তরুণ প্রজন্মের স্বপ্ন ও সম্ভাবনা
লিখেছেন লিখেছেন শিহাব আহমদ ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৫, ০৮:১৫:০৫ সকাল
তারুণ্য একটি প্রবল প্রাণশক্তি যা অফুরন্ত সম্ভাবনা ও বর্ণিল স্বপ্ন দ্বারা উজ্জ্বীবিত থাকে। একটি স্ফুলিঙ্গ তারুন্যকে উদ্দীপ্ত শিখায় পরিণত করতে পারে, যা হয়ে ওঠতে পারে নক্ষত্রের মত সমুজ্জ্বল। এ জন্য প্রয়োজন একটি স্বপ্নের - যে স্বপ্ন তরুণ সমাজকে একটি সুন্দর সফল জীবনের পথ দেখাবে। প্রতিটি তরুণেরই এরূপ একটি স্বপ্ন থাকা চাই - উন্নত জীবন ও সমৃদ্ধ দেশ গড়ার স্বপ্ন। কিছু দিন আগে ভারতের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি ডঃ এ পি জে আব্দুল কালাম ঢাকায় এসেছিলেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭০০ শিক্ষার্থীদের সামনে উদাত্ত আহ্বান জানিয়ে বলেছিলেন, "তোমাদের স্বপ্নগুলো হবে বাংলাদেশের স্বপ্ন, তোমাদের ভাবনাগুলো হবে বাংলাদেশের ভাবনা, এবং তোমাদের কাজগুলো হবে বাংলাদেশের কাজ"। তাদের স্বপ্নে, চিন্তা-ভাবনায় এবং কাজ-কর্মের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকবে দেশ ও আপামর জনগণের শান্তি, সমৃদ্ধি ও কল্যাণ। এসব তরুণই হবে জাতির মেরুদন্ড। এ মেরুদন্ডকে শক্তিশালী করে গড়ে তোলার কাজে অভিবাবক, সমাজ, এবং সর্বোপরি রাষ্ট্রকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতে হবে। সঠিক পরিচর্যা পেলে একদিন তারাই তাদের মহৎ স্বপ্নগুলোকে বাস্তবে রূপ দিতে পারবে ।
উদীয়মান তরুণ প্রজন্ম এখন দেশের বিরাট এক জনগোষ্ঠী। জাতিসংঘের জনসংখ্যা তহবিলের ২০১৪ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী দেশের বর্তমান মোট জনগোষ্ঠীর প্রায় ৩০ শতাংশ তরুণ যাদের বয়স ১০ থেকে ২৪ বছর। প্রতিবেদনের তথ্য মতে ২০৫০ সাল নাগাদ তরুণদের সংখ্যা ১০ থেকে ১৯ শতাংশে নেমে আসবে। ফলে তখন কর্মক্ষম নবীনের সংখ্যা স্বল্পতা দেখা দিবে। তাই আজকের এ বিশাল কর্মক্ষম ও উদ্যমী তরুণ প্রজন্মের সামনে বিরাট সম্ভাবনা ও সুযোগের সৃষ্টি হয়েছে। তারা দেশের বর্তমান এবং ভবিষ্যত উন্নয়নের ক্ষেত্রে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারবে। এ সম্ভাবনাময় তরুণ জনশক্তিকে জনসম্পদে পরিণত করার এখনই উপযুক্ত সময়। দেশের উন্নয়নের অভিযাত্রায় এরাই অগ্রণী সৈনিকের ভূমিকা পালন করবে। অতীতে দেশের প্রতিটি ক্রান্তিকালে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ তরুণ ও যুব সমাজ ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করেছে। এবারও তারা অভ্যন্তরীন ও বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে সক্ষম হবে। এই তরুণ সমাজ তাদের অমিত সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করতে পারবে।
তরুণ বয়সটাই জ্ঞান সাধনার বয়স, নিজেকে বর্তমান ও ভবিষ্যতের উপযুক্ত নাগরিক ও কর্মবীর হিসেবে গড়ে তোলার সময়। বিজ্ঞানের কল্যাণে পৃথিবী আজ হাতের মুঠোয় এসে গেছে। বিজ্ঞানের এই জয়যাত্রার যুগে ইন্টারনেটে যে অবাধ তথ্যপ্রবাহের সুবর্ণ দ্বার উদ্ঘাটিত হয়েছে এর পূর্ণ সুযোগ গ্রহণ করবে আমাদের তরুণ সমাজ। তারা তাদের জ্ঞানতৃষ্ণাকে শাণিত করবে, অধ্যয়ন ও গবেষণায় ব্রতী হবে, এবং মেধা, জ্ঞান ও উদ্ভাবনী শক্তির ঘটাবে স্ফুরণ। নব নব আবিষ্কারের দ্বারা দেশ ও মানবতার কল্যাণ সাধন করবে তারা। তাদের মন-মস্তিষ্ককে প্রজ্ঞা ও অভিজ্ঞতা দ্বারা সমৃদ্ধ হবে। উন্নত নীতি-নৈতিকতা দ্বারা তারা নিজেদেরকে সৎ, সাহসী ও সংগ্রামী মানুষে পরিণত করবে। শিক্ষা, শিল্প, সংস্কৃতি, ক্রীড়া, ইত্যাদি সৃজনশীল কর্মকান্ডে তাদের ব্যাপক অংশগ্রহণের সুযোগকে অবারিত করে দিতে হবে। যেকোন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে তারা সামনে এগিয়ে যাওয়ার শক্তি ও সামর্থ্য অর্জন করবে। সত্যিকার মানুষ হিসেবে সকল কুসংস্কার ও অপসংস্কৃতির জঞ্জাল সরিয়ে তারা নিজেদেরকে আলোকিত করতে পারবে। এভাবে জীবনকে গড়ার মধ্য দিয়ে তারা একদিন উন্নয়নের নেতৃত্বে অধিষ্ঠিত হবে এবং দেশ ও জাতির শান্তি ও সমৃদ্ধি বয়ে আনবে।
বিশ্ব জুড়ে উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে এগিয়ে চলার তীব্র প্রতিযোগিতা চলছে। প্রতিদ্বন্দিতাময় বিশ্বে টিকে থাকতে হলে তরুণ সমাজকে এখনই প্রস্তুতি নিতে হবে। তাদের মধ্যে যে অফুরন্ত সম্ভাবনা ও সুপ্ত সৃজনী শক্তি রয়েছে তা জাগিয়ে তুলতে হবে। এর জন্য চাই জ্ঞানভিত্তিক গুণগত শিক্ষা, যার আলো তাদের অন্তরকে আলোকিত করবে, সম্ভাবনা ও সুপ্তশক্তিকে উন্মোচিত করবে, আত্মবিশ্বাসী ও কর্মোদ্যোগি করে তুলবে। আমরা জানি, জ্ঞানই শক্তি। জ্ঞান সৃজনী শক্তিকে পরিপুষ্ট করে, উন্নয়নের সিঁড়িকে করে মজবুত। জ্ঞানান্বেষণের প্রবল ইচ্ছা একটি জ্ঞানভিত্তিক সমাজের জন্ম দেয়। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির চর্চা যেমন অর্থনৈতিক উন্নতির ভিত তৈরী করে, তেমনই নৈতিক শিক্ষা সভ্যতা ও সুশাসনের ভিতকে শক্তিশালী করে। জ্ঞানার্জনের ফলে তরুণেরা নীতি-নৈতিকতায়, দক্ষতা ও আত্মবিশ্বাসে বলীয়ান হয়ে ওঠবে। তারা তখন তাদের পছন্দনীয় কর্মক্ষেত্রে নিজেদেরকে প্রতিষ্ঠিত করার উদ্যোগ নিতে পারবে। সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের বিভিন্ন ক্ষেত্রে তারা কর্মী, ব্যবস্থাপক ও উদ্যোক্তা হিসেবে ছড়িয়ে পড়বে। উন্নয়নের বহুমুখী খাতগুলো তারুণ্যের পদচারণায় মুখর হয়ে ওঠবে।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ক্রমাগত উন্নতির ফলে পরিবর্তনের হাওয়া বইছে সর্বত্র। এ পরিবর্তন যেমন একদিকে কল্যাণ বয়ে আনছে, অন্যদিকে বিপর্যয়ও ডেকে আনছে। পরিবেশ দূষণ, জলবায়ুর পরিবর্তন, বিধ্বংসী অস্ত্রের বিস্তার, নব্য আধিপত্যবাদী আগ্রাসন, জঙ্গীবাদ, প্রাণঘাতী রোগ-ব্যাধি, ইত্যাদি নতুন নতুন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছে পৃথিবীর মানুষ। মানুষের ভোগবাদী প্রবণতা প্রাকৃতিক পরিবেশ ও সম্পদকে উজাড় করে দিচ্ছে। পুঁজিবাদী অর্থনীতির দৌরাত্মে ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য পাহাড়সম রূপ ধারণ করছে। এক শ্রেণীর মানুষের হাতে সম্পদের পাহাড় জমছে, অন্যদিকে অগণিত দরিদ্র ও বুভূক্ষ মানুষের হাহাকারে মানবতা ভূলুন্ঠিত হচ্ছে। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে এগিয়ে যেতে হবে তরুণ সমাজকে। পরিবর্তিত পরিস্থিতি ও নতুন ধ্যান ধারণার সাথে খাপ খাইয়ে নিজ নিজ কর্মক্ষেত্রে নতুন রূপরেখা তৈরী করবে তরুণেরা। অতীত অভিজ্ঞতা ও বর্তমান প্রেক্ষাপটের আলোকে নিজেদের বুদ্ধি বিবেচনাকে কাজে লাগিয়ে সিদ্ধান্ত নিবে, নেতৃত্ব দিবে এবং এগিয়ে যাবে তারা।
জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতির সূচকে বাংলাদেশ অনেক পিছিয়ে। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) এক প্রতিবেদনের তথ্য মতে, এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ২৮ দেশের মধ্যে সার্বিকভাবে বাংলাদেশের অবস্থান ২৭তম, শিক্ষায় ২৫তম, উদ্ভাবনে ২৭তম, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিতে ২৬তম। এটা বাংলাদেশের জন্য কোন সুখকর চিত্র নয়। তবুও এটা বলতে বাধা নেই যে, বাংলাদেশের তরুণ সমাজের রয়েছে অপার সম্ভাবনা। প্রকৃতগতভাবেই আমাদের তরুণেরা মেধাবী ও কর্মঠ, তারা দ্রুত শিখতে পারে এবং যেকোন পরিস্থিতিতে নিজেদেরকে মানিয়ে নিতে পারে। সম্প্রতি দেশে-বিদেশে তারা তাদের মেধা ও সৃজনী শক্তির চমক দেখাতে সক্ষম হচ্ছে। গণিত অলিম্পিয়াড প্রতিযোগিতায়ও আমাদের শিক্ষার্থীগণ সাফল্য অর্জন করছে। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কম্পিউটার বিজ্ঞানের তরুণ শিক্ষার্থীগণ তাদের মেধা ও উদ্ভাবনী শক্তি দিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অনেক উন্নত দেশের শিক্ষার্থীগণকেও পেছনে ফেলে দিয়েছে। তবে এটা দুঃখজনক যে, সুযোগের অভাবে দেশ থেকে শ্রেষ্ঠ মেধার অধিকারী অনেক তরুণ বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছে।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতে বিরাট পশ্চাদপদতা সত্ত্বেও বাংলাদেশী তরুণদের প্রচেষ্টা থেমে নেই। শ্লথ গতির ইন্টারনেট, বিদ্যুতের লোডশেডিং, ইংরেজী ভাষায় দুর্বলতা নিয়েও নিজেদের অদম্য চেষ্টায় তারা এগিয়ে যাচ্ছে। প্রোগ্রামিং, সফটওয়্যার ও হার্ডওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে এখন অনেক তরুণ এগিয়ে আসছে। গ্লোবাল বিজনেস প্রসেস আউটসোর্সিংয়ে বাংলাদেশের তরুণদের অংশগ্রহণ দিন দিন বাড়ছে। প্রায় ৩০ হাজার তরুণ এখাতে ফ্রিল্যান্সার হিসেবে কাজ করছে। ইউরোপ, আমেরিকা ও অষ্ট্রেলিয়ায় আইসিটি-বিপিও সেক্টরে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে বিপুল কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে, আমাদের তরুণ সমাজ এই সুযোগকে আরো বেশী কাজে লাগাতে সক্ষম হবে। শত প্রতিকূলতা সত্ত্বেও গার্মেন্টস সেক্টরে যেভাবে অগ্রগতির উজ্জ্বল স্বাক্ষর রেখে বাংলাদেশ বিশ্বের বুকে 'গার্মেন্টস আইকনে' পরিণত হয়েছে, আশা করা যায অদূর ভবিষ্যতে আইসিটি-বিপিও সেক্টরেও অনুরূপ মর্যাদায় ভূষিত হওয়া দুঃসাধ্য নয়। সরকারী ও বেসরকারী খাতে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার বেড়ে চলেছে। ফলে দেশের অফিস-আদালত, ব্যবসা-বাণিজ্য ও সেবাখাতে অটোমেশন ও কম্পিউটার প্রযুক্তির বিস্তার ঘটছে। মুঠো ফোনের বদৌলতে তথ্য ও মোবইল ব্যাংকিং সেবা দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলেও পৌঁছে গেছে। এটা আশাপ্রদ যে, সরকারের তথ্য সেবা ইউনিয়ন পর্যায়ে পৌঁছানোর কর্মসূচী বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে।
আমাদের দেশ একটি কৃষি প্রধান দেশ। সুপ্রাচীন কাল থেকেই কৃষি এদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে এক বিরাট অবদান রেখে আসছে। এখনও ১৬ কোটি মানুষের খাদ্য যোগানো ছাড়াও বিভিন্ন অর্থকরী ফসলের উৎপাদন দেশের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করছে। কিন্তু উন্নত দেশের তুলনায় আমাদের কৃষি অনেক পিছিয়ে। গ্রামীণ তরুণ সমাজকে আধুনিক কৃষি পদ্ধতিতে দক্ষ করে তুলতে পারলে তারা এক একজন সবুজ বিপ্লবের সৈনিকে পরিণত হতে পারবে। সুপরিকল্পিত ভূমির ব্যবহার, উন্নত চাষাবাদ পদ্ধতি, সেচ ব্যবস্থার উন্নয়ন, আধুনিক মৎস্য চাষ ও গবাদি পশুপাখীর খামার প্রতিষ্ঠা, বনায়ন, কৃষি পণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ ও বাজারজাতকরণ, ইত্যাদি ক্ষেত্রে গ্রামীন তরুণ ও যুব সমাজ প্রশিক্ষিত ও দক্ষ হতে পারলে সবুজ বিপ্লব সফল হওয়া মোটেও অসম্ভব কিছু নয়। কৃষিতে যে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে এর প্রমাণতো আমরা এখনই পাচ্ছি। মধ্যপ্রাচ্যের মরুময় দেশগুলোতে বিভিন্ন ধরনের শাকসব্জী উৎপাদন ও মাছ চাষ করে আমাদের প্রবাসী যুবকেরা তাক লাগিয়ে দিয়েছে। কৃষিতে প্রশিক্ষিত ও দক্ষ তরুণ সমাজের ব্যাপক অংশগ্রহণই হতে পারে আমাদের উন্নয়নের এক বড় নিয়ামক শক্তি।
বাংলাদেশে পর্যটন শিল্প তরুণ উদ্যোক্তাদের জন্য একটি সম্ভাবনাময় খাত হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। 'দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া' এমন অনেক পর্যটন স্পট তরুণ অভিযাত্রীদের পদচারণায় মুখর হচ্ছে। ফলে সুন্দরবন, বান্দরবন, শ্রীমঙ্গল, কুয়াকাটা, তামাবিল, মাধবকুন্ড, সীতাকুন্ড ও বিভিন্ন স্থানে বেশ কয়েকটি পর্যটন স্পট গড়ে ওঠেছে। এরকম আরো অনেক স্পট ভ্রমণবিলাসী দেশী-বিদেশী পর্যটকদের জন্য আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্রে পরিণত হতে পারে। এই পর্যটন শিল্প তরুণদের জন্য শুধু একটি আর্থিক খাত হিসেবেই নয়, বরং দেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, সেই সাথে দেশের শিল্প, সংস্কৃতি ও ইতিহাসকে বিশ্ববাসীর সামনে তোলে ধরার এক উত্তম উপায় হতে পারে। এছাড়া খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ ও রন্ধন শিল্পেও তরুণ উদ্যোক্তা শ্রেণী গড়ে ওঠতে পারে। আন্তর্জাতিক মানের দেশী-বিদেশী রান্না পর্যটন শিল্পের জন্য সহায়ক হবে। এভাবে তরুণ সমাজ তাদের উদ্ভাবনী ও সৃজনী শক্তির দ্বারা আত্মকর্মসংস্থানের বিভিন্ন প্রকল্প তৈরী করতে সক্ষম হবে।
সৎ ও সুন্দর জীবন যাপনের জন্য প্রয়োজন কর্মসংস্থানের। দেশে প্রতি বছর ২০ লক্ষ তরুণ-তরুণী চাকুরীর বাজারে প্রবেশ করছে। কিন্তু চাকুরী প্রাপ্তির সুযোগ অতি অল্প। সরকারী ও বেসরকারী খাতে তৈরী করতে হবে কর্মসংস্থানের ব্যাপক সুযোগ। তাদেরকে শুধু চাকুরীতে সীমাবদ্ধ না রেখে তাদের মধ্যে আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগও সৃষ্টি করতে হবে। প্রথমে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা হিসেবে তাদের যাত্রা শুরু হবে। ক্রমশ বৃহৎ ব্যবসা, বাণিজ্য ও শিল্প প্রতিষ্ঠায় তারা এগিয়ে যাবে। এসব উদ্যোগের দ্বারা তারা তাদেরই মত অগণিত তরুণের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করবে। এ লক্ষ্যে চাই তাদের জন্য শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ এবং পুঁজি ও পরামর্শ। উচ্চতর কারিগরী প্রযুক্তি ও কর্ম কৌশল আয়ত্ব করতে হলে প্রযোজন গুণগত শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ। এর জন্য দরকার ব্যাপক বিনিয়োগ। আর্থ-সামাজিক খাতের উন্নয়নে বিনিয়োগ বৃদ্ধি দেশের সার্বিক উন্নয়নকে নিশ্চিত করে। তাই শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে বিনিয়োগ বাড়ালে তা কখনও বিফলে যাবে না, বরং অর্থনীতির চাকা সচল হয়ে ওঠবে, দেশের উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে। ক্রমবর্ধমান সক্ষমতা ও সুযোগ উন্নয়ন চক্রকে সুগম করে তুলবে। তরুণ সমাজের উন্নয়ন হলে জাতির মেরুদন্ড শক্তিশালী হয়ে ওঠবে, দেশ ও জাতি সমৃদ্ধির পথে এগুবে।
দেশে এখন তরুণ সমাজের খুবই দুঃসময় চলছে। তাদের মধ্যে অনেক ঘাটতি ও হতাশা বিরাজ করছে। গুণগত শিক্ষায় পশ্চাদপদতা, জ্ঞান ও প্রযুক্তিভিত্তিক শিক্ষার অভাব, শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের দুর্বলতা, অপুষ্টি, চাকুরী ও আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগের অভাব, এসব সমস্যা বর্তমান তরুণ প্রজন্মের সম্ভাবনার দ্বারকে রুদ্ধ করে রেখেছে। এ ছাড়া নৈতিক মূল্যবোধের অবক্ষয়, অপরাজনীতির শিকার, সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদের সাথে সম্পৃক্ততা, মাদকাসক্তি, প্রভৃতি কারণে বহু তরুণ আজ বিপথগামী হয়ে পড়ছে। দেশে আজ সুশাসন ও নীতি-নৈতিকতার বড়ই অভাব। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভেঙ্গে পড়েছে। আদর্শ নেতৃত্বের অভাবে লুটেরা রাজনীতি দেশে অবাধ দুর্নীতি ও দুঃশাসনের নেতৃত্ব দিচ্ছে। দলীয় ও গোষ্ঠীগত চেতনায় জাতীয় চেতনাবোধ অবলুপ্ত প্রায়। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও ইসলামের নামে সব জোচ্চুরি চলছে। ফলে দেশের তরুণ ও যুব সমাজ আজ বিভ্রান্তি ও হতাশায় নিমজ্জিত। একটি উন্নয়নকামী সভ্য দেশের জন্য এ অবস্থা মোটেই কাম্য নয়। সোনার বাংলার স্বপ্নকে বাস্তায়ন করতে হলে আমাদের তরুণ সমাজকে নোংরা রাজনীতি, সন্ত্রাস, নেশা ও কালো টাকার ছোবল থেকে রক্ষা করতে হবে। তাদের হাতে মাদক ও অস্ত্রের বদলে জ্ঞানের মশাল তোলে দিতে হবে।
দেশের বর্তমান পরিস্থিতি মোটেই উন্নয়ন সহায়ক ও আশাব্যঞ্জক নয়। তবুও নিরাশ হওয়া যাবে না। সমস্যা ও প্রতিবন্ধকতা থাকবেই, এসবের আবর্তে নিজেদেরকে গুলিয়ে ফেলা যাবে না। বরং এসবকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে গ্রহণ মোকবিলা করতে হবে। একটি ব্যাপক পরিবর্তনের এখনই সময়। জাতির আশা-আকাঙ্খার প্রতীক আমাদের তরুণ সমাজ। দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে তারাই পারে সব ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সংস্কার আনতে। তরুণেরাই এ ঘুণে ধরা সমাজের পরিবর্তন ও দিনবদলের নিয়ামক শক্তি হতে পারে। দেশবাসীর আশা পূরণে তারা এমন একটি সুস্থ সুন্দর সমাজ প্রতিষ্ঠা করবে যেখানে থাকবে না কোন দারিদ্র, বেকারত্ব, অসাম্য এবং শোষণ। ন্যায় ও সম্প্রীতির ওপর ভিত্তি করে সকল প্রকার ভেদাভেদমুক্ত একটি সমাজ গড়বে তারা। দেশ ও জাতিকে তারা উপহার দিবে একটি শান্তি ও সৌহার্দময় পরিবেশ। বিশ্বের বুকে দেশকে একটি মর্যাদাশীল আসনে প্রতিষ্ঠিত করবে।
বিষয়: বিবিধ
৫২৭৩ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ফেসবুকে আই হেইট পলিটিক্স জাতিয় স্ট্যাটাস দিয়ে বান্ধবির সাথে ফোনে আলাপ করতে করতে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একটা সার্টিফিকেট কিনে বড় কোম্পানির চাকুরি করা ছাড়া আর কোন উদ্দেশ্য যেন তাদের জিবনে নাই।
মন্তব্য করতে লগইন করুন