ব্যবসায়িক বিজ্ঞাপনের পণ্য বানিয়ে নিয়েছে, বিশেষ করে ইউরোপ এবং এর প্রচারমাধ্যমের মতাদর্শের অধীন যারা, তারা অবস্থান করছে একটি অতিযৌনতাসর্বস্ব সংস্কৃতির মধ্যে। এসব সমাজে প্রকাশ্য অশ্লীলতা, শরীর প্রদর্শনী ও পর্ণোগ্রাফি খুব সাধারণ বিষয়। আসল ঘটনা হলো, এখনকার মতো আগে কখনোই নারীর শরীরকে এমনভাবে পণ্য হিসেবে উপস্থাপন করা হয়নি। নারীর যৌনতাকে ‘করপোরেটাইজড’ করে উপস্থাপন করার ঘটনাও আগে কখনো ঘটেনি।’ ইদানীং কালের বিজ্ঞাপন-চিত্রই এর বড় প্রমাণ। এভাবেই বর্তমান নারী সমাজকে অবমননাকর পরিস্থিতির মধ্যে ফেলে তাদেরকে যৌন নিপীড়নের সামগ্রী করা ফেলা হয়েছে। পাশ্চাত্য নারীবাদী সমাজ এখন প্রচুর স্বাধীনতা ও অধিকার ভোগ করছে। কিন্তু সে অবাধ স্বাধীনতা ও অধিকার তাদেরকে শান্তি ও নিরাপত্তা দিতে পারেনি। নারীর দেহ আজ নারীর নিয়ন্ত্রণে নেই, তা পর্যবসিত হয়েছে এখন ব্যবসায়িক পণ্যে।
অধুনা সমাজ ব্যবস্থায় যৌন নির্যাতন ও সম্ভ্রমহানির হাত থেকে নারী-শিশু-বৃদ্ধা কেউই রেহাই পাচ্ছেনা। প্রায় প্রতিদিনই যৌন হয়রানি ও ধর্ষণের শিকার হচ্ছে নারী সমাজ। এমনকি দেশে গণধর্ষণের ঘটনাও ঘটছে। এছাড়া প্রতিনিয়ত ইভ টিজিংতো রয়েছে। নারীকে হেয় প্রতিপন্ন করা ও তাদেরকে ন্যায়সঙ্গত অধিকার থেকে বঞ্চিত করার প্রবণতা বেড়েই চলেছে। রাষ্ট্রীয় আইনও তাদেরকে সুরক্ষা দিতে ব্যর্থ হচ্ছে। এজন্য মানুষের মানসিকতা, নৈতিক ও সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয় এবং সুশাসন ও আইনের শাসনের দুর্বলতাই দায়ী। নারী স্বাধীনতার নামে অবাধ মেলামেশা কি এ অবস্থার পরিবর্তন ঘটাতে পেরেছে? বরং এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে বিকৃত রুচির কিছু বুদ্ধিজীবি নারী প্রগতির নামে তাদেরকে উদ্দাম জীবনের আবর্তে ফেলে দিচ্ছে। অবাধ ও বল্গাহীন মেলামেশার কারণে পারিবারিক অনাবিল শান্তির পরিবেশ বিনষ্ট হচ্ছে। নারীর বল্গাহীন স্বাধীনতা ও বহির্মুখী জীবন পরিবারে ভাঙ্গন ও বিবাহ বিচ্ছেদের হারকে বাড়িয়ে দিয়েছে। পরিবার ভেঙ্গে যাচ্ছে, ভেঙ্গে যাওয়া পরিবারের শিশুরা মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে উচ্ছৃঙ্খল ও বখাটে হচ্ছে। বৃদ্ধ-বৃদ্ধারা দিনাতিপাত করছে পরিবার-পরিজনহীন অবস্থায় নিজ গৃহের ভয়াবহ নির্জনতায় এবং একাকীত্বের বেদনায়। আবার অনেকে পরিবার-পরিজন বিবর্জিত ‘ওল্ড-হোমে’ নিঃসঙ্গ জীবন কাটাচ্ছে এবং মৃত্যু প্রহর গুনছে। অন্যদিকে পুরুষেরা বিয়েকে বোঝা মনে করে বিয়ে বহির্ভূত দাম্পত্য জীবনে (live-together) আগ্রহী হয়ে ওঠেছে। কর্মজীবি আধুনিক মহিলারা সন্তান জন্মদানকে ঝামেলা মনে করে নিঃসন্তান থাকা পছন্দ করছে। দত্তক শিশু অথবা পোষা কুকুর-বেড়ালই এদের নিঃসঙ্গ জীবনের নিত্য সাথী। তাই পশ্চিমা সমাজে জনসংখ্যার ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি তাদের ভবিষ্যতকে শঙ্কিত করে তুলেছে। বিদেশী জনশক্তির ওপর তাদের নির্ভরতা তাদের জন্য এখন অপরিহার্য। এ পরিস্থিতিতে অবাধ মেলামেশা বর্জিত ইসলামের মধ্যপন্থী শালীন জীবন ব্যবস্থাই আদর্শরূপে গণ্য হতে পারে।
ইসলামে শালীনতা বজায় রাখার ব্যাপারে আল্লাহ্ তায়ালার সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। আল্লাহ্ নবী- পত্নী তথা সাধারণ নারীদেরকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ”তোমরা জাহেলিয়াত যুগের মত নিজেদের সৌন্দর্যকে প্রদর্শন করবে না, কেননা আল্লাহ্ শুধু চান তোমাদের থেকে অপবিত্রতা দূর করতে এবং তোমাদেরকে পূর্ণরূপে পূত-পবিত্র রাখতে (৩৩:৩৩)।” এই সুরার অপর আয়াতে আল্লাহ্ বলেন, “হে নবী! আপনি আপনার পত্নীগণকে ও কন্যাগণকে এবং মুমিনদের স্ত্রীগণকে বলুন, তারা যেন তাদের চাদরের কিয়দংশ নিজেদের উপর টেনে নেয়। এতে তাদেরকে চেনা সহজ হবে। ফলে তাদেরকে উত্যক্ত করা হবে না। আল্লাহ্ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু (৩৩:৫৯)।” নবী করিম (সাঃ) শালীনতা বজায় রাখা সম্পর্কে বলেন, “নিশ্চয়ই আল্লাহ্ অধিক লাজুক ও পর্দাশীল। তিনি লজ্জা ও পর্দাকে পছন্দ করেন (আবু দাউদ শরীফ হাদিস নং ৪০১২, ৪০১৩, মুসনাদে আহমাদ হাদিস নং ৫৯)। রাসুলুল্লাহ্ (সাঃ) সব সময় নৈতিক চরিত্রের ওপর গুরুত্ব দিতেন এবং আল্লাহর কাছে দোয়া করতেন, “হে আল্লাহ্ আপনার নিকট তাকওয়া ও চারিত্রিক পবিত্রতা প্রার্থনা করছি (সহীহ মুসলিম: যিকির অধ্যায়, তিরমিজি দাওয়াত-যিকির অধ্যায়, ইবনে মাজা: যিকির অধ্যায়)। মানুষ যখনই আল্লাহর স্মরণ থেকে বিমুখ হয় তখন তার ওপর নেমে আসে বিভিন্ন ধরনের বিপদ-আপদ। পরকালীন অনন্ত জীবনের পরিণাম ফল ভুলে গিয়ে শুধু পার্থিব জীবনের সমৃদ্ধি, আনন্দ-সুখ ও ভোগ-বিলাস মানুষকে পথভ্রষ্ট করে ফেলে। অথচ ইসলাম দুনিয়া ও আখিরাতের মধ্যে একটা ভারসাম্য স্থাপন করেছে। ইসলাম মহান আল্লাহ্ মনোনীত ধর্ম ও একটি ভারসাম্যপূর্ণ জীবন ব্যবস্থা। ইসলামের আনুগত্যের মধ্যেই রয়েছে দুনিয়া ও আখিরাতের সাফল্য। তাই একজন মুসলমান তার প্রতিদিনের প্রার্থনায় দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণ কামনা করে। আল্লাহ্ মোমেন মুসলমানদেরকে লক্ষ্য করে বলেন,“হে মোমিনগণ! আল্লাহকে ভয় কর এবং সঠিক কথা বল। তিনি তোমাদের কাজ-কর্ম ও আচরণ সংশোধন করে দেবেন এবং তোমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করবেন। যে কেউ আল্লাহ্ ও তাঁর রসুলের আনুগত্য করে, সে অবশ্যই মহাসাফল্য অর্জন করবে (৩৩:৭০-৭১)।”
বিষয়: বিবিধ
২৪১৬ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন