পারিবারিক সহিংসতা প্রসঙ্গে
লিখেছেন লিখেছেন শিহাব আহমদ ০৬ জুন, ২০১৬, ০৪:০১:৪২ রাত
'সংসার সুখের হয় রমণীর গুণে’ - এক সময়ে এ ধারণাটি আমাদের সমাজে ব্যাপকভাবে প্রচলিত ছিলো। কথাটি পুরোপুরি সত্য নয়, বরং অর্ধ সত্য। আসলে পুরুষের সহযোগিতা ছাড়া রমণীর একার পক্ষে সংসারকে সুখী নিবাসে পরিণত করা সম্ভব হয় না । কথাটি হওয়া উচিত ছিলো: 'সংসার সুখের হয় নারী-পুরুষ উভয়ের গুণে’। উভয়ের প্রেম-প্রীতি-ভালোবাসা ও ত্যাগ-তিতিক্ষাই কেবল সংসারকে সুখের স্বর্গ বানাতে পারে। দুয়েক প্রজন্ম পূর্বেও আমাদের গ্রামীণ পরিবারগুলো ছিল যৌথ। বাবা-মা, দাদা-দাদী, চাচা-চাচি ও ফুফুদের নিয়ে ভরপুর ছিল যৌথ পরিবার। বাপ-চাচারা আয়-উপার্জন ও বহির্মহল সামাল দিতেন, অন্দরমহলের কর্তৃত্ব ছিল মা-চাচীদের হাতে। সেসব পরিবারে ছিল একটি অন্তরঙ্গ ও জমজমাট পরিবেশ। গুরুতর বিষয় ছাড়া ছোটখাট ব্যাপারে দাম্পত্য কলহ সৃষ্টি হওয়ার তেমন কোন সুযোগ ছিল না। পরবর্তীতে ব্যক্তি স্বাতন্ত্র্য, পারিবারিক জটিলতা ও স্বার্থের দ্বন্দে ধীরে ধীরে যৌথ পরিবারগুলো ভেঙ্গে পড়েছে। এখন একক পরিবারের সংখ্যাই বেশী। সন্তানেরা বড় হয়ে বিয়ের পর বাবা-মা থেকে আলাদা হয়ে নিজ নিজ সংসার গড়ে তুলছে। বাবা-মায়েরা এখন গ্রামে বা মফস্বল শহরে একাকী জীবন যাপন করেন। ঈদে-পার্বণে দুয়েকবার সন্তানেরা বাবা-মার সাথে ছুটি কাটাতে আসে। এটাই তাদের কাছে এখন বিরাট সান্ত¦না। আধুনিক জটিল জীবনযাত্রার ধকল মেটাতে অধিক উপার্জনের প্রয়োজনে স্বামীর সাথে স্ত্রীকেও যেতে হচ্ছে ঘরের বাইরে। তাদের ছোট্ট সন্তানেরা একাকিত্বের যাতনায় ঘরে সময় কাটায়। অবস্থা নাজুক হয়ে ওঠলে দাদা-দাদী বা নানা-নানিকে নিয়ে আসা হয় পরিস্থিতি সামাল দিতে। এই হলো আমাদের একক পরিবারগুলোর বর্তমান হাল।
যে সুখ-শান্তির আশায় একক পরিবারগুলো গড়ে ওঠেছিল সেখানেও শান্তি নেই। দাম্পত্য জীবনের টানাপড়েন ও কলহ এখন একটি নিত্য-নৈমিত্তিক ব্যাপার। পারস্পরিক মনোমালিন্য যখন সাংঘর্ষিক রূপ ধারণ করে তখন পারিবারিক সহিংসতার ঘটনা ঘটে। সব দেশেই এটা এখন এক প্রকট সমস্যা। আর এ পারিবারিক সহিংসতার মূল কারণ হলো দাম্পত্য কলহ। সাধারণত এর ভুক্তভোগী পরিবারের সবাই হলেও গোটা সমাজে এর প্রভাব পড়ে। আধুনিক জীবনযাপনের পদ্ধতি, ভুল-বুঝাবুঝি, অবিশ্বাস এবং এর ফলে উদ্ভূত অসংযত ও উগ্র আচরণই দাম্পত্য কলহ সৃষ্টি করে। সব যুগেই দাম্পত্য কলহ ছিল, এখনও আছে। দাম্পত্য কলহের কারণে নারী-পুরুষ উভয়ই পারিবারিক ভোগান্তিতে পড়ছে, বিশেষ করে নারীরা হচ্ছে সহিংসতার শিকার। ফলে বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটছে, পরিবার ভেঙ্গে পড়ছে। মা-বাবার বিচ্ছেদে শিশুরা ভুগছে মানসিক যাতনায়, অনাদরে-অযত্নে বড় হচ্ছে তারা। এর প্রভাব পড়ছে তাদের গোটা জীবনে। এটা শুধু বাংলাদেশের ক্ষেত্রেই নয়, উন্নত ও অনুন্নত সব দেশেই পারিবারিক সহিংসতার ব্যাপারগুলো ঘটছে। আমেরিকার 'ন্যাশনাল কোয়ালিশন এগেইন্সট্ ডমেস্টিক ভায়োলেন্স’ এর পরিসংখ্যনে পাওয়া তথ্য মোতাবেক এ দেশটিতে প্রতি ৯ সেকেন্ডে একজন নারী নির্যাতনের শিকার হচ্ছে, প্রতি মিনিটে গড়ে ২০ জন তাদের জীবন সঙ্গীর দ্বারা শারীরিকভাবে নির্যাতিত হয়। আমেরিকার মারাত্মক অপরাধের ১৫ শতাংশই ঘটে পারিবারিক সহিংসতার মাধ্যমে। এর ১৯ শতাংশেই ব্যবহৃত হয় প্রাণঘাতি অস্ত্র। শিক্ষা-সভ্যতায় সর্বোন্নত দেশ আমেরিকার এ ভয়াবহ অবস্থার তুলনায় বিশ্বের অন্যত্র তা অনেকটা সহনীয় বলেই মনে হয়। অথচ পাশ্চাত্যের প্রচার মাধ্যমগুলোতে তাদের দেশের এসব বিষয় খুব একটা গুরুত্ব পায় না, বরং তারা গরীব দেশগুলোর ঘটনাগুলোকেই চিত্রিত করে ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে প্রচার করে।
’সুখের লাগিয়া বাঁধিনু এ ঘর অনলে পুড়িয়া গেলো’ - কবি জ্ঞানদাসের এ চরণটি দাম্পত্য কলহের পরিণতির কথাকেই মনে করিয়ে দেয়। কলহ থেকেই সূত্রপাত হয় নারী নির্যাতনের। পুরুষেরাও যে র্নিাতিত হয় না এন নয়। তবে নারী নির্যাতনে সাধারণত গালিগালাজের সাথে লাথি, কিল, ঘুষি, চপেটাঘাত, বেত্রাঘাত, এমনকি প্রাণঘাতি অস্ত্রও ব্যবহৃত হয়। আমাদের দেশে নারী নির্যাতন বিরোধী আইন থাকলেও সেগুলোর প্রয়োগে রয়েছে অনেক দুর্বলতা ও অবহেলা। ফলে এসব আইন নির্যাতন রোধে কার্যকর ভূমিকা রাখতে ব্যর্থ হচ্ছে। এর মূল কারণ হলো সার্বিকভাবে ধর্মীয় ও নৈতিক মূল্যবোধের অবক্ষয়। পারিবারিক বিরোধ ফয়সালায় পবিত্র কুরআন ও হাদীসে অনেক নির্দেশনা রয়েছে। কিন্তু সামাজিক ও রাষ্ট্রীয়ভাবে তার প্রয়োগ হচ্ছে না। বরং এসব নির্দেশনাকে মধ্যযুগীয় ও অচল বলে সমালোচনা ও অবমাননা করা হচ্ছে। আবার মানব-প্রণীত কোন আইনই নির্যাতনকে কার্যকরভাবে রোধ করতে পারছে না। সম্প্রতি সৌদি টেভিশনে প্রচারিত এক ফ্যামিলি থেরাপিস্টের বক্তব্য নিয়ে পাশ্চাত্যের প্রচার মাধ্যম ইসলামী শরীয়া’র বিরুদ্ধে তুমুল বিতর্ক ও নিন্দার ঝড় ওঠেছে। বক্তব্যটি ছিল স্ত্রীর আচরণ সংশোধন পদ্ধতির প্রসঙ্গ নিয়ে। সৌদি থেরাপিস্টের বক্তব্যটি তাঁর নিজস্ব কোন ফতোয়া নয়, বরং কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে বর্ণিত স্ত্রীর অসংযত আচরণ সংশোধনের একটি প্রতীকি পদ্ধতি যা বর্তমান কালের সহিংসতাকে রোধ করে। মেসওয়াক বা টুথব্রাশের মৃদু আঘাত নির্যাতনের পর্যায়ে পড়ে না, বরং শারীরিক আঘাতের ব্যাপারটিকে নিরুৎসাহিত করে। স্ত্রী যদি মৌখিক সতর্কবাণী উপেক্ষা করে স্বামীর আনুগত্য ও পারিবারিক শৃঙ্খলা ভঙ্গ করতে থাকেন তবে তার আচরণ সংশোধনের জন্য যেসব পদ্ধতি ইসলাম অনুমোদন করে তা হলো: প্রথমত, স্বামী তার মনোভাব প্রকাশের জন্য বিছানায় স্ত্রীর দিকে পেছন ফিরে শয়ন করবে। এতে কাজ না হলে স্বামী আলাদা কক্ষে শয়ন করবে। এরপরও স্ত্রী সংশোধিত না হলে তখনই কেবল মেসওয়াকের দ্বারা আঘাতের বিষয়টি আসতে পারে। তবে মুখমন্ডলে একেবারেই না। কোন আবস্থাতেই স্বামী নিজের রাগ প্রকাশের জন্য এরূপ করতে পারবে না। তাই এটা কোন নির্যাতন নয়, তালাকের কঠিন সিদ্ধান্ত গ্রহণের পূর্বে একটি প্রতীকি ব্যবস্থা মাত্র।
ইসলামের নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) একজন আদর্শ স্বামী হিসেবে কখনোই তাঁর স্ত্রীদের প্রতি সামান্যতম অসংযত আচরণ করেননি। বরং তিনি স্ত্রীকে দাস-দাসীর মত অশালীন ভাষায় গালিগালাজ ও প্রহার করে রাতের বেলায় তাকে নিয়ে একই বিছানায় শয়ন একটি ঘৃণিত কাজ বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি মানুষকে হুশিয়ার করে আরো বলেছেন, 'তুমি (স্ত্রীর) মুখমন্ডলের ওপর আঘাত করো না, তাকে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করো না এবং গৃহ ব্যতীত অন্য কোথাও তাকে পৃথক করে রেখো না’ (সুনান আবু দাউদ)।’ পরিবারকে একটি শান্তিময় আবাসরূপে গড়ে তোলার জন্য আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীন মানব-মানবীকে সৃষ্টি করেছেন। তিনি বলেন, "এবং তাঁর (আল্লাহর) নিদর্শনসমূহের মধ্যে এটিও একটি যে, তিনি তোমাদের মধ্য থেকেই তোমাদের জন্য সঙ্গীনী সৃষ্টি করেছেন যাতে তোমরা তাদের মধ্যে মানসিক সুখ-শান্তি লাভ করতে পার এবং তিনি তোমাদের (উভয়ের) অন্তরে পারস্পরিক ভালোবাসা ও সৌহার্দ্যের বন্ধন সৃষ্টি করেছেন। অবশ্যই চিন্তাশীল লোকদের জন্য এতে রয়েছে নিদর্শনাবলী (৩০:২১)।" তিনি আমাদেরকে নিত্যদিনের প্রার্থনায় শিক্ষা দিয়েছেন, "হে আমাদের পালনকর্তা, আমাদের স্ত্রী এবং আমাদের সন্তান-সন্ততির পক্ষ থেকে আমাদের জন্যে চোখের শীতলতা (নয়ন-প্রীতিকর শান্তি) দান কর এবং আমাদেরকে মুত্তাকীদের (খোদাভীরুদের) জন্যে আদর্শস্বরূপ কর (২৫:৭৪)।"
স্বামী কর্তৃক স্ত্রীকে শারীরিক বা মানসিকভাবে কোন প্রকার নির্যাতন করা ইসলাম কখনো সমর্থন করে না। স্বামী-স্ত্রীর মনোমালিন্যের কারণে কখনো যদি তালাক অপরিহার্য হয়ে ওঠে সে ক্ষেত্রে উভয়কেই তালাকের অধিকার দেওয়া হয়েছে। তবে এ ব্যাপারে নারীর ওপর কোনরূপ যুলুম না করার নির্দেশ দিয়ে মহান আল্লাহ্ বলেন, "আর যখন তোমরা স্ত্রীদেরকে তালাক দিয়ে দাও, অতঃপর তারা নির্ধারিত 'ইদ্দত’ সমাপ্ত করে নেয়, তখন তোমরা নিয়ম অনুযায়ী তাদেরকে রেখে দাও অথবা সহানুভুতির সাথে তাদেরকে মুক্ত করে দাও। আর তোমরা তাদেরকে জ্বালাতন ও বাড়াবাড়ি করার উদ্দেশ্যে আটকে রেখো না। আর যারা এমন করবে, নিশ্চয়ই তারা নিজেদেরই ক্ষতি করবে। আর আল্লাহর নির্দেশকে হাস্যকর বিষয়ে পরিণত করো না। আল্লাহর সে অনুগ্রহের কথা স্মরণ কর, যা তোমাদের উপর রয়েছে এবং তাও স্মরণ কর, যে কিতাব ও জ্ঞানের কথা তোমাদের উপর নাযিল করা হয়েছে যার দ্বারা তোমাদেরকে উপদেশ দান করা হয়। আল্লাহকে ভয় কর এবং জেনে রাখ যে, আল্লাহ্ সর্ববিষয়েই জ্ঞানময় (২:২৩১)।" ইসলামে তালাক একটি বৈধ বিষয় হলেও এর অবস্থান সর্বনিম্ন স্তরে। তাই এ ক্ষেত্রে সতর্কতা ও আল্লাহকে ভয় করার ওপর গুরুত্ত্বারোপ করা হয়েছে। ইসলাম একটি মধ্যমপন্থী ধর্ম হিসেবে বাড়াবাড়ি ও জুলুমকে পরিহার করে স্বামী-স্ত্রী উভয়কেই সংযত আচরণের নির্দেশ দিয়েছে। বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে ইসলামের এ মধ্যমপন্থী নীতিই দাম্পত্য কলহ নিরসন ও পারিবারিক সহিংসতা দূর করতে সক্ষম।
বিষয়: বিবিধ
১২৪০ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
বাংলাদেশে শিশু ও নারী নির্যাতন আইন কার্যকর আছে, কিন্তু অগুনতি পুরুষ তার বলির পাঠা হচ্ছ.
যে স্ত্রী স্বামীকে সর্বস্ব উজার করে দিতে পারে, সে স্ত্রী একটা থাপ্পর খেয়ে তুলকালাম কাণ্ড ঘটিয়ে দেয়, এমন স্ত্রী গলার ফাস। আল্লাহ্ এমন মেয়ে থেকে মুক্তি দিক।
আমিতো মনে করি, ইসলামের আঙ্গিকে স্বামী স্ত্রী উভয়ে দাম্পত্য জীবন পরিচালনায় সচেষ্ট হয়, তাহলে কলহ কখনো হবেনা।
তা ভাই, আপনি বিবাহিত নাকি মৃত?
শরিয়ত মতে স্বামীরই সংসারে বসিং করার কথা থাকলেও সেটা স্ত্রীরা অযাচিতভাবে করে । মনুষ্য আইনও তাকে এ ব্যাপারে পরোক্ষাভাবেই আগলে রাখে ।
ফলে পরিবারে শরিয়ত মোতাবেক যে চেইন এন্ড কমান্ড তৈরি করেই দেওয়া ছিল সেটা বিনষ্ট হয়ে গেছে । স্ত্রীরা চাকরি করলে সেটা সংসারে কদাচ খরচ করে , অথচ সে তার স্বামীর সংসারের দেখভাল না করে মূলত স্বামীর সাথে প্রতারণাই করে । বিয়ের ফলে স্বামীর দায়িত্ব যেমন তার ভরণ পোষন করা , স্ত্রীরও সেরুপ দায়িত্ব স্বামীর সংসারের দেখভাল করা । চাকুরিজীবী স্ত্রীদের সেটা কোনভাবেই করার সুযোগ নেই ।
এতে তাদের মধ্যে গিল্টি ফিলিংসও নেই । স্বামীর কাছ থেকে ভরনপোষন পাচ্ছে ( কিন্তু বিনিময়ে কিছুই দিতে হচ্ছে না ) অন্য দিকে প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে টাকাও পাচ্ছে ( এবং তাও স্বামীর সংসারে ব্যয় করা তার কাছে ইচ্ছামাফিক)।
গাছেরও খাচ্ছে , তলারও কুড়াচ্ছে । উপরি হিসেবে অফিসে পুরুষ কলিগদের সাথে হা হা হি হি করছে । এই সময়ে সে তার সন্তানদের উপরও খেয়াল রাখতে পারছে না যেটা তার স্বামীর আমানত ।
যৌতুক একজন স্বামী নেয় তার স্ত্রীরই বাবার কাছ থেকে তার মেয়েকে বাবার মত সমান পেসে চালানোর জন্য আর মহিলাদেরকেও বুঝতে হবে যে সে শরিয়ত মোতাবেক বিয়ে করেছে , দেন মোহর পেয়েছে এবং ভরনপোষনও পাচ্ছে - সুতরাং যদি সে ইসলামী শরিয়ত মোতাবেক চায় ,তাকে সেভাবে দিতে পারার মানসিকতা নিয়ে গড়ে উঠতে হবে । চাকরি/ক্যারিয়ারের বাহানা তুলে সে যদি ফাঁকিবাজি করতে চায় তাহলে তার স্বামী যদি শারিরীক প্রয়োজন মেটাতে আরেকজনকে বিয়ে করে এবং ম্যাক্সিমাম ভরনপোষন তাকেই করে - সেটা কি সে বরদাস্ত করবে ?
মন্তব্য করতে লগইন করুন