হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) কেন সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব: পর্ব - ৩

লিখেছেন লিখেছেন শিহাব আহমদ ২৬ জানুয়ারি, ২০১৫, ১১:৪৪:৫৩ রাত

ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা। এ ব্যবস্থার প্রবর্তক হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) ছিলেন সর্বগুণে গুণান্বিত একজন পরিপূর্ণ আদর্শ মানব। ঘরে বাইরে তাঁর ভূমিকা ছিল ব্যাপক। তিনি ছিলেন একাধারে একজন ধর্ম প্রচারক ও সমাজ সংস্কারক রাষ্ট্রনায়ক, প্রশাসক, বিচারক ও সমরবিদ। আবার নিজ পরিবারে ছিলেন একজন দায়িত্বশীল আদর্শ গৃহকর্তা। সামাজিকভাবে আত্মীয়-পরিজনের সাথে তাঁর গভীর অন্তরঙ্গতা, বন্ধু-বান্ধবের সাথে মধুর সম্পর্ক, প্রতিবেশী এবং গরীব-দুঃখীর প্রতি তাঁর দয়া ও দানশীলতা সবই ছিল অনন্যসুলভ। তিনি ঘরের ভেতরে যেমন গড়ে তুলেছিলেন এক শান্তি ও সৌহার্দময় পরিবেশ, তেমনই প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ন্যায়, সমতা ও তাক্কওয়া (খোদাভীতি) ভিত্তিক সমাজ ও রাষ্ট্র। তাঁর প্রতিষ্ঠিত ন্যায় নীতির নিকট ছোট-বড়, ধনী-গরীব, আত্মীয়-অনাত্মীয় কোন ভেদাভেদ ছিল না। আল্লাহর নবী ও রসুল মুহাম্মদ (সাঃ) এমন কোন উপদেশ দিতেন না যা তিনি নিজে পালন করেননি। তাঁর মধ্যে বিন্দুমাত্র দ্বৈততা ছিল না। সৎ উপার্জনের দ্বারা অতি সাধারণভাবে তিনি জীবন যাপন করতেন। কোন কিছুতেই তাঁর বাড়াবাড়ি ছিল না, তিনি ছিলেন মধ্যমপন্থী। তিনি প্রতিদিনের প্রতিটি কাজ, কথা ও আচরণে পবিত্র কুরআনের নির্দেশ পালন করেছেন। হযরত আয়েশা (রাঃ) এর নিকট আল্লাহর রসুলের জীবনাচরণ সম্পর্কে কোন এক ব্যক্তি জানতে চাইলে তিনি বললেন, তুমি কি কুরআন পড়নি - কুরআনই রসুল (সাঃ) এর জীবনের দর্পণ। পবিত্র কুরআনের এক জীবন্ত নিদর্শন ছিল তাঁর জীবন।

চৌদ্দ শত বছর পূর্বে মদীনায় রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সময় সকল ধর্মীয় সম্প্রদায়, গোত্র ও জনগোষ্ঠীকে সাথে নিয়ে তিনি ’মদীনা সনদ’ নামে যে জাতীয় ঐক্য চুক্তি সম্পাদন করেন তা বিশ্ব ইতিহাসে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক অমূল্য দলিল হিসেবে চির ভাস্বর হয়ে আছে। তাঁর প্রতিষ্ঠিত রণনীতি, সন্ধি চুক্তি এবং যুদ্ধের চরম উত্তেজনাকর মূহুর্তে শত্রুর ও নিরস্ত্র লোকজনের সাথে তাঁর সংযমপূর্ণ আচরণ, যুদ্ধবন্দীদের সাথে উদার মানবিক ব্যবহার বর্তমানের আধুনিক সভ্যতাকেও হার মানায়। কোন কায়েমী বৈষয়িক স্বার্থে, মিথ্যাচারের মাধ্যমে, ছল-চাতুরীর আশ্রয় নিয়ে, প্রতিহিংসার বশে কিংবা গণহত্যা ও বিধ্বংসী নির্মমতার দ্বারা তিনি কখনও তাঁর নীতিকে কলুষিত হতে দেননি। ইসলামের প্রাথমিক যুগের মুসলমানদের চারিত্রিক বৈশিষ্ঠ্য এমন ছিল যে তারা এক অদ্বীতিয় আল্লাহর ওপর অটল বিশ্বাস রেখে সৎ কাজে প্রতিযোগিতা করতো, সত্য ও সঠিক পথের ওপর নিজেদেরকে নিয়োজিত রাখতো এবং একে অপরকে সে পথে চলার এবং ধৈর্য ধারণ করার তাগিদ দিত। আল্লাহর ওপর সুদৃঢ় বিশ্বাস রেখে সত্য ও ন্যায়ের পথে চলার কারণেই তাদের জন্য আল্লাহর অসীম রহমতের দুয়ার খুলে গিয়েছিলো এবং দুনিয়ার নেতৃত্ব ও আখিরাতের সাফল্য তাদের হাতের মুঠোয় চলে এসেছিলো। ইসলামের সাম্য ও মৈত্রীর বাণী ও তার বিশ্বজনীন আবেদন সাধারণ অবহেলিত ও নির্যাতিত মানুষের অন্তরকে সহজেই নাড়া দেয়। সত্য সব সময়ই বিজয়ী হয় - এ ঘোষণা দিয়ে মহান আল্লাহ্ তাঁর নবীকে বলেন, "বলুন: সত্য এসেছে এবং মিথ্যা বিলুপ্ত হয়েছে। নিশ্চয় মিথ্যা বিলুপ্ত হওয়ারই ছিল” (১৭: ৮১)।

সমাজ সংস্কারক হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) একটি চরম বর্বর, অসংস্কৃত ও দারিদ্রপীড়িত জাতিকে বিশ্বের শ্রেষ্ঠ সুসভ্য, গরীয়ান ও মহিমান্বিত জাতিতে রূপান্তরিত করতে সক্ষম হয়েছিলেন। এই লোকগুলো কিছু দিন পূর্বেও অন্যায়ভাবে অপরের ধন-সম্পদ ও জীবন হরণে দ্বিধাবোধ করত না, এখন তারা নিজেদের জান-মাল দিয়ে অন্যকে রক্ষা করে। তিনি তাদের উত্তম নৈতিক ও আধ্যাত্মিক গুণ সঞ্চার করতে সক্ষম হয়েছিলেন। তিনি তাদের অন্তরে যে খোদাভীতি ও ঈমানী শক্তি জাগ্রত করেছিলেন তারই বলে বলীয়ান হয়ে এ দরিদ্র জাতি বিশ্বের পথভ্রষ্ট পরাশক্তিগলোর ক্ষমতা ও অহমিকাকে নস্যাৎ করে দেয়। এরা এমন এক ঐক্যবদ্ধ জাতিতে পরিণত হয় কুরআনের ভাষায় যেন ’সীসা-ঢালা প্রাচীর’।

মাত্র তেইশ বছরের নবুওতি জীবনে তিনি কৃতিত্বের শিখরে পৌঁছেছেন। এ অল্প সময়ে তিনি বিশ্বব্যাপী যে মহাবিপ্লব সংঘটিত করেছেন তার মূলে ছিল এই কুরআনের প্রভাব। পবিত্র কুরআনের শিক্ষার ভিত্তিতে মহানবী (সাঃ) ইসলামের আধ্যাত্মিক শক্তির এমনই বিকাশ ঘটান যার বিকীরণ সমগ্র বিশ্বকে উদ্ভাসিত করে দেয়। নবীসুলভ অভিজ্ঞায় তিনি জানতেন, ক্ষণস্থায়ী দুনিয়ার সাময়িক চাকচিক্য, সুখ-সম্ভোগ ও বিলাস-ব্যসন অধিকাংশ মানুষকে মোহাবিষ্ট করে রাখে। সম্পদ ও ক্ষমতা কুক্ষিগত করার এক অশুভ প্রতিযোগিতায় তারা মেতে ওঠে। ফলে মানুষ হিসেবে তাদের ওপর অর্পিত পার্থিব দায়িত্ব ও কর্তব্যের এবং পরকালীন জবাবদিহির কথা তারা ভুলে যায়। তাই তিনি তাঁর প্রবর্তিত সহজ সরল জীবন ব্যবস্থায় আধ্যাত্মিকতার সাথে জাগতিকতার এক অপূর্ব সমন্বয় সাধন করেন। এই ইসলামী জীবন ব্যবস্থা সমাজিক বৈষম্যের সকল কৃত্রিম ও জটিল বেড়াজালগুলোকে ছিন্নভিন্ন করে দেয় এবং মানুষে মানুষে সকল ভেদাভেদের অবসান ঘটায়। এর ফলে অধঃপতিত মানব সমাজ শির উঁচু করে দাঁড়াবার সুযোগ পায় এবং সৎকর্মপরায়ণতা ও পরহেজগারীর মানদন্ডে স্বমহিমায় উন্নীত হয়। তিনি এমন এক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা প্রবর্তন করেছে যা ধনীর হাতে সমস্ত সম্পদ কুক্ষিগত হওয়া থেকে বিরত রাখে, অপরদিকে গরীবকে ধনীর সম্পদে অংশীদার হওয়ার সুযোগ করে দেয়। এভাবে ধনী ও গরীবের মধ্যে বৈষম্য কমে আসে। ইসলামের হালাল উপার্জনের বাধ্যবাধকতা, গরীবের হক যাকাতের বিধি-বিধান, দান-খয়রাত ও কাফফারা এবং রাষ্ট্রীয় খাজনা ও কর আদায়, জনকল্যাণে ’বাইতুল মালের’ অর্থ ব্যয়, ইত্যাদি সম্পদ উপার্জন ও বন্টনের ক্ষেত্রে এমন এক ন্যায়সঙ্গত ব্যবস্থার উদ্ভাবন ঘটিয়েছে যা মানবতার কল্যাণ ও সামাজিক শান্তি প্রতিষ্ঠায় ব্যাপক অবদান রাখতে সক্ষম হয়েছে। মদীনা রাষ্ট্রে নবী (সাঃ) ও তাঁর খলীফাগণ কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত জীবন ব্যবস্থা তাই প্রমাণ করে।

মহানবী (সাঃ) তাঁর তেইশ বছরের নবুওতি জীবন শেষে তাঁর উম্মতের ইহলৌকিক ও পারলৌকিক কল্যাণের জন্য যে দু’টি মূল্যবান সম্পদ রেখে গেছেন তা হলো তাঁর ওপর নাযিলকৃত আল্লাহর কিতাব পবিত্র ’কুরআন’ এবং তাঁর জীবনাদর্শ ’সুন্নাহ্’। আল্লাহর নবী মুহাম্মদ (সাঃ) এর জীবনাদর্শ সমুজ্জ্বল আলোকবর্তিকার মতো পথ-প্রদর্শক হিসেবে কিয়ামত পর্যন্ত মানব জাতিকে সুপথ দেখাবে। তিনি ছিলেন আল্লাহর রঙে রঞ্জিত, আল্লাহর গর্বে গর্বিত ও আল্লাহর জন্য আত্ম-নিবেদিত। এ বিশাল ব্যক্তিত্বের মধ্যে আত্ম-অহমিকা বলতে কিছুই ছিল না। তিনি বলতেন, ’আমি তোমাদের মতই রক্তমাংসে গড়া একজন মানুষ। আমি কোন কিছুই নিজের থেকে তোমাদের কাছে নিয়ে আসিনি। এসব কিছুই মহান আল্লাহ্ আমার ওপর নাযিল করেছেন। আমার নিকট যা আছে তার সব কিছুর মালিকই আল্লাহ্। এই কুরআন যা কোন মানবের পক্ষে রচনা করা সম্ভব নয়, তা শুধুমাত্র আল্লাহরই বাণী। এটা আমার মনগড়া কোন রচনা নয়। এর প্রতিটি শব্দ তাঁরই নিকট থেকে নাযিল হয়েছে, সমস্ত গৌরব তাঁর - যাঁর বাণী এই কুরআন। বিস্ময়কর সব কীর্তি যা তোমাদের চোখে আমার কৃতিত্ব বলে মনে হয়, যতসব বিধিবিধান আমার মাধ্যমে তোমরা পেয়েছ, যতসব নীতি-উপদেশ আমি তোমাদের দিয়েছি - এসবই আমার নিজস্ব বলে কিছু নয়। এসব কিছু রচনার কোন যোগ্যতাও আমার নেই। সব ব্যাপারেই আমি ঐশী নির্দেশনা লাভের ওপর নির্ভর করি। আল্লাহ্ যা ইচ্ছা করেন আমি তাই করি, তিনি যা নির্দেশ দেন আমি তাই ঘোষণা করি’।

কি এক অপূর্ব অনুপ্রেরণাদায়ক তাঁর এ ঘোষণা, যাতে প্রকাশ পেয়েছে তাঁর উদ্দেশ্যের সততা ও আন্তরিকতা, সত্য প্রকাশের নিষ্ঠা ও সাহসিকতা, নির্মল চরিত্র ও পবিত্র আত্মার দ্যুতিময়তা। বিদায় হজ্বে প্রদত্ত তাঁর ভাষণ মানব জাতির মুক্তির এক বিশেষ দিক-নির্দেশনা। সারল্য, নম্রতা ও বিশুদ্ধ চরিত্রের এক মূর্ত প্রতীক হিসেবে তিনি বিশ্বে যে উদাহরণ সৃষ্টি করে গেছেন তা অতুলনীয়। তিনি ছিলেন সৃষ্টিকুলের পরম হিতৌষী। তমসাচ্ছন্ন সমাজের তিনি এক আলোক-বর্তিকা, পথ-প্রদর্শক ও বিশ্ব মানবতার শিক্ষক। তাঁর প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ্ বলেন, "আল্লাহর রসুলের মধ্যে রয়েছে এক অনুপম অনুকরণীয় জীবনাদর্শ তাদের জন্যে, যারা আল্লাহর সাক্ষাৎ পেতে আগ্রহী ও পরকালে (মুক্তির) আশা রাখে এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে” (৩৩: ২১)। যে মহান ব্যক্তিত্ব মানব জাতির জন্য প্রেরিত হয়েছিলেন "একজন স্বাক্ষী, সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপে এবং আল্লাহর অনুমতিক্রমে মানুষকে আল্লাহর পথে আহ্বানকারী ও প্রদীপ্ত এক আলোক-বর্তিকা হিসেবে" (৩৩:৪৫-৪৬), তাঁকেতো হতেই হবে এমন অনুকরণীয় ও অনুসরণীয় আদর্শ চরিত্রের অধিকারী। এরই স্বীকৃতি দিয়ে স্বয়ং আল্লাহ্ বলেন, "আপনি অবশ্যই সর্বোত্তম চরিত্রের অধিকারী” (৬৮:৪)। তিনি সকল গুণাবলীর সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছে গেছেন। আর এ জন্যই মহামহিম আল্লাহর নিকট থেকে ওয়াদা এসেছে: "আপনার প্রভু শীঘ্রই আপনাকে সর্বোচ্চ প্রশংসিত ও গৌরবমন্ডিত স্থানে অধিষ্ঠিত করবেন” (১৭: ৭৯)। এর চেয়ে আর বেশী কি আছে যা কোন ব্যক্তিত্বকে সর্বোত্তম সম্মানে ভূষিত করতে পারে। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব হওয়ার এটাইতো পরম স্বীকৃতি।

আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীন তাঁর হাবীব মুহাম্মদ (সাঃ) এর স্মরণকে সমুন্নত করেছেন (৯৪: ৪)। স্বর্গ-মর্ত্যে প্রতিদিন তাঁর নাম উচ্চারিত হচ্ছে, তাঁর ওপর দরুদ ও সালাম পেশ করা হচ্ছে। মহান আল্লাহর নির্দেশ: "আল্লাহ্ ও তাঁর ফেরেশতাগণ নবীর প্রতি আশীর্বাদ প্রেরণ করেন। হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা নবীর ওপর আশিসবাণী পাঠ কর এবং তাঁর প্রতি উত্তম অভিবাদন প্রেরণ কর” (৩৩: ৫৬)। দুনিয়া জুড়ে প্রতিদিনই নামাযে, আযানে ও আলোচনায় তাঁর ওপর দরুদ ও সালাম পেশ করা হচ্ছে, যেখানেই তাঁর নাম উচ্চারিত হচ্ছে সেখানেই তাঁকে উত্তম অভিবাদন জানানো হচ্ছে ।

বিশ্বের বহু অমুসলিম মনীষী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সম্পর্কে প্রশংসামূলক উক্তি করেছেন। এঁদের মধ্য থেকে কয়েক জনের উক্তি উদ্ধৃত করা হলো:

"বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের তালিকায় আমার পছন্দ হিসেবে মুহাম্মদের নাম সর্বাগ্রে আসায় কিছু পাঠক বিস্ময়বোধ করতে পারেন, আবার কেউ তা প্রশ্নবিদ্ধও করতে পারেন, কিন্তু তিনিই ছিলেন একমাত্র ব্যক্তি যিনি ধর্মীয় ও ধর্ম-নিরপেক্ষতা উভয় ক্ষেত্রেই সর্বোতভাবে সফলতম ব্যক্তিত্ব।”(Michael H. Hart, Author of ‘THE 100: A RANKING OF THE MOST INFLUENTIAL PERSONS IN HISTORY’, New York: Hart Publishing Company, Inc., 1978, p. 33.)

বিশ শতকের এ লেখকের মন্তব্যের শত বর্ষেরও অধিক পূর্বে ঊনিশ শতকের অপর এক বিখ্যাত মনীষী স্কটিশ দার্শনিক, চিন্তাবিদ ও ইতিহাসবিদ টমাস কার্লাইল ১৮৪১ সালে প্রকাশিত তাঁর HEROES AND HEROWORSHIP গ্রন্থের The Hero as Prophet Muhammad: Islam অধ্যায়ে হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সম্পর্কে প্রায় একই রকম ধারণা পোষণ করে বিস্ময়বোধ করে বলেছিলেন,"কি করে এককভাবে একজন মানুষ বিবাদমান গোত্রসমূহ এবং যাযাবর বেদুঈনদেরকে দুই দশকেরও কম সময়ে ঐক্যবদ্ধ করতে পারলেন?"

"তিনি ছিলেন একাধারে সীজার এবং পোপ; কিন্তু পোপের আত্মম্ভরিতা ছাড়াই তিনি ছিলেন পোপ, সৈন্য-সামন্ত ছাড়াই তিনি ছিলেন সীজার: নিয়মিত সেনাবাহিনী নেই, নেই কোন দেহরক্ষী, নেই রাজপ্রাসাদ, নেই কোন নির্দিষ্ট রাজস্ব আয়; যদি কোন মানুষ কখনো দাবী করে বলতে পারে যে, তিনি সঠিক ঐশী শক্তি দ্বারা শাসন করেছেন, তবে তিনি হলেন মুহাম্মদ, কারণ কোন পার্থিব উপায়-উপকরণ ছাড়াই তিনি ছিলেন সমস্ত শক্তির অধিকারী"। (Bosworth Smith, MOHAMMAD AND MOHAMMADANISM, London, 1874, p. 92.)

"মুহাম্মদ ছিলেন একাধারে একজন সত্যান্বেষী, বাগ্মী, প্রচারক, আইন প্রণেতা, যোদ্ধা, সর্ব মতের ওপর বিজয়ী, যৌক্তিক মতবাদের প্রতিষ্ঠাতা, প্রতিমা-বিহীন ধর্মের প্রবর্তক; যিনি বিশটি পার্থিব সম্রাজ্য এবং একটি আধ্যাত্মিক সম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা। মানবিক মহত্ত্বের সকল মানদন্ডের নিরিখে আমাদের জিজ্ঞাস্য হতেই পারে: তাঁর চেয়ে মহোত্তম কোন ব্যক্তিত্ব আছে কি?" [Lamartine, HISTOIRE DE LA TURQUIE, Paris, 1854, Vol. II, pp. 276-277.]

Òতাঁকে মানবতার রক্ষক বলাই শ্রেয়। আমি বিশ্বাস করি যে, তাঁর মত একজন ব্যক্তিত্ব যদি আধুনিক বিশ্বের একনায়কের দায়িত্ব গ্রহণ করতেন তবে তিনি এর সমস্যাসমূহের সমাধান এমনভাবে করতে সফল হতেন যা বিশ্বের অতীব প্রয়োজনীয় শান্তি ও সুখ বয়ে আনত”। [George Bernard Shaw, The Genuine Islam, Singapore, Vol. 1, No. 8, 1936]

ভারতের জনক মহাত্মা গান্ধী বলেন, "আমি জানতে চেয়েছিলাম সর্বোত্তম একজনের কথা যিনি আজও অবিসংবাদিতভাবে অগণিত মানুষের হৃদয় দখল করে আছেন .... আমি সমধিক নিশ্চিত হতে পেরেছিলাম যে, তৎকালীন জীবন ব্যবস্থায় তরবারী ইসলামের জন্য কোন স্থান নির্ধারণ করেনি। এটা ছিল নবীর ঋজুপ্রকৃতি, বিনম্রতা, ওয়াদা পালনের অগাধ বিশ্বস্ততা, তাঁর বন্ধু ও অনুসারীগণের প্রতি গভীর সহৃদয়তা, তাঁর বীরত্বব্যঞ্জক সাহসিকতা, তাঁর অকুতোভয়তা, ঈশ্বরের প্রতি এবং তাঁর নিজ লক্ষ্যের প্রতি সার্বিক আস্থা ও বিশ্বাস। তরবারী নয় বরং তাদের সম্মুখে এসবকিছুই নিয়ে যাওয়া হয়েছিল যা সকল বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করতে পেরেছিল। আমি যখন (নবীর জীবন চরিতের) দ্বিতীয় খন্ড পাঠ সমাপ্ত করলাম তখন দুঃখবোধ হলো যে, মহৎ জীবন সম্পর্কে পাঠ করার মত এর অধিক কিছু আমার জন্য রইল না”। [ Mahatma Gandhi, 'Young India']

"ইসলাম দ্যা মিসআন্ডারস্টুড রিলিজিয়ন” এর লেখক জেমস এ মিচেনার বলেন, "সকল ব্যাপারেই মুহাম্মদ ছিলেন অত্যন্ত বাস্তবধর্মী। যখন তাঁর প্রিয় পুত্র ইব্রাহীম মারা গেলেন তখন সূর্যগ্রহণ সংঘটিত হয়, এতে গুজব ছড়িয়ে পড়ল এটা ঈশ্বরের পক্ষ থেকে শোকের ছায়া। এ গুজবকে বাতিল করে মুহাম্মদ যা বললেন তা হলো, ’সূর্যগ্রহণ একটা প্রাকৃতিক ঘটনা। এটাকে কোন ব্যক্তির মৃত্যু বা জন্মের সাথে সম্পৃক্ত করা নেহায়েৎ বোকামী’।” এ লেখকের অপর মন্তব্য যা হযরত আবুবকর (রাঃ) সম্পর্কিত তা হলো: "মুহাম্মদের নিজের মৃত্যুর পর তাঁর ওপর অমরত্ব আরোপের চেষ্টা করা হলে, যিনি তাঁর উত্তরসূরী শাসক হবেন, তিনি ধর্মীয় ইতিহাসের এক মহত্তোম ভাষণে সে আবেগের তাড়নাকে নস্যাৎ করে দিয়ে বললেন: ’তোমাদের মধ্যে যদি কেহ মুহাম্মদের উপাসনা করে থাক তবে জেনে রাখ তাঁর মৃত্যু হয়েছে। আর যদি তোমরা আল্লাহর উপাসনা করে থাক তবে জেনে রাখ তিনি (আল্লাহ্) চিরঞ্জীব’।”[James A. Michener, "ISLAM: THE MISUNDERSTOOD RELIGION," in READER'S DIGEST (American edition), May 1955, pp. 68-70.]

(সমাপ্ত)

বিষয়: বিবিধ

২৫২৭ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

301918
২৭ জানুয়ারি ২০১৫ রাত ০৩:৪৩
লজিকাল ভাইছা লিখেছেন : অনেক অনেক মুল্যবান একটি পোষ্ট। প্রিয়তে রাখলাম। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File