ইসলাম ধর্মের সংস্কার প্রসঙ্গে

লিখেছেন লিখেছেন শিহাব আহমদ ০১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ০১:৩৪:৩৪ রাত

(হে নবী, বলুন,) তবে কি আমি আল্লাহ ব্যতীত অন্য কোন বিচারক অনুসন্ধান করব, অথচ তিনিই তোমাদের প্রতি বিস্তারিত গ্রন্থ অবতীর্ণ করেছেন? আমি যাদেরকে গ্রন্থ প্রদান করেছি, তারা নিশ্চিত জানে যে, এটি আপনার প্রতিপালকের পক্ষ থেকে সত্যসহ অবর্তীর্ণ হয়েছে। অতএব, আপনি সংশয়কারীদের অন্তর্ভুক্ত হবেন না। আপনার প্রতিপালকের বাক্য পূর্ণ সত্য ও সুষম। তাঁর বাক্যের কোন পরিবর্তনকারী নেই। তিনিই শ্রবণকারী, মহাজ্ঞানী। আর যদি আপনি পৃথিবীর অধিকাংশ লোকের কথা মেনে নেন, তবে তারা আপনাকে আল্লাহর পথ থেকে বিপথগামী করে দেবে। তারা শুধু অলীক কল্পনার অনুসরণ করে এবং সম্পূর্ণ অনুমান ভিত্তিক কথাবার্তা বলে থাকে (৬:১১৪-১১৬)।


মুসলিম বিশ্বের এই দুঃসময়ে পবিত্র কুরআনের উপরের আয়াতটি দিয়ে শুরু করতে চাই আজকের প্রসঙ্গ। আসন্ন আমেরিকান প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান দল থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের কট্টর মুসলিম বিদ্বেষী প্রচার প্রচারণা আমেরিকার রাজনীতিকে কলুষিত করে তোলেছে। তিনি তাঁর সর্বশেষ অসহিষ্ণু ও ঘৃণ্য বক্তব্যে যুক্তরাষ্ট্রে মুসলমানদের প্রবেশাধিকার নিষিদ্ধ করার দাবী তোলেছেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পদে মনোনয়ন প্রত্যাশী একজন প্রভাবশালী রাজনীতিকের এমন ইসলামবিদ্বেষী বক্তব্য শুধু তাঁর দেশের ভেতরেই সমালোচিত হয়নি, জাতিসংঘও এর নিন্দা জানিয়েছে। তবে আশ্চর্যজনকভাবে নিজ দলে তাঁর সমর্থক সংখ্যা বেড়ে চলেছে। ইসলাম বিরোধী বক্তব্যের কারণে তাঁর সমর্থন ৮% বেড়েছে, যদিও তিনি ১১% বেড়েছে দাবী করে আত্ম-তৃপ্তি বোধ করছেন। ইউরোপ ও আমেরিকায় ইসলাম বিরোধী ডামাডোলে আরও একটি ন্যাক্কারজনক বক্তব্য এসেছে অষ্ট্রেলিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী টনি অ্যাবোটের কাছ থেকে। তিনি বলেছেন, ইসলাম ধর্মে প্রকট সমস্যা বিরাজ করছে এবং এর সংস্কার প্রয়োজন। আসলে তাদের এসব বক্তব্য পাশ্চাত্যের একচোখা নীতিরই প্রতিধ্বনি। পশ্চিমা বিশ্ব যতই ধর্ম-নিরপেক্ষতার ভান করুক তাদের মধ্যে ইসলাম বিরোধী যে মনোভাব লুকিয়ে আছে তা বিভিন্ন সময়ে তাদের মুখ ফসকে বেরিয়ে আসে। পশ্চিমা সমাজে গণতান্ত্রিক ও মানবিক মূল্যবোধকে ছাপিয়ে ধর্মীয় বিদ্বেষ ও অসহিঞ্চুতা বেড়ে যাচ্ছে। নব্য-ঔপনিবেশিক আধিপত্য বিস্তারের মাধ্যমে তাদের কায়েমী স্বার্থকে টিকিয়ে রাখতে পুঁজিবাদী পশ্চিমা শক্তি মুসলিম দেশগুলোতে বিভিন্ন অজুহাতে হস্তক্ষেপের মাত্রা বাড়িয়ে দিয়েছে। এ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে মহান আল্লাহ্ মুসলমানদেরকে সতর্ক করে বলেছেন,
(হে বিশ্বাসীগণ,) নিশ্চয়ই জান-মালের (ক্ষতি সাধনের) মাধ্যমে তোমাদেরকে পরীক্ষা করা হবে (এ পরীক্ষায়) তোমরা অবশ্যই পূর্ববর্তী সম্প্রদায়, যাদের কাছে আল্লাহর কিতাব নাযিল হয়েছিল এবং যারা আল্লাহর সাথে অন্যদের শরীক করেছে, তাদের (উভয়ের) কাছ থেকে অনেক কষ্টদায়ক কথাবার্তা শুনতে পাবে; এ অবস্থায় তোমরা যদি ধৈর্য ধারণ করো এবং আল্লাহকে ভয় করে চলো, তাহলে তা হবে এক সাহসিকতার ব্যাপার (আল-কুরআন: ৩:১৮৬)।


সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ একটি চরম পন্থা যা ইসলামের মর্মবাণীর সাথে সাংঘর্ষিক। অথচ ইসলামের বিরোধীরা জিহাদকে এসবের সাথে সম্পৃক্ত করতে চায়। আল-কায়েদা ও আইএস ইসলামের সৃষ্ট নয়, বরং পশ্চিমারাই যে তাদের স্বার্থে এসব সৃষ্টি করে এদের গায়ে ইসলামের লেবেল এঁটে দিয়েছে - তা বিশ্ববাসী জানে। তথাকথিত এসব ইসলামি জঙ্গীগোষ্ঠী ইসলামের নাম করে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড ঘটালে এর জন্য ইসলামকে দায়ী করা ষড়যন্ত্রেরই নামান্তর। তবে আশার কথা পশ্চিমা বিশ্বের এসব ইসলাম বিরোধী চক্রান্ত যে তাদের দ্বি-মুখী নীতির বহিঃপ্রকাশ তা ধীরে ধীরে পরিস্কার হচ্ছে। সম্প্রতি খোদ আমেরিকার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বলেছেন,
আল-কায়দা ও আইএসআইএল এবং এধরনের গোষ্ঠীগুলো বৈধতা পাওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠেছে। তারা ইসলাম রক্ষার দোহাই দিয়ে নিজেদেরকে ধর্মীয় নেতা, পবিত্র যোদ্ধা হিসেবে চিত্রিত করার চেষ্টা চালাচ্ছে। আমরা কোনভাবেই তাদের এ ধারণাপ্রসূত বক্তব্য মেনে নেব না, কারণ তা নিছক মিথ্যা। আর এসব সন্ত্রাসীরা যে ধর্মীয় বৈধতা চাচ্ছে তা আমরা কখনও অনুমোদন করব না। তারা ধর্মীয় নেতা নয় - তারা বরং সন্ত্রাসী।
আইএস ও তাদের মিত্রদেরকে ইসলামী বা জিহাদী হিসেবে বর্ণনা করার রিপাবলিকানদের প্রবণতাকে রুখতে গিয়ে ওবামা তাঁর প্রশাসনের নীতি কৌশলের এরূপ ব্যাখ্যা দিয়েছেন। এ সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলো যে ইসলামের সাথে সম্পৃক্ত নয় - এটাই তার সঠিক ব্যাখ্যা।

আল্লাহর নিকট শুধুমাত্র ঈমান ও সৎকর্মই মানবিক মর্যাদার মানদন্ড হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। ঈমান, সৎকর্ম ও আল্লাহর নিকট জবাবদিহির ভয়ের ওপর ভিত্তি করে ইসলামের সাম্য ও ইনসাফভিত্তিক সংযমী জীবন ব্যবস্থা গড়ে ওঠেছে যা পশ্চিমা শক্তির কাছে পছন্দনীয় নয়। শোষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠায় ইসলামী অর্থনৈতিক ব্যবস্থা একটি কার্যকর পদ্ধতি। ইসলামের সুদমুক্ত অর্থনীতি ও যাকাত-ভিত্তিক সামাজিক নিরাপত্তা গুটিকয়েক ধনীর হাতে সম্পদ পুঞ্জীভূত হওয়াকে রোধ করে ভারসাম্যপূর্ণ সমাজ ব্যবস্থা গড়ে তোলে। এর বিপরীতে পশ্চিমা বিশ্বের পুঁজিবাদী অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় বিশ্বজুড়ে অসাম্য বেড়েই চলেছে। আন্তর্জাতিক দাতব্য সংস্থা অক্সফামের এক গবেষণায় যে তথ্য পাওয়া গেছে তাতে জানা যায়, বিশ্বের ১ শতাংশ ধনীর সম্পদের পরিমাণ বাকি ৯৯ শতাংশের সমান। এ দাতব্য সংস্থাটি হিসাব কষে দেখেছে, মাত্র ৬২ জন শীর্ষস্থানীয় ধনীর সম্পদের পরিমাণ বিশ্বের অর্ধেক দরিদ্রতম জনগোষ্ঠীর সমান, অর্থাৎ প্রায় ৩৬০ কোটি মানুষের সম্পদের সমান। ইসলাম সামাজিক সাম্য ও ন্যয়িনীতি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বর্ণবাদ, গোত্রবাদ ও জাত্যাভিমানমূলক অহম্বোধকে নির্মূল করে দিয়েছে। পাশ্চাত্যের বৈষম্যমূলক নীতির কারণেই বিশ্ব জুড়ে হিংসার আগুন জ্বলে ওঠেছে, সর্বত্র অশান্তি ও হানাহানি বিরাজ করছে। তাদের মানব বিধ্বংসী মরণাস্ত্রের ব্যবসা রমরমা হয়ে ওঠেছে। ইসলামে ফিতনা-ফ্যাসাদ হত্যাকান্ডের চেয়েও নিকৃষ্ট অপরাধ। নিরীহ ও নিরপরাধ মানুষ হত্যা সমগ্র মানব জাতিকে হত্যার মতই জঘন্য ও কঠোরতম শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে বিবেচিত। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহর নির্দেশ হলো:
হে ঈমানদারগণ! তোমরা একে অপরের সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস করো না। কেবলমাত্র তোমাদের পরস্পরের সম্মতিক্রমে যে ব্যবসা করা হয় তা বৈধ। আর তোমরা নিজেদের কাউকে হত্যা করো না। নিঃসন্দেহে আল্লাহ তা’আলা তোমাদের প্রতি দয়ালু। যে কেউ সীমালঙ্ঘন কিংবা জুলুমের বশবর্তী হয়ে এরূপ (হত্যাকান্ড সংঘটিত) করবে, তাকে খুব শীঘ্রই দোজখের আগুনে প্রবেশ করানো হবে। এটা আল্লাহর পক্ষে খুবই সহজসাধ্য (৪:২৯-৩০)।
সর্বশক্তিমান আল্লাহ্ অন্যায় হত্যাকান্ডকে জঘন্য অপরাধ হিসেবে নিষিদ্ধ করে বলেন,
কোন জীবনকে যথার্থ কারণ ব্যতিরেকে হরণ করা আল্লাহ্ হারাম করেছেন (১৭:৩৩)।


ইসলামে জিহাদ আত্মরক্ষা ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে পরিচালিত হয়ে থাকে, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি ও অন্যায়ভাবে হত্যার সাথে জিহাদকে সম্পৃক্ত করা দুরভিসন্ধিমূলক। হত্যা ও বিশৃংখলা সৃষ্টির মাধ্যমে এসব তথাকথিত জিহাদীগোষ্ঠী যা করছে তা মোটেই ইসলামের অনুমোদিত পথ নয়। নিজেদের স্বার্থ হাছিলের জন্যই পশ্চিমা বিশ্ব এসব জিহাদী গ্রুপের জন্ম দেয়, আর স্বার্থ উদ্ধারের পর এদেরকে সন্ত্রাসের পথে ছেড়ে দেয়। এরাই এখন পশ্চিমা বিশ্বের বিরুদ্ধে ফ্র্যাঙ্কেস্টাইনের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। তাই মানবতা ও শান্তির ধর্ম ইসলামকে সন্ত্রাসী ধর্ম হিসেবে চিত্রায়িত করা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। ইসলাম মধ্যমপন্থী ধর্ম বিধায় উগ্রপন্থা ও বাড়াবাড়ি আল্লাহ নিষিদ্ধ করেছেন। ইসলাম একটি যৌক্তিক ও ভারসাম্যপূর্ণ ধর্মীয় জীবন বিধান মানব জাতিকে উপহার দিয়েছে। কম্যুনিজমের পতনের পর পশ্চিমা ভোগবাদী ও পুঁজিবাদী শক্তি এখন ইসলামকেই পরবর্তী আদর্শিক প্রতিদ্বন্দী হিসেবে চিহ্নিত করেছে। মুসলিম বিশ্বের নৈতিক মূল্যবোধগুলোকে ধ্বংস করে দিয়ে তাদের সম্পদ হাতিয়ে নেওয়া ও তাদের ওপর আধিপত্য বিস্তার করার উদ্দেশ্যেই এখন ইসলামের সংস্কারের কথা বলা হচ্ছে। অথচ আল্লাহ্ স্বয়ং ইসলামের বিধানকে অপরিবর্তনীয় ঘোষণা দিয়ে বলেন,
হে নবী,) আপনার প্রভুর কিতাব থেকে ওহীরূপে যা আপনার নিকট অবতীর্ণ হয়েছে আপনি তা পাঠ করুন। তাঁর বাক্য (বিধান) পরিবর্তন করার কেউ নেই। তাঁকে ব্যতীত আপনি কখনই কোন আশ্রয়স্থল পাবেন না (১৮:২৭)।
সুতরাং যারা ইসলামের সংস্কারের কথা বলে তারা খোদার ওপর খোদকারি করতে চায় অর্থাৎ আল্লাহর বিধানকেই নস্যাৎ করে দিতে প্রয়াসী। তাদের ব্যাপারে আল্লাহ্ মুসলমানদেরকে ধৈর্যশীল হওয়ার উপদেশ দিয়েছে

ইসলামের জন্মলগ্ন থেকেই অধিকাংশ ইহুদী ও খৃষ্টান ধর্মযাজক ও শাসকবর্গ ইসলাম বিরোধী মনোভাব পোষণ করে আসছে। ইসলামের উৎপত্তিস্থল মক্কা ও মদীনা নগরীতে ইহুদীরা মুসলমানদের বিরুদ্ধে চরম ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিল। তারা কাফের ও মুশরিকদের সাথে একাত্ম হয়ে মুসলিম জনগণ ও তাদের নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) কে দুনিয়া থেকে নিশ্চিহ্ন করার ষড়যন্ত্রে মেতে ওঠেছিল। এদের এ বিদ্বেষপূর্ণ আচরণ সম্পর্কে মহান আল্লাহ তাঁর নবী মুহাম্মদ (সাঃ) কে সতর্ক করে বলেন,
ইহুদী ও খৃষ্টানরা কখনই আপনার প্রতি সন্তুষ্ট হবে না, যে পর্যন্ত না আপনি তাদের ধর্মের অনুসরণ করেন। বলে দিন, যে পথ আল্লাহ প্রদর্শন করেন, তাই হল সরল পথ। যদি আপনি তাদের আকাঙ্খাসমূহের অনুসরণ করেন ওই জ্ঞান লাভের পর, যা আপনার কাছে পৌঁছেছে, তবে কেউ আল্লাহর কবল থেকে আপনার উদ্ধারকারী ও সাহায্যকারী নেই (২:১২০)।
একাদশ শতাব্দীতে ইউরোপের খৃষ্টীয় শাসকবৃন্দ তাদের ধর্মযাজকদের উস্কানিতে ইসলামের বিরুদ্ধে পবিত্র ধর্মযুদ্ধ (crusade) পরিচালনা করে। আরবের পবিত্র ভূমি জেরুযালেম দখলের জন্য তারা শত শত বছর ধর্মযুদ্ধ চালিয়ে যায়। এসবই ঐতিহাসিক ঘটনা। বিশ্বের ইতিহাসের দিকে তাকালে গণহত্যা সংঘটনে পশ্চিমা শক্তিই বিশ্বে অগ্রণী। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সময় আমেরিকার পার্লহারবার নৌঘাটিতে জাপানী বিমান আক্রমণের প্রতিশোধ নিতে গিয়ে আমেরিকা আণবিক বোমার আঘাতে জাপানের দু’টি সমৃদ্ধ নগরী হিরোশিমা ও নাগাসাকিকে সম্পূর্ণ ধ্বংসস্তুপে পরিণত করেছে। এ বিধ্বংসী বোমায় লক্ষ লক্ষ নিরীহ নর-নারী ও শিশু পুড়ে অঙ্গার হয়ে গেছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন সময়েই জার্মানীতে ৬০ লাখ ইহুদীকে গ্যাস চ্যাম্বারে পুড়ে মারা হয়েছে। প্রথম ও দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ ছাড়াও ভিয়েৎনাম যুদ্ধ, বসনিয়া ও হার্জিগোবিনার যুদ্ধ এবং অতি সম্প্রতি ইরাক, আফগানিস্তান, সিরিয়া ও ফিলিস্তানের যুদ্ধে সংঘটিত বীভৎস হত্যার ঘটনায় মানবতা ভূলুন্ঠিত হয়েছে এবং এখনও হচ্ছে|

ইসলাম একটি উদারনৈতিক বিশ্বমানবতার ধর্ম। ইসলাম ধর্মালম্বীদের কাছে ইহদী ও খৃষ্টান ধর্মের নবী ও রাসুলগণ শ্রদ্ধেয়ভাজন ও সম্মানীয়। অন্যসব ধর্ম ও তাদের ধর্মগ্রন্থগুলো বিকৃত হয়ে পড়ায় সেগুলো এখন আর মানব জাতির কল্যাণে সমর্থ নয়। বর্তমান বিশ্বের দিকে তাকালে দেখা যাবে ধর্মীয় মূল্যবোধগুলো ক্রমশ তিরোহিত হওয়ার উপক্রম। পৃথিবীর বড় ধর্মগুলো বিকৃতি ও বিচ্যুতির কবলে পড়ায় মানুষের মধ্যে তাদের সঠিক আবেদন ও প্রভাব এখন আর তেমনটি নেই। এমতাবস্থায় পবিত্র ধর্মগ্রন্থ কুরআন অবিকৃত অবস্থায় বিদ্যমান থাকায় ইসলাম একটি জীবন্ত ধর্ম হিসেবে টিকে আছে। স্বীয় মহিমাকে ধারণ করে কুরআন ও ইসলাম ক্বিয়ামত পর্যন্ত টিকে থাকবে এটাই আল্লাহর ওয়াদা। কারণ আল্লাহ্ স্বয়ং তাঁর ঐশী গ্রন্থ কুরআনকে হেফাযত করার দায়িত্ব নিয়ে বলেছেন,
আমি স্বয়ং এ উপদেশ গ্রন্থ অবতারণ করেছি এবং আমি নিজেই এর সংরক্ষক (১৫: ০৯)। এ গ্রন্থের বিশুদ্ধতা সম্পর্কে তিনি বলেন, সম্মুখ অথবা পিছন কোন দিক থেকেই এতে মিথ্যার কোন প্রভাব নেই। এটা প্রজ্ঞাময়, প্রশংসিত আল্লাহর পক্ষ থেকে অবতীর্ণ (৪১-৪২)। এখন একমাত্র বিশুদ্ধ ঐশী গ্রন্থ কুরআনের নির্দেশিত পথই হলো মানব জাতির জন্য শান্তির পথ। ইসলামকে মানব জাতির ধর্ম হিসেবে ঘোষণা করে আল্লাহ বলেন, নিঃসন্দেহে আল্লাহর নিকট গ্রহণযোগ্য দ্বীন একমাত্র ইসলাম (৩:১৯)। আল্লাহ্ তাঁর মনোনীত ধর্মকে রক্ষার ওয়াদা করে বলেন, তারা মুখের ফুঁৎকারে আল্লাহর আলো নিভিয়ে দিতে চায়। আল্লাহ্ তাঁর আলোকে পূর্ণরূপে বিকশিত করবেন, যদিও কাফেররা তা অপছন্দ করে (৬১:৮)।
ইসলাম ধর্মে কুরআন ও সুন্নাহ বিরোধী কোন কিছুর অনুপ্রবেশ মুসলিম বিশ্ব মেনে নেবে না। মানুষের জীবন-বিধান হিসেবে আল্লাহর কিতাব কুরআন ও রাসুল (সাঃ) এর হাদীস যতদিন পৃথিবীর বুকে সংরক্ষিত থাকবে ততদিন পর্যন্ত ইসলাম ধর্মের কোন সংস্কারের প্রয়োজন হবে না। এর চিরন্তন সত্য ও ন্যায়ের নীতিমালাই হবে মানব জাতির দিশারী।

তবে পবিত্র কুরআন ও সুন্নাহ থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার কারণে মুসলমান সমাজের মধ্যে অনেক বিভেদ ও বিভাজনের সৃষ্টি হয়েছে, অনেক বিদআত ও কুসংস্কার অনুপ্রবেশ করেছে, হারাম কাজের বিস্তৃতি লাভ ঘটেছে যা মুসলমানদের ঈমান ও আমলকে অনেক দুর্বল করে দিয়েছে। কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে এসবের সংস্কার অতীব প্রয়োজন। ইসলামের নামে ভন্ডামী ও ভাওতাবাজী ব্যবসা বন্ধ করে ইসলামের মৌলিকত্ব ও ন্যায়নীতিকে রক্ষা করতে হবে। ধর্মে দলীয় ও উপদলীয় কোন্দলের ব্যাপারে আল্লাহ্ সাবধান বাণী উচ্চারণ করে বলেন,
নিশ্চয় যারা স্বীয় র্ধমকে খন্ড-বখিন্ড করেছে এবং অনকে দল হয়ে গেছে, তাদের সাথে আপনার কোন সর্ম্পক নেই। তাদের ব্যাপার আল্লাহ তা'আয়ালার নিকট সর্মপতি। অতঃপর তিনি বলে দেবেন যা কিছু তারা করে থাকে (৬:১৫৯)।
ইসলামের নবী (সাঃ) বলেছেন, আমার উম্মতের মধ্যে ৭৩টি ফেরকার উদ্ভব ঘটবে, তম্মধ্যে একটিই হবে আমার প্রকৃত অনুসারী। মুসলিম সমাজের বর্তমান দুর্দশা থেকে উত্তরণের একটি মাত্রই উপায় আছে - আর তা হলো কুরআন ও সুন্নাহকে দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরা এবং সে অনুযায়ী নিজেদের ঈমান ও আমলকে সংশোধন করা। তখন তাদের আমল ও আখলাক্বই বলে দেবে তারা আল্লাহর ন্যায়নিষ্ঠ বান্দা এবং সন্ত্রাস ও হানাহানি থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত। আর এভাবেই মুসলিম উম্মাহ দুনিয়া ও আখিরাতে সাফল্য অর্জন করতে পারবে।

বিষয়: বিবিধ

১৭৯৫ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

358145
০১ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ রাত ০২:০৫
দুষ্টু পোলা লিখেছেন : ভালো লাগলো ধন্যবাদ
358150
০১ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ রাত ০৩:২৯
অপি বাইদান লিখেছেন : ইসলাম ধর্মের প্যানপানানি, শুকনো কথার ফুলঝুড়ি।
এমন একটি ইসলামী রাস্ট্র দেখাতে পারবেন যেখানে ইসলাম কায়েম করে শিক্ষা/বিজ্ঞান/অর্থনৈতিক উন্নয়ন হয়েছে? ইসলামী কাঁটাবৃক্ষে তালেবান, বোকোহারাম, আইসিস, আল্লামা তেঁতুল হুজুর ছাড়া আর কি আছে??

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File