অফুরন্ত নিয়ামতের মাস রমযান
লিখেছেন লিখেছেন শিহাব আহমদ ২৮ জুন, ২০১৫, ০৩:১২:৫৫ রাত
আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীনের অফুরন্ত রহমত, মাগফেরাত ও নাজাতের অমিয় ফল্গুধারা বয়ে নিয়ে প্রতি বছর আমাদের মাঝে আসে মাহে রমযান। রমযানের বিশেষ তাৎপর্য এই যে, এ মাসের প্রথম দশকে আল্লাহর বান্দাগণ তাঁর অপার রহমতে সিক্ত হয়, দ্বিতীয় দশকে নিজেদের গুনাহ্সমূহ থেকে পরিশুদ্ধ হয় এবং তৃতীয় দশকে দোজখের আগুন থেকে মুক্তির সুযোগ পায়। সওম পালনের মাধ্যমে বান্দাগণের আ’মলে অর্থাৎ তাদের কথায়, কাজে, চিন্তায় ও বিশ্বাসে পরিশুদ্ধি ঘটে। ফলে তাদের আত্মার উন্নতি সাধন হয় এবং তারা আল্লাহর নৈকট্য লাভে সমর্থ হয়। আল্লাহ্ হলেন রাহমানুর রাহীম এবং গফুরুর রাহীম অর্থাৎ তিনি পরম করুণাময় ও অতিশয় দয়ালু এবং অতীব ক্ষমাশীল। এ বিশেষ রহমতের মাসে তাঁর করুণা, দয়া ও ক্ষমার অপার ভান্ডার খুলে দেওয়া হয়। পবিত্র রমযান মাসের দু’টি মাহাত্ম্য। প্রথমটি হলো এই মাস আল্লাহর কালাম পবিত্র কুরআন নাযিলের মাস। এ মাসে ‘লাইলাতুল ক্বদর’ নামে এমন একটি রাত আছে যে রাতে আল্লাহ্ তা’আালা মানব জাতির পথ প্রদর্শক কুরআন নাযিল করেছেন। এ কারণেই এই রাতটি হাজার মাসের চেয়েও উত্তম মর্যাদা লাভ করেছে। এ সম্পর্কিত সুরা ক্বদরে আল্লাহ্ বলেন, “আমি একে নাযিল করেছি ক্বদরের রাতে। ক্বদরের রাত সম্পের্ক আপনি কি জানেন? ক্বদরের রাত হল এক হাজার মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। এতে প্রত্যেক কাজের জন্যে ফেরেশতাগণ ও রূহ অবতীর্ণ হয় তাদের পালনকর্তার নির্দেশক্রমে। এটা নিরাপত্তা, যা ফজরের উদয় পর্যন্ত অব্যাহত থাকে।” এ যে মহান আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীনের কত বিশাল রহমত তা বর্ণনাতীত।
রমযানের অপর মাহাত্ম্য হলো, এ মাসটি তাক্বওয়া বা ধার্মিকতা অর্জনের মাস। পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ্ বলেন, “হে মুমিনগণ! তোমাদের প্রতি রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেরূপ ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের প্রতি; আশা করা যায় যে তোমরা তাকওয়া অর্জন করবে (২:১৮৩)।” পুরো মাস ব্যাপী সওম পালনের মাধ্যমে এ তাক্বওয়া অর্জিত হয়। তাই রমযান হলো তাক্বওয়া অর্জনের প্রশিক্ষণের মাস। সুবেহ্ সাদেক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার ও স্ত্রী-সম্ভোগ বর্জনের সাথে সাথে সব ধরনের অনৈতিক কাজ, মিথ্যাচার, কুকথা ও কুচিন্তা-ভাবনাকে বর্জনের মাধ্যমে সওম পালন করতে হবে। মাস ব্যাপী এসব জৈবিক চাহিদা ও রিপুর উপর কঠোর নিয়ন্ত্রণ, সে সাথে আল্লাহর যিকির এবং কুরআন তিলাওয়াত বান্দার দেহ ও মনকে পরিশীলিত ও পরিশুদ্ধ করে তোলে, বান্দার আত্মিক উন্নতি ঘটে এবং সে তাক্বওয়া অর্জনে সমর্থ হয়। মু’মিন বান্দা যখন অন্তরে তাক্বওয়া অর্জন করে তখন সে রিপুর তাড়নাকে এবং শয়তানী প্ররোচনাকে দৃঢ়ভাবে প্রতিহত করতে পারে। সে তখন সকল পাপ থেকে মুক্ত থাকার যোগ্যতা লাভ করে। তাই হাদীস শরীফে আল্লাহর নবী (সাঃ) বলেছেন, রোজা (প্রতিরক্ষার) ঢাল স্বরূপ, অতএব তোমাদের কেউ যেন রোজার দিনে অশ্লীল কথা না বলে এবং চেঁচামেচি না করে। আর যদি কেউ তাকে গালি-গালাজ করে অথবা তার সাথে ঝগড়া-বিবাদ করে, তবে সে যেন বলে, আমি রোজাদার।’
কুরআন শরীফে আল্লাহ্ বলেন, “বলুন (হে নবী), হে আমার বান্দাগণ যারা নিজেদের উপর যুলুম করেছ তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয় আল্লাহ্ সমস্ত গোনাহ মাফ করে দিবেন। তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু (৩৯:৫৩)।” হাদীস শরীফে আছে, আল্লাহ্ বলেন, ‘হে আদম সন্তানেরা, তোমারা যখন আমাকে ডাকবে, আমার উপর তোমাদের আশাকে অটুট রেখো; আমি তোমাদের সকল ভুল-ত্রুটি মাফ করে দেব এবং মনে কিছু নিব না’ (আল-আলবানি)। বান্দাকে তার গুনাহসমূহ মাফ করানোর এক মহা সুযোগ দান করেছেন মহান আল্লাহ এ রমযান মাসে। অর্থাৎ এ মাস হলো পাপ মোচনের মাস। তাইতো আল্লাহর নবী (সাঃ) বলেছেন, ‘যে রমযান মাস পেল আর তার গুনাহসমূহ মাফ করাতে পারল না তার চেয়ে হতভাগ্য আর কে আছে?’ সওম এমনই একটি আমল যার স্বাক্ষী একমাত্র আল্লাহ্, কারণ অন্যান্য আমলের মত এটি দৃশ্যমান নয়। তাই সওম পালনের গুরুত্ব অধিক। সাহাবী আবু হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত হাদীসে রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেন, ‘আল্লাহ্ তা’আলা বলেছেন, আদম সন্তানের প্রতিটি সৎকর্ম তার নিজের জন্যই; কিন্তু রোজা স্বতন্ত্র, তা আমারই জন্য, আর আমিই এর প্রতিদান দেব।’ অপর হাদীসে আল্লাহর নবী (সাঃ) বলেন, ’আল্লাহ্ বলেছেন, আদম সন্তানের প্রত্যেক সৎকর্ম কয়েকগুণ বর্ধিত করা হয়। একটি নেকী দশগুণ থেকে নিয়ে সাতশত গুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়। তবে রোজা ব্যতীত। কেননা, তা আমার উদ্দেশ্যে (পালিত) হয়। আর আমি নিজেই তার পুরস্কার দেব। সে পানাহার ও কাম প্রবৃত্তি আমার (সন্তুষ্টি অর্জনের) উদ্দেশ্যেই বর্জন করেছে। রোজাদারের জন্য দু’টি আনন্দঘন মুহূর্ত রয়েছে। একটি আনন্দ হল ইফতারের সময়, আর অপরটি তার প্রতিপালকের সাথে সাক্ষাতের সময়। আর নিশ্চয় তার মুখের গন্ধ আল্লাহর কাছে মৃগনাভির সুগন্ধ অপেক্ষা অধিক উৎকৃষ্ট (মুসলিম শরীফ)।”
ইসলামের প্রতিটি ইবাদতই দুনিয়া ও আখিরাতের জন্য কল্যাণকর। সওম পালনের মাধ্যমে মু’মিন বান্দা শুধু পারলৌকিক মুক্তি ও কল্যাণই অর্জন করে না, এর ইহজাগতিক অনেক কল্যাণও রয়েছে। অন্তরের পরিশুদ্ধি তাকে একজন সৎ ও নিষ্ঠাবান মানুষ হিসেবে গড়ে তোলে, সে কষ্ট সহিষ্ণু ও ধৈর্যশীল হয়ে উঠে এবং তার মধ্যে সহমর্মীতা বৃদ্ধি পায়। ফলে সমাজে হিংসা-বিদ্বেষ ও ঝগড়া-বিবাদ কমে যায় এবং সমাজ জীবন অনেক শান্তিপূর্ণ ও সুশৃঙ্খল হয়ে উঠে। ক্ষুধা-তৃষ্ণার জ্বালা ও গরীবের কষ্ট ও মর্মবেদনার কথা রোজাদাররা সঠিকভাবে উপলব্ধী করতে পারে। ফলে পারস্পরিক দায়িত্বশীলতা, সহানুভূতি ও সহযোগিতার মনোভাব বৃদ্ধি পায়। এভাবে সমাজ অনেক ভারসাম্যপূর্ণ হয়ে উঠে।
বিষয়: বিবিধ
৯৭৭ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন