নিরাপত্তাহীন সমাজের প্রতিচ্ছবি তনু
লিখেছেন লিখেছেন শিহাব আহমদ ২৮ মার্চ, ২০১৬, ০২:৪৪:৫২ রাত
স্বাধীনতার মাসে বিষাদের ঘটনা। মা-বাবার আদরের সোহাগী তনু নামের এক কলেজ ছাত্রী নরপশুর হিংস্র থাবায় ক্ষতবিক্ষত ও ধর্ষিতা হয়ে দিয়েছে জীবন। ঘটনটি স্মরণ করিয়ে দেয়, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে নারী নির্যাতনের ভয়াবহতাকে। এই মার্চের ২ শের রাতে ’অপারেশন সার্চ লাইট’ শুরু করেছিল পাকিস্তানী সেনাবাহিনী। তাদের হাতে এদেশের নিরীহ নরনারীর বিভীষিকাময় হত্যা, নির্যাতন ও ধর্ষণের মর্মন্তদ ঘটনার কথা জাতি কোনদিন ভুলবে না। পরাজিত ও ধিকৃত পাকিস্তানী বাহিনী চলে গেছে, দেশ স্বাধীন হয়েছে আজ ৪৫ বছর। কিন্তু আজও দেশের মানুষ নিরাপত্তাহীন রয়ে গেছে। অবাধে চলছে নারী নির্যাতন, লুটপাট, হত্যা, গুম। কোন কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন এক ছাত্র সংগঠন পালন করছে ধর্ষণের সেঞ্চুরী। এমনকি ক্যান্টনমেন্টের নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থাও দিতে পারছে না মেয়েদের নিরাপত্তা। ময়নামতি ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় পাশবিকতার শিকার হয়ে নিহত হয়েছে তনু। এখনও পাকিস্তানী বাহিনীর প্রেতাত্মারা ঘুরে বেড়াচ্ছে সর্বত্র। বড়ই করুণ পরিস্থিতির মাঝে বাস করছে দেশবাসী। ঘরে-বাইরে কোথাও নিরাপত্তা নেই। যখন-তখন ঘটে যাচ্ছে লোমহর্ষক ঘটনাবলী। দেশবাসীর অর্থ-সম্পদ, মান-সম্ভ্রম এবং সর্বোপরি তাদের জীবনের নিরাপত্তা আজ চরমভাবে হুমকির সম্মুখীন। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম দেশের এমন নিরাপত্তাহীনতাতো কাম্য ছিল না কারোরই। এসবের মূলে রয়েছে দেশে সুশাসনের অভাব। প্রভাবশালী আইনভঙ্গকারীরা রয়ে যাচ্ছে আইনের ঊর্ধে। তাই তাদের দুর্বিনীত সাহস তাদেরকে আইন ভাঙ্গার কাজে উৎসাহ যোগায় বারবার। আমাদের দেশে খুনীরা সরকারী কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে যে কি জামাই আদর পায় তাতো আমরা নারায়ণগঞ্জের ৭ খুনের মামলার আসামীদের বেলায় দেখতে পাই মিডিয়ায়। বিচারকে তারা থোড়াই ভয় করে। তাই বিচারের বাণী কাঁদে নীরবে নিভৃতে।
তনু চলে গেছে, রেখে গেছে বিষাদের স্মৃতি। আরও কত তনু এভাবেই চলে গেছে, ভবিষ্যতেও আরও কত যাবে -একমাত্র আল্লাহই তা জানেন। তনুর জন্য বিচারের দাবী জানাচ্ছে দেশবাসী, হচ্ছে মানব বন্ধন, সভা, গণসমাবেশ ও গণ মিছিল। তারপর ক্লান্ত দেশবাসীর কন্ঠ এক সময় স্তিমিত হয়ে যাবে। অতীতের মত ভুলে যাবে সবাই সবকিছু। এভাবেই চলছে, চলবে। এক সময় আত্মবিস্মৃত জাতি অনাচারের অতলান্তে হারিয়ে যাবে। এ মার্চেই ’নারী দিবস’ উপলক্ষ্যে এক অনুষ্ঠানে নৌপরিবহণ মন্ত্রী শাহজাহান খান গত বছর বাংলা নববর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকায় নারীদের ওপর যৌন নির্যাতনের ঘটনার কথা উল্লেখ করে বললেন, এটা তেমন কোন বিষয় না। উঁচু মহলের লোকজনের এমন আসকারা পেলে ছাত্র লীগের ’সোনার ছেলেরাতো’ তান্ডব লীলা চালাবেই। তাদের এমন প্রভাব ও আসকারার কারণেই একের পর এর ঘটছে অপরাধ। আজকের যুগান্তর পত্রিকায় দেখলাম, ’মিঠাপুকুর উপজেলার আওয়ামী লীগ দলীয় এক সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান স্থানীয় কলেজের এক ছাত্রীকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে প্রথমে উপজেলা পরিষদের অফিস কক্ষে ধর্ষণ করে। এরপর রংপুর পর্যটন মোটেল, বেগম রোকেয়া স্মৃতি কেন্দ্রের গেস্ট হাউস এবং ওই নেতার শঠিবাড়ি এলাকার নিজ বাড়িতে তাকে একাধিকবার ধর্ষণ করা হয়। মেয়েটিকে সাত দিন ধরে বন্দি করে রাখা হয়। বন্দীদশা থেকে পালিয়ে মেয়েটি নিজেই বাদী হয়ে থানায় মামলা দায়ের করে। পুলিশ হেফাজতে থাকা ওই ছাত্রীকে খুন করার হুমকি দেয়া হচ্ছে। শুধু তাই নয়, মামলাটি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে তাকে পাগল সাজানোর যড়যন্ত্র করা হচ্ছে। ধর্ষিতার মেডিকেল টেস্ট করার কথা থাকলেও তা তখনও হয়নি।’ এসবতো নিত্য দিনের ঘটনা। ক্ষমতাসীন মহল সব ঘটনাকেই বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে পার পেতে চান। বিচারহীন সমাজ এখন ধর্ষক, খুনী, লুটেরা ও অপরাধীদের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে। আমরা এখন এক নিরাপত্তাহীন সমাজের বাসিন্দা। আর তনু হলো এ নিরাপত্তাহীন সমাজেরই এক প্রতিচ্ছবি।
বিষয়: বিবিধ
১০১১ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন