আমানতের খেয়ানত

লিখেছেন লিখেছেন শিহাব আহমদ ২৩ মার্চ, ২০১৬, ১২:০৭:৩০ রাত

আমানতের খেয়ানত এক মস্ত বড় অপরাধ। যার মধ্যে আমানতদারী নেই তার ঈমানও নেই। আমানতের খেয়ানত মোনাফেকির একটি প্রধান লক্ষণ ও বিশ্বাস ভঙ্গের একটি বড় কারণ। এসব কুরআান-হাদীসের কথা। বিভিন্নভাবে আমানতের খেয়ানত হয়ে থাকে। ওয়াদা ও বিশ্বাস ভঙ্গ আমানতের বড় ধরনের খেয়ানত। কোন গোপনীয় কথা বা কোন বস্তু তা যত সামান্যই হোক, কারো কাছে তা আমানত রাখা হলে যদি আমানতদার তার খেয়ানত করে তবে সেটা হবে এক মারাত্মক অপরাধ। ইসলামের নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) ছিলেন মানব সমাজে আমানতদারীর এক প্রকৃষ্ট উদাহরণ। বিশ্বাস, কথা ও কাজে তাঁর মধ্যে সামান্যতম কোন হেরফের ছিল না। নবুওত পূর্ববর্তী জীবনেই তাঁর সত্যবাদীতা ও বিশ্বস্ততার জন্য মক্কাবাসীর নিকট তিনি ’সাদেক’ (সত্যবাদী) ও ’আল-আমীন’ (বিশ্বস্ত) নামে পরিচিতি পেয়েছিলেন। তারা তাঁর নিকট তাদের মূল্যবান দ্রব্যাদি গচ্ছিত রাখতো এবং প্রয়োজনমত সেসব বস্তু তারা ফেরত নিয়ে যেতো। কখনও তাতে কোন ব্যত্যয় ঘটত না। এমনকি তিনি যখন কাফেরদের অত্যাচারে গোপনে মক্কা থেকে মদীনায় হিজরত করতে বাধ্য হলেন, তখন তাঁর নিকট মানুষের গচ্ছিত দ্রব্যাদি ফেরত দেওয়ার জন্য হযরত আলীকে (রাঃ) মক্কায় নিজ গৃহে রেখে গিয়েছিলেন যাতে আমানতকারীরা তাদের জিনিসপত্র সঠিকভাবে বুঝে পায়। খোলাফায়ে রাশেদীনের আমানতদারীর কথা ইসলামের ইতিহাসে সুবিদিত। খলীফা হযরত আবু বকর (রাঃ) ও খলীফা হযরত ওমর (রাঃ) বাইতুল মাল থেকে যে মাসিক ভাতা পেতেন মাস শেষে কখনও তা উদ্বৃত্ত হয়ে গেলে তৎক্ষণাৎ সে উদ্বৃত্ত অর্থ বাইতুল মালে ফেরত দিতেন। তাঁরা ভয় করতেন, বিচার দিবসে জনগণের আমানতের প্রতিটি পয়সার হিসাব আল্লাহর দরবারে পেশ করতে হবে।

আমানতের গুরুত্ব সম্পর্কে প্রিয় নবী (সাঃ) বিদায় হজ্বের ভাষণে বলেন, “হে লোকসকল! এই মাস, আজকের এই দিন, এই পবিত্র নগরী ঠিক যেমনি পবিত্র ঠিক তেমনি পবিত্র আমানত হলো একজন মানুষের জীবন, সম্পদ ও সম্মান যত দিন পর্যন্ত না তোমরা তোমাদের প্রভুর সামনে হাজির হয়েছো। তোমাদের নিকট গচ্ছিত দ্রব্য তার সঠিক মালিককে ফেরত দাও। কাউকে আঘাত দিও না যাতে কেহ তোমাদেরকে প্রত্যাঘাত করতে পারে। স্মরণ রেখো, তোমাদের প্রভুর সাথে অবশ্যই তোমাদের সাক্ষাত হবে, এবং তিনি নিশ্চিতভাবেই তোমাদের কৃতকর্মের হিসাব নেবেন। তোমরা কারো ওপর অন্যায় করবে না এবং কেহ তোমাদের ওপর অন্যায় করতে পারবে না।” এ পার্থিব জীবনে আমাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব ও আমানতের খুঁটিনাটি ব্যাপারেও যে পরকালে আল্লাহর নিকট হিসাবের সম্মুখীন হবো এতে কোন সন্দেহ নেই। তারপরও আমাদের সমাজে আমানত খেয়ানতের যে মারাত্মক প্রবণতা দেখা যাচ্ছে তা ইহকালীন ও পরকালীন উভয় জীবনের জন্য অতীব ক্ষতিকর।

ইসলামের শিক্ষা থেকে দূরে সরে পড়ায় আমাদের মধ্যে এখন ঈমানদারী ও আমানতদারীর অভাব প্রকট। বিশ্বাস ভঙ্গ করা ও আমানতের খেয়ানত করা আমাদের দৈনন্দিন অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। সমাজের সব স্তরে, এমনকি রাষ্ট্রের উঁচু মহলেও আমানতদারীর প্রচন্ড ঘাটতি। কিছু উদাহরণের মাধ্যমে বিষয়টিকে পরিস্কার করা যাক। আমাদের দেশের নিম্ন আদালতে মিথ্যা সাক্ষ্য প্রদানের রেওয়াজ চালু আছে। এ ব্যাপারে কিছু আইনজীবি ও পুলিশ সহায়তা করে থাকে। এসব সাক্ষী যখন আদালতে সাক্ষ্য দেয় তার আগে তাদেরকে হাকিমের সামনে ’সত্য বই মিথ্যা না বলার’ শপথ গ্রহণ করানো হয়। কিন্তু শপথ ভঙ্গ করে এরা উকিল ও পুলিশের শেখানো মিথ্যা সাক্ষ্যই দিয়ে থাকে। এভাবে কিছু আইনজীবি ও পুলিশও তাদের পেশাগত শপথ ভঙ্গ করে সত্য উদ্ঘাটনের পরিবর্তে মিথ্যাকেই প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করে থাকেন। ব্যক্তিগত, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনে বিশ্বাস ভঙ্গের মাধ্যমে আমানত বিনষ্ট করা এখন বহুলভাবে প্রচলিত একটি বিষয়। কারো কাছ থেকে ধার নিলে সময়মত তা আমরা ফেরত দিতে গড়িমসি করি। কেনাবেচার ক্ষেত্রে অনেক সময় আমরা ওয়াদামত নির্দিষ্ট সময়ে সঠিক মালামাল সরবরাহ করার ওয়াদা পালন করি না। বিভিন্ন সরকারী ও বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে কর্মরত অনেক চাকুরীজীবি শপথ ভঙ্গ করে নিজ নিজ দায়িত্ব পালনে অবহেলা করে থাকেন। আবার চাকুরীদাতারাও ওয়াদা অনুযায়ী পারিশ্রমিক ও সুযোগ সুবিধা থেকে কর্মচারীদেরকে বঞ্চিত করেন। এমনকি আমাদের পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে অহরহই শপথ ভঙ্গের মাধ্যমে আমানতের খেয়ানত চলছে। অথচ আমরা ভুলে যাচ্ছি, পার্থিব জীবনে ফাঁকি দিলেও রোজ ক্বিয়ামতে আমাদেরকে প্রতিটি আমানতের ব্যাপারে জবাবদিহি করতে হবে।

সুশাসন ও আইনের শাসনের অভাবে দেশ ও সমাজে আমানতের খেয়ানতের প্রবণতা দিন দিন বেড়েই চলেছে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, ইসলাম-পূর্ব আরবের আইয়্যামে জাহেলিয়াতের যুগ বুঝি আমাদের মাঝে নতুন করে ফিরে এলো। জনগণের আমানতের খেয়ানত যেন এখন প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পেতে যাচ্ছে। সম্প্রতি সরকারের মালিকাধীন সোনালী ব্যাংক, জনতা ব্যাংক, বেসিক ব্যাংক এবং সর্বশেষ বাংলাদেশ ব্যাংকে জনগণের হাজার হাজার কোটি টাকার আমানত লুট হয়ে গেলো তা দেশবাসীর জন্য এক অশনি সংকেত। সরকারের দুর্নীতিবিরোধী অঙ্গীকার পালনের ঘাটতির কারণে দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণে কোন কার্যকর দৃষ্টান্ত আজও প্রতিষ্ঠিত হয়নি। দুর্নীতিগ্রস্ত সরকারী কর্মচারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাগ্রহণের ব্যাপারে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) শুধু নামেই আছে কাজে তার উল্টো। বেসিক ব্যাংকের অবৈধ ও অনাদায়ী বিপুল ঋণের অর্থ আত্মসাতের সাথে জড়িত ওই ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান শেখ আব্দুল হাইকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দিয়ে দুদক তা প্রমাণ করেছে। রাঘববোয়ালরা শেয়ারবাজার থেকে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের সর্বস্ব লোপাট করে নিয়েছে, এদের বিচার হয়নি। সরকারের প্রভাবশালী ব্যক্তিবর্গ ও ব্যাংক কর্মচারীদের যোগসাজশে হলমার্ক, ডেসটিনি, বিসমিল্লাহ গ্রুপ, ইত্যাদি ভুয়া প্রতিষ্ঠান সরকারী ব্যাংকের হাজার হাজার কোটি টাকা লুটে নিয়েছে। এসব লুটপাটের কোন বিচার এখনও হয়নি। রেলওয়ে, তিতাস গ্যাস, বিমান, সেতু প্রকল্প, ইত্যাদি প্রতিটি সরকারী প্রতিষ্ঠানে চলছে অবাধ লুটপাটের রাজত্ব। বাংলাদেশ বিমান ও ঢাকা বিমান বন্দর সোনা চোরাচালনের আখড়ায় পরিণত হয়েছে। রানা প্লাজার ব্যাপারে সরকারের শৈথিল্যজনিত কারণে ভবন ধসে পড়ে দেড় হাজার গার্মেন্টস শ্রমিকের করুণ মৃত্যু দেশবিদেশের মানুষকে করেছে হতবাক। সরকারী অর্থ ও সম্পদ আত্মসাৎ, ক্ষমতাধরদের বৈধ আয়ের তুলনায় সম্পদের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি, খেলাপী ঋণের দৌরাত্ম্য, এবং বনভূমি ও নদী-জলাশয় জবরদখলের মচ্ছব এসবই আমানত খেয়ানতের এক একটি বড় নজীর।

বিচার বিভাগের বিভিন্ন অনিয়মের ব্যাপারে বর্তমান প্রধান বিচারপতি নিজেও নাখোশ। বিচারের সাথে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পক্ষের অনিয়মের কারণে বিচার প্রার্থীরা ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন বলে তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, ’আমরা কি আজব দেশে বাস করি।’ বিচার বিভাগের মর্যাদা ক্ষুণ্ণকারী মন্তব্যের জন্য সম্প্রতি সরকারের দুই মন্ত্রীর বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগের শুনানীতে তিনি বলেন, ’দুই মন্ত্রীই শপথ ভঙ্গ করেছেন। যে কোন ব্যক্তি যতই ক্ষমতাবান হোন না কেন, আইন তার নিজস্ব গতিতে সোজা পথে চলবে।’ আমরা জানি কেউই আইনের ঊর্ধে যেতে পারে না যখন দেশে আইনের শাসন বিদ্যমান থাকে। অথচ আমাদের দেশে ক্ষমতাধর ব্যক্তিবর্গ আইনকে থোড়াই কেয়ার করেন। এমনকি ট্রফিক আইন মানার ক্ষেত্রেও সেটা দেখা যায়। এছাড়া আমরা প্রায়শই দেখতে পাই, নির্বাচনকালীন প্রচারণায় যারা তাদের চরিত্র ফুলের মত পবিত্র বলে জাহির করে থাকেন, নির্বাচনের পর তাদের সে ভালোমানুষি চরিত্রটি বদলে যায়। রাষ্ট্রের ক্ষমতাধর ব্যক্তিবর্গ উচ্চ পদে বহাল হওয়ার পূর্বে যেসব শপথ বাক্য পাঠ করেন, পরবর্তীতে তা অবলীলায় ভঙ্গ করে থাকেন। ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য তারা জনগণের কাছে যেসব অঙ্গীকার করেন সেসবও বিনা দ্বিধায় ভঙ্গ করে থাকেন। দৃশ্যত, নিজেদেরকে জনগণের সেবক হিসেবে জাহির করার কি প্রাণান্তকর চেষ্টাই না তারা করেন। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা জনগণ প্রদত্ত আমানত। আর সে আমানতের খেয়ানত করাই তাদের চারিত্রিক বৈশিষ্ঠ্য হয়ে দাঁড়ায়। এসব সেবক ও রক্ষক যখন শোষক ও ভক্ষকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয় তখন সে দেশে সুশাসন বলতে কিছুই থাকে না। এসবই হলো আমাদের দেশ ও জাতির জন্য অশনি সংকেত।

লুটেরাদের কাছে জনগণের আমানতের অর্থের কোন দাম নেই। হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাট হলেও এরা বলে এটাতো সামান্য টাকা। জনগণের অর্থসম্পদ লুট করে এরা এতটাই ফুলেফেঁপে ওঠেছে যে, তাদের কাছে লোপাট যাওয়া অর্থের পরিমাণ যৎসামান্যই মনে হয়। এভাবেই একের পর এক ব্যাংকের আমানত হরিলুটের কবলে পড়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রাক্তন গভর্ণর বৈদেশিক মুদ্রার কলেবর বৃদ্ধির কৃতিত্ব তাঁর নিজের বলে দাবী করছেন। অথচ আমরা জানি, আমাদের প্রবাসী শ্রমিকের রক্ত ও ঘামে অর্জিত রেমিটেন্সই এ রিজার্ভের মূল উৎস। এ মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও তাঁর অবহেলা ও দায়িত্বহীনতার কারণে লোপাট হলো। এত বড় ঘটনটিও তাঁর কাছে এতই গুরুত্বহীন মনে হলো যে, দীর্ঘ একমাস চলে গেলো দেশবাসী, অর্থমন্ত্রী, এমনকি প্রধানমন্ত্রীকেও তিনি জানাতে বেমালুম ভুলে গেলেন। বিদেশী সংবাদপত্রে প্রকাশ না পেলে তা আমাদের জানতে যে আরো কতদিন লাগতো তা আল্লাহই জানেন। এই হলো আমাদের সর্বোচ্চ পর্যায়ের আমানতদারীর নমুনা।

বিদেশী রাকেশ আস্থানার ওপর আমাদের কেন্দ্রীয় ব্যংকের রিজার্ভের সাইবার নিরাপত্তার দায়িত্ব অর্পণ কতটা নিরাপদ তা ভেবে দেখতে হবে। আমাদের দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তা আমাদের পবিত্র আমানত। এ আমানত রক্ষার দায়িত্ব সরাসরি আমাদেরকেই পালন করতে হবে। এ জন্য দেশে আমাদের প্রশিক্ষিত সেনাবাহিনী ও নিরাপত্তা বাহিনী মজুত রয়েছে। আমাদের আর্থিক নিরাপত্তা বিধানের দায়িত্বও আমাদেরকেই নিতে হবে। আমরা যদি আমাদের এ দায়িত্ব বিদেশীদের ওপর ছেড়ে দেই তবে তা হবে মারাত্মক ঝুঁকির ব্যাপার। কোনভাবেই আমাদেরকে নতজানু ও পরনির্ভরশীল হলে চলবে না। আমাদের দেশেই অনেক বিশেষজ্ঞ রয়েছেন যারা সাইবার নিরাপত্তার কাজে পারদর্শী। তাদেরকেই এসব কাজে নিয়োগ দেওয়া উচিত। যারাই দেশ ও জাতির নিরাপত্তার কাজে জড়িত থাকবেন তাদের দেশপ্রেমবোধ হতে হবে অতি উঁচু মানের। দুর্বল প্রকৃতির অসৎ লোকজনকে কখনই জাতীয় নিরাপত্তামূলক কাজে নিয়োগ দেওয়া উচিত নয়। আমাদের দেশের এক ইঞ্চি ভূমি রক্ষার জন্য যেভাবে আমরা অকাতরে জীবন বিলিয়ে দিয়ে পারি, তেমনিভাবে আমাদের কোষাগারের একটি পয়সা রক্ষার জন্যও আমাদেরকে সেভাবে প্রস্তুত থাকতে হবে। স্বদেশ প্রেমের চেতনায় আমরা যে মুক্তিযুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছিলাম, সেই চেতনাকে চিরকাল ধরে রাখতে হবে। নতুবা দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তা প্রবল ঝুঁকির মধ্যে পড়ে যাবে।

বিষয়: বিবিধ

১৫১৮ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

363320
২৩ মার্চ ২০১৬ রাত ০১:৪৪
দুষ্টু পোলা লিখেছেন : ভালো লাগলো ধন্যবাদ পিলাচ
363348
২৩ মার্চ ২০১৬ সকাল ১১:৫৯
আফরা লিখেছেন : খুব ভাল লিখেছেন অনেক ধন্যবাদ ।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File