ইসলামের আর্থ-সামাজিক ন্যায্যতা

লিখেছেন লিখেছেন শিহাব আহমদ ৩১ মে, ২০১৬, ০৫:৪০:০৫ বিকাল

ইসলামের আর্থ-সামাজিক ন্যায্যতার বিষয়টি আলোচনার পূর্বে প্রথমে বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে এর ওপর আলোকপাত করা প্রয়োজন। তাহলে পুরো বিষয়টি বুঝতে আমাদের জন্য সহজ হবে। সমগ্র বিশ্বে ধন বৈষম্য ও আর্থ-সামাজিক ন্যায্যতা আজ এক চরম অবস্থা ধারণ করেছে। বিশ্বের সব সম্পদ কুক্ষিগত হচ্ছে গুটিকয়েক ধনকুবেরের হাতে। সুইজারল্যান্ডের দাভোসে অনুষ্ঠিত বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের বার্ষিক সভায় আন্তর্জাতিক সংস্থা অক্সফামের তৈরী 'অ্যান ইকোনমি ফর দ্য ওয়ান পারসেন্টʼ নামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছিল। সুইজারল্যান্ডভিত্তিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান 'ক্রেডিট সুইসʼ -এর একটি রিপোর্টের ওপর ভিত্তি করে তৈরী অক্সফামের সেই প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০১০ সালে ৩৮৮ জনের পুঞ্জিভূত সম্পদের পরিমাণ ছিল বিশ্বের ৫০ শতাংশের সম্পদের সমান। ২০১৪ সালে তা পুঞ্জিভূত হয়ে মাত্র ৮০ জনের হাতে চলে আসে। আর এখন মাত্র ৬২ জনের সম্পদের পরিমাণ বিশ্বের অর্ধেক জনগোষ্ঠীর সম্পদের সমান। আমেরিকার আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে মনোয়ন প্রত্যাশী ডেমোক্রেট দলীয় প্রার্থী বার্নি স্যান্ডার্স তাঁর নির্বাচনী প্রচারণায় বলেছেন, 'ধনতন্ত্রের নামে আমেরিকার ১ শতাংশের শূন্য দশমিক ১ শতাংশ মানুষ এখন পুরো দেশটাকে নিজেদের ব্যক্তিগত নিয়ন্ত্রণে নিয়ে এসেছে। এক ওয়ালমার্ট কোম্পানির মালিক, একই পরিবারের ছয় শরীকের হাতে যে সম্পদ জমা হয়েছে, আমেরিকার ৪০ শতাংশ মানুষের মোট সম্পদের চেয়েও তা বেশি। মাত্র ৪০০ পরিবার আজ আমেরিকার অর্থনীতি নিয়ন্ত্রণ করে। তারা যা ইচ্ছা তা-ই করতে পারে, যেমন খুশি আইন বানাতে পারে, যাকে খুশি ক্ষমতায় বসাতে পারে। এর নাম গণতন্ত্র নয়, এর নাম 'অলিগার্কি' বা গোষ্ঠীতন্ত্র।ʼ এভাবেই সম্পদের পাহাড় জমে ওঠেছে কিছু লোকের হাতে। নামেই গণতন্ত্র, কার্যত সর্বময় ক্ষমতা কুক্ষিগত হয়ে আছে এসব ধনাঢ্য গোষ্ঠীর হাতে।

এই যে পর্বতপ্রমাণ বৈষম্য তা নিঃশেষ করে দিচ্ছে সাধারণ মানুষকে। এর বিরুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শোষিত মানুষ সোচ্চার হয়ে যে আন্দোলনের ডাক দিয়েছিলেন তার নাম ছিল 'এক শতাংশের বিরুদ্ধে নিরানব্বই শতাংশʼ। এ আন্দোলনের কর্মসূচী হিসেবে তারা ঘেরাও করেছিল বিশ্বের তাবৎ ধনকুবেরদের কর্পোরেট ও ফটকা ব্যবসার কেন্দ্রস্থল নিউ ইয়র্কের ওয়াল স্ট্রিট। বিশ্বের সেক্যুলার ও পুঁজিবাদী অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় ধন বৈষম্য একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া হলেও এখন তা অস্বাভাবিকতার চরমে পৌঁছে গিয়ে এক বিপজ্জনক পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। এর মূল কারণ হলো ফটকা ব্যবসা, যা শ্রম ও উৎপাদনের সাথে সম্পর্কহীন এবং শেয়ার ও লগ্নিপত্র বিক্রির মাধ্যমে শুধু টাকা দিয়ে টাকা বানানোর ফন্দী। পরিশ্রমের উপার্জনের চেয়ে পুঁজির বিনাশ্রম আয় অনেক বেশী। তাই উৎপাদনশীল খাতে বিনিয়োগের পরিবর্তে ফটকাবাজী ব্যবসার প্রতি পুঁজি মালিকদের ঝোঁক বেশী। অথচ এক সময় ছিল যখন প্রকৃত অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির সাথে তাল মিলিয়ে পুঁজি লগ্নির প্রসার ঘটেছে। ফটকা ব্যবসায় বিনিয়োগ কোন সম্পদ বৃদ্ধি হয় না ও শ্রমজীবি মানুষের জন্য কর্মসংস্থান তৈরী হয় না, ফলে গরীব মানুষের আয়-উপার্জনের সুযোগও সীমিত হয়ে পড়ে। আর এ ভাবেই অর্থনৈতিক বৈষম্য দ্রুত গতিতে বিস্তৃত হচ্ছে। অক্সফামের প্রতিবেদনের এটাই ছিল মূল বিষয়। এ ছাড়াও রয়েছে হাল আমলের মুক্তবাজার অর্থনীতির একচেটিয়াতন্ত্র, মুনাফার উচ্চ হার আর শোষণের অবাধ রাজত্ব। সম্পদ কুক্ষিগত হওয়ার মূল উপাদান সমূহ যেমন, সুদ, জুয়া, মদ, মুনাফাখোরী, ইত্যাদি সেক্যুলার অর্থনীতিতে বৈধ বিধায় শোষন ও বৈষম্য অবাধ ও ত্বরান্বিত হচ্ছে।

পশ্চিমা বিশ্বের সাধারণ শ্রমজীবি মানুষ যাতে তুমুল আন্দোলনে ফেটে না পড়ে তাই সেখানে রয়েছে সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা। এর মাধ্যমে নিম্ন-আয়ের জনগোষ্ঠীর জন্য ফুড এসিস্টেন্স, মেডিকেইড ও বেকার ভাতা, ইত্যাদি। এগুলো দিয়ে তাদের মুখ বন্ধ করে রাখা হয়েছে বটে, তবে ধনীর হাত গড়িয়ে 'চুঁইয়ে পড়াʼ সম্পদের ভাগীদার হয়ে তাদের জীবন মানের উন্নয়ন ঘটছে না। অপরদিকে সমাজতন্ত্র মানুষের স্বাধীন সত্ত্বার ওপর এমন কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেছে যে সে এক অর্থনৈতিক দাসে পরিণত হয়েছে। তার আয় ও ব্যয়ের স্বাধীনতাকে রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণে এনে সব সম্পদের মালিকানা রাষ্ট্রের হাতে নেওয়া হয়েছে। আবার একদলীয় সরকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতাও কুক্ষিগত করা হয়েছে। এ চরম নিয়ন্ত্রণবাদী ও ব্যক্তি স্বাধীনতা খর্বকারী সমাজতান্ত্রিক মতবাদ ব্যর্থতার গ্লাণি নিয়ে আজ বিশ্ব থেকে বিদায় নিয়েছে। অন্যদিকে মহাবিপদে আছে তৃতীয় বিশ্বের সর্ববৃহৎ ভুখানাঙ্গা জনগোষ্ঠী। তাদের জন্য নেই তেমন কোন সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচী। বৈশ্বিক এ প্রেক্ষাপটে জাতিসংঘ প্রণীত এমডিজি, এসডিজি এবং অন্যান্য সামাজিক ও অর্থনৈতিক কর্মসূচী কোনভাবেই পারছে না গরীব মানুষের ভাগ্যোন্নয়নের সমাধান দিতে, তাদের জঠরের ক্ষুধা মেটাতে। আমাদের দেশের এনজিও কার্যক্রম ও ক্ষুদ্র ঋণ কর্মসূচীও পারেনি গরীবের ভাগ্য বদলাতে। তাই সম্প্রতি নোবল বিজয়ী ডঃ মোহাম্মদ ইউনুস সাধারণ মানুষের ভাগ্যোন্নয়নে 'সামজিক ব্যবসারʼ ধ্যান-ধারণা চালু করেছেন। কিন্তু প্রশ্ন হলো, মানব প্রদত্ত কোন ফর্মূলা কি পেরেছে সমাজের এসব অসঙ্গতি দূর করতে? এ প্রশ্নের উত্তর ও সমাধান আমাদেরকে খুঁজতে হবে ঐশী জ্ঞানের আলোকে। না, এ পর্যন্ত পুঁজিবাদী বা সমাজতান্ত্রিক কোন অর্থনৈতিক মতবাদই মানব জাতির আর্থ-সামজিক ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠিত করতে পারেনি। এ পরিপ্রেক্ষিতে পবিত্র কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে ইসলামের আর্থ-সামাজিক ন্যায্যতার বিষয়টির ওপর আলোকপাত করতে চাই।

মহান সৃষ্টিকর্তা সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে মানুষকে দুনিয়ার বুকে পাঠিয়েছেন তাঁর খলীফা বা প্রতিনিধির মর্যাদা দিয়ে। এ জন্য তিনি মানুষকে দিয়েছেন ভালো-মন্দ বোঝার মত জ্ঞান, বুদ্ধি ও প্রজ্ঞা। তার সাথে দিয়েছেন চিন্তা ও কর্মের স্বাধীনতা। আরও পাঠিয়েছেন দিকনির্দেশনামূলক ঐশী গ্রন্থ এবং পথ-প্রদর্শক হিসেবে নবী ও রাসুল। তাঁরা ঐশীবাণীর আলোকে মানুষকে জ্ঞান ও জীবন কৌশল শিক্ষা দিয়েছেন ও আত্মশুদ্ধির পথ দেখিয়েছেন যাতে তারা সঠিক পথে চলতে পারে। মানুষের ওপর তাঁর এ নিয়ামত প্রসঙ্গে তিনি বলেন, "নিশ্চয় আমি আদম সন্তানকে র্মযাদা দান করেছি, আমি তাদরেকে স্থলে ও জলে চলাচলের বাহন দান করেছি তাদরেকে উত্তম জীবনোপকরণ প্রদান করেছি এবং তাদেরকে অনেক সৃষ্ট বস্তুর ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছি (১৭:৭০)।" আল্লাহর কাছে মানুষের শ্রেষ্ঠত্বের মাপকাঠি হলো ঈমান ও সৎকর্ম। বংশ-মর্যাদা, ধন-সম্পদ, শারীরিক শক্তি, চেহারা বা গায়ের রঙ, কোনটিই তাঁর কাছে শ্রেষ্ঠত্ব হিসেবে গণ্য নয়। এসব ভেদাভেদ দ্বারা মানুষকে হেয় প্রতিপন্ন করাও আল্লাহর নিকট একটি গুরুতর অপছন্দনীয় কাজ। আল্লাহর আইনে সব মানুষই সমান, আর এ আইন ন্যায়নীতির ওপর প্রতিষ্ঠিত। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, "আমি আমার রসূলগণকে সুস্পষ্ট নিদর্শনসহ প্রেরণ করেছি এবং তাঁদের সাথে অবতীর্ণ করেছি কিতাব ও ন্যায়নীতি, যাতে মানুষ ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করে (৫৭:২৫)।" পবিত্র কুরআনে আল্লাহতায়ালা এ বিষয়টির ওপর সবিশেষ গুরুত্বারোপ করেছেন। আপন-পর, ধনী-গরীব, সবল-দুর্বল নির্বিশেষে সব ক্ষেত্রে ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।

ইসলাম বিশ্বাস করে সব সম্পদের মালিকানা আল্লাহর, আর মানুষ আল্লাহর প্রতিনিধি হিসেবে তাঁর প্রদত্ত এসব সম্পদের জিম্মাদার ও ভোগদখলকারী। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ্ বলেন, "তিনি জমিনকে তোমাদের জন্য বাধ্যগত ও বশীভূত করে দিয়েছেন। অতএব, তোমরা এর প্রশস্থতার উপর চলাচল কর এবং আহার কর তাঁর প্রদত্ত জীবিকা থেকে, আর জেনে রাখ তোমাদের আবার জীবিত হয়ে তাঁরই কাছে ফিরে যেতে হবে ( ৬৭: ১৫)।" তবে মানুষকে আল্লাহ্ যে জিম্মাদারীর দায়িত্ব দিয়েছেন তার সাথে তিনি যুক্ত করে দিয়েছেন কর্মের স্বাধীনতা ও জবাবদিহিতা। মানুষ তার ইচ্ছামাফিক সম্পদ অর্জন ও ব্যয় করতে পারবে, তবে এর জন্য পরকালে তাকে পুরোপুরি হিসেব-নিকেশ ও জবাবদিহির সম্মুখীন হতে হবে। যেহেতু আল্লাহ্ সব প্রয়োজন ও অভাবের ঊর্দ্ধে, সেহেতু এসব সম্পদে তাঁর নিজের কোন প্রয়োজন নেই। তাই তিনি চান যথেচ্ছভাবে নয়, ন্যায্যতার ভিত্তিতে সবাই এসব সম্পদ আহরণ করুক ও ভোগ করুক। তিনি বৈধ আয় ও ন্যায্য বন্টনের একটি সুস্পষ্ট বিধি-বিধান জারী করেছেন যাতে মানুষ ন্যায্যতার ভিত্তিতে তাঁর প্রদত্ত নিয়ামত ভোগ করতে পারে এবং তাঁর শুকরিয়া আদায় করতে পারে। সম্পদ শুধু নিজের বেহিসেবী ভোগের জন্যই আল্লাহ্ কাউকে দেননি, এ সম্পদে রয়েছে আত্মীয়-স্বজন ও অবাবগ্রস্তদের জন্যেও সুনির্দিষ্ট অধিকার। সবার প্রাপ্য হক আদায় করার তাগিদ দিয়ে আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীন বলেন, "আত্মীয়-স্বজনকে তার হক দান কর এবং অভাবগ্রস্ত ও মুসাফিরকেও। এবং কিছুতেই অপব্যয় করো না। নিশ্চয় অপব্যয়কারীরা শয়তানের ভাই। শয়তান স্বীয় পালনকর্তার প্রতি অতিশয় অকৃতজ্ঞ (১৭:২৬-২৭)।"

প্রাকৃতিক নিয়ম অনুযায়ীই তিনি জীবিকার ক্ষেত্রে সমতার নীতি অনুমোদন করেননি। এ বৈচিত্রময় বিশ্বে ভৌগলিক পরিবেশ ও জলবায়ুগত কারণে জীবন যাপনের পদ্ধতি ও জীবিকা অর্জনের ক্ষেত্রেও রয়েছে অনেক পার্থক্য। তেমনই পার্থক্য রয়েছে জ্ঞান, বুদ্ধি, মেধা, শক্তি ও দক্ষতার তারতম্যের কারণে। আর এ জন্যেই আল্লাহ্ "একজনের ওপর আরেকজনের বৈষয়িক মর্যাদাকে সমুন্নত করেছেন যাতে করে তারা একজন অপরজনকে সেবক হিসেবে গ্রহণ করতে পারে (৪৩:৩২)।" তাই জীবিকা প্রদানের নীতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, "নিশ্চয় তোমার পালকর্তা যাকে ইচ্ছা অধিক জীবনোপকরণ দান করেন এবং তিনিই তা সংকুচিতও করে দেন। তিনিই তাঁর বান্দাদের সম্পর্কে ভালোভাবে অবহিত, তাদের সবকিছুই তাঁর দৃষ্টির আওতায়।" জীবিকার ক্ষেত্রে তিনি এ তারতম্য এ জন্য করেছেন যেন মানুষের মধ্যে পারস্পরিক নির্ভরশীলতা ও সহযোগিতা বৃদ্ধি পায়, জীবন চক্র সহজ ও সাবলীল হয়ে ওঠে। মানুষের সম্পদ, জ্ঞান, বুদ্ধি, মেধা, শক্তি, কর্ম-দক্ষতা ও জীবিকার তারতম্যের মধ্যে মানুষের জন্য নিহিত রয়েছে আল্লাহর প্রতিনিধি হিসেবে তার দায়িত্ব পালনের পরীক্ষা ও জবাবদিহিতার বিষয়টি। একজন ব্যক্তিবিশেষ তার একার পক্ষে বিবিধ মানবিক সীমাবদ্ধতার জন্য সব রকম চাহিদা পূরণে সক্ষম নয়। অন্যের সেবা ও সাহায্য-সহযোগিতা তার প্রয়োজন। আর মানুষের এ প্রয়োজনকে ঘিরেই সৃষ্টি হয়েছে যাবতীয় অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের। আর এ অর্থনৈতিক কর্মকান্ডকে ন্যায্য পথে পরিচালিত করতেই ইসলাম চায়। আল্লাহ্ তাঁর এ নীতির বিষয়টি সুন্দরভাবে নির্দেশাকারে বর্ণনা করেন, "হে ঈমানদারগণ! তোমরা একে অপরের সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস করো না। কেবলমাত্র তোমাদের পরস্পরের সম্মতিক্রমে যে ব্যবসা করা হয় তা বৈধ। আর তোমরা নিজেদের কাউকে হত্যা করো না। নিঃসন্দেহে আল্লাহ্ তোমাদের প্রতি দয়ালু। আর যে কেউ সীমালঙ্ঘন কিংবা জুলুমের বশবর্তী হয়ে এরূপ করবে, তাকে খুব শীঘ্রই আগুনে নিক্ষেপ করা হবে। এটা আল্লাহর পক্ষে খুবই সহজসাধ্য (৪:২৯-৩০)।"

ইসলাম প্রাকৃতিক নিয়ম নির্ভর এক স্বাভাবিক ধর্ম। এতে যেমন নেই বিলাসী জীবন যাপনের উগ্রতা, ঠিক তেমনি নেই সন্যাসী সেজে জীবন থেকে পালিয়ে বেড়ানো। তাই ইসলামের পথ সহজ, সরল ও প্রাকৃতিক নিয়মের মতই স্বাভাবিক। মধ্যমপন্থা ও পরিমিতিবোধ হলো এ ধর্মের প্রধান বৈশিষ্ঠ্য। অপচয় ও অমিতাচার এ ধর্মে নিষিদ্ধ। এদের ব্যাপারে আল্লাহ্ বলেন, "তুমি একেবারে ব্যয়-কুষ্ঠ হয়োনা এবং একেবারে মুক্ত-হস্তও হয়ো না। তাহলে তুমি তিরস্কৃতি ও নিঃস্ব হয়ে বসে থাকবে (১৭:২৯)।" অর্থাৎ ব্যয়ের ক্ষেত্রে একটি মধবর্তী পথ বেছে নিতে আল্লাহ্ অনুমোদন করেছেন। যেনতেন প্রকারে আয় ও ব্যয় ইসলাম কোনভাবেই সমর্থন করে না। অবৈধ পন্থায় উপার্জনের প্রবণতা সমাজ ও রাষ্ট্রে অশান্তি ও দুর্নীতির সৃষ্টি করে। হালাল পন্থায় পরিশ্রমলব্ধ উপার্জনই ইসলাম অনুমোদন করে। এমনকি হারাম উপার্জনের অর্থে যারা জীবন-জীবিকা নির্বাহ করে তাদের ইবাদত-বন্দেগীও আল্লাহতায়ালার নিকট গ্রহণযোগ্য নয়। প্রতারণা, জালিয়াতি, জুলুম, কার্পণ্য, লুন্ঠন, মজুতদারী, মুনাফাখোরী, ফটকাবাজি, মদ, জুয়া, সুদ, ঘুষ, ভেজাল, ইত্যাদি অবৈধ পন্থায় উপার্জনকে ইসলাম সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। অধিক লাভের আশায় পণ্য ৪০ দিনের বেশী মজুত রাখাও নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কেননা এগুলো সামগ্রিকভাবে মানুষের জন্য ক্ষতিকর এবং অকল্যাণ বয়ে নিয়ে। ইসলাম ব্যবসাকে হালাল করেছে, কারণ ব্যবসা লাভ-ক্ষতি সমভাবে ভাগ করে নেয়। সুদকে করা হয়েছে হারাম, কারণ সুদ পরিশ্রমলব্ধ উপার্জন নয় বরং এটি শোষণের এক বড় হাতিয়ার। সুদে টাকা খাটিয়ে শুধু টাকাই আসে, কেউ ক্ষতির ভাগীদার হয় না। তাই হালাল ও হারামের সুস্পষ্ট ও অলঙ্ঘনীয় সীমারেখা আল্লাহ্ নির্ধারিত করে দিয়েছেন। মহানবী (সাঃ) তাঁর উম্মতকে হুশিয়ার করে দিয়ে বলেছেন, যে কয়টি বিষয়ের জবাবদিহি ব্যতীত কিয়ামতের দিবসে পার পাওয়া যাবে না তার মধ্যে অন্যতম হলো মানুষের সম্পদের হিসাব, অর্থাৎ সম্পদ কিভাবে উপার্জিত হয়েছে ও ব্যয়িত হয়েছে। ইসলামের এ উপার্জন নীতিমালা ও জবাবদিহির ভয় যেনতেন প্রকারে সম্পদ কুক্ষিগত করার প্রবণতাকে রোধ করে দেশ ও সমাজে শান্তির পরিবেশ সৃষ্টি করে।

ইসলামের সম্পদের বন্টন নীতিমালাও সম্পূর্ণ ভারসাম্যপূর্ণ ও ন্যায্য এবং সম্পদ বন্টনের বিধানসমূহ সম্পূর্ণ ইনসাফের ওপর প্রতিষ্ঠিত। হালাল উপার্জনের উর্দ্ধ-সীমা নির্ধারিত না থাকলেও বন্টনের যৌক্তিক নীতিমালার কারণে সম্পদ পুঞ্জিভূত হওয়ার সুযোগ থাকে না। সম্পদের বিলি-বন্টনের ক্ষেত্রে "ধনসম্পদ যাতে শুধু বিত্তশালীদের হাতেই পুঞ্জিভূত হয়ে না যায় (৫৯:৭)" - আল্লাহর এ নির্দেশের প্রতি গুরুত্ব দিয়েছে ইসলাম। এর দ্বারা সম্পদ যাতে শুধুমাত্র বিত্তশালীদের হাতে কুক্ষিগত হয়ে না পড়ে সেদিকে লক্ষ্য রেখে গরীব-নিঃস্ব, অসহায়, অভাবগ্রস্তদের সবাইকে ধনীর সম্পদে অধিকার দান করা হয়েছে। আর এ প্রসঙ্গে আল্লাহ্ বলেন, "তাদের সম্পদের ওপর রয়েছে অভাবগ্রস্ত ও বঞ্চিতদের সুনির্দিষ্ট অধিকার।" উত্তরাধিকার সম্পত্তির বিলিবন্টন স্বয়ং আল্লাহতায়ালা এমন সূক্ষ ও ন্যায্যভাবে করে দিয়েছেন যাতে সম্পদ একজনের হাতে পুঞ্জিভূত হয়ে না পড়ে। আল্লাহ্ প্রদত্ত বিধান অনুযায়ী মৃতের সম্পদ নিকট ও দূরের আত্মীয়-স্বজনের মধ্যে তাদের প্রাপ্য হিস্যা মোতাবেক ভাগ হয়ে যায়। পুত্র সন্তানের চেয়ে মেয়ে সন্তানের অংশকে অর্ধেক করা হয়েছে। কারণ মেয়ে সন্তানকে সংসারের ভরণ-পোষণের সকল খরচ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। সুতরাং খরচ বেঁচে যাওয়ায় তার অর্জন কম হচ্ছে না, বরং ন্যায্যতা বজায় থাকছে। মোহরানা থেকে প্রাপ্ত সম্পদের ওপর মালিকানা সম্পূর্ণ নারীর নিজের। পৈর্তৃক সম্পত্তি ছাড়াও নারী মালিক হয়ে থাকে তার স্বামী, সন্তান, মা, ভাই-বোন ও অন্যান্য ঘনিষ্ট স্বজনের সম্পদে। নারীর অর্জিত সম্পদ বৈধ ব্যবসায়ে বিনিয়োগের ওপর অনুমোদন রয়েছে ইসলামে। পুরুষ ও নারী উভয়কেই তাদের নিজেদের সম্পদের ভাগীদার করেছেন। তিনি বলেন, "আর তোমরা আকাঙ্খা করো না এমন সব বিষয়ে যাতে আল্লাহ্ তোমাদের একের উপর অপরের শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন। পুরুষ যা অর্জন করে সেটা তার অংশ এবং নারী যা অর্জন করে সেটা তার অংশ। আর আল্লাহর কাছে তাঁর অনুগ্রহ প্রার্থনা কর। নিঃসন্দেহে আল্লাহ্ সর্ব বিষয়ে জ্ঞাত (৪:৩২)।" নারী ও এতীমের সম্পদ যাতে বেহাত বা লোপাট হয়ে না যায় তার জন্য কঠোর হুশিয়ারী প্রদান করেছেন আল্লাহ্তায়ালা। এভাবে দুঃস্থ ও নিঃস্বদের আর্থ-সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে ইসলাম। ইসলামের বিধান মোতাবেক এটা সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় দায়িত্বের অন্তর্ভূক্ত।

যাকাত ইসলামের একটি বাধ্যতামূলক আর্থিক ইবাদত। এ যাকাত ব্যবস্থার মাধ্যমে ধনীর নেট সম্পদের আড়াই শতাংশ প্রতি বছর গরীব জনগোষ্ঠীর মধ্যে বন্টন হয়ে যায়। রাষ্ট্রীয়ভাবে যাকাত চালু করলে তৃণমূল দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মধ্যে সম্পদ বন্টন সুনিশ্চিত হয়। কুরআন পাকে আল্লাহ্ বলেন, "তারা (মু’মিন বান্দা) এমন লোক যাদেরকে আমি পৃথিবীতে শক্তি-সামর্থ্য (রাজনৈতিক প্রতিপত্তি) দান করলে তারা নামায কায়েম করবে, যাকাত দেবে এবং সৎকাজে আদেশ ও অসৎকাজে নিষেধ করবে। প্রত্যেক কর্মের পরিণাম আল্লাহর এখতিয়ারভূক্ত (২২:৪১)।" আর এভাবেই মহান আল্লাহ্ নামাযের পরই যাকাতকে গুরুত্ব দিয়েছেন। যাকাত ধনীর সম্পদে গরীবের অধিকারকে স্বীকৃতি দিয়েছে। ফলে ধনীর হাতে সম্পদ পুঞ্জিভূত হওয়ার সুযোগ কমে যায় এবং সমাজে একটি ভারসাম্যাবস্থা বজায় থাকে। এছাড়াও সাদাকা, ফিতরা, দান-খয়রাত, ইত্যাদির মাধ্যমে সম্পদ গরীব মানুষের হাতে যাওয়ার সুযোগ তৈরী করে দিয়েছে ইসলাম। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ্ বলেন, "লোকেরা আপনার (নবীর) কাছে জানতে চায় তারা আল্লাহর পথে কী পরিমাণ ব্যয় করবে। আপনি বলুন, তোমাদের প্রয়োজনের অতিরিক্ত যা থাকে তাই (২:২১৯)।" নিজের দায়-দেনা মিটিয়ে এবং সারা বছরের পারিবারিক ভরণ-পোষণ ও জরুরী খরচ মিটিয়ে যা উদ্বৃত্ত থাকবে তাই আল্লাহর পথে ব্যয় করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রয়োজনাতিরিক্ত সম্পদ তারা আল্লাহ্ প্রদত্ত নির্দিষ্ট খাতসমূহে ঊল্লেখিত অভাবী ও দুর্দশাগ্রস্ত মানুষের মধ্যে বিলিয়ে দেবে, জনকল্যাণে ব্যয় করবে অথবা সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার কাজে ব্যয় করবে এটাই আল্লাহর নির্দেশ। ইসলামের প্রাথমিক যুগে খোলাফায়ে রাশেদীনের আমলে যাকাতের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার কারণে দারিদ্র বিমোচন এতটাই সম্ভব হয়েছিল যে পরবর্তীতে যাকাত গ্রহণের মত অভাবী মানুষ পাওয়া ভার হয়ে পড়েছিল। দারিদ্র বিমোচনে যাকাতের এটাই বিরাট সাফল্য।

যেহেতু আল্লাহতায়ালা ইসলামকে একটি মধ্যমপন্থী ধর্ম হিসেবে মনোনীত করেছেন, সেহেতু ইসলামী জীবন ব্যবস্থায় মানুষের প্রয়োজনও হতে হবে মধ্যম মানের। জীবনকে লাগামহীন বানানো ইসলামের নীতি-বিরুদ্ধ। এ কারণেই একদিকে যেমন উগ্র বিলাসিতা, অপব্যয় ও অপচয় ইসলামে নিষেধ করা হয়েছে, অপরদিকে কৃপণের মত হাত গুটিয়ে বসে থাকা বা স্বাভাবিক জৈবিক প্রয়োজনগুলোকে অস্বীকার করে জীবন-বিমুখ হয়ে থাকা এর কোনটাই ইসলাম সমর্থন করে না। জীবনকে সহজ, সাবলীল ও সুন্দর করে তোলার জন্য তিনি উপদেশ দিচ্ছেন, "তিনিই উদ্যানসমূহ সৃষ্টি করেছেন- এমনকিছু যা মাচার উপর তুলে দেয়া হয়, এবং যা মাচার উপর তোলা হয় না এবং খর্জুর বৃক্ষ ও চাষের মাধ্যমে ফলানো সকল প্রকার ফসল এবং যয়তুন ও আনার এবং এগুলোর মত স্বাদে ও প্রকারে যা কিছু সৃষ্টি করেছেন-একে অন্যের সাদৃশ্যশীল এবং সাদৃশ্যহীনভাবে। এসব যখন ফলবান হয় তখন এগুলোর ফল ও ফসল খাও, এবং প্রাপ্য হক দান করো ফসল তোলার সময়ে এবং অপব্যয় করো না। নিশ্চয় তিনি অপব্যয়ীদেরকে পছন্দ করেন না (৬:১৪১)।" এর মর্মার্থ হলো ফসল ঘরে তোলার সময়ই গরীবের প্রাপ্য হক তাকে দিয়ে দিতে হবে এবং কোনরূপ অপব্যয় করা যাবে না। এভাবেই জীবন যাপনের ক্ষেত্রে মধ্যমপন্থা অবলম্বন করাকেই ইসলাম গুরুত্ব দিয়ে থাকে। চরমপন্থা মানব জাতির জন্য কী দুর্দশা বয়ে আনে তা আমরা বর্তমান অর্থনৈতিক ব্যবস্থার দিকে তাকালেই দেখতে পাই। এর একদিক জুলুম, শোষণ, বঞ্চনা, ক্ষুধা ও দারিদ্রের কালো চাদরে আবৃত, আর অপরদিক চাকচিক্যময় লাগামহীন বিলাসী জীবনের ফল্গুধারায় উচ্ছ্বসিত। ধনী ও গরীবের অবস্থা এমন যে তারা বিপরীত দুই মেরুর দুই জনগোষ্ঠী। নৈতিকতাবিহীন সেক্যুলার আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থা মানব সমাজে সার্বিক ইনসাফ প্রতিষ্ঠায় ব্যর্থ হয়েছে। তাই সমগ্র বিশ্বে আজ অশান্তময় পরিবেশ। কোথাও শান্তি নেই, স্বস্তি নেই। শোষণ, নিপীড়ন, ক্ষুধা ও দুর্ভিক্ষ এবং দাঙ্গা ও যুদ্ধে ক্ষত-বিক্ষত এ পৃথিবীর মানুষ। এর ফলে বিধ্বস্ত হচ্ছে জনপদ, উদ্বাস্তু ও শরণার্থীর ঢল নেমেছে, মানুষ হচ্ছে নিঃস্ব ও দেশান্তরী। অতীত ও বর্তমানের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় কত জনপদ ধ্বংস হয়ে গেছে, কত মানবগোষ্ঠী নির্মূল হয়ে গেছে অন্যায় ও জুলুমের কারণে। অন্যায় ও জুলুম মানব সমাজকে ধ্বংসের পথে নিয়ে যায়। তাই মানব জাতিকে সত্য ও ন্যায়ের পথে পরিচালিত করার জন্য আল্লাহতায়ালা যুগ যুগে পাঠিয়েছেন তাঁর নবী-রাসুল ও ঐশীগ্রন্থসমূহ। ইনসাফ ভিত্তিক সমাজেই শুধু শান্তি ও সমৃদ্ধি বিরাজ করে। একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা হিসেবে ইসলামের ঐশী দিক্-নির্দেশনাসম্পন্ন আর্থ-সামাজিক ন্যায়নীতি একটি আদর্শ অর্থনৈতিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায় অতীব সহায়ক বলেই মনে করি।

বিষয়: বিবিধ

১২১৫ বার পঠিত, ৫ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

370547
৩১ মে ২০১৬ সন্ধ্যা ০৬:০২
শেখের পোলা লিখেছেন : লেখাটি বড় হলেও অতিশয় তাৎপর্যপূর্ণ। এক কথায় ইসলামই পারে সকল বৈষম্য দূর করে পৃথিবীতে ন্যায়,সমতা ও শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে। আর এ জন্যই সব চেষ্টা সাঙ্গ করে পৃথিবীর মানুষকে ইসলামের দ্বারেই ফিরে আসতে হবে।ধন্যবাদ।
370563
৩১ মে ২০১৬ রাত ১০:৩৩
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ
370567
৩১ মে ২০১৬ রাত ১১:৩৮
শিহাব আহমদ লিখেছেন : আপনাদের মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। আল্লাহ্ বিশ্বের সকল মানুষের মধ্যে ইসলামকে জানা ও বোঝার তৌফিক দান করুন।
370602
০১ জুন ২০১৬ দুপুর ০১:২৯
নকীব আরসালান২ লিখেছেন : ভাই আপনার লেখাটা পড়ে কিছুটা আবেগ তাড়িত হয়ে উঠেছি। এ সম্পর্কে আমার খিলাফত ইশতিহার বনাম ছয় দফার আন্দোলন পড়ার দাওয়াত থাকল, খুব শিঘ্রই আসছে ইনশাল্লাহ।
370639
০১ জুন ২০১৬ বিকাল ০৫:৫৯
গাজী সালাউদ্দিন লিখেছেন : মন্তব্যটি পোস্ট রিলেটেড নয়।
রমজান নিয়ে ব্লগীয় আয়োজনের প্রস্তুতি চলছে। অংশ নিতে পারেন আপনিও। বিস্তারিত জানতে-
Click this link

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File