ক্রিকেটের দাদাগিরি

লিখেছেন লিখেছেন শিহাব আহমদ ১৮ এপ্রিল, ২০১৫, ০৭:৪০:০০ সকাল



“Play the game with the spirit of the game” - Jawaharlal Nehru

“খেলাকে খেলাসুলভ চেতনা দ্বারাই খেলো” - আধুনিক ভারতের অন্যতম স্থপতি পন্ডিত জওহরলাল নেহরুর এ উক্তিটি দিয়েই শুরু করতে চাই। জুয়া খেলাকে বাদ দিলে বাকি সব খেলাধুলা সার্বিকভাবে এক নির্মল আনন্দের বাহন - খেলোয়াড় এবং দর্শক উভয়ের জন্যই। খেলায় হার-জিৎ আছে বলেই এতে আনন্দ, উদ্যম ও উত্তেজনা আছে। ‘ফেয়ার প্লে’ খেলাকে খেলোয়াড়িচিত চেতনায় উদ্ভাসিত করে, খেলাকে আনন্দ মধুর করে তোলে। জওহরলাল নেহরুর উক্তিটি দ্বারা ‘ফেয়ার-প্লে’ কথাকেই গুরুত্ব দিচ্ছে। কিন্তু সম্প্রতি সমাপ্ত বিশ্ব-কাপ ক্রিকেটের আম্পায়ারিং ‘ফেয়ার-প্লে’র বিষয়টিকে মোটেই গুরুত্ব দেয়নি। ফলে খেলাটির সৌন্দর্য ও অন্তর্নিহিত চেতনাকে ধূলিস্যাৎ করে দিয়েছে। আন্তার্জাতিক ক্রিকেটে এখন ‘ত্রিদেশীয় দাদাগিরি’ চলছে। অষ্ট্রেলিয়া, ভারত ও ইংল্যান্ড এ তিন দাদার পক্ষপুটে ক্রিকেট এখন বন্দী। ক্রিকেট খেলায় যে তাদের আধিপত্যবাদ চলছে বিশ্ব কাপ খেলার আম্পায়ারিং ও ব্যবস্থাপনায় এর চিত্রটি ফুটে উঠেছে। অষ্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের মনমুগ্ধকর স্টেডিয়ামগুলো যখন উৎফুল্ল দর্শকদের উত্তেজনার উত্তাপে ভরপুর, এমন কি টিভি দর্শকরাও যখন মাতোয়ারা, তখন পর্দার আড়ালে চলছে গেম- ফিক্সিং এর মহড়া। বিশ্ব কাপের খেলায় অর্থের কাছে ক্রিকেটের অনর্থই ঘটে গেল।

কোয়ার্টার ফাইনেলে বাংলাদেশ-ভারতের খেলাটিতে এহেন একটি ষড়যন্ত্রের জাল বিস্তৃত ছিল। বাজে ও বিতর্কিত আম্পায়ারিংয়ের কারণে ভারতের ওপেনার ব্যাটসম্যান রোহিত শর্মার ১২৬ রানে উঠে আসা এবং সুরেশ রায়নার ৬৫ রানের দৌড় ভারতকে ৩০২ রানের সুবিধাজনক উচ্চতায় নিয়ে যায়। সুরেশ রায়নার রান যখন ১০, মাশরাফির বল তাকে এলবিডব্লিউতে ফেললো, কিন্তু আম্পায়ার সেটা নাকচ করে দিল। কিন্তু রোহিত শর্মার রান যখন ৯০, রুবেলের বল তাকে আউট করে দিলেও সে বলটিকে ‘নো বল’ ঘোষণা দিয়ে আম্পায়ার কি ঠিক কাজটি করল? আবার মাহমুদুল্লাহর ছক্কার বল বাউন্ডারীর বাইরে গিয়ে অবৈধ ক্যাচ ধরলেও সেটা জায়েয হয়ে গেল এবং মাহমুদুল্লাহকে আউট ঘোষণা করা হলো। ক্রিকেট খেলায় এত উন্নত প্রযুক্তির ক্যামেরা ব্যববহার করেও আম্পায়ারদের চোখে এসব কিছুই ধরা পড়ল না - এটা একটা অবাক কান্ডই বটে। তারা ‘দেখে না দেখার ভাণ’ করলেও সারা দুনিয়ার সাধারণ দর্শক টিভি পর্দায় সঠিক ঘটনাগুলোই দেখতে পেয়েছে।

ঐ দিন আরও এক ন্যাক্কারজনক ঘটনায় ক্রিকেট কালিমা লিপ্ত হল। খেলায় মাঠে আইসিসি’র অফিসিয়াল স্ক্রীনে “জিতেগা ভাই জিতেগা ইন্ডিয়া জিতেগা” স্লোগানটি শোভা পাচ্ছিল। এ যেন খেলা শুরু ও শেষ হওয়ার আগেই খেলার রেজাল্ট আইসিসি দিয়ে দিল - এটা কেমন করে হয়? আন্তর্জাতিক পরিসরের কোয়ার্টার ফাইনেলের এত বড় একটি গুরুত্বপূর্ণ খেলাকে এভাবে খেলোতে পরিণত করে আইসিসি কার স্বার্থ উদ্ধার করল? আইসিসি’র তিন মোড়লের এক মোড়ল ভারত অর্থের জোরে ‘জয়’ ছিনিয়ে নিয়ে গেল। এতে বাংলাদেশের স্বপ্ন ভঙ্গ হলেও সবচেয়ে বেশী ক্ষতি হল ‘ফেয়ার-প্লে’ চেতনার - যে চেতনার কথা নেহরু বলেছিলেন।

এসব তো একটি খেলার ঘটনা। এমন আরো অনেক ঘটনাই রয়ে গেছে যা সবার চোখ খুলে দিচ্ছে। আম্পায়ারদের এসব সিদ্ধান্তকে ‘বাজে আম্পায়ারিং’ বলে অভিহিত করায় আইসিসির প্রধান আ ন হ মুস্তফা কামালকে নিয়ম বহির্ভূত পন্থায় বিশ্ব কাপের ফাইনেল খেলার ট্রফি ও পদক বিতরণের অনুষ্ঠানে রাখা হয়নি। অবশেষে তিনি পদত্যাগে বাধ্য হন। ‘ক্রিকেটের উঠতি দাদা ও নব্য ক্রিকেট-বাণিজ্যের বিশাল বাজার’ ভারতকে যেনতেন প্রকারে জেতানোই যদি আইসিসি’র কাম্য হয়ে থাকে তবে এর চেয়ে লজ্জা ও হতাশার বিষয় আর কি আছে? ভারতের কাছে বাংলাদেশের অন্যায় হারের মধ্য দিয়ে রচিত হলো এক লজ্জাজনক ইতিহাস। ক্রিকেটের মত একটি অভিজাত খেলার এমন দুর্গতি হওয়া কারো কাম্য নয়।

একটি আন্তর্জাতিক ম্যাচে এ ধরনের কারচুপির উদাহরণ বিশ্বের ক্রীড়াঙ্গণে আর দ্বিতীয়টি আছে কি না তা জানা নেই। আইসিসিতে ভারতের প্রভাব এখন সুস্পষ্ট হয়ে উঠছে। তাই ছোট দেশগুলোর উপর ‘দাদাগিরি’ চালাতে অসুবিধা হচ্ছে না। এটা যে শুধু ক্রিকেটের বেলায়ই তা নয়, এর বিস্তৃতি আরও ব্যাপক। প্রতিবেশী দেশগুলো তা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে। এ অদ্ভুত ‘দাদাগিরি’ ক্রিকেট খেলাকে কোথায় নিয়ে যাবে বলা মুশকিল। আধিপত্যবাদী রমরমা ক্রিকেট-বাণিজ্যের পিছনে যে উদ্দেশ্যই থাকুক, অন্তত ‘ফেয়ার-প্লে’র চেতনা এর দ্বারা যে বিকশিত হবে না তাতে কোন সন্দেহ নেই। আমরা চাই, আইসিসি’র শুভ বুদ্ধির উদয় হোক, অভিজাত ক্রিকেট খেলা ‘ফেয়ার-প্লে’র চেতনায় তার পূর্ণ আভিজাত্য নিয়ে বেঁচে থাকুক।

বিষয়: বিবিধ

১১১১ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

315546
১৮ এপ্রিল ২০১৫ সকাল ০৯:২৭
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : ভারতিয় অর্থনৈতিক স্বার্থে ইতঃমধ্যে এসিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিল ভেঙ্গে দেওয়া হয়েছে। ক্রিকেট খেলা যেভাবে ভারতিয় মিডিয়া আর জুয়ারিদের নিয়ন্ত্রনে চলে গেছে এটি ভারত ছাড়া অন্য দেশে আর জনপ্রিয় থাকবে বলে মনে হয়না।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File