নগ্নতার বিরুদ্ধে ইসলাম (পুনঃপ্রকাশ)

লিখেছেন লিখেছেন শিহাব আহমদ ২৬ মার্চ, ২০১৬, ০৭:৩৩:৩২ সকাল

অশ্লীলতা ও নগ্নতা একটি শয়তানী কাজ এবং শয়তান মানুষের প্রকাশ্য শত্রু। শয়তান সব সময় এ বিষয়ে মানুষকে প্রলোভিত করে এবং মানব সমাজে বিপর্যয়ের সৃষ্টি করে। শয়তান নগ্নতার এ অস্ত্রটির দ্বারাই মানুষের আদি পিতা-মাতাকে জান্নাতের মরোরম নিবাস থেকে ধূলি-মলিন পৃথিবীর মাটিতে নামিয়ে এনেছে। শয়তান কিভাবে আদম ও হাওয়াকে বস্ত্রহীন করে ফেলেছিল তা পবিত্র কুরআন বর্ণিত হয়েছে। মানব-মানবী সৃষ্টির পর আল্লাহ্ বললেন, “হে আদম, এ (শয়তান) তোমার ও তোমার স্ত্রীর শত্রু, সুতরাং সে যেন তোমাদেরকে জান্নাত থেকে বের করে না দেয়। তাহলে তোমরা কষ্টে পতিত হবে। তোমাদেরক এই (জান্নাতে থাকতে) দেয়া হল যাতে তোমরা এখানে ক্ষুধার্ত হবে না এবং বস্ত্রহীন হবে না। এবং তোমারা পিপাসার্ত হবে না এবং রৌদ্র-তাপেও কষ্ট পাবে না। অতঃপর শয়তান তাদেরক কুমন্ত্রনা দিয়ে বলল: হে আদম, আমি কি তোমাকে বলে দেব অনন্ত জীবন-দায়িনী বৃক্ষের কথা এবং অবিনশ্বর রাজত্বের কথা? অতঃপর তারা উভয়েই এর ফল ভক্ষণ করল, তখন তাদের সামনে তাদের লজ্জাস্থান খুলে গেল এবং তারা জান্নাতের বৃক্ষ-পত্র দ্বারা নিজেদেরকে আবৃত করতে শুরু করল। আদম তার পালনকর্তার অবাধ্যতা করল, ফলে সে পথভ্রষ্ঠ হয়ে গেল” (২০:১১৬-১২১)। এ নিষিদ্ধ বৃক্ষের ফল ভক্ষণ না করার জন্য আল্লাহ্ পূর্বাহ্নেই তাদেরকে সতর্ক করে দেয়া সত্ত্বেও শয়তার তাদেরকে প্ররোচনার দ্বারা বশীভূত করে ফেলল। সেই থেকে শুরু শয়তান মানব জাতিকে প্রতারণার ফাঁদে ফেলে গুমরাহ করে দিচ্ছে এবং কিয়ামত পর্যন্ত মানুষের বিরুদ্ধে সে তার প্রতারণার ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাবে। তাই আল্লাহ্ মানুষকে সব সময়ই সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, “হে আদম-সন্তান, শয়তান যেন তোমাদেরকে বিভ্রান্ত না করে; যেমন সে তোমাদের পিতামাতাকে জান্নাত থেকে বের করে দিয়েছে এমতাবস্থায় যে, তাদের পোশাক তাদের দেহ থেকে খুলিয়ে নিয়েছে যাতে তাদেরকে লজ্জাস্থান দেখিয়ে দেয়। সে এবং তার দলবল তোমাদেরকে দেখে, যেখান থেকে তোমরা তাদেরকে দেখ না। যারা (আল্লাহর ওপর) বিশ্বাস স্থাপন করে না, আমি শয়তানদেরকে তাদের বন্ধু করে দিয়েছি” (৭:২৭)।

নগ্নতা হলো অশ্লীলতা ও লজ্জাহীনতা যা মানুষকে দুশ্চরিত্রে পরিণত করে। নগ্নতা প্রকৃতিগতভাবেই মানুষের মনে কাম-রিপুর উদ্রেক করে এবং কুবাসনা ও লালসার জন্ম দেয়। দুর্বল চিত্তের মানুষ এর দ্বারা শয়তানের কুপ্ররোচনার ফাঁদে পা দিয়ে অবৈধ যৌন লালসা চরিতার্থ করার প্রয়াস পায়। তাই ইসলামে নগ্নতা একটি হারাম কাজ এবং কবীরা গুনাহ। লজ্জা ঈমানের অঙ্গ এবং শালীন পোষাক দেহের লজ্জা নিবারণের একটি সর্বোত্তম উপায়। মানব সভ্যতার শুরু থেকেই পোষাকের প্রচলন ছিল। পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন পোষাক মানুষের রুচিশীলতা, ব্যক্তিত্ব ও মর্যাদার পরিচায়ক। কোন রাজ দরবারে যাবার সময় ঠিক যেমনি শালীন, রুচিসম্মত ও সর্বোত্তম পোষাকে সজ্জিত হয়ে যেতে হয়, তেমনি প্রতিটি নামাযে পাক-পবিত্র ও সৌন্দর্যমন্ডিত পোষাকে মহান প্রভু আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের সামনে দাঁড়াতে হয়। উত্তম পোষাকের প্রভাব মানুষের চরিত্রেও পরিস্ফুট হয়ে ওঠে। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ্ বলেন, “হে বনী-আদম! তোমরা প্রত্যেক নামাযের সময় সৌন্দর্যমন্ডিত পোষাক-পরিচ্ছদ পরিধান করে নাও, খাও ও পান কর এবং অপব্যয় করো না। তিনি অপব্যয়ীদেরকে পছন্দ করেন না। আপনি বলুন: আল্লাহ (অনুমোদিত) সাজ-সজ্জাকে, যা তিনি বান্দাদের জন্যে সৃষ্টি করেছেন এবং পবিত্র খাদ্যবস্তুসমূহকে কে হারাম করেছে? আপনি বলুন: এসব নেয়ামত আসলে পার্থিব জীবনে মুমিনদের জন্যে এবং কিয়ামতের দিন খাঁটিভাবে তাদেরই জন্যে। এমনিভাবে আমি আয়াতসমূহ বিস্তারিত বর্ণনা করি তাদের জন্যে যারা বুঝে। আপনি বলে দিন: আমার পালনকর্তা কেবলমাত্র অশ্লীল বিষয়সমূহ হারাম করেছেন যা প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য এবং হারাম করেছেন পাপ-কর্ম, অন্যায়-অত্যাচার, আল্লাহর সাথে এমন বস্তুকে শরীক করা যার কোন সনদ তিনি অবতীর্ণ করেননি এবং আল্লাহর প্রতি এমন কথা আরোপ করা, যা তোমরা জান না” (৭:৩১-৩৩)।

শয়তান কুপ্ররোচনার দ্বারা মানুষের কুপ্রবৃত্তিকে উস্কে দেয় এবং তার দেহ-মনে মধ্যে নির্লজ্জতার উন্মাদনা ছড়ায়। দুর্বল ঈমানের অসংযমী মানুষ এর দ্বারা আকৃষ্ট হয়ে তার মনোদৈহিক পবিত্রতাকে বিনষ্ট করে ফেলে। তাই আল্লাহ্ মানুষকে সতর্ক করে দিয়ে বলেন, “হে ঈমানদারগণ, তোমরা শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না। যে কেউ শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করবে, তখন তো শয়তান নির্লজ্জতা ও মন্দ কাজেরই আদেশ করবে। যদি আল্লাহর অনুগ্রহ ও দয়া তোমাদের প্রতি না থাকত, তবে তোমাদের কেউ কখনও পবিত্র হতে পারতে না। কিন্তু আল্লাহ্ যাকে ইচ্ছা পবিত্র করেন। আল্লাহ্ সবকিছু শোনেন, জানেন” (২৪:২১)। দৈহিক পবিত্রতা রক্ষার জন্য আল্লাহ্ সকল নর-নারীকেই পোষাক-পরিচ্ছদ দ্বারা তাদের শরীরকে আবৃত রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। দৈহিক সৌন্দর্য প্রদর্শনের জন্য স্বল্প-বসন বা নগ্ন হওয়া ইসলাম ধর্মে সম্পূর্ণ হারাম কাজ এবং চরম অশ্লীলতা ও নিলর্জ্জতার পরিচায়ক। মানব সমাজকে পথভ্রষ্ট করার জন্য এটা শয়তানের একটি বড় হাতিয়ার। এধরণের অশ্লীলতা ও নিলর্জ্জতাকে রুখে দেওয়ার জন্য আল্লাহ মুমিন নারী-পুরুষ উভয়কেই লক্ষ্য করে বলেছেন, “(হে নবী) মুমিন পুরুষদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি নত রাখে এবং তাদের যৌনাঙ্গের হেফাযত করে। এতে তাদের জন্য খুব পবিত্রতা আছে। নিশ্চয়ই তারা যা করে আল্লাহ তা অবহিত আছেন। ঈমানদার নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে এবং তাদের যৌনাঙ্গের হেফাযত করে। তারা যেন যা সাধারণত প্রকাশমান, তা ছাড়া তাদের (অন্য কোন অঙ্গের) সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে এবং তারা যেন তাদের মাথার ওড়না বক্ষদেশ (পর্যন্ত) ফেলে রাখে এবং তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, পুত্র, স্বামীর পুত্র, ভ্রাতা, ভ্রাতুস্পুত্র, ভগ্নিপুত্র, স্ত্রীলোক অধিকারভুক্ত বাঁদী, যৌনকামনামুক্ত পুরুষ, ও বালক, যারা নারীদের গোপন অঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ, তাদের ব্যতীত কারো কাছে তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে, তারা যেন তাদের গোপন সাজসজ্জা প্রকাশ করার জন্য জোরে পদচারণা না করে। মুমিনগণ, তোমরা সবাই আল্লাহর সামনে তওবা কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও” (২৪:৩০-৩১)।

ইসলাম মানুষকে নির্মল ও পবিত্র চরিত্রের অধিকারী বানাতে চায়। তাই ইসলামী সমাজ ব্যবস্থায় নগ্নতাকে রুখে দেয়ার জন্য শালীন পোষাক-পরিচ্ছদ পরিধানের ওপর কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। বর্তমানে ইসলামী বিধি-বিধানের শিথিলতার কারণে নারী সমাজে স্বল্প-বসনা হওয়া এবং তাদের সৌন্দর্যকে প্রকাশ্যভাবে প্রদর্শন করার প্রবণতা বেড়ে গেছে। ফলে আজকের নারী সমাজের অনেকেই ঈভ-টিজিং, ধর্ষণ, পরকীয়া, ব্যভিচার, ইত্যাদি অপকর্মের শিকার হচ্ছেন। নারীকে বিবসনা করে পাশবিক কামনা-বাসনা চরিতার্থ করার জন্য পর্ণগ্রাফি, ব্লুফিল্ম, ইত্যাদি অশ্লীল ছায়াছবি নির্মিত হচ্ছে যা সমাজে অনৈতিকতার বিষ-বাষ্প ছড়াচ্ছে এবং তরুণ-তরুণীদের নৈতিক চরিত্রকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। ছাত্র সমাজ ইন্টারনেট ব্রাউজিংয়ের মাধ্যমে এসব অশ্লীল কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়ছে এবং তাদের ভবিষ্যত জীবনকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। প্রগতি ও নারী স্বাধীনতার নামে নারীকে বিবসনা করার কুটচাল চালানো হচ্ছে। পশ্চিমা বস্তুবাদী বিশ্ব আধুনিকতার দোহাই দিয়ে নারী সমাজে নগ্নতা ও অশ্লীলতা ছড়ানোর প্রয়াস পাচ্ছে। দুটি কুমতলব তাদের এ হীন ষড়যন্ত্রের পিছনে কাজ করছে - এর একটি হলো নগ্নতার প্রসার ঘটিয়ে অবৈধ ও নির্বিচার যৌনতার স্বাদ আস্বাদন, এবং অপরটি হলো তাদের ব্যবসায়িক পণ্যের বিজ্ঞাপনে নারী-দেহকে প্রদর্শনী বানিয়ে ব্যাপক মুনাফা অর্জন।

সি এন এন এক ভাষ্য অনুযায়ী, ‘পশ্চিমা বিশ্ব নারী স্বাধীনতার নামে নারীর শরীরকে ব্যবসায়িক বিজ্ঞাপনের পণ্য বানিয়ে নিয়েছে, বিশেষ করে ইউরোপ এবং এর প্রচারমাধ্যমের মতাদর্শের অধীন যারা, তারা অবস্থান করছে একটি অতিযৌনতাসর্বস্ব সংস্কৃতির মধ্যে। এসব সমাজে প্রকাশ্য অশ্লীলতা, শরীর প্রদর্শনী ও পর্ণোগ্রাফি খুব সাধারণ বিষয়। আসল ঘটনা হলো, এখনকার মতো আগে কখনোই নারীর শরীরকে এমনভাবে পণ্য হিসেবে উপস্থাপন করা হয়নি। নারীর যৌনতাকে ‘করপোরেটাইজড’ করে উপস্থাপন করার ঘটনাও আগে কখনো ঘটেনি’। এভাবেই বর্তমান নারী সমাজকে অবমননাকর পরিস্থিতির মধ্যে ফেলে তাদেরকে যৌন নিপীড়নের সামগ্রী করা ফেলা হয়েছে। পাশ্চাত্য নারীবাদী সমাজ এখন প্রচুর স্বাধীনতা ও অধিকার ভোগ করছে। কিন্তু সে স্বাধীনতা ও অধিকার তাদেরকে শান্তি ও নিরাপত্তা দিতে পারেনি। নারীর দেহ আজ নারীর নিয়ন্ত্রণে নেই, তা এখন ব্যবসায়িক পণ্যে পর্যবসিত হয়েছে। পারিবারিক অনাবিল শান্তির পরিবেশ বিনষ্ট হয়েছে, কর্মজীবি নারীদের জীবন ঘর-বাইরের চাপে ভারাক্রান্ত হয়ে পড়ছে, পরিবার ভেঙ্গে যাচ্ছে, ভেঙ্গে যাওয়া পরিবারের শিশুরা মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলছে, বৃদ্ধ-বৃদ্ধারা পরিবার-পরিজন বিবর্জিত ‘ওল্ড-হোমে’ নিঃসঙ্গ জীবন কাটাচ্ছে এবং মৃত্যুর প্রহর গুনছে। আবার এদের কারো কারো জীবনাবসান হচ্ছে পরিবার-পরিজনহীন অবস্থায় নিজ গৃহের ভয়াবহ নির্জনতায় এবং একাকীত্বের বেদনায়। নারীর বল্গাহীন স্বাধীনতা ও বহির্মূখী জীবন পরিবারে ভাঙ্গন ও বিবাহ বিচ্ছেদের হারকে বাড়িয়ে দিয়েছে। অন্যদিকে পুরুষেরা বিয়েকে বোঝা মনে করে বিয়ে বহির্ভূত দাম্পত্য জীবনে (live together) আগ্রহী হয়ে ওঠেছে। কর্মজীবি আধুনিক মহিলারা সন্তান জন্মদানকে ঝামেলা মনে করে নিঃসন্তান থাকা পছন্দ করছে। দত্তক শিশু অথবা পোষা কুকুর-বেড়ালই এদের নিঃসঙ্গ জীবনের নিত্য সাথী। তাই পশ্চিমা সমাজে জনসংখ্যার ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি তাদের ভবিষ্যতকে শঙ্কিত করে তুলেছে।

বর্তমান বিশ্বে আমেরিকা নারী স্বাধীনতার ও মানবাধিকারের সবচেয়ে বড় প্রবক্তা। এতদসত্ত্বেও বেপর্দা ও নগ্ন সংস্কৃতির কারণে সেখানকার সমাজে বহু নারী যৌন নিগ্রহের শিকার হচ্ছে। আমেরিকার সবচেয়ে সুশৃঙ্খল সেনাবাহিনীর মধ্যে ক্রমাগতভাবে নারীর শ্লীলতাহানির ঘটনায় দেশটির ইমেজ সংকট দেখা দিয়েছে। সম্প্রতি নিউ ইয়র্ক থেকে সংবাদ সংস্থা এনা পরিবেশিত খবরে জানা যায়: ‘রণাঙ্গনে শত্রুর হামলায় যত সৈন্য নিহত হচ্ছে তার চেয়ে বেশি মহিলা সৈনিক যৌন হামলার শিকার হচ্ছেন আমেরিকান সেনা ছাউনিগুলোতে। আমেরিকান সৈন্য কর্তৃক মহিলা সৈনিকদের যৌন হামলার শিকার হবার উদ্বেগজনক ঘটনা ক্রমাগতভাবে বাড়ছে। একদিকে হামলাকারীর বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির পদক্ষেপ গ্রহণ এবং একই সঙ্গে হামলার ঘটনা বেড়ে চলায় পেন্টাগনের টেনশন প্রকট হয়ে উঠেছে। ২০১০ সালে আমেরিকার বিভিন্ন ক্যান্টনমেন্ট এবং রণাঙ্গনের ছাউনিতে ১৯ হাজার মহিলা সৈন্য যৌন লালসার শিকার হন স্বদেশী সৈন্য কর্তৃক। এর মধ্যে মাত্র ৩১৫৮ জন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠিত যৌন হামলা প্রতিরোধ ও বিচার বিভাগে অভিযোগ দায়ের করেন। অন্যেরা আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগ করতে আগ্রহী হননি, কারণ তারা হামলার শিকার হন তাদেরই ঊর্ধ্বতন অফিসার অথবা অধিনায়ক কর্তৃক। এসব ভিকটিমের আশঙ্কা যে, বিচার তো পাবেনই না, উপরন্তু সহকর্মীদের বিরূপ দৃষ্টির মুখে পড়বেন। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ২০১১ সালে পেন্টাগন এবং প্রতিরক্ষা সচিব রবার্ট গেটস এবং সাবেক সচিব ডোনাল্ড রামসফিল্ডের বিরুদ্ধে ১৭ জন অফিসার মামলা করেছিলেন। তারা অভিযোগ করেন যে, যুক্তরাষ্ট্র সেনাবাহিনীর যৌন হামলার ঘটনা কিংবা ধর্ষণের বিষয়গুলো যাতে প্রকাশ না হয় সে ধরনের একটি সংস্কৃতি তৈরি করা হয়েছে। এমনকি ধর্ষক অথবা হামলাকারীরা যাতে শাস্তি না পায় সে ব্যবস্থাও খোলা রাখা হয়েছে। যার বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়েছে তার অধীনে কাজ করতেও বাধ্য করা হয় অভিযোগকারিণীকে। আরও অভিযোগ করা হয় যে, সেনা ইউনিটের কমান্ডারদের ব্যাপক প্রভাব রয়েছে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণের ওপর। এ জন্য প্রতি ৫টি অভিযোগের ৪টিরও সুবিচার পাওয়া যাচ্ছে না’ (মানব জমিন/২৮-০৮-২০১৩)।

ইসলামে পর্দা পালন করা অর্থাৎ দেহকে আবৃত রাখা আল্লাহ্ তায়ালার সুস্পষ্ট নির্দেশ। এতদসংক্রান্ত আয়াতে আল্লাহ্ বলেন, “আল্লাহ্ ও তাঁর রসূল কোন কাজের আদেশ করলে কোন ঈমানদার পুরুষ ও ঈমানদার নারীর সে বিষয়ে ভিন্ন ক্ষমতা নেই যে, আল্লাহ্ ও তাঁর রসূলের আদেশ অমান্য করে সে প্রকাশ্য পথভ্রষ্টতায় পতিত হয়” (৩৩:৩৬)। এই সুরার তেত্রিশ নং আয়াতে আল্লাহ্ নবী-পত্নী তথা সাধারণ নারীদেরকে উদ্দেশ্য করে বলেন, তোমরা জাহেলিয়াত যুগের মত নিজেদের সৌন্দর্যকে প্রদর্শন করবে না, কেননা আল্লাহ্ শুধু চান তোমাদের থেকে অপবিত্রতা দূর করতে এবং তোমাদেরকে পূর্ণরূপে পূত-পবিত্র রাখতে। একই সুরার ঊনষাট নং আয়াতে আল্লাহ্ বলেন, “হে নবী! আপনি আপনার পত্নীগণকে ও কন্যাগণকে এবং মুমিনদের স্ত্রীগণকে বলুন, তারা যেন তাদের চাদরের কিয়দংশ নিজেদের উপর টেনে নেয়। এতে তাদেরকে চেনা সহজ হবে। ফলে তাদেরকে উত্যক্ত করা হবে না। আল্লাহ্ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু”। নবী করিম (সাঃ) বলেন, “নিশ্চয়ই আল্লাহ্ অধিক লাজুক ও পর্দাশীল। তিনি লজ্জা ও পর্দাকে পছন্দ করেন (আবু দাউদ শরীফ হাদিস নং ৪০১২, ৪০১৩, মুসনাদে আহমাদ হাদিস নং ৫৯)। রাসুলুল্লাহ্ (সাঃ) দোয়া করতেন, “হে আল্লাহ্ আপনার নিকট তাকওয়া ও চারিত্রিক পবিত্রতা প্রার্থনা করছি (সহীহ মুসলিম: যিকির অধ্যায়, তিরমিজি দাওয়াত-যিকির অধ্যায়, ইবনে মাজা: যিকির অধ্যায়)।

আধুনিক যুগের মানুষ আল্লাহর স্মরণ থেকে বিমুখ। পার্থিব উন্নতি, আনন্দ ও ভোগ-বিলাসে তারা যতটা মত্ত আধ্যাত্মিক উন্নতি ও পরকালীন মুক্তির ব্যাপারে তারা ততটাই গাফেল। ইসলাম মহান আল্লাহ্ মনোনীত ধর্ম ও একটি ভারসাম্যপূর্ণ জীবন ব্যবস্থা। ইসলামের আনুগত্যের মধ্যেই রয়েছে দুনিয়া ও আখিরাতের সাফল্য। তাই একজন মুসলমান তার প্রতিদিনের প্রার্থনায় দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণ কামনা করে। আল্লাহ্ বিশ্বাসী মুসলমানদেরকে লক্ষ্য করে বলেন, “হে মুমিনগণ! আল্লাহকে ভয় কর এবং সঠিক কথা বল। তিনি তোমাদের কাজ-কর্ম ও আচরণ সংশোধন করে দেবেন এবং তোমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করবেন। যে কেউ আল্লাহ্ ও তাঁর রসূলের আনুগত্য করে, সে অবশ্যই মহাসাফল্য অর্জন করবে” (৩৩:৭০-৭১)।

বিষয়: বিবিধ

১৬৫৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File