সন্তান যেন হয় চক্ষু শীতলকারী
লিখেছেন লিখেছেন শিহাব আহমদ ০৭ আগস্ট, ২০১৬, ১১:০৫:২৭ রাত
"হে আমাদের পালনকর্তা, আমাদের স্ত্রীদের ও সন্তানদেরকে আমাদের জন্যে চোখের শীতলতাস্বরূপ দান করো এবং আমাদেরকে মুত্তাকীদের মধ্যে অগ্রগামী করো (২৫:৭৪)।"
পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীন আমাদেরকে এক বিশেষ দোয়া শিখিয়ে দিচ্ছেন যাতে আমাদের স্ত্রী ও সন্তানেরা সচ্চরিত্রতায় ও খোদা-ভীরুতায় এমনই অগ্রগামী হবে যা আমাদের চোখ ও অন্তরের জন্য হবে শীতল ও শান্তিপ্রদ। সন্তানের আমল ও আখলাক এমনই সুন্দর হবে যে মা-বাবার চোখ জুড়িয়ে যাবে। সন্তানের এ চোখ জুড়ানো নয়নতৃপ্তিকর চরিত্র গঠনের দায়িত্ব মা-বাবারই। এ ব্যাপারে মা-বাবা ও শিক্ষকগণই হবেন তাদের জন্য আদর্শস্বরূপ। শিশুরা যেমন দেখে শেখে তেমনই পড়াশুনা করেও শেখে। এগুলোর মধ্যে বৈসাদৃশ্য হলে তাদের মনে বিরূপ প্রশ্নের জন্ম দেয়, তারা বিভ্রান্ত হয়ে পড়ে। পারিবারিক ও প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার মাধ্যমে তাদের মধ্যে গড়ে ওঠে সৎ গুণাবলী। শিশুকালই সততা, সদ্ভাব, সদাচারণ, ধৈর্য, সহমর্মীতা, ইত্যাদি মানবিক গুণাবলী তাদের মধ্যে সঞ্চারিত হওয়ার উপযুক্ত সময়। তাই তাদের পাঠ্যক্রমকে নৈতিক গুণাবলী ও মূল্যবোধ গঠনের উপযোগী করে সাজাতে হবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যা শিখবে পরিবারিক ও সামাজিক পরিমন্ডলে তার অনুশীলন করবে। আমাদের নিজেদের মধ্যে যদি এসব গুণাবলীর অভাব থাকে তবে তার বিরূপ প্রভাব আমাদের সন্তান-সন্ততির ওপর পড়বে। আমাদের সবাইকে সচেষ্ট হতে হবে যাতে নিজেরা সৎকর্মপরায়ণ হব, সন্তানদেরকেও সেভাবে গড়ে তুলব। আমাদের প্রতিদিনের প্রার্থনা হবে:
.... ”হে আমার পালনকর্তা, আমাকে এরূপ ভাগ্য দান কর, যাতে আমি তোমার নেয়ামতের কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করি, যা তুমি দান করেছ আমাকে ও আমার পিতা-মাতাকে এবং যাতে আমি তোমার পছন্দনীয় সৎকাজ করি। (হে প্রভু,) আমার সন্তানদেরকে সৎকর্মপরায়ণ করো, আমি তোমার দিকে প্রত্যাবর্তন করলাম এবং আমি আত্মসমর্পনকারীদের মধ্যে অন্যতম। (৪৬-১৫)।"
পবিত্র কুরআনে উদ্ধৃত এই প্রার্থনায় মা-বাবা ও সন্তানদের মধ্যে সুগভীর সম্পর্ক ও পারস্পরিক দায়িত্ববোধের এক অভূতপূর্ব আকুতি রয়েছে। ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান হিসেবে জীবনের প্রতিটি দিক সম্পর্কেই একটি দিক্-নির্দেশনা দিয়েছে। পারিবারিক জীবন মানব জীবনের এক অতি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এই পরিবারকে কেন্দ্র করেই মানব জীবনের উন্মেষ ও বিকাশ ঘটছে। পরিবারের সদস্য হিসেবে মা-বাবা ও সন্তান-সন্ততি জীবনের এই ধারাকে বহন করে নিয়ে যাচ্ছে সৃষ্টির আদিকাল থেকে। মানব সমাজের মৌলিক প্রতিষ্ঠান হলো তার পরিবার - নারী-পুরুষের বিবাহ বন্ধনের মাধ্যমে যার সূচনা। সন্তান-সন্ততির জন্মদান, তাদের লালনপালন ও তাদেরকে শিক্ষিত ও সৎকর্মপরায়ণ মানুষ হিসেবে গড়ে তোলাই হলো পরিবারের মৌলিক দায়িত্ব। ইসলাম ধর্মে পরিবারের গুরুত্ব যে কি অপরিসীম তা পবিত্র কুরআন ও হাদীসের বিভিন্ন বর্ণনায় প্রতিভাত হয়েছে। পিতা-মাতার কাছে তাদের সন্তান যেমন মহান আল্লাহ্ প্রদত্ত এক বিশেষ নিয়ামত, তাদের চোখের মণি ও ভালোবাসার ধন, ঠিক তেমনি সন্তাদের কাছেও মা-বাবা এক অফুরন্ত রহমতের ছায়া ও নিয়ামতের আধার। মহান আল্লাহ্ ও তাঁর নবী (সাঃ) সন্তানের দায়িত্ব পালনে মা-বাবাকে যেভাবে নির্দেশ দিয়েছেন ও তাদের জন্য দোয়া করতে শিখিয়েছেন, ঠিক তেমনই সন্তানদেরকেও মা-বাবার প্রতি দায়িত্ব পালনে এবং বৃদ্ধাবস্থায় তাদের সাথে সাতিশয় সদাচারণের নির্দেশ দিয়েছেন এবং তাদের জন্য মহান আল্লাহর দরবারে দোয়া করতে শিখিয়েছেন। আল্লাহর নবী (সাঃ) বলেন, ’মা-বাবার সন্তুষ্টিতে আল্লাহ্ সন্তুষ্ট হন এবং তাদের অসন্তুষ্টিতে আল্লাহ্ অসন্তুষ্ট হন।’ পবিত্র কুরআনে আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীন সন্তানদেরকে তাদের মা-বাবার প্রতি সবিশেষ দায়িত্ব পালনের জোর নির্দেশ দিয়ে বলেন:
”তোমার পালনকর্তা আদেশ করেছেন যে, তাঁকে ছাড়া অন্য কারও এবাদত করো না এবং পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার কর। তাদের মধ্যে কেউ অথবা উভয়েই যদি তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হয়; তবে তাদেরকে ‘উহ’ শব্দটিও বলো না এবং তাদেরকে ধমক দিও না, বরং তাদের সাথে বল শিষ্ঠাচারপূর্ণ কথা। তাদের সামনে ভালবাসার সাথে, নম্রভাবে মাথা নত করে দাও এবং বলঃ হে পালনকর্তা, তাদের উভয়ের প্রতি রহম কর, যেমন তারা আমাকে শৈশবকালে লালন-পালন করেছেন (১৭:২৩-২৪)।”
মা-বাবা ও সন্তান পরস্পরকে এক অপ্রতিরোধ্য বন্ধনে আবদ্ধ রাখার জন্যই উভয়ের প্রতি আল্লাহ্ ও তার রাসূল (সাঃ) এসব তাকিদ দিয়েছেন।
পরিবার হলো সন্তানের প্রাথমিক ও গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষাগার। পরিবারের পরিবেশ যত সুস্থ, মার্জিত ও নীতিসম্পন্ন হবে সন্তানের মন-মানসিকতাও ততটা সুস্থ ও স্বাভবিক হবে। মা-বাবার চারিত্রিক বৈশিষ্ঠ্য ও আচার-আচরণ সন্তানের জীবনকে প্রভাবিত করে। এদিকে লক্ষ্য রেখেই আমাদের প্রিয় নবী করিম (সাঃ) বলেন, ’কোন মা-বাবাই তাদের সন্তানকে সদাচারণের মতো উত্তম অন্য কোন শিক্ষাই প্রদান করতে পারেন না (তিরমিযী)।’ এর দ্বারা তিনি পারিবারিকভাবে আদব-কায়দা, কথা-বার্তা ও আচরণে দয়া, বিনয়, ভদ্রতা ও শালীনতা, ইত্যাদি গুণাবরীর চর্চার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। তিনি অরো বলেন, ’তোমরা আল্লাহর প্রতি তোমাদের দায়িত্বের ব্যাপারে সতর্ক হও এবং তোমাদের সন্তানসন্ততির প্রতি হও ন্যায়পরায়ণ ও পক্ষপাতহীন।’ এর মর্মার্থ হলো এদের সবার লালন পালন ও অধিকারের প্রতি রাখতে হবে সুসম দৃষ্টি। সর্বোপরি সন্তানকে সৎ, সত্যবাদী ও ধার্মিক হিসেবে গড়ে তোলার তাকিদ দিয়েছেন তিনি। পবিত্র কুরআনের সুরা লোকমানে মহান আল্লাহ্ তা’য়ালা সবার শিক্ষণীয় বিষয়রূপে পিতা হিসেবে পুত্রের প্রতি হযরত লোকমানের (আঃ) উপদেশাবলী উদ্ধৃত করেছেন:
”আমি লোকমানকে প্রজ্ঞা দান করেছি এই মর্মে যে, আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞ হও। যে কৃতজ্ঞ হয়, সে তো কেবল নিজ কল্যাণের জন্যই কৃতজ্ঞ হয়। আর যে অকৃতজ্ঞ হয়, আল্লাহ্ অভাবমুক্ত, প্রশংসিত। যখন লোকমান উপদেশচ্ছলে তার পুত্রকে বললো: ’হে বৎস, আল্লাহর সাথে শরীক করো না। নিশ্চয় আল্লাহর সাথে শরীক করা মহা অন্যায়।’ আর আমি (আল্লাহ্) মানুষকে তার পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহারের জোর নির্দেশ দিয়েছি। তার মাতা তাকে কষ্টের পর কষ্ট করে গর্ভে ধারণ করেছে। তার দুধ ছাড়ানো হয় দু’বছরে। নির্দেশ দিয়েছি যে, আমার প্রতি ও পিতা-মতার প্রতি কৃতজ্ঞ হও। অবশেষে আমারই নিকট ফিরে আসতে হবে। পিতা-মাতা যদি তোমাকে আমার সাথে এমন বিষয়কে শরীক স্থির করতে পীড়াপিড়ি করে, যার জ্ঞান তোমার নেই; তবে তুমি তাদের কথা মানবে না এবং দুনিয়াতে তাদের সাথে সদ্ভাবে সহাবস্থান করবে। যে আমার অভিমুখী হয়, তার পথ অনুসরণ করবে। অতঃপর, তোমাদের প্রত্যাবর্তন আমারই দিকে এবং তোমরা যা করতে, আমি সে বিষয়ে তোমাদেরকে জ্ঞাত করবো। ’হে বৎস, কোন বস্তু যদি সরিষার দানা পরিমাণও হয় অতঃপর তা যদি থাকে প্রস্তর-গর্ভে অথবা আকাশে অথবা ভূ-গর্ভে, তবে আল্লাহ্ তাও উপস্থিত করবেন। নিশ্চয় আল্লাহ্ গোপন রহস্য জানেন, সবকিছুর খবর রাখেন। হে বৎস, নামায কায়েম কর, সৎকাজে আদেশ দাও, মন্দকাজে নিষেধ কর এবং বিপদাপদে ধৈর্য ধর। নিশ্চয় এটা সাহসিকতার কাজ। অহংকারবশে তুমি মানুষকে অবজ্ঞা করো না এবং পৃথিবীতে গর্বভরে পদচারণ করো না। নিশ্চয় আল্লাহ্ কোন দাম্ভিক অহংকারীকে পছন্দ করেন না। পদচারণায় মধ্যবর্তীতা অবলম্বন কর এবং কন্ঠস্বর নীচু কর। নিঃসন্দেহে গাধার স্বরই সর্বাপেক্ষা অপ্রীতিকর (৩১:১২-১৯)।”
উপরোক্ত আয়াতগুলোতে আল্লাহ্ তা’য়ালা সন্তানের সুশিক্ষার ব্যাপারে এক সুস্পষ্ট নির্দেশনা দিয়েছেন। কিন্তু আমাদের বর্তমান সমাজ কাঠামোয় সন্তানের পারিবারিক সুশিক্ষা ও নৈতিক মূল্যবোধ গঠনের প্রক্রিয়াটি ক্রমশই দুর্বল হয়ে পড়েছে। এ ব্যাপারে পিতা-মাতা ও অভিবাবকবৃন্দের সন্তানের প্রতি যতটা যতœশীল হওয়া উচিত ছিল তারা ততটা দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হচ্ছেন। যদিও আমরা নিজেদেরকে মুসলিম বলে দাবী করি, কিন্তু ইসলাম ও শরীয়তের অনেক বিষয় সম্পর্কে আমাদের জ্ঞান স্বল্প। আমরা আমাদের সুবিধা অনুযায়ী ইসলামের বিধিবিধান কিছু মানি, আবার কিছু মানিনা। এটাই হয়েছে সমাজের জন্য ভয়ঙ্কর। এর ফলে আমাদের সমাজ হয়ে পড়েছে কলুষিত। তাই আমাদের মধ্যে দুর্নীতি, মিথ্যাচার ও অন্যায় চলছে দাপটের সাথে। আমাদের সন্তানদের সামনে এমন কোন আদর্শ নেই যা দেখে তারা সুশিক্ষা পাবে। সুনীতি ও সুশাসন এখন নির্বাসনে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। ফলে আমাদের সমাজের অবস্থান পৌঁছে গেছে ধ্বংসের দ্বার প্রান্তে। সমাজ ও রাষ্ট্রের প্রতিটি স্তরে দুর্নীতি ও অনাচার মাথাচাড়া দিয়ে ওঠেছে। এ সুযোগে একটি আন্তর্জাতিক কুচক্রীমহল স্থানীয় কুচক্রীদের যোগসাজসে আমাদের অবুঝ সন্তানদেরকে ধর্মের নামে বিপথগামী করছে। এরা তাদেরকে জঙ্গীপনায় ঢুকিয়ে দিয়ে দেশের ভিতরে সংঘাত ও অনৈক্য সৃষ্টির প্রয়াস পাচ্ছে। ইসলামী জ্ঞান বিবর্জিত শিক্ষায় উচ্চ শিক্ষা লাভ করে বেশ কিছু তরুণ-তরুণী বিপথগামী হয়ে পড়ছে। ইসলামী জ্ঞানের অভাব ও ইসলামী বিধি-বিধান পুরোপুরি না মানার কারণেই আজ দেশ ও সমাজের এ দুরাবস্থা। এ প্রসঙ্গে সতর্কবাণী উচ্চারণ করে মহান আল্লাহ্ বলেন,
”......তোমরা কি (তাহলে) আল্লাহর কিতাবের একাংশকে বিশ্বাস করো এবং আরেক অংশকে করো অবিশ্বাস? (সাবধান) কখনও যদি কোন (জাতি কিংবা) ব্যক্তি এ ধরনের আচরণ করে, তাদের শাস্তি এ ছাড়া আর কি হবে যে, পার্থিব জীবনে লাঞ্ছনা তাদের ভোগ করতে হবে, তাদেরকে পরকালেও কঠিনতম আযাবের মধ্যে নিক্ষেপ করা হবে। তোমরা প্রতিনিয়ত যা করছো, আল্লাহ্ তা’য়ালা সেসব কিছু থেকে উদাসীন নন (২:৮৫)।”
সব রকম দোদুল্যমানতা ছেড়ে সম্পূর্ণরূপে ইসলামের আনুগত্য করার আহ্বান জানিয়ে আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীন বলেন,
”হে ঈমানদারগণ, তোমরা পুরোপুরিই ইসলামের (ছায়াতলে) এসে যাও এবং কোন অবস্থাতেই (অভিশপ্ত) শয়তানের পদাংক অনুসরণ করোনা, কেননা শয়তান হচ্ছে তোমাদের প্রকাশ্যতম দুশমন (২:২০৮)।”
সুশিক্ষাই সন্তানকে ভবিষ্যতের একজন নিষ্ঠাবান সৎ নাগরিক এবং দক্ষ কর্মী ও পেশাজীবি হিসেবে গড়ে তুলতে পারে। আমাদের দেশে এখন দু’ধরনের শিক্ষা ব্যবস্থা প্রচলিত রয়েছে, যেমন সাধারণ বা পার্থিব শিক্ষা এবং ধর্মীয় বা দ্বীনি শিক্ষা ব্যবস্থা। বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থায় এ উভয় ধরনের শিক্ষাই অপূর্ণাঙ্গ এবং সে কারণে আমাদের চাহিদা পূরণে অপারগ। পার্থিব শিক্ষা যেমন আমাদেরকে দক্ষ, সৎ ও দেশপ্রেমিক পেশাজীবি হিসেবে গড়তে ব্যর্থ হচ্ছে, তেমনি দ্বীনি শিক্ষাও আমাদেরকে জীবনমুখী শিক্ষা প্রদানে ব্যর্থ হচ্ছে। এ দু’টি শিক্ষা ব্যবস্থাই বিপরীতমুখী ও ভিন্ন ধারায় প্রবাহিত। দেশে এখনও একটি সমন্বিত ও পূর্ণাঙ্গ শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি। অথচ দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণের জন্য এ ধরনের সমন্বিত শিক্ষাই অতীব জরুরী। ইসলাম দুনিয়া ও আখিরাত উভয় জীবনের কল্যাণ বিধানের জন্যই এসেছে। জীবিকার জন্য যেমন পার্থিব শিক্ষার প্রয়োজন, তেমনি হালাল রুজী ও সৎভাবে জীবন যাপনের জন্য দ্বীনি শিক্ষারও প্রয়োজন। তাহলে দুনিয়ায় শান্তি ও শৃঙ্খলা বিরাজ করবে, আখিরাতের জীবনেও মুক্তি ও কল্যাণ বয়ে আনবে। তাই আমাদের সন্তানদের জন্য দরকার একটি পূর্ণাঙ্গ ও সমন্বিত শিক্ষা ব্যবস্থা - যা শুধু তাদেরকে দক্ষ ও কুশলী পেশাজীবিই বানাবে না, সর্বোপরি পরহেজগার ও মানবিক মূল্যবোধসম্পন্ন সৎ ও দেশপ্রেমিক মানুষ হিসেবেও গড়ে তুলবে। আমাদের সমাজের আরেকটি বড় সমস্যা হলো মানসম্মত সঠিক শিক্ষার অভাব। শর্টকাট পদ্ধতিতে জ্ঞানার্জন করে একটি সার্টিফিকেট লাভই যেন আমাদের লক্ষ্য। এটা সুশিক্ষার ক্ষেত্রে এক বিরাট অন্তরায়।
বর্তমান প্রেক্ষাপটে পারিবারিক, সামাজিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধগুলো ক্রমশ লোপ পাচ্ছে। বিভেদ, বিভক্তি ও বিচ্ছিন্নতায় নষ্ট হচ্ছে আমাদের দীর্ঘকালের সামাজিক সম্পর্ক ও সংহতি। এ সুয়োগে শয়তানের অনুসারীগণ মানুষকে বিপথগামী করে তাদের অসৎ উদ্দেশ্য হাছিল করতে চায়। ভূয়া জিহাদী স্বপ্ন দেখিয়ে এরা আমাদের সন্তানদেরকে বিভ্রান্ত করছে। জিহাদ সংক্রান্ত ইসলামী বিধি-বিধানের পুরোপুরি ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণে না গিয়ে এ কুচক্রীমহল ইসলামকে হেয় প্রতিপন্ন করার উদ্দেশ্যে জিহাদের খন্ডিত কিছু আয়াত ও হাদীস উপস্থাপন করে বিভ্রান্তির জন্ম দিচ্ছে। আমাদের ভবিষ্যত বংশধরদেরকে এদের মরণ ছোবল থেকে রক্ষা করার দায়িত্ব আমাদের অভিবাবকবৃন্দের। প্রকৃত ইসলামী জ্ঞান অর্জন ও তা অনুশীলনের মাধ্যমে আমরা তাদেরকে বিপথগামীতা থেকে রক্ষা করতে পারব। নতুবা অভিশপ্ত শয়তানের দল আমাদেরকে বিপথগামী করে ছাড়বেই।
ইসলাম হলো শান্তির ধর্ম। এ ধর্মে উগ্রপন্থা বা অকারণে হত্যার কোন বিধান নেই। ” যে কেউ প্রাণের বিনিময়ে প্রাণ অথবা পৃথিবীতে অনর্থ সৃষ্টি করা ছাড়া কাউকে হত্যা করে সে যেন সব মানুষকেই হত্যা করে। এবং যে কারও জীবন রক্ষা করে, সে যেন সবার জীবন রক্ষা করে (৫:৩২)।” এবং ”ধর্মের ব্যাপারে কোন জোর-জবরদস্তি নেই (২:২৫৬)” - মহান ¯্রষ্টা আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীনের এসব বাণীর মধ্যেই ইসলামের ধর্মীয় নীতিকথা পরিস্ফুট হয়েছে। আল্লাহ্ ইসলামকে একটি ’মধ্যমপন্থী ধর্ম’ হিসেবে মানব জাতির জন্য মনোনীত করেছেন। কারণ ইসলামে তিনি কোন বাড়াবাড়ির স্থান রাখেননি। জীবনের সব ক্ষেত্রেই তিনি মুসলমানদেরকে মধ্যমপন্থা ও ন্যায়নীতি অবলম্বনের নির্দেশ দিয়েছেন। কুরআন ও হাদীসের আলোকে আমাদের সন্তানদের জীবনকে গড়তে পারলে তারা যেমনি বিপথগামীতা থেকে রক্ষা পাবে, তেমনি হবে আমাদের নয়ন শীতলকারী।
বিষয়: বিবিধ
২৩৬১ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন